somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পূজাদের অশ্রুবিন্দু আর ধর্ষকদের অট্টহাসির কথামালা

২৬ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৯:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা যারা দেশটাকে ভালোবাসি- তারা প্রত্যেকেই পার্বতীপুরের পাঁচ বছরের পূজাকে ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনায় কেঁপে উঠেছি, থুতু দিয়েছি ধর্ষক সাইফুল্লার মুখে। পাঁচ বছরের একটি মেয়ের শরীরে উত্তেজক কি থাকে তা সিংহভাগের বোধগম্য না হলেও কিছু জানোয়ারের দৃষ্টিতে তা বিকৃতরূপে ধরা পড়ে। পিডোফেলিয়ায় আক্রান্তরা এমনটা করে থাকে অনেকসময়।

এ গেল কামনার পাশবিকতা। কিন্তু গোপনাঙ্গ ক্ষতবিক্ষত করা কিংবা শরীরের স্পর্শকাতর অঙ্গে জ্বলন্ত সিগারেটের ছেঁকা দেয়া- এগুলো ঠিক কিসের মধ্যে পড়ে? মানব উন্নয়ন সূচকে অগ্রগতি অথবা অবনতি কিন্তু মানবিকতার আশেপাশে ছাপ ফেলছে না। রাস্তায় দুর্ঘটনায় পড়ে থাকা ব্যক্তিটিকে হাসপাতালে না নিয়ে তার মোবাইল-মানিব্যাগ নিয়ে যাওয়া হয়েছে- এমন ঘটনা অনেকবার ঘটেছে। দেশে কোর্টের রায় আছে- আহত ব্যক্তির চিকিৎসা আগে, পুলিশের অনুমতি বিষয়াদি পরে। আগে জীবন। জীবনের আগে কিচ্ছু না। রাজন নামের ছোট্ট একটি শিশুকে পিটিয়ে মারার সময় অনেকেই সেখানে ছিল। কেউ এগিয়ে আসেনি।


খাদিজাকে যখন আক্রান্ত- তখনও কেউ আসেনি; শুধু ভিডিও ধারণ করেছে। দায় এড়ানোর কি মহোৎসব বাঙ্গালীর মানসিকতায়- এ মহাযজ্ঞ অতীতের যেকোন সময়ের চেয়ে ভয়ানক। অথচ এই বাঙ্গালী কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পাকহায়নাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, বিপদে-আপদে একে অন্যকে সাহায্য করেছে, নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও প্রতিবেশীকে সাহায্য করতে এগিয়েছে। মাঝখানে কেটেছে ৪৫ বছর। কমেছে বিপদে এগিয়ে আসার শক্তি।

খাদিজা আক্রান্ত হবার এক মাসও হয়নি। ঝিনাইদহে আক্রান্ত হল পূজা বিশ্বাস, শরীরে পেল ছুড়িকাঘাত- প্রত্যাখ্যাত প্রেমিকের কাছ থেকে। রিশার শোক এতদিনে মলিন। আর ‘তনু’ যেন যন্ত্রনাবিধুর এক মহাকাব্যের নাম। আমাদের দেশে ধর্ষকরা ধরা পড়ে, আবার ছাড়া পায়। ধর্ষিতার সামনে আবার বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়। একটি মেয়ে নির্যাতিত হবার পর ভয়ে মুখ খোলেনা- আমাদের সমাজ আর আইনকাঠামো একবারের ধর্ষিতাকে হাজারবার আঘাত করে- একসাথে মনে ও শরীরে।বখাটের ভয়ে আধুনিক সমাজেও কত মেয়ে স্কুল ছেড়ে দিচ্ছে তার কোন পরিসংখ্যান আসে না। কষ্ট-যন্ত্রণার দু’কূল ছাপিয়ে যখন তনু প্রাণ হারায়- আমরা অবাক হয়ে খেয়াল করি যে প্রশাসন ও আইনকাঠামো কতটা অসহায়। এ অসহায়ত্ব কালোটাকার কাছে, প্রভাবশালীত্ব আর রক্তচোখের ভয়াভয়তায় কাছে। পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী নির্যাতনকারীদের যখন একজনও ধরা পড়ে না- তখনই অনুভূত হয় যে এ সমাজের প্রত্যেকটি মানুষ রূপকথার গল্পের মত অনিরাপদ। একের পর এক লাশ শীতলক্ষ্যার জলে ভাসে, কখনও পুলিশ তুলে নিয়ে যায় নিরপরাধকে, র‌্যাব গুলি ছোড়ে লিমনের পায়ে- মানবাধিকার ছড়াছড়ি করে বাতাসে। হাহাকার ছাপায় একূল-ওকূল।


ইন্দোনেশিয়ায় সম্প্রতি একটি ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সেটি হল- ধর্ষককে রাসায়নিকভাবে নপুংসক করে দেবার ব্যবস্থা। ব্যবস্থাটি কতটা সফল-বিফল হবে তা সময় উত্তর দেবে- তবে তাদের সরকারের ধর্ষণবিরোধী আন্তরিকতাকে প্রশংসা করতেই হয়। একটি মানুষ বারবার এ্কই অন্যায় করে যদি সে অন্যায়ের জন্য শাস্তি না পায়। সমাজে জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা বাড়লে সেই সমাজে গবেষকের সংখ্যা বাড়বে- এটাই নিয়ম। তেমনি ধর্ষণের বিচার না হলে সমাজে ধর্ষক বাড়বে- এটাও নিয়ম। চলন্ত বাসে নারী নির্যাতনের ঘটনা বাংলাদেশে ঘটেছে ভারতে ঘটার পর। অর্থাৎ, সন্ত্রাস অনুপ্রেরণাও দেয় নতুন সন্ত্রাসের। প্রভাব না থাকার কারনে যদি রিশার হত্যাকারী ধরা পড়ে আর পহেলা বৈশাখের নির্যাতনকারীরা হাওয়া খেয়ে ঘুরে বেড়ায়- তাহলে মানবাধিকার বাঁচে না। অন্যায়ের নিয়ামক, প্রভাবক, অন্যায়কারী- কেউ কারও থেকে কম অপরাধী নয়। মানবিকতার অধঃপতন আর নৃশংসতাবৃদ্ধির নিয়ামক তাহলে স্বজনপ্রীতি অথবা স্বদলপ্রীতি। যে যন্ত্রণায় পূজা কাতরায়, যে আঘাতে খাদিজা মৃত্যুর সাথে লড়ে- সে লজ্জা আমাদেরকে কুড়ে কুড়ে খায়। অনুভবটুকু জাগালেই সে অক্ষমতার বেদনা সামনে ভাসবে। আমাদের বোধ আজও শুধু শরীরে ভাসে, হৃদয়ে নয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১০:৫৯
৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×