খালুসাহেব সোফায় বসে চা খাচ্ছেন। আমাকে দেখেই ব্যস্থ ভঙ্গিতে হাতে পত্রিকা নিয়ে পড়া শুরু করে দিলেন। এই পত্রিকা পড়ার মানে হলো তিনি এখন ব্যস্থ আছেন তাকে যে আমি আর ডিস্টার্ব না করি।
আমি খালুর সামনের সোফায় বসতে বসতে বললাম, খালু কেমন আছেন?
আমার দিকে না তাকিয়ে খালু সাহেব বললেন, হুম আছি।
আসলে খালু সাহেব পত্রিকা পড়ছেন না। শুধু তাকিয়ে আছেন পত্রিকার দিকে। খালু যে পাশে তাকাচ্ছেন তার অপর পাশে বড় করে শিরোনাম লেখা “ জিন্সপরা সুন্দরী তরুণী গণ ধর্ষণের স্বীকার”। পত্রিকার রিপোর্টাররা ধর্ষণ জাতীয় খবর লিখতে খুব পছন্দ করেন এবং এ জাতীয় খবর তারা খুব্ সাজিয়ে গুছিয়ে লিখে পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করান।
বাংলাদেশের বেশিরভাগ পাঠকরা ধর্ষণ জাতীয় খবর পড়তে পছন্দ করেন। যে পত্রিকা যত বেশি ধর্ষণের খবর ছাপা করে সেই পত্রিকা ততো ভালো চলে।
আমি খালু সাহেবকে বললাম, কালকে একটা ধর্ষককে হাতে নাতে ধরে গণধোলাই দিয়েছে শুনেছেন?
খালু কঠিন গলায় বললেন, আমি এ জাতীয় খবর পড়িনা এবং শুনিনা।
ধর্ষকরা ধর্ষণ করে যে তৃপ্তি পায় তা লেখায় পড়ে এক শ্রেণির মানুষ তৃপ্তি পায়, এটা কি আপনি জানেন?
না জানিনা। তুমি এ জাতীয় খবর নিয়ে আমার কাছে আসবেনা।
আসলে আমিও এ জাতীয় খবরে ইন্টারেস্ট না তবে ঘঠনা তো বেশ রহস্যজনক। রহস্যটা কি শুনতে চান?
আমি তোমার কাছ থেকে কোন গাজাখুরি কথা শুনতে চাই না।
না শুনতে চাইলেও শুনতে হবে। এটা শুনা আপনার জন্য খুব দরকারি।
খালু কিছু বললেন না। চুপচাপ পত্রিকা পড়া শুরু করে দিলেন।
আমি বললাম, কাল যে ধর্ষক ধরা পড়েছিল সেটা দেখতে একদম আপনার মতো।
খালু সাহেব মুখের সামনে থেকে পত্রিকা সরিয়ে চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকালেন।
আমি গলা বাড়িয়ে ফিশ ফিশ করে বললাম, কাল ঠিক এভাবেই ওই লোকটাও চোখ বড় বড় করে তাকাচ্ছিল। আপনার কি কোন জমজ ভাই আছে?
ইমু তোমার কথা শেষ হয়েছে?
আপনি আমার কথা বিশ্বাস করেছেন না তাইতো? না করারই কথা। আমিও নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতাম না।
খালুসাহেবের ধৈর্যের একটা মাত্রা আছে আজ সেই মাত্রা অতিক্রম করতে চলেছে। ধৈর্যের মাত্রা অতিক্রম করলে খালুসাহেব হাতের কাছে যা পান তাই ছুড়ে ফেলেন। আজ হাতের কাছে পত্রিকা আর চায়ের কাপ আছে এর যেকোন একটা ছুড়ে মারবেন নিশ্চয়।
খালু সাহেব কিছুই ছুড়ে মারলেন না। তিনি অতি শান্ত গলায় বললেন, দেখ ইমু ধর্ষণ একটি অতি মারাত্মক অপরাধ এবং এখন এটা খুব স্বাভাবিক হয়ে গেছে। প্রতিদিন পত্রিকা খুললেই এইসব খবর চোখে পড়ে কিন্তু আমি এই জাতীয় খবর পড়িনা কারন এই জাতীয় বিশ্রি খবর পড়ার সময় আমার হাতে নেই। তবে তোমাকে একটা উপদেশ দিচ্ছি ভালো লাগলে পালন করো, না লাগলে এক কান দিয়ে ঢুকিয়ে অন্য কান দিয়ে বের করে দিও।
আমি খুব আগ্রহ নিয়ে বললাম, জ্বি খালু বলুন।
খালু সাহেব বলা শুরু করলেন, এই জাতীয় খবর বয়ে বেড়ানো ভালো নয়। যত পারো এই জাতীয় খবর গোপন রাখবা। এখনকার দিনে এই রকম কোন ঘঠনা ঘঠলে মিডিয়া কর্মিদের যেন ঈদ হয়ে যায়। সত্য মিথ্যা সব মিলিয়ে তারা একটি রিপোর্ট তৈরি করে ফেলে। এই রিপোর্ট তৈরি করার মানে হলো পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা, সত্যতা তুলে ধরা নয়। এই সব খবর পড়ে শিক্ষার্থীসহ দেশের সাধারণ জনগণ প্রতিনিয়তই বিব্রত হচ্ছে। সত্য মিথ্যা মিলিয়ে পাঠক আকর্ষনীয় খবর তৈরি না করে, সঠিক ও সত্য খবর প্রকাশ করে তার বিচার চেয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করানো যেন তাদের কর্ম হয় এই আহবান মিডিয়া কর্মিদের কানে পৌছে দিতে হবে। আর তুমি হচ্ছ ইমু। কিছু অসাধারণ ক্ষমতা যে তোমার আছে তা আমি বিশ্বাস করি। আমি মনে করে তুমি চাইলে এই ব্যাপারে কোন উদ্যোগ নিতে পারো। আর তুমি উদ্যোগ নিলে এই রকম মারাত্মক অপরাধ থেকে বাংলাদেশ মুক্তি পাবে।
খালু সাহবের কথায় যুক্তি আছে। কঠিন যুক্তি আছে। এই যুক্তি কাজে লাগাতে হবে। আমি খালু সাহবের কথাগুলো ভাবতে ভাবতে নেমে পড়লাম রাস্তায়। রাস্তা দিয়ে অনেক মেয়েই হেটে যাচ্ছে কে কখন কিভাবে বিপদে পড়ে তা কেউ জানেনা। এই বিপদের হাত থেকে তাদেরকে রক্ষা করা ইমুদের কাজ। ইমু আমি একা নই ইমু বাংলাদেশের প্রতিটা নাগরিক।
লেখকঃ চৌধুরী মোহাম্মদ ইমরান
এম সি কলেজ, প্রাণিবিদ্যা বিভাগ।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মার্চ, ২০১৭ রাত ৯:১৮