সাকার ফিস বা চোশক মাছ সম্বন্ধে কম বেশি সবাই জানে। এটা কোন কোন দেশে Devil fish নামেও ডাকা হয়। কিন্তু Devil fish আলাদা দেখতে। অনেকটা শাপলা পাতা বা স্টিং রের মত দেখতে। দক্ষিণ এশিয়া সাকার ফিস এখন গলার কাটা। তবে থাইল্যান্ড এবং চীন চমৎকার সমাধান বের করে ফেলেছে।
চীন নাগরিকদের সচেতন করতে বিভিন্ন ব্যবস্থা করেছে। পাশাপাশি ন্যাশনাল পার্ক এবং ট্যুরিস্ট প্লেসে সংরক্ষণ করে পরিচিত করছে। ব্যাখা করছে কেন এটা পরিবেশের জন্যে হুমকি। কেন আইন করে চাষ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে সেটা বোঝানো হচ্ছে।
অন্যদিকে থাইল্যান্ড কোন আইন জারি করেনি। তারা সাকার ফিস থেকে কুকুর বিড়ালের খাবার তৈরী করছে। আবার মানুষের খাদ্য হিসেবেও বিক্রি করছে। কারন তারা দেখেছে এটা প্রাণী শরীরের জন্যে ক্ষতিকারক নয়। পাপেট ফিস বা পটকা মাছের মত কোন বিষ নেই। কিন্তু জনগন নতুন প্রজাতি ভেবে খেতে কম আগ্রহী ।
যাই হোক বাংলাদেশে এটা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কোন গবেষণা ছাড়াই। শুধু প্রচুর বংশ বৃদ্ধি করছে এবং অন্য প্রজাতির মাছের উপস্থিতি কমে গেছে তাই। বুড়িগঙ্গার মত সবচেয়ে দূষিত পানিতেও এর প্রচুর উপস্থিতি। কৈ বা শিং মাছ আগে কিছুটা ছিল, এখন নেই বললেই চলে। প্রজ্ঞাপন টা দেখুন কি ছিল:
আমি জানিনা রাষ্ট্রপতি মহোদয়কে কি কি উপাত্ত সরবরাহ করা হয়েছিল এ রকম একটা সিদ্ধান্ত নিতে। আমার মতে, যদি সরকার ঘোষনা করত, প্রতিটি সাকার ফিসের মাথার বিপরীতে ১ টাকা করে দেয়া হবে স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে, কিন্তু কেউ চাষ করতে পারবে না। তাহলে খাল বিল নদী নালা সব সাকার মাছ শূন্য হয়ে যেত। কোটি কোটি টাকার অন্য প্রজাতির মাছ রক্ষা পেত। এখন যে সুচিবাই আইন জারি করা হয়েছে, তাতে সাকার মাছের বংশ আরও বাড়বে। কারন মাছটা কেউ স্পর্শই করতে চাইবে না।
ব্যক্তিগত আইডিয়া:
আমাদের পোল্ট্রি ফিডে প্রচুর শুটকি বা আমিষ লাগে। যে ফিডে চামড়া ফ্যাক্টরির গাদ পর্যন্ত মিশানো হয়, সেখানে সাকার ফিশ মেশালে ক্ষতি দেখি না। কোন ল্যাব রিপোর্টে, নেটের কোথাও পেলাম না যে, সাকার ফিস মানুষের শরীরের জন্যে টক্সিক। তাই আমরা সাকার ফিসের শুটকি পোল্ট্রি ফিডে ব্যবহারের কথা চিন্তা করতে পারি।
যদি সরকারী আদেশে বলা হত: চাষ ব্যতিরেকে উন্মুক্ত জলাধার থেকে ধরা সাকার ফিস শুধু পোল্ট্রি শিল্পে বিক্রয় হবে, তাহলেও কিছুটা বংশ বিস্তার রোধ করা যেত। আমার ধারনা, ২০৩০ নাগাদ আমরা আর নদীর কোন মাছ পাব না, যদি সাকার ফিস ছেকে তুলে ফেলা না হয়।
আমাদের দেশে সাকার ফিস এর সমগত্রীয় এবং একই শ্রেণীর আরও বহু মাছ আছে। যেমন, রিটা মাছ, ঘাঘট বা ঘাউরা মাছ, গাগরা মাছ। এদের সবার শ্রেণী: Actinopterygii এবং বর্গ: Siluriformes
রিটা মাছ/ঘাঘট মাছ/গাগরা মাছ যদি পপুলার খাবার মাছ হয়, সাকার মাছ না খাওয়ার পেছনে যুক্তিটা কোথায়? যদিও বলা হচ্ছে, এই মাছের গা অনেক শক্ত, মাংস আশ যুক্ত। চামড়া ছিলে অন্য মাছের মতই খাওয়া যায়।
আমি সিলেটে বেশ ক'বার পিরানহা মাছ বিক্রি করতে দেখেছিলাম। মাত্র ৯০টাকা কেজি ছিল। পাঙ্গাশের চেয়েও সস্তা ছিল। পরবর্তীতে লেখা লেখির পর ঘনঘন বাজার মনিটরিং হয়েছিল। গত ২ বছর আর দেখছিনা। সে সময় দেখেছি, মানুষ জানতই না যে পিরানহা পরিবশের জন্যে ক্ষতি কারক। পরে মানুষও পিরানহা কেনা ছেড়ে দিয়েছে।
এখন পর্যন্ত কোথাও সাকার ফিস বিক্রি করতে দেখিনি। দেখলে অবশ্যই মানুষকে সচেতন করব। আশাকরি আপনারও সচেতন করবেন। যারা মাছ ধরেন, তাদের জালে বা সিপে ধরা পড়লে মাছটি নষ্ট করে ফেলবেন। মনে রাখবেন, এই মাছ খুবই সারভাইব করতে পারে। এটা ফ্রিজে জমে গেলেও বেঁচে থাকে, রোদে ডিহাড্রেট হয়ে গেলেও বেঁচে থাকে। অক্সিজেন শূন্য পানিতেও অনেক দিন বাঁচে। কাজেই সাকার ফিসের মাথা কেটে / থেতলে ফেলতে হবে।
কয়েক বছর আগে কৃষি মন্ত্রানালয় ইঁদুরের প্রত্যেক লেজের পরিবর্তে টাকা দিত। এখন সে কার্যক্রম বন্ধ। সাকার ফিসের জন্যেও এ রকম উদ্দ্যোগ নিলে ভাল হত।
রিটা:
ঘাঘট বা ঘাউড়া:
গাগরা:
আইড় মাছ:
রেফারেন্স লিঙ্ক ১
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই আগস্ট, ২০২৩ রাত ১১:২২