লেখকঃ চৌধুরী মোহাম্মদ ইমরান
এম সি কলেজ, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ।
ছুটির দিনে রাহাত বাসা থেকে বের হয়না। সারাদিন ঘুমায়। শুক্রবারে অনেক কষ্টে নামাজে যায়। তাও একদম শেষের দিকে। এক রাকাত নামাজ তার মিস হবেই। আজ শুক্রবার না তাই নামাজের চিন্তা নেই। নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। সে একজন ব্যাংকার। ব্যাচেলর থাকে। এই বাসার মালিক কোন ব্যাচেলরের কাছে বাসা ভাড়া দিবেন না কিন্তু সে বাসা নেওয়ার সময় মিথ্যে বলেছে। বলেছে, সে বিবাহিত আপাতত বউ নিয়ে আসতে পারবে না। কিছুদিন গেলে বউ নিয়ে আসবে।
.
এর পর বাসার মালিক মাসের মধ্যে পাঁচ সাত দিন এসে খুঁজ নিয়ে যাবেন রাহাতের বউ এসেছে কিনা। রাহাত নানা অজুহাত দেখিয়ে তাকে প্রতিনিয়তই ফাঁকি দিচ্ছে।
তার নিশ্চিন্তে ঘুমানোর মধ্যে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াল দরজার টুক টুক শব্দ। বেলা ভালোই হয়েছে যে কেউ এসে এখন ডাকতে পারে। রাহাত শুয়ে শুয়ে ভাবল কে হতে পারে?
দরজায় টুকা দেওয়ার শব্দ থেকে বোঝা যাচ্ছে এটা কোন ধৈর্যশীল মানুষের কাজ। একটু পর পর দু তিনটা করে টুকি দিচ্ছে।
.
রাহাত উঠে গিয়ে দরজা খুলল। দরজা খুলে যাকে দেখল তাকে দেখার কল্পনাই সে করেনি ।
.
কি অপূর্ব একটি মেয়ে। তার নাম তাহমিনা। সে হালকা নীল রঙ্গের একটি শাড়ি পরে এসেছে। এই মেয়ে রাহাতের কলিগ। তার উপর অফিসের সবাই দুর্বল। তাহমিনা্র লিংক ম্যানেজারের সাথে এরকম কথা অফিসের সবাই বলে থাকে। রাহাত তাহমিনার সাথে খুব একটা কথা বলেনি। দেখা হলে হাই হ্যালো এরকম।
.
অনেক দিনের পুরনো একটা লুঙ্গি রাহাতের পরণে। তাহমিনার সামনে এই লুঙ্গি পড়ে থাকতে তার খুব লজ্জা লাগছে। তবু লজ্জা ভাব কাটিয়ে সে বলল, কি ব্যাপার আপনি হঠাত করে যে।
.
তাহমিনা একা আসেনি তার সাথে একটি বড় লেদার ব্যাগ আছে।
রাহাত বলল, আপনি কি ভিতরে আসবেন।
আচ্ছা আপনি কি বলুন তো? আপনার মতো গাদা টাইপ মানুষের সাথে সারাজীবন আমি কাটাব কিভাবে?
তাহমিনার মুখে এমন কথা শুনে রাহাত হকচকিয়ে গেল। কি বলে এই মেয়েটা? পাগল টাগল হয়ে গেল নাকি?
দেখি রাস্তা থেকে সরে দাঁড়ান। তাহমিনা নিজে নিজে ব্যাগ নিয়ে ঘরে ঢুকল।
রাহাতের বিছানায় মশারি টানানো। সে মশারি তুলতে তুলতে বলল, বাসাটা তো ঘোড়ার আস্তাবল বানিয়ে রেখেছ। আর তোমার পরণে এটা কি? ন্যাকড়া পরে আছ কেন?
.
রাহাত কিছুই বুঝতে পারছেনা। কি হচ্ছে তার সাথে। এই মেয়ের সাথে তার ভালো করেই কথা হয়নি অথচ মেয়েটির ব্যবহারে মনে হচ্ছে এই মেয়ে তার হাজার বছরের চেনা।
.
কি হলো বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছ কেন? শুন আমি ঠিক করেছি আজকেই বিয়ে করব। আর বিয়ে বর আপনাকেই ঠিক করেছি। আমার জানা মতে আপনি ব্যাচলর। ঠিক বলেছি না?
.
রাহাত আমতা আমতা করে বলল, আপনি আমাকে বিয়ে করবেন কেন?
দেখেন মানুষ প্রেমের প্রস্তাব দেয় খুব সহজে যা সমাজ স্বীকৃত নয় অথচ আমি আপনাকে বিয়ে প্রস্তাব দিচ্ছি কিন্তু আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আমি আপনাকে খুন করতে এসেছি এমন ভাবে আমার দিকে তাকাচ্ছেন। বিয়ে করতে রাজি না থাকলে বলুন চলে যাই। অযথা সময় নষ্ট করবেন না।
.
রাহাত চেয়ার টেনে তাহমিনার পাশে বসে বলল, সত্যি আপনি আমাকে বিয়ে করতে চান।
মিথ্যে হলে এত বড় লেদার ব্যাগ টেনে টেনে নিয়ে আসতাম না। আচ্ছা শুন এতো আপনি আপনি করে কথা বলতে হবেনা। তুমি করেই বলো। সাথে টাকা পয়সা কিছু আছে?
.
রাহাত উঠে গিয়ে মানি ব্যাগ হাতে নিল। মাস শেষের দিকে তাই খুচরো কিছু টাকা পড়ে আছে।
.
তাহমিনা বলল টাকা না থাকলে সমস্যা নেই আমার কাছে আছে। চটজলদি একটা পাঞ্জাবি আর প্যান্ট পরে নাও।
কোন এক অজানা কারনে রাহাতের মন ভালো হয়ে উঠল। কি অদ্ভুত ভাবেই এতো রুপবতী একটি মেয়ের বর হতে যাচ্ছে। এর চেয়ে সৌভাগ্যের বিষয় আর কি হতে পারে?
রাহাত আর তাহমিনা একসাথে রিকশায় যাচ্ছে। তাহমিনা বলল এতো চুপচাপ কেন? আমি চুপচাপ মানুষ পছন্দ করিনা। কথা বলতে ভাল না লাগলে তুমি অন্য রিকশায় যাও।
.
রাহাত কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। আচমকা সে বলে ফেলল, আজই কি আমাদের বাসর রাত হবে?
তাহমিনা কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে বলল, বাসর রাত করতে হলে তো ফুল লাগবে কিন্তু তোমার মানিব্যাগের যা অবস্থা তাতে মনে হয়না তুমি হাজার দেড়েক টাকার ফুল কিনতে পারবে।
.
রাহাত আর কিছু বলল না। চুপ চাপ বসে রইল।
রিকশা থেকে নেমে তাহমিনা কাকে যেন ফোন করল। রাহাত বলল কাজী অফিসে তো চলেই এসেছি তো কার অপেক্ষা করছ?
আরে বিয়ে করতে স্বাক্ষী লাগেনা? স্বাক্ষী ছাড়া কি বিয়ে হয়?
.
কথা বলতে বলতে আরো দুজন মানুষ এসে তাদের সাথে শামিল হলো। একজন পুরুষ একজন মহিলা। পুরুষ লোকটিকে দেখিয়ে তাহমিনা বলল, ও হচ্ছে সম্রাট আর ওই মেয়েটি আমার বোন শামিমা। আমি বিয়ে করব সম্রাটকে। তুমি আর শামিমা হবে বিয়ের স্বাক্ষী। তোমার সাথে এমন অভিনয় করেছি কেন জান, আমি চাচ্ছিলাম আমার বিয়ের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে তাই এটা করেছি আর তাছাড়া তোমাকে এমনি এমনি বললে তো আর তুমি বিয়ের স্বাক্ষী হয়ে আসতেনা তাই না?
.
সম্রাট আর তাহমিনার বিয়ে হয়ে গেছে। তারা দুজনে চলে যাচ্ছে। রাহাত দাঁড়িয়ে রইল। রাহাত বিড় বিড় করে বলল, তুমি আমার জীবনে স্মৃতি হয়ে রইবে চিরকাল।
.
কিছু কিছু মানুষের জীবনে হঠাত করে এক আগুন্তুক এসে সব কিছু উলট পালট করে দিয়ে যায়। এসব মানুষ জীবনে হয়ত অনেক সুখী হতে পারে কিন্তু যাকে উলট পালট করে দিয়ে যায় সে হয়ত আর কখনোই সুখী হতে পারেনা।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:২১