somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

@স্মৃতি হয়ে রবে চিরকাল@

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


লেখকঃ চৌধুরী মোহাম্মদ ইমরান
এম সি কলেজ, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ।

ছুটির দিনে রাহাত বাসা থেকে বের হয়না। সারাদিন ঘুমায়। শুক্রবারে অনেক কষ্টে নামাজে যায়। তাও একদম শেষের দিকে। এক রাকাত নামাজ তার মিস হবেই। আজ শুক্রবার না তাই নামাজের চিন্তা নেই। নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। সে একজন ব্যাংকার। ব্যাচেলর থাকে। এই বাসার মালিক কোন ব্যাচেলরের কাছে বাসা ভাড়া দিবেন না কিন্তু সে বাসা নেওয়ার সময় মিথ্যে বলেছে। বলেছে, সে বিবাহিত আপাতত বউ নিয়ে আসতে পারবে না। কিছুদিন গেলে বউ নিয়ে আসবে।
.
এর পর বাসার মালিক মাসের মধ্যে পাঁচ সাত দিন এসে খুঁজ নিয়ে যাবেন রাহাতের বউ এসেছে কিনা। রাহাত নানা অজুহাত দেখিয়ে তাকে প্রতিনিয়তই ফাঁকি দিচ্ছে।
তার নিশ্চিন্তে ঘুমানোর মধ্যে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াল দরজার টুক টুক শব্দ। বেলা ভালোই হয়েছে যে কেউ এসে এখন ডাকতে পারে। রাহাত শুয়ে শুয়ে ভাবল কে হতে পারে?
দরজায় টুকা দেওয়ার শব্দ থেকে বোঝা যাচ্ছে এটা কোন ধৈর্যশীল মানুষের কাজ। একটু পর পর দু তিনটা করে টুকি দিচ্ছে।
.
রাহাত উঠে গিয়ে দরজা খুলল। দরজা খুলে যাকে দেখল তাকে দেখার কল্পনাই সে করেনি ।
.
কি অপূর্ব একটি মেয়ে। তার নাম তাহমিনা। সে হালকা নীল রঙ্গের একটি শাড়ি পরে এসেছে। এই মেয়ে রাহাতের কলিগ। তার উপর অফিসের সবাই দুর্বল। তাহমিনা্র লিংক ম্যানেজারের সাথে এরকম কথা অফিসের সবাই বলে থাকে। রাহাত তাহমিনার সাথে খুব একটা কথা বলেনি। দেখা হলে হাই হ্যালো এরকম।
.
অনেক দিনের পুরনো একটা লুঙ্গি রাহাতের পরণে। তাহমিনার সামনে এই লুঙ্গি পড়ে থাকতে তার খুব লজ্জা লাগছে। তবু লজ্জা ভাব কাটিয়ে সে বলল, কি ব্যাপার আপনি হঠাত করে যে।
.
তাহমিনা একা আসেনি তার সাথে একটি বড় লেদার ব্যাগ আছে।
রাহাত বলল, আপনি কি ভিতরে আসবেন।
আচ্ছা আপনি কি বলুন তো? আপনার মতো গাদা টাইপ মানুষের সাথে সারাজীবন আমি কাটাব কিভাবে?
তাহমিনার মুখে এমন কথা শুনে রাহাত হকচকিয়ে গেল। কি বলে এই মেয়েটা? পাগল টাগল হয়ে গেল নাকি?
দেখি রাস্তা থেকে সরে দাঁড়ান। তাহমিনা নিজে নিজে ব্যাগ নিয়ে ঘরে ঢুকল।
রাহাতের বিছানায় মশারি টানানো। সে মশারি তুলতে তুলতে বলল, বাসাটা তো ঘোড়ার আস্তাবল বানিয়ে রেখেছ। আর তোমার পরণে এটা কি? ন্যাকড়া পরে আছ কেন?
.
রাহাত কিছুই বুঝতে পারছেনা। কি হচ্ছে তার সাথে। এই মেয়ের সাথে তার ভালো করেই কথা হয়নি অথচ মেয়েটির ব্যবহারে মনে হচ্ছে এই মেয়ে তার হাজার বছরের চেনা।
.
কি হলো বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছ কেন? শুন আমি ঠিক করেছি আজকেই বিয়ে করব। আর বিয়ে বর আপনাকেই ঠিক করেছি। আমার জানা মতে আপনি ব্যাচলর। ঠিক বলেছি না?
.
রাহাত আমতা আমতা করে বলল, আপনি আমাকে বিয়ে করবেন কেন?
দেখেন মানুষ প্রেমের প্রস্তাব দেয় খুব সহজে যা সমাজ স্বীকৃত নয় অথচ আমি আপনাকে বিয়ে প্রস্তাব দিচ্ছি কিন্তু আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আমি আপনাকে খুন করতে এসেছি এমন ভাবে আমার দিকে তাকাচ্ছেন। বিয়ে করতে রাজি না থাকলে বলুন চলে যাই। অযথা সময় নষ্ট করবেন না।
.
রাহাত চেয়ার টেনে তাহমিনার পাশে বসে বলল, সত্যি আপনি আমাকে বিয়ে করতে চান।
মিথ্যে হলে এত বড় লেদার ব্যাগ টেনে টেনে নিয়ে আসতাম না। আচ্ছা শুন এতো আপনি আপনি করে কথা বলতে হবেনা। তুমি করেই বলো। সাথে টাকা পয়সা কিছু আছে?
.
রাহাত উঠে গিয়ে মানি ব্যাগ হাতে নিল। মাস শেষের দিকে তাই খুচরো কিছু টাকা পড়ে আছে।
.
তাহমিনা বলল টাকা না থাকলে সমস্যা নেই আমার কাছে আছে। চটজলদি একটা পাঞ্জাবি আর প্যান্ট পরে নাও।
কোন এক অজানা কারনে রাহাতের মন ভালো হয়ে উঠল। কি অদ্ভুত ভাবেই এতো রুপবতী একটি মেয়ের বর হতে যাচ্ছে। এর চেয়ে সৌভাগ্যের বিষয় আর কি হতে পারে?
রাহাত আর তাহমিনা একসাথে রিকশায় যাচ্ছে। তাহমিনা বলল এতো চুপচাপ কেন? আমি চুপচাপ মানুষ পছন্দ করিনা। কথা বলতে ভাল না লাগলে তুমি অন্য রিকশায় যাও।
.
রাহাত কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা। আচমকা সে বলে ফেলল, আজই কি আমাদের বাসর রাত হবে?
তাহমিনা কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে বলল, বাসর রাত করতে হলে তো ফুল লাগবে কিন্তু তোমার মানিব্যাগের যা অবস্থা তাতে মনে হয়না তুমি হাজার দেড়েক টাকার ফুল কিনতে পারবে।
.
রাহাত আর কিছু বলল না। চুপ চাপ বসে রইল।
রিকশা থেকে নেমে তাহমিনা কাকে যেন ফোন করল। রাহাত বলল কাজী অফিসে তো চলেই এসেছি তো কার অপেক্ষা করছ?
আরে বিয়ে করতে স্বাক্ষী লাগেনা? স্বাক্ষী ছাড়া কি বিয়ে হয়?
.
কথা বলতে বলতে আরো দুজন মানুষ এসে তাদের সাথে শামিল হলো। একজন পুরুষ একজন মহিলা। পুরুষ লোকটিকে দেখিয়ে তাহমিনা বলল, ও হচ্ছে সম্রাট আর ওই মেয়েটি আমার বোন শামিমা। আমি বিয়ে করব সম্রাটকে। তুমি আর শামিমা হবে বিয়ের স্বাক্ষী। তোমার সাথে এমন অভিনয় করেছি কেন জান, আমি চাচ্ছিলাম আমার বিয়ের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে তাই এটা করেছি আর তাছাড়া তোমাকে এমনি এমনি বললে তো আর তুমি বিয়ের স্বাক্ষী হয়ে আসতেনা তাই না?
.
সম্রাট আর তাহমিনার বিয়ে হয়ে গেছে। তারা দুজনে চলে যাচ্ছে। রাহাত দাঁড়িয়ে রইল। রাহাত বিড় বিড় করে বলল, তুমি আমার জীবনে স্মৃতি হয়ে রইবে চিরকাল।
.
কিছু কিছু মানুষের জীবনে হঠাত করে এক আগুন্তুক এসে সব কিছু উলট পালট করে দিয়ে যায়। এসব মানুষ জীবনে হয়ত অনেক সুখী হতে পারে কিন্তু যাকে উলট পালট করে দিয়ে যায় সে হয়ত আর কখনোই সুখী হতে পারেনা।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:২১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

×