somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জার্মানিতে অবৈধ বাংলাদেশিদের অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ

০৫ ই আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৮:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ইউরোপের শিল্পোন্নত দেশ জার্মানির দিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ান-আফগান-ইরাকি শরণার্থীদের স্রোতের মতো ছুটে আসার সঙ্গে সঙ্গে অনেক সুযোগসন্ধানী বাংলাদেশিরাও এই দেশে এসে পড়েছেন। বিভিন্ন দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে এসে তারাও অন্যদের মতো রাজনৈতিক আশ্রয় লাভের প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছেন। জার্মানিতে আগত অবৈধ বাংলাদেশিদের সঠিক সংখ্যা জানার কোনো সুস্পষ্ট উপাত্ত পাওয়া না গেলেও ধারণা করা হচ্ছে সংখ্যাটি প্রায় ১০ হাজার। তারা সাময়িক আশ্রয় নিয়েছেন প্রধানত বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে। যেমন; পশ্চিম জার্মানির ব্যস্ততম শহর ডর্টমুন্ড, ফ্রাঙ্কফুর্ট কিংবা বন্দর নগরী হামবুর্গে অথবা পূর্ব জার্মানির প্রধান শহর বার্লিন ও ড্রেসডেনে

এদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় সবাই এখানে এসেছেন আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য। কিন্তু জার্মান সরকারের কাছে তাঁরা দাবি করছেন দেশের প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে তারা এখানে এসেছেন। আমজাদ হোসেন নামের একজন বললেন, দেশে চাকরিবাকরি নাই, ফ্যামিলি চালাইতে পারি না, সন্তানদের মুখ দেখলে খুব কষ্ট লাগে। কি আর করুম তাই গ্রিস-মেসিডোনিয়া সীমান্ত পাড়ি দিয়া এ দেশে চইলা আইছি। বিস্ময়কর ব্যাপার হলো বাংলাদেশিদের একটা বড় অংশই আবার এসেছেন জার্মানির পার্শ্ববর্তী দেশ ইতালি, গ্রিস বা পর্তুগাল থেকে। অন্য দেশ ছেড়ে এ দেশে কেন আসলেন প্রশ্নের জবাবে সবাই অকপটে স্বীকার করলেন জার্মানিতে ভালো অর্থ আয় করা যাবে এই ভেবেই তারা দলবেঁধে ছুটে এসেছেন।

অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে জার্মানিতে আসার কিছুদিন পরেই শুরু হয় রাজনৈতিক আশ্রয় লাভের প্রক্রিয়া। অবৈধ বাংলাদেশিরা প্রথমে তার শহরে থাকা শরণার্থী বিষয়ক অধিদপ্তরে যোগাযোগ করেন। এ ক্ষেত্রে সাধারণত তারা নিজেদের পরিচয় গোপন রাখেন ও নিজেকে রোহিঙ্গা কিংবা আফগান এবং কিছু ক্ষেত্রে রাজনৈতিকভাবে চরম নির্যাতিত বাংলাদেশি বলে দাবি করেন। সঙ্গে এও দাবি করেন যে বাংলাদেশে ফেরত গেলে জীবনহানি হতে পারে। এরপর আশ্রয়প্রার্থীরা নির্দিষ্ট কারণ উল্লেখ করে মামলা করেন জার্মান আদালতে। নতুন আইন অনুযায়ী তিন মাস সময়ের মধ্যেই সাধারণত রায় হয়ে যায়, তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আরও অনেক সময় লেগে যায়। যা কয়েক বছরও হতে পারে। জার্মান সরকারের তালিকায় বাংলাদেশ নিরাপদ হিসেবে স্বীকৃত। তাই শরণার্থীরা বাংলাদেশ থেকে আগত, তা জানলে জার্মান আদালত কোনোভাবেই রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে চায় না কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া। মামলার রায় পক্ষে এলে জার্মানিতে দীর্ঘ মেয়াদে থাকার পথ সুগম হয়ে যায় কিন্তু উল্টো হলেই দুঃসহ-যন্ত্রণার অনিশ্চিত জীবন শুরু হয়ে যায়। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ব্যক্তির গোটা পরিবারের ওপরেই। আগে এখানে মামলা প্রত্যাখ্যান হলেও কাউকে বাংলাদেশে জোর করে ফেরত পাঠানো হতো না। কিন্তু নতুন আইন অনুযায়ী মামলা প্রত্যাখ্যান হওয়ার পরে যেকোনো সময় যেকোনো জায়গা থেকে ধরে তাৎক্ষণিক ফেরত পাঠানো হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় এ পর্যন্ত কয়েক শ বাংলাদেশি আশ্রয়প্রার্থীকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে এবং আরও অনেককেই পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে।

অবৈধভাবে থাকা বাংলাদেশিদের সম্পর্কে স্থানীয় বাংলাদেশিদের মধ্যে দুই ধরনের মতামত পাওয়া যায়। কেউ কেউ তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করলেও বেশির ভাগই বিষয়টিকে নেতিবাচক হিসেবে দেখেন। কারণ তাদের মতে এমন ব্যক্তিরা বিভিন্ন ছলচাতুরী ও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেন। তাদের আরও অভিমত, আর্থিক উন্নতি সাধনের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বেআইনিভাবে এ দেশে প্রবেশ না করে বরং টেকসই ভবিষ্যতের জন্য বাংলাদেশেই বৈধভাবে ব্যবসা কিংবা চাকরি লাভের চেষ্টা করাটাই মঙ্গলজনক। সর্বোপরি, রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী বাংলাদেশিদের মনে রাখা দরকার, অনিশ্চিত অজানা গন্তব্যে যাত্রার চেয়ে নিজের দেশে মেধা ও শ্রমকে কাজে লাগিয়ে সুদৃঢ় ভবিষ্যৎ গড়া আরও সম্মানজনক ও সুচিন্তার পরিচায়ক।

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই আগস্ট, ২০১৬ ভোর ৬:২১
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×