
সব কিছু একটা রিদমে চলে। সেই রিদম ভেঙ্গে গেলে ধ্বংস বা পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। তখন শুধু সময়ের অপেক্ষা করতে হয়। নিয়মিত জোয়ার ভাটার ঢেউয়ে পরিবেশ-প্রতিবেশ এবং জীব বৈচিত্র একটা সমন্বয়ের মধ্যে থাকে, শান্ত থাকে, শান্তিতে থাকে। সুনামির ঢেউ কিন্তু একটা বিশালাকার ঢেউ, সে ঢেউয়ে সব তছনছ হয়ে যায়। জুলাই-আগস্ট সুনামির ঢেউ হয়ে এসেছিল। এখন NCP র বিলীন হওয়া শুধু সময়ের অপেক্ষা।
একটা স্বৈরাচারীর শাসকের উচ্ছেদের জন্যে একটা বিশাল ঢেউ দরকার ছিল। ৩৬জুলাই আন্দোলন বা ০৫ই আগস্টের বিজয় , সময়ের প্রেক্ষাপটে স্বরনীয় ব্যাপার। আমি সাদোরে গ্রহন করেছি।
কিন্তুু তার পরবর্তী সময়ে উগ্রতা আমি মেনে নিতে পারিনি। যেমন, ৩২ নং বাসা গুড়িয়ে দেয়া, মুজিবের ভাস্কর্য ভেঙ্গে ফেলা, বুদ্ধিজীবি কবরে মুজিবের ফলক, টেরাকেটা ইত্যাদি ভেঙ্গে ফেলা। এটা অস্বীকার করা যাবে না যে, শেখ মুজিবর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক, একটি বলিষ্ঠ কন্ঠ, নতুন দেশ গড়ার অংশীদ্বার, একটা পতাকা বাঙ্গালীদের পক্ষে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার গৌরবান্বিত ব্যক্তি।
তার ঐতিহাসিক ৩২নং বাসা গুড়িয়ে বা মূর্তি ভেঙ্গে ইতিহাস পাল্টানো যায় না। যারা এসব করেছে, তারা বিবেকহীন কাপুরুষ, কুলাঙ্গার। সেসব করার আগে ভাবা উচিত ছিল, কে জাতীস্বত্ত্বার পরিচয় দিয়েছিল? কে রাষ্ট্রঘোষিত বাঙ্গালী জাতির পিতা? যারা এসব করেছো, তারা তো স্বাধীনতা যুদ্ধ দেখনি, সেই সময়কার ইমোশন '২৪ এর ইমোশনের চেয়ে তীব্র ছিল। যদি জানতে তবে ওসব করতে না। এখন তোমরা যদি কোন স্ট্যাচু বানাও বা জুলাই ভাষ্কর্য বানাও, পরবর্তী প্রজনম্ম সেটাও ভাঙবে। কারন তোমরা সেটাই শিখিয়ে দিয়েছো।
এটা সত্য যে, দুর্নীতির কারনে শেখ মুজিবের আশপাশের আপনজনরা কন্ট্রোলের বাইরে চলে গিয়েছিল। ন্যায় বিচার তিনি প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। তার অযোগ্য কন্যা ও পরবর্তী বংশধররেরা প্রতিশোষ পরায়ন এবং লোভী স্বৈরাচারী শাসক। তাদের ন্যায় বিচার হোক, দেশের জনগন সুবিচার পাক, সেটা আমি মনে প্রাণে চাই।
টুঙ্গি পাড়া আক্রমন হলে সেটা যে কোন দল বা মহলের জন্যে সাপের গর্তে হাত ঢোকানোর মত হবে। সমাজের কিছু সফট কর্নার আছে। সেগুলো দল, মত নির্বিশেষে সকলের বিবেককে নাড়া দেয় শুধু বিবেগহীন হুজুগে বাঙ্গালীদের ছাড়া। মার্চ টু গোপালগন্জ বা গোপালগন্জ দখলে অংশগ্রহনকারীরা হুজুগে বাঙ্গালী। NCP যাদের নিয়ে এগোচ্ছে বা যাদের পরামর্শে এগোচ্ছে, তারা আবার কাদের হয়ে খেলছে সেটা কি NCPর কর্মীরা জানে?
গোপালগন্জে বাসায় ঢুকে মায়ের সামনে থেকে কিশোর ছেলেকে তুলে নিয়েছে, মেয়েদের হেনেস্থা করেছে, কমপক্ষে ৪ জন অরাজনৈতিক ব্যক্তিকে ফায়ার করে মেরেছে, যাদের ময়নাতদন্ত করতে দেয়া হয়নি। এদিকে সন্দেহভাজন ছেলেকে না পেয়ে বাবা মায়ের গায়ে হাত তোলা হয়েছে। এসব ভাল প্রাকটিস না।
আর্মি, বিজিবি বা পুলিশ: আপনারা পোষাক পেয়েছেন, অস্ত্র পেয়েছেন রাস্ট্রের পক্ষে। ভুলে যাবেন না, অন্যায় করলে তা বুমেরাং হয়ে ফিরে আসে। দায়িত্ব পালন করুন কিন্তু সৎ থাকুন, আইনের পক্ষে থাকুন, পক্ষপাত দুষ্ট আচরণ করবেন না। আজ আমার বাবা মা ভাই বোন নির্যাতিত হচ্ছে যদিও তারা অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়, কাল কিন্তু আপনার পরিবারের সদস্যও ভিক্টিম হতে পারে। আমার একটা পেনিস আছে মানেই, আমি রেপ করে বেড়াই বা বেড়াবো, তেমন ভাবলে ভুল হবে।
NCP:
১. বস্তুত: এরা আওয়ামিলীগকে ভয় পাচ্ছে। যে কারনে তারা নির্মূল অভিযানে নেমেছে। কিন্তু এর ফল হবে উল্টো। NCP নিজের অজান্তেই আ.লীগকে হাইলাইট করছে। কাউকে যখন গুরুত্ব দেয়া কমিয়ে দেয়া হয় বা যাদের উপযোগিতা শূন্য প্রমান করা যায়, তখন তারা বিলুপ্ত হয় সময়ের সাথে সাথে। NCP পুরোই উল্টো পদ্ধতিতে এগোচ্ছে। আ.লীগ তো আগাছা নয় যে নিড়ানী দিলে নির্মূল হবে। গোড়া উচ্ছেদ হয়েছে, এখন মনে মস্তিষ্কে উটপাটন করতে হবে। মনে হয় না NCP তা পারবে।
২. আ.লীগ বা বি.এন.পির মত NCP ও রাস্তাঘাট দখল করছে, একাংশ আইন হাতে তুলে নিয়ে মব জাস্টিস করছে। কোথাও কোথাও চাঁদাবাজী করছে। দলীয় লোগোর অপব্যবহার করছে। জুলাই আন্দোলনকারী হিসেবে ফায়দা লুটছে। তাহলে পূর্ববর্তী রাজনৈতিক দলের সাথে এদের তফাতটা কোথায়?
৩. NCPতে বেশ কিছু পরিচিত মুখ আগে অন্য রাজনৈতিক দলে ছিল, তাদের কে আমরা মিডিয়ায় দেখতে পাই। এর মানে কি দাঁড়ালো ? নতুন মোড়কে পুরান মাল?
৪. NCP র ভেতরের বুদ্ধিজীবি বা পরামর্শক কারা? এই নতুন দলটির কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করলে খুব সহজেই বোঝা যায় যে, বিদেশে অবস্থানরত ১১-১২জন পিপীলিকার মিডিয়া ভিত্তিক পরামর্শের সাথে মিলে যায়। এই পিপীলিকাদের মধ্যে একজনের পাখা গজায়ে গেছে: পিনাকী ভট্রাচার্য, যিনি আগুনে ঝাপ দিয়েছেন, খুব শীঘ্রই জয় বাংলা হবেন। দেশত্যাগী নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী পরামর্শকদের দিয়ে আর কতদিন? নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। মনে রাখা দরকার হুইল চেয়ারে বসলে আর একজনকে ঠেলতে হয়? কেন যেন মনে হচ্ছে, NCPর আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেয়াটাই প্রথম এবং শেষ নির্বাচন।
৫. ড. ইউনূস কে অপব্যবহার করে NCP খুব বোকামি করছে। ওনাকে ওনার মত কাজ করতে দেয়া দরকার ছিল সামনের আরও কয়েকটা বছর। অভীঙ্গতার ব্যপ্তিকাল, প্রভাব, কর্ম যোগ্যতা এবং খ্যাতি দেশকে দাড় করানোর জন্যে খুব দরকার। বড় গাছের বড় বাতাস। কিন্তু NCP কার্যত মনে হচ্ছে ড. ইউনূসের জন্য একটি বাঁধা। NCP সুনামির ঢেউয়ের মত খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, এর খেসারত অনেক দূর আগাবে, নতুন স্বাধীনতার আবেগের চরম ধ্বংস ঘটাবে। ফলাফল, হয়ত গৃহযুদ্ধ শুরু হবে, না হয় আবার আ.লীগ সংসদে ঢুকবে।
৬. আমেরিকা- অস্ট্রেলিয়ার কিছু এস্টেটে মাইকে আযান দেয়া নিষেধ। তাই বলে কি মুসল্লিরা নামায পড়া বন্ধ করে দিয়েছে? আমার অফিসে বাংলায় কথা বলা নিষেধ। তাই বলে কি আমি মনে মনে বাংলা বলি না? NCP র উচিত ছিল নিজের যোগ্যতা প্রমান করা, পূর্বের রাজনৈতিক দলগুলোর চেয়ে কাজে এবং আদর্শে শ্রেষ্ঠ, সেটা তুলে ধরা। আ.লীগ কে নিষিদ্ধ ঘোসনা করল মানেই কি সেটা বিলুপ্ত হল? মনে প্রাণে আ.লীগকে সাপোর্ট করা অপরাধ? যদি তাই হয়, তবে যে সংবিধান অনুযায়ী তোমরা নতুন দল গঠন করলে, সেখানেই তো বলা আছে, বাক স্বাধীনতার কথা, ভোটাধিকারের কথা। যদি শুরুতেই মর্তাদর্শ-বাকস্বাধীনতা-দল নির্বাচন ইত্যাদিতে তোমরা বাঁধা দাও তাহলে এটাই বোঝায় যে, তোমরা আর একটা স্বৈরাচারী রাষ্ট্রীয় শাষক ও শোষক গুস্টি হতে যাচ্ছো।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুলাই, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৩১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



