আমার বাবা একজন মুক্তি যোদ্ধা ছিলেন। ক্যাম্পিং লিডার ছিলেন, ট্রেনিং দিয়েছেন এবং দুটি সম্মুখ যু্দ্ধে অংশ নিয়েছেন। দুর্ভাগ্য বশত তার নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় পাবেন না। কেন সেটা অন্য একটা কাহিনী। শুনেছি যুদ্ধের সময়, মু্ক্তিযোদ্ধারা এমনভাবে প্লান করতেন যেন, পাক বাহিনীর যোগাযোগে সমস্যা হয় বা সুবিধা না করতে পারে। অথচ স্বাধীনতার পরে যেন স্বল্প খরচে ব্যবহার উপযোগী হয়। যেমন ধরুন, একটা ব্রিজ উড়িয়ে দিলে শহরে বা গ্রামে পাকবাহিনীর গাড়ি বহর ঢুকতে পারবে না। মুক্তিবাহিনী ব্রীজের এক অংশ নষ্ট করতেন বা সংযোগ সড়ক নষ্ট করে দিতেন।
দাদীর কাছে শুনেছিলাম, তাদের গ্রামের রাস্তা ধরে পেছনের ৬টা গ্রামে যেতে হত। বিকল্প পথ হল বিশাল খাল বা পানিতে তলিয়ে যাওয়া জমির ভেতর দিয়ে। সেসময় শুকনো মরিচ আর ধান সবার বাড়িতে বাড়িতে সংরক্ষণ করা ছিল। গ্রামের ভেতরে ঢোকার দিকে কয়েক বাড়িতে গোলা ভর্তি শুকনো মরিচ আর খড় ছিল। কয়েক বাড়িতে তল্লাশি শেষে যখন আগুন দিল, পাক বাহিনী আর যাবে কৈ, মরিচের শাটে তারা সেই গ্রামের ভেতরে আর যেতে পারেনি। বগুড়ার মরিচের এমনিতেই ঝাল বেশি। তারওপর শতশত মন। মাস দুয়েক পর যখন দাদীরা গ্রামে ফিরেছিলেন তখনও ঐ সব পোড়া বাড়িতে মরিচের ঝাঝাল গন্ধ ছিল। যাই হোক ৭১ এর গল্প লিখতে বসিনি।
মূলত: ইরান-ইসরাইল যুদ্ধ নিয়ে এখন মাঠ গরম। সামুও যু্দ্ধের খবরে ভেসে যাচ্ছে। এদিকে নানা খবর চ্যানেল নানা রং চং মাখা নিউজ দিচ্ছে। সব জেনে বুঝে মনে হচ্ছে ইরানের যুদ্ধ পরিকল্পনা ইসরাইলের তুলনায় অনেক দুর্বল।
কিন্তু কেন দুর্বল?
১. ইরানের টপ লেভেলের নেতারা এক ইহুদি নারীর সাথে রাত কাটিয়েছে মুত্তা বিয়ের মাধ্যমে বা কর্ল গার্ল হিসেবে। ঐ নারী বলেছে, সে কমপক্ষে ১০০ জন নেতার সাথে বেডে গেছে এবং কে কি দায়িত্বে আছে, কোথায় কি রাখা আছে, কে কোথায় থাকে, কে কাকে লিড দিচ্ছে ইত্যাদি অনেক কিছু জেনে প্রতি নিয়ত আপডেড দিয়ে গেছে ইসরাইল কে। মানে ইসরাইলে হাতে মোটামুটি সব তথ্য আছে।এটাতো একজন নারীর কথা। আরও কতজন আছে আল্লাহ ভাল জানেন। অফিসারদের বউ মেয়েও তো পরপুরুষের সাথে বেডে যাবার কথা। হাইসোসাইটিতে যা হয় আর কি।
এদিকে ইরান মুত্তা বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত। ছায়া যুদ্ধ নিয়ে ব্যস্ত। গত সপ্তাহে একাধিক গোয়েন্দা পুরুষ কর্মীকেও মৃত্যুদন্ড দিয়েছে। মানে এককথায়, ইরানের গোয়েন্দা তৎপরতা খুব দুর্বল। একটা মহিলা রাতের পর রাত অফিসারদের সাথে কাটাল অথচ তার ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে কেউ মাথা ঘামাল না। আজব না?
২. ইরান ইউরেনিয়াম সংগ্রহ প্রকাশ্য ঘোষনা দিয়ে করেছে। অন্যদিকে পূর্বে রাশিয়ার পরমানুবিদদের সহযোগিতা প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে। অথচ ম্যানকাচিপায় পড়ে এখন রাশিয়ার বিজ্ঞানীদের সাহায্য নিচ্ছে। সময়ের কাজ সময়ে করেনি। ইরান পারমানবিক গবেষণা কেন্দ্রে ইউএস প্রতিনিধি দলকে এক লিফট দিয়ে ঢোকাতো, আর প্রকৃত গবেষণা কেন্দ্রে যাওয়া যেত অন্য লিফ্ট দিয়ে। এই গোপনীয় ব্যপারটাও ভেতরের লোক প্রকাশ করে ফেলেছে। মানে ঘরের শত্রু বিভীষণ।
৩. ইন্টারনেট দুনিয়ায় ইসরাইল হল সেরাদের সেরা। যে কোন দেশের সিস্টেম হ্যাক করা বা সর্বাধুুনিক সফটঅয়্যার ব্যবহারে সে খুুবই পারদর্শী। সে তুলনায় ইরান মাধ্যমিক স্কুলে। সেদিকে ইরানের নজর ছিল না।
৪. ইরান তেল বেচে নিজেকে টিকিয়ে রেখেছে। অন্যান্য অর্থনৈতিক উৎস খুবই দুর্বল। অন্যদিকে ইসরাইল বা ইয়াহুদিরা দুনিয়ার এমন কোন বড় ব্যবসা নেই যে, তারা নামে বেনামে জড়িত নয়। টাকা তাদের সমস্যা নয়। টাকা থাকলে সলুউশন কেনা যায়। ইরানের সে সক্ষমতা নেই। গত ২ বছরে ইরানী মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঘটেছে ৪০%। ব্যাঙ্কে তরল টাকার সঙ্কট, খাদ্য পন্যের সংকট।
৫. ইরানের মূল পরিকল্পনাকারী শীর্ষ নেতাদের যখন ২ দিনে প্রায় ৮৬ জনকে মেরে ফেলল, স্বভাবতই সেখানে মানসিক স্থিরতার ব্যাপার আছে, আরও আছে চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়া। একটা ব্যালেন্সড ডিফেন্স সিস্টেম যখন ভেঙ্গে পড়ে, নতুন কেউ দায়িত্ব নিলেও তার বেগ পেতে অনেক সময় লাগে। অভিঙ্গতা এক দিনে জন্মায় না। অভিঙ্গরা এখন ওপারে।
৬. ইরান শিয়া সুন্নি নিয়ে খেলা করেছে। জিওপলিটিক্স নিয়ে বেশি সময় নষ্ট করেছে কিন্তু পরিস্থিতি বাগে আনতে পারেনি।
৭. ইরান নতুন নতুন ড্রোন আর মিসাইল বানিয়েছে। অথচ জনগনকে রক্ষার জন্যে কোন বাঙ্কার বানায়নি। জনগন আজ রেলস্টেশনে বা সপিংমলের আন্ডার গ্রাউন্ডে থাকছে। অন্যদিকে রাজধানী তেহরান থেকে বাই রোডে কেউ বের হতেও পারছে না। জনগন দুটো যুদ্ধ এক সাথে অতিক্রম করছে: একটা এক দেশের সাথে অন্য দেশের আর একটা মানসিক যুদ্ধ নিজের সাথে নিজের বা পরিবারের। ইসরাইলের মত ইরানে সুগঠিত বা পূর্বপরিকল্পিত কার্যক্রমের অভাব স্পষ্ট।
৮. ইরানের মিসাইল উৎপাদন কেন্দ্র বা উৎক্ষেপন কেন্দ্র গুলো, ফায়ারিং স্কোয়াড গুলো বেশির ভাগ উন্মক্ত ময়দানে। যেখানে সহজেই ফাইটার জেট/ড্রোন দিয়ে এ্যাটাক করা যায়। চীন বা রাশিয়ার মত হিডেন সারফেস নিয়ে ইরান অত মাথা ঘামায়নি। যেটা আর একটা ভুল।
আমি হলে শুরু থেকে কি করতাম যদি ইরানের যুদ্ধের প্লান করার ক্ষমতা থাকত:
১. শুরুতেই চেষ্টা করতাম সাইবার এ্যাটাকের। হয়ত রাশিয়ান বা ৩য় কোন গোষ্টিকে ভাড়া করতাম ইসরাইলের পুরো ইন্টারনেট ব্যবস্থা কয়েক ঘন্টার জন্যে বিকল করে দিতে। আর সিক্রেট ডাটা গুলো কালেক্ট করতে।
২. একই সময়ে নিজস্ব সার্ভারের এক্সেস লিমিটেড করে দিতাম এবং সব কর্মকর্তাদের গত ৩ মাসের কর্মকান্ডের হিসাব নিয়ে সন্দেহ ভাজনদের ফিল্টার করে ফেলতাম। তাদের অধীনে যত পরিকল্পনা ছিল, তা রিএ্যারেন্জ করতাম। হয়ত পরিকল্পনা মোতাবেক আক্রমনের দিন ক্ষণ বা স্থান, মিসাইলের উৎক্ষেপন লোকেশান সব চেন্জ করে ফেলতাম। কেউ যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত পরিবার বা কারও সাথে যোগাযোগ করতে পারবে না।
৩. সর্বপ্রথম ইসরাইলের রাডার এলাকায় এবং বিমান বন্দরে মিসাইল ফেলতাম। রানওয়ে ধ্বংস করতাম। যেহেতু আকাশ পথেই ইরান কে আক্রমন করা সহজ। রানওয়ে ধ্বংস হলে আমেরিকা বা জার্মান থেকে অস্ত্র আকাশ পথে আসতে পারত না বা বিলম্ব হত। আবার ফাইটার জেট ওড়ানো যেত না।
৪. এরপর পাওয়ার স্টেশন, ফুয়েল স্টেশন এবং গয়েন্দা অফিসে আক্রমন করতাম। ক্ষণস্থায়ী স্টেশন বসাতে কারেন্ট দরকার বা জ্বালানী দরকার। যদি সেগুলো ব্যবহার উপযোগী না হয় বা জ্বালানী না থাকে, তবে পরবর্তী আক্রমন ইসরাইলের জন্যে কঠিন হবে। কিন্তু ইরানের জন্যে স্বস্থিদায়ক হত।
৫. প্রথমে ফলস ফায়ার করে আয়রন ডোম/ব্যাটারী শেষ করে বা ব্যস্ত রেখে কয়েক মিনিটের ব্যবধানে শক্তিশালী ব্যালেস্টিক মিসাইল ছাড়তাম। টার্গেট হত, ভিআইপি ভবন, উচুঁ উঁচু ভবন, টিভি কেন্দ্র এবং ফায়ার সার্ভিস কেন্দ্র। এগুলোতে জনগনের ক্ষতি কম হত। কিন্তু আতঙ্ক বেশি ছড়ানো যেত।
৬. একই সময় ফিলিস্তিনি এলাকায় যেখানে ইসরাইলের বেজ ক্যাম্প আছে, সেখানে আক্রমন চালাতাম। ব্যাপারটা হল, সব দিক থেকে যেন প্রচন্ড চাপ পরে নেতানিয়াহুর উপর।
৭. যদি ইসরাইলের রান ওয়ে নষ্ট থাকে, রাডার অকেজো থাকে তাহলে দেরি না করে যুদ্ধ বিমান পাঠাতাম টার্গেটেড ভিআইপিদের আক্রমনের জন্যে।
৮. যদি পারমানবিক অস্ত্র রাখার এরিয়ার লোকেশন জানা যায়, তবে তাদের প্রবেশ মুখ বা উৎক্ষেপন প্লান্ট ধ্বংস করে দিতাম।
৯. হরমুজ প্রনালিতে জাহাজ চলাচলে বন্ধু দেশ ছাড়া সব সীমিত করে দিতাম।
১০. পরবর্তী টার্গেট রাখতাম মিসাইল গুলো তাক করে রাখা মধ্যপ্রাচ্যে যেখানে যেখানে আমেরিকা বা ইসরাইলের মিত্র সেনাক্যাম্প আছে। যেহেতু সাটেলাইট থেকে বা ড্রনের মাধ্যমে ইসরাইল সবই দেখে, এই ধরনের প্রস্তুতি দেখে তারা আক্রমন করতে দুবার ভাববে।
১১. সেনাবাহিনীর যেসব আন্ডারগ্রাউন্ড বাঙ্কার এবানডেন্ট হয়েছে বা ভ্যাকেন্ট হয়েছে, সেগুলোতে জনগনকে আশ্রয় দিতাম।
১২. ডুবো জাহাজ বা যুদ্ধ জাহাজ দিয়ে সমুদ্রে টহল বাড়াতাম যাতে ইসরাইলে অস্ত্র ঢোকা বন্ধ থাকে। জ্বালানি তেল ঢোকাও বন্ধ করতাম।
১৩. বিদেশি ছোট বড় যত মিডিয়া আছে, যথা সম্ভব লবিং করে ইরানের পক্ষে নিউজ প্রচার করাতাম।
১৪. যেদিন গুলোতে ইরান হতে আক্রমন হবে না, সে দিন গুলোতে হুথি বা অন্যান্য গোস্ঠীকে বরাবরের মত ঝটিকা আক্রমন করার ব্যবস্থা করতাম।
১৫. ইরানের কূটনৈতিক সক্ষমতা কম। এর বন্ধু দেশ নেই। বরং আছে ব্যবসায়ীক বন্ধু। আবার ইরানের ব্যবসার পথ খুব বিস্তৃত নয়। কাজেই উত্তর কোরিয়া হোক, তুরস্ক বা রাশিয়া যেই হোক, নিজের লাভ ছাড়া সাহয্যের হাত কেউ বাড়াবে না। চীন হয়ত তেলের বিকল্প ব্যবস্থা না পাওয়া পর্যন্ত ব্যাক আপ দিয়ে যাবে। কাজেই ইরান কে নিয়ে সবাই গলফ খেলবে যুদ্ধ শেষ না হওয়া পর্যন্ত। এদিকে পাকিস্তান যদি আমেরিকার হয়ে গাদ্দারি করে তবে শেষ রক্ষা আর হবে না। সে ক্ষেত্রে পারমানবিক বোমা ছোড়া আমার শেষ কাজ হত। মরবই যদি শত্রুদের মেরে মরব।
১৬. আমেরিকা যেহেতু প্রত্যাক্ষ যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে বি২ বোমারু থেকে বোমা ফাটিয়ে, আমেরিকার সাথে তাই মধ্যপ্রাচ্যের তেল যাতে কোন মাধ্যমেই না যায়, তার অস্ত্র যাতে কেউ না কেনে, তার দেশে কেউ যাতে টেকনোলজি বিক্রি না করে, ব্রেইন ড্রেন যাতে না হয়, ডলারের অলটারনেটিভ হিসেবে যেন রুবেল বা ইয়েন জায়গা করে নেয় ইত্যাদি দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা করতাম। আমেরিকা অলস জাতি। ৭৬% মানুষ ওবেসিতে আটকা, ৭.২% লোক বেকার। সে নিজ দেশের লোকদিয়ে বেশিদিন টিকতে পারবে না। অর্থনৈতিক অবস্থা গত মাসেও নরবরে ছিল, আরব দেশে সফরে গিয়ে ট্রাম্প ১৪২ বিলিওন ডলার নিয়ে গেছে। আমি এটাকে ব্যবসা বলব না, ভিক্ষাবৃত্তি বলব। এরকম ভাবে আমেরিকাকে সহযোগিতা না করার জন্যে মুসলিম রাস্ট্রগুলোকে অনুরোধ করতাম।
শুধু করতাম , করতাম বলছি, আসলে বাস্তবতা হয়ত ভিন্ন হত। তবুও মনের উপর চাপ থেকে লিখে ফেললাম। দুর্বলের পক্ষ হয়ে লিখলাম। আল্লাহ নিরীহ মানুষদের জান মাল রক্ষা করুন।
সময় থাকলে ভিডিওটা দেখেন: এমেরিকা এবং ইজরায়েলের বন্ধুত্বের আসল কারণ কি?