somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুড়ঙ্গ সিনেমা অনেক ব্যবসা করেছে, এবার কড়া সমালোচনা হোক একটু!

১১ ই আগস্ট, ২০২৩ রাত ১২:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সুড়ঙ্গ দেখে খুবই আশাহত হলাম। কেন, তা বিস্তারিত বলতে গেলে কিছু স্পয়লার দেয়া হয়েই যাবে। তবে যেহেতু সিনেমাটা দেড় মাস ধরে হলে চলছে, এবং প্রচুর ব্যবসাও করেছে দেশে-বিদেশে, তাই এর ত্রুটিগুলি নিয়ে এখন বললে মনে হয় দেশের চলচ্চিত্র খুব একটু ক্ষতিগ্রস্ত হবে না।

এর একটা বড় ত্রুটি হলো কলাকুশলীদের একসেন্ট বিচ্যুতি। তমা মির্জা মাঝেমধ্যে কথা বলেছে যশোর-খুলনার একসেন্টে, মাঝেমধ্যে চলতি অশুদ্ধ বাংলায়। এদিকে নিশো চলিত অশুদ্ধ ভাষার পাশাপাশি মাঝেমধ্যে তার নিজ জেলা টাঙ্গাইলের টানে বলে ফেলেছে। গ্রামের সাধারণ মানুষ কথা বলে মিনা কার্টুনের মতো তোতাপাখির ভাষায়। শহীদুজ্জামান সেলিমের চট্টগ্রামের একসেন্ট ছিলো ভয়ংকর রকম ফেইক। অভিনয় তো যাচ্ছেতাই রকম ভাড়ামী। জোর করে কমিক রিলিফের জন্যে নোয়াখালি-চট্টগ্রাম কি ঢুকাইতেই হবে? ব্যাংকেরই আরেক কর্মচারী ছিলো এক মহিলা, সেও চট্টগ্রামের একসেন্টে কথা বলেছে। সেটা শুনলে বোঝা যায় যে খাস চিটাগাইঙ্গা। সেলিমেরটা স্রেফ হাস্যকর। সব মিলিয়ে পুরোই জগাখিচুড়ি অবস্থা। একটা সিনেমায় ভালো অভিনয় করতে হলে এক্সপ্রেশন, ইমোশনের বিভিন্নতর প্রকাশ, এসবের পাশাপাশি একটা একসেন্টও বজায় রাখতে হয়, অথবা দক্ষতা না থাকলে রপ্ত করতে হয়। সুড়ঙ্গের প্রধান কলাকুশলীরা এক্ষেত্রে ডাহা ফেল। পরিচালক রাফিও ফেল।

আরেকটা ত্রুটি নিয়ে কেউ কথা বলছে না দেখে অবাক হলাম! বিয়ের পর তমা মির্জা আর নিশো যেখানে থাকে, সেখানে একটা নীল পানির হ্রদ আছে। সেই জলাশয়ের পাশে আবার পাহাড়। লোকেশনটা কোথায় ছিলো? স্বচ্ছ নীল পানির জলাশয়, ফাঁকা জমিন আর পাহাড় দেখে নিশ্চিত হওয়া যায়, এটা পার্বত্য চট্টগ্রামের কোনো এলাকা। অথচ সেখানকার কেউ চট্টগ্রামের ভাষায় কথা বলে না। যেন ওখানে সবাই বিভিন্ন জেলা থেকে এসে বসবাস করে! চট্টগ্রামের একসেন্ট ঠিকই আনা হলো, তবে সেটা ঢাকা শহরে!


নিশো যখন মালয়েশিয়া যায়, তখন তার মেসের বারান্দায় দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলার সময় মালয়েশিয়ার রাস্তার গ্রিন স্ক্রিন জাতীয় কিছু একটা ব্যবহার করা হয়েছে। নকল করাটা হয় নি। একদম আলগা লেগেছে। এইটা দেখানো কি খুব জরুরী ছিলো? অন্যভাবে ম্যানেজ করা যেতো না?

তমা মির্জাকে প্রথমবার দেখে কারেন্টের খাম্বা থেকে যেভাবে পড়ে গেছে নিশো (ক্রিঞ্জের একশেষ) সেভাবে কেউ পড়ে গেলে মৃত্যু না ঘটলেও পঙ্গু হয়ে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। নাহলেও অনেকদিন হাসপাতালে থাকতে তো হবেই। অথচ দেখা গেল তার একটু হাত ছিলে গেছে।

ভীড়ের চরিত্রগুলি সুপারফ্লপ। তাদের হাত-মুখ নাড়ানো দেখে মনে হয়েছে ইএ স্পোর্টসের কোনো গেমের স্টেডিয়ামের দর্শক।


স্পয়লার অংশ এখান থেকে শুরু (যদিও সবাই জানেই হয়তো এসব)

নিশো ব্যাংক ডাকাতি করার পরিকল্পনা করে এবং সুড়ঙ্গ খোড়া শুরু করে। অথচ সে সুড়ঙ্গ খুড়তে শুরু করার বেশ পরে জানে যে ব্যাংকে ভল্ট বলে একটা বস্তু আছে। তাহলে সে আসলে কী ভেবে, কী পরিকল্পনা করে সুড়ঙ্গ খুড়ছিলো?

সে নকল নাম ব্যবহার করতো। সেটা ঠিক আছে। কিন্তু ব্যাংকে একাউন্ট খুলতে এনআইডি লাগে। সেটা আবার অনলাইনে ভেরিফিকেশন হয়। যে টাইমলাইন দেখিয়েছে, সেখানে জাস্ট একটা ফেক নাম ব্যবহার করে ব্যাংক একাউন্ট খোলা যায় না।

যেভাবে দেখিয়েছে যে ব্যাংকের ভল্টে (আসলে স্ট্রং রুমে) টাকা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে, এটা ভুল। এর বিস্তারিত ব্যাখ্যায় গেলাম না।

আর চুরি হওয়া টাকা, ৩৪ কোটি ২০ লক্ষ- এটা কত টাকা- রাফি সাহেব হিসেব গুলিয়ে ফেলেছেন। একেক সময় একেকরকম পরিমাণ দেখানো হয়েছে। স্ট্রং রুমে দেখা গেলো মেঝে ভর্তি শুধু টাকা আর টাকা। অথচ দ্বিতীয়বার যখন টাকাগুলি তমা আর নিশো মিলে উদ্ধার করলো, তখন সাকুল্যে ৩টা ব্যাগ আর ২টা ব্রিফকেস লেগেছিলো। শুধু ১০০০ টাকার নোট হলেও মোট ৩,৪২,০০০ টা নোট লাগবে। এখন হিসাব করেন এতগুলি নোট নিতে কতগুলি ব্যাগ লাগে। এই ৫টি ব্যাগে নেয়া টাকা আবার যখন সুড়ঙ্গে ঢালা হলো, তখন দেখা হলো টাকার পাহাড় হয়ে গেছে! কোনোই আন্দাজ নাই?


হিউমার, ডায়ালগ,কমিক রিলিফ দুই একটি জায়গায় ছাড়া ভালো লাগে নাই। বিশেষ করে বিরতির আগ পর্যন্ত, প্রথম এক ঘন্টায় একেবারেই উপভোগ করার মতো কিছু নাই। দ্বিতীয়ার্ধে গতি আছে। রায়হান রাফির সিগনেচার কিছু ভালো সিন আছে দুই অর্ধ মিলে। মিউজিক ভালো। টুইস্টও খারাপ না। তবে পাটাকা নুসরাত ফারিয়ার নেংটি পরা কাটপিস নৃত্য আসলে কতটা দরকার ছিল? হিন্দি ছবির পোষাক আর আবহ অনুকরণ করা এই নাচ না দিলে কি ছবি হিট হতো না? মানুষজন হলে আসতো না? কাহিনীর প্রয়োজনেই এই কাটপিস লেগেছে? এসব ফালতু কথা আর ভালো লাগে না।

রায়হান রাফির দামাল ভালো লেগেছিলো এর আগে। কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি থাকলেও ওটার প্রশংসাই করেছি। ওটার সাথে অবশ্য ইমোশনাল কানেকশন ছিলো। এই জগাখিচুড়ি, ব্লেন্ড অফ জনরা সিনেমাটার বদলে দামাল বেশি ব্যবসা করলে খুশি হতাম বরং।


সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০২৩ রাত ১২:৫৫
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শোকের উচ্চারণ।

লিখেছেন মনিরা সুলতানা, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সকাল ১০:১৬

নিত্যদিনের জেগে উঠা ঢাকা - সমস্তরাত ভারী যানবাহন টানা কিছুটা ক্লান্ত রাজপথ, ফজরের আজান, বসবাস অযোগ্য শহরের তকমা পাওয়া প্রতিদিনের ভোর। এই শ্রাবণেও ময়লা ভেপে উঠা দুর্গন্ধ নিয়ে জেগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যা হচ্ছে বা হলো তা কি উপকারে লাগলো?

লিখেছেন রানার ব্লগ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:২৮

৫ হাজার মৃত্যু গুজব ছড়াচ্ছে কারা?

মানুষ মারা গিয়েছে বলা ভুল হবে হত্যা করা হয়েছে। করলো কারা? দেশে এখন দুই পক্ষ! একে অপর কে দোষ দিচ্ছে! কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

আন্দোলনের নামে উগ্রতা কাম্য নয় | সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যবাদকে না বলুন

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



প্রথমেই বলে নেয়া প্রয়োজন "বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সমস্ত অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে" ধীরে ধীরে দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসছে। ছাত্রদের কোটা আন্দোলনের উপর ভর করে বা ছাত্রদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোন প্রশ্নের কি উত্তর? আপনাদের মতামত।

লিখেছেন নয়া পাঠক, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬

এখানে মাত্র ৫টি প্রশ্ন রয়েছে আপনাদের নিকট। আপনারা মানে যত মুক্তিযোদ্ধা বা অতিজ্ঞানী, অতিবুদ্ধিমান ব্লগার রয়েছেন এই ব্লগে প্রশ্নটা তাদের নিকট-ই, যদি তারা এর উত্তর না দিতে পারেন, তবে সাধারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাকুরী সৃষ্টির ব্যাপারে আমাদের সরকার-প্রধানরা শুরু থেকেই অজ্ঞ ছিলেন

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৬ শে জুলাই, ২০২৪ রাত ৯:০৭



আমার বাবা চাষী ছিলেন; তখন(১৯৫৭-১৯৬৪ সাল ) চাষ করা খুবই কষ্টকর পেশা ছিলো; আমাদের এলাকাটি চট্টগ্রাম অন্চলের মাঝে মোটামুটি একটু নীচু এলাকা, বর্ষায় পানি জমে থাকতো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×