তখন আমরা 'একুশের গল্প' পড়তাম-আমার খুব প্রিয় একটা গল্প। তখনো বুঝিনি, 'একজন রেণু' ঠিক আমার আশেপাশেই ছিল। তপুর রেণুর মতই আপেল রঙা,তন্বী মেয়ে ছিল যেন ও;সম্পর্কে আমাদের একটু দূরের আত্মীয়া। রেণু চশমা পরত কিনা জানিনা,তবে নিভৃতে আমার পথে আলো ছড়ানো এই রেণু মেয়েটা চশমা পরত। যখন বুঝেছিলাম,তখন বড্ড দেরী হয়ে গেছে হয়ত। পরীক্ষার খাতা হাতড়ে নাম খুঁজে ফিরেছিলাম,বৃষ্টিভেজা রাস্তায় ফেলেছিলাম দীর্ঘশ্বাস,করেছিলাম শত অভিনয়।তবু বৃথা সব-আসেনি সে।
ওর নামটা ছিল কবিগুরুর একটা কাব্যগ্রন্থের নামে। তখনো আমি কবিতা লেখা শুরু করিনি যদিও।নতুবা অমৃতার জন্য মীর্চা এলিয়াদ যেমন আবেগের বর্ষা ছুটিয়েছিল ওর ভাষায়,কে জানত হয়ত আমিও লিখতে পারতাম।
আমি কখনো শুনিনি,তবু শুনেছিলাম নাকি ভাল গান করত মেয়েটা। ওর চুলের বেণী তে আমি বহুবার চোখ রেখেছি একাডেমির জানালা গলে,কখনো জানেনি হয়ত ও। গল্পগুলো জানত সিটি কলেজের সেকশন-বি এর কিছু হারিয়ে যাওয়া বন্ধুরা।ওরা হাসত,আমি লজ্জা পেতাম।
আমার ছোট বোনটা ভালবাসত অনেক মেয়েটাকে। বাড়িতে যাতায়াতও ছিল নাকি। ওর মুখেই শুনেছিলাম সেই নিশ্চুপ কান্নার কথা।হয়ত কেউ বকছে না,তবু শ্রাবণ নেমেছিল ওর লালচে গাল বেয়ে। আমি যেন ছুঁয়ে দেখেছিলাম সে কান্না। একটিবার অসম্ভব এর মতন, চেয়েছিলামও হয়ত, আমার রেজাল্ট এর খুশির ভাগ খানিকটা ওকে দিয়ে দিতে। তবে শত অপূর্ণ ইচ্ছের খাতায় এটাও একটা আঁচড়।
সিটি কলেজের তিন তলার করিডোরটা হয়ত ঐ একটা কারণেই আমার প্রিয় ছিল। পা টিপে টিপে সাইন্সের একটা আতেল টাইপ ছেলে যে প্রায়শ ওখানে বেড়াতে আসত-কেউ খেয়াল করত কিনা,কে জানে।একটা নাম,একটা মুখ,কিছু না বলা কথা আর কিছু অবুঝ অনুভূতি। তারপর তো কেটে গেল বহু বছর নিভৃতেই।আমাদের গল্পটা আর লেখা হল না।
শুনেছি,কবিরা নাকি স্মৃতির বোঝা বয়ে নিয়ে চলে। আমি তো বলি-এ স্মৃতি নয়,পাপ। আর আমি হলাম সেই পাপী। নাহলে হঠাৎ কেন হারিয়ে যাওয়া মানুষগুলোকে মনে পড়ে যায় এভাবে?
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৬