somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এই ঘৃণার উৎস বা শেষ কোথায় ?

১৪ ই অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১০:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অপবিত্র হবে বলে শহীদ মিনারে পিয়াস করিমের মরদেহ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সংবাদটি পড়ে পবিত্র -অপবিত্র শব্দ এবং এসবের অন্তর্নিহিত ভাব ও ভাবনা নিয়ে সত্যিই গোলক ধাঁধাঁয় পড়ে গিয়েছি।
পবিত্রতা বা অপবিত্রতার প্রকৃত অবয়ব বা চেহারাটি আসলেই কেমন ?
ইন্ডিয়ায় এক যুবক জনৈক মুসলিমকে নির্মমভাবে প্রহার করেছে। নিজের পা দিয়ে পৌঢ় এই লোকটির পিঠের উপর সমানে লাথ্থি দিয়েছে । তার অপরাধ, এই গো-খাদক ( যদিও পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই গো-খাদক) কোরবাণী দিয়ে ভারত মাতাকে 'অপবিত্র' করে ফেলেছে ।
অর্থাৎ এই বাপ্পাদিত্য ( নামটি আমি ধরে নিয়েছি) ভারত মাতাকে পবিত্র করনের ক্রুসেডে নেমেছেন। সেই দৃশ্যটি ফেইস বুক এবং ইউটিউবের কল্যাণে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে।
সেই একই স্পিরিটে শহীদ মিনারকে পবিত্র করণের ক্রুসেডে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এদেশের এক বাপ্পাদিত্য। এই দুই বাপ্পাদিত্যের চিন্তাভাবনা এবং স্পিরিটে বোধ হয় কোন পার্থক্য নেই। এই দুই বাপ্পাদিত্যই মানুষের " ফিডম অব রিলিজয়াস এন্ড পলিটিকেল এক্সারসাইজের" বিরুদ্ধে তাদের মাসল পাওয়ার ও পেছনের রাজনৈতিক শক্তিটি ব্যবহার করছেন ।
এই ক্রুসেডারের (পবিত্রতা রক্ষাকারী) পেছনে লাইন ধরেছেন আ স ম আরেফিন সিদ্দিকীগণ। বাপ্পাদিত্যের সাথে নামে একটু পার্থক্য থাকলেও কামে বা কাজে কোন পার্থক্য নেই। কখনও অারেফিন নামে এই কাজ করতে সুবিধা হয়, অাবার কখনও বাপ্পাদিত্য নামে এই সুবিধাটি বেশী পাওয়া যায় । নামের মাধ্যমে দুটি ধর্মকে ব্যবহার করলেও এরা আসলে কোন ধর্মেরই পক্ষের শক্তি নয়। এরা মূলতঃ অধর্মের শক্তি,এরা অপশক্তি। এরা মানবতার শত্রু, এরা বাকস্বাধীনতা ও মুক্তচিন্তার শত্রু। পিয়াস করিম শুধু বেঁচে থাকতেই নয়, মরার পরেও এদের এই নগ্ন চেহারািট জাতির সম্মুখে তুলে ধরেছেন। প্রয়োজনে সরাসরি চামচা ও দালাল বলে অাখ্যা দিয়েছেন।
আমার আশংকা হচ্ছে আপাতত শহীদ মিনারের পবিত্রতা রক্ষা দিয়ে শুরু করা হয়েছে । বঙ্গমাতার পবিত্র মাটি অপবিত্র হয়ে যাবে- এই দাবিতে ভবিষ্যতে এমন মুক্তচিন্তা ও মুক্তবুদ্ধির কোন পিয়াস করিমের লাশ এই মাটিতে দাফন করার অনুমতি মিলবে না। সেই লাশ বঙ্গের উপসাগরেও নিক্ষেপ করা যাবে না। সেই সিংহের লাশ বাদবাকী ইদুরের বাচ্চারা সম্ভবত আরব সাগরে ভাসিয়ে আসবে।
কাজেই এই ঘৃণার উৎস বা কারনগুলি এখনই খুঁজে বের করা দরকার।
বাপ্পাদিত্য বসুর নেতৃত্বে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচর্য আ স ম আরেফিন সিদ্দিকের সঙ্গে তার অফিসে গিয়ে বৈঠক করেছেন। তখন তারা পিয়াস করিমের মরদেহ শহীদ মিনারে আনার অনুমতি না দেয়ার আহ্বান জানান। পরে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে ডেকে নিয়ে অনুমতি না দেয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান।
এ প্রসঙ্গে বাপ্পাদিত্য বসু বাংলামেইলকে বলেন, ‘আমরা মনে করি পিয়াস করিম ছিলেন মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তি। তিনি টিভি টকশোসহ সাধারণ মানুষের সামনেও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন। এমনকি আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল নিয়েও তিনি বিভিন্ন সময় বাজে মন্তব্য করেছেন। তাই আমরা তার মরদেহে শহীদ মিনারকে অপবিত্র হতে দিতে পারি না। এরপরও যদি সেই মরদেহ শহীদ মিনারে নিয়ে আসা হয় তাহলে আমরা সর্বাত্মক প্রতিরোধ গড়ে তুলবো।’
আমাদের মিডিয়া আবিস্কার করে ফেলেছে যে পিয়াস করিমের বাবা ছিলেন একজন রাজাকার। কিনতু একই কিসিমের কিংবা তারও চেয়ে বড় মাপের (ফরিদপুরের) নুরু রাজাকারের ছেলের লাশ দিয়ে বাপ্পাদিত্যদের এই শহীদ মিনার কিন্তু অপবিত্র হবে না। কারন নুরু রাজাকার এখন জাতির পিতার বেয়াই তথা জাতির বেয়াই হয়ে পড়েছেন !
অান্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালের বিভিন্ন কর্মকান্ড নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন ( বাপ্পাদিত্যের কথায় আজেবাজে মন্তব্য) শুধু পিয়াস করিম একা তুলেন নি - সারা পৃথিবীর মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ এবং সকল মানবাধিকার সংগঠণ এসব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। সেই সব প্রশ্নের একটারও জবাব দেওয়া সম্ভব হয় নি। কাজেই একটা অসহিষ্ণু ও ফ্যাসিবাদী শক্তির কব্জায় শুধু শহীদ মিনার নয় - পুরো দেশ এবং আমাদের পুরো ভাবনার জগতটিই জিম্মি হয়ে গেছে। এরা বিরুদ্ধ মতবাদকে বরদাশত করতে পারে না। বদ্ধ কূয়ার এই জীবেরা কোন ধরনের মুক্ত চিন্তাকে সহ্য করতে পারে না।
এদের বিরুদ্ধেই আমৃত্যু লড়ে গেছেন চিন্তার ক্ষেত্রে বাম ঘরানার এই পিয়াস করিম। এদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক জগতে ইদুর মারার কলের মত রাজাকার ধরার কল রয়েছে। অনেক চেষ্টা করেও পিয়াস করিমকে এই কলে আটকানো যায় নি। তাঁকে জঙ্গীবাদের দোসর হিসাবে তুলে ধরে তার শানিত যুক্তি ও বক্তব্যগুলি নিস্ক্রিয় করা সম্ভব হয় নি। তাঁর বক্তব্য ও যুক্তিগুলি অনেকটা বিনা বাঁধায় সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে । পিয়াস করিমের মারাত্মক অপরাধ বোধহয় এটাই।
এই কারনেই তাঁর লাশ বাপ্পাদিত্য ও আ স ম অারেফিনদের ইজারা প্রাপ্ত শহীদ মিনারকে অপবিত্র করে ফেলবে!
জনাব মিনার রশিদের ফেসবুক পেজ থেকে।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১০:১১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×