বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বস্তুত: মেয়েদের ঊচ্চ শিক্ষিত করা অর্থের আপচয়। অনেকেই হয়ত কথাটা সহজ ভাবে মেনে নিতে পারবেন না। সেটাই স্বাভাবিক। কারন ভিন্ন দৃষ্টি দেবার যোগ্যতা হয়ত ততটুকু নেই। অথবা আপনি নিজেই নারী বা কথাটা আপনার - আপনার আপন জনের জন্যে খাটে না।
আসলে যে ঊচ্চ শিক্ষিত প্রতিষ্ঠিত নারীরা নিজের শিক্ষাকে কাজে লাগিয়েছেন, তাদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা রইল এবং তারা আমার এই চিন্তা ধারার বাইরে।
চীনা একটা প্রবাদ আছে, আমাকে একটা শিক্ষিত মা দাও, আমি শিক্ষিত জাতি দেব। চীন আর বাংলাদেশ এক নয়। সি জিনপিং গ্রেস দিয়ে পাস করা শিক্ষিত নয়। তিনি দেশকে পারিবারিক সম্পত্তি মনে করেন না।
আমার সোনার বাংলায় এত যে বৃত্তি-উপবৃত্তি আর সুযোগ সুবিধা নারী শিক্ষায় আগ্রাধিকার বাস্তবায়নের জন্যে তার কত টুকু সফল হয়েছে? কতটুকু প্রভাব সমাজে পড়েছে?
যে টাকা সরকার ছাত্রীদের জন্যে বরাদ্দ দিয়েছে, তার কিছু অংশ যাচ্ছে শিক্ষকদের পকেটে, কিছু বাবা মার হাতে। আর তা না হলে যাচ্ছে মোবাইলের ফ্লেক্সি লোডে। বিনোদনে...
যারা সত্যিকার অর্থেই পড়বে, তারা বৃত্তির টাকা না পেলেও পড়বে, ইভটিজিং এর শীকার হলেও পড়বে। পড়ার জন্যেই পড়বে। শিক্ষাকে সম্মান দিতেই পড়বে। নিজের পায়ে দাড়াবে। আর যারা ঠেলে ঠুলে পড়ে অথবা পরিবারের চাপে বা উপরি পাওনার জন্যে (প্রেম, ভালবাসা, ঘোরা ফেরার স্বাধীনতা ইত্যাদি) পড়ে, তারা স্কুল কলেজ পেরিয়ে কেউ কেউ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত গড়ায়। তারপর বিয়ে থা হলে, চুলায় আগুন ঠেলে, বাচ্চা পয়দা করে। বংশের বাত্তি জ্বালায়।
ভাই রে ভাই... যদি রান্না বান্নাই করবি, সংসার গোছাবি তাহলে ১৬-২০ বছর পড়া শোনার অজুহাতে বাবা মার কষ্টের টাকা উড়ানোর কি দরকার? নিজের ছেলে মেয়ে কে ক্লাস টু এর পর তো আর নিজে পড়াবি না। টিউটর রাখবি নয়ত কোচিং এ দিবি। তাইলে এই ঝুলে ঝুলে ১৬-২০ বছর পড়াশোনার কি মানে?
ছাত্রদের সাথে কম্পিটিশন করে বই খাতা কোচিং সবই করবি তোরা, শেষে গিয়ে টুপ করে সংসারী? সেটা পরিবারের চাপে হোক আর মন দেয়া নেয়া থেকে হোক...
আমি মনে করি না এদেশের আর্থিক সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় গড় পড়তা রেজাল্ট করা মেয়েদের এস,এস,সি র পর আর পড়ানো উচিত বা পড়া উচিত। ঐ টুকুই যথেষ্ট। এস,এস,সি র পর তাদের উৎপাদন মুখী, হস্তশিল্প বা কারিগড়ি শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া উচিত।
প্রতি বছর হাজার হাজার নারী শিক্ষার্থী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ভর্তি হচ্ছে। বেশির ভাগ কোন রকম পাশ করছে, কিছু অংশ ঝড়ে পড়ছে। অন্যদিকে প্রাইভেট ভার্সিটিতে প্রতি সেমিষ্টারে নূন্যতম ৫০হাজার টাকা ফি দিতে হচ্ছে, সাথে প্রতি ৪ মাসে আনুসঙ্গিক আরও ৫০-৭০হাজার টাকা খরচ। তারপর দেখা যায়, অনার্স মাস্টাসের পর ভাল পাত্র দেখে বিয়ে করে ঘরনী। খুবই নগন্য যারা চাকরি করার অনুমতি পায় বা চাকরি নামের সোনার ডিমের দেখা পায় অথবা যদিও পায় সে হয় প্রাইভেট অফিসের প্রাণ, আইকোন, ডেকোরেশন বা সো পিস।
কেউ কেউ হয়ত বলবে, বাবার বাড়িতে জোড় খাটে, শ্বশুড় বাড়িতে সম্ভব না। সংসার টিকিয়ে রাখতে ছাড় দিতে হয়। যদি ছাড়ের প্রশ্ন থেকেই যায়, তাহলে বাপের বাড়ির টাকা উড়ানোর দরকার নেই, নিজেকে দৌড়াদোড়ির ছোটাছুটির ভেতর অযথা জড়িয়ে কি লাভ?
কেউ যদি বলে, উচ্চ শিক্ষিত হবার ভেতরে আত্মতৃপ্তি আছে, খ্যাতি আছে, শুধু সেজন্যেই পড়েছি, পড়ছি, তাহলে তার প্রতি আমার অন্তর থেকে শ্রদ্ধা।
একটা ব্যক্তিগত তথ্য দেই: আমার মা দু'বার H.S.C পরীক্ষা দিয়েছে। একবার ১৯ বছর বয়সে আর ২য় বার ৩৮ বছর বয়সে। দু বারই সেকেন্ড ক্লাস। মার নাকি ভীষণ সখ ছিল, ফার্স্ট ক্লাস রেজাল্ট করার।