somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সে এসেছে আবার

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

- ভাতিজা জাইগা আসো নাকি?
গত দেড়টা মাস বলতে গেলে জেগেই কাটাচ্ছি।থিসিস রেডী করার কাজে ঘুমের সাথে ঠিক সাক্ষাৎ হয়নি।আজ সন্ধ্যায় একটু তন্দ্রামতন এসেছিলো, মতলব মিঞাঁর একঘেঁয়ে আওয়াজ আর দরজায় অনবরত কড়া নাড়ার শব্দে সেটা উসাইন বোল্ট এর চেয়েও দ্রুত বেগে দৌঁড়ে পালালো।

চুদির ভাই!

জেগেই আছি চাচা - আসেন ভিতরে।
দরজা খুলে দিলাম।
- বিরক্ত করলাম না তো ভাতিজা তোমারে?

শালার বাচ্চা!

- কফি বানায়ে আনসি বাজান।আজকে একটু শীত করাইতেসে, ভাবলাম কফি খাইতে খাইতে তোমার সাথে একটু গফ কইরা যাই।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ৯.২৩ বাজে।পেটে ছুঁচো নাচছে।একেবারে ডিনার করে ফেলাই উত্তম, তবু ঠান্ডা আবহাওয়ায় ধোঁয়া ওঠা কফি পানের লোভ সামলাতে পারলাম না।হঠাৎ করেই টেম্পারেচার ৫-৬ ডিগ্রী কমে গিয়েছে।
বেশ তো, বসেন।
আমি খাটে আঁধশোয়া হয়ে কফির কাপে চুমুক দিলাম।ব্যাটা বানিয়েছে খুব ভাল, ক্লান্তি অনেকটাই কেটে গেল।
আব্বা-আম্মা কি এক কাজে গতকাল ফেনী গিয়েছেন।আমার দেখভাল করার জন্য মতলব মিঞাঁকে গ্রামের বাড়ি থেকে আনিয়েছেন।উনি আমার দাদার বাড়ির দাঁড়োয়ান ছিলেন এক সময়।কোন কারণে তাঁকে চাকরী থেকে অব্যহতি দেয়া হয়েছিল।তবে আব্বার সাথে তাঁর বেশ ভাল সম্পর্ক, মাঝে মাঝে টাকা-পয়সা পাঠিয়ে সাহায্য করেন। রান্না-বান্নাও বেশ ভাল করতে পারেন শুনেছিলাম।আজ রাতে ডিনারের সময় এর সত্যতা পরীক্ষা করা যাবে।
তো চাচা বলেন, আছেন কেমন?
- এইতো বাজান কোনমতে দিনগোনা আরকি।
হাহাহ কি যে বলেন!আপনার বয়স হৈসে কত?
- গ্যালো রমযানে তিরানব্বুই এ পড়ছি।আর কত বৎসর যে অ্যাম্নে নিজেরে টানা লাগবো আজকাল বইসা হেইডাই ভাবি।

এবার আমি রীতিমতো চমকে উঠি।আমার সামনে বসা ব্যক্তিটার বযস তিরানব্বুই! দেখলে বড়জোর পঞ্চাশ-পঞ্চান্ন মনে হয়।বলিষ্ঠ দেহের গঠন, চুল পেঁকে গেলেও বেশ ঘন; চোখ তীক্ষ্ণ খুব।তবে চেহারায় বিনম্র ভাব বিরাজমান।
আপনাকে দেখে তো একদমই বোঝা যায়না যে এত বয়স হয়েছে!
- মাইনষে কয় আমি আমার পোলাডার হায়াত পাইসি।

বৃদ্ধের কন্ঠে ব্যাকুলতা অনুভব করি।
আপনার ছেলে মারা গিয়েছে?
- হ বাজান।১১ বৎসর হৈসিলো তখন।একটাই বাইচ্চা হইসিলো আমার।হের জন্মানোর সময় আমার বৌডা মরে।ম্যালা কষ্টের পর অনেক বৎসর বাদে আমার একটা বাইচ্চা হইসিলো তো, মায়াটা বেশী পইড়া গেসিলো।

আমরা ২ জনেই নিশ্চুপ হয়ে বসে আছি।ঠান্ডা মনে হয় আরো কিছুটা বেড়েছে।কেমন যেন সোঁদা গন্ধ, বৃষ্টি পড়বে নাকি? পরিবেশ হালকা করার জন্য আমি কথা শুরু করলাম।
কত বছর আগে আমার দাদার বাড়ীতে চাকরী শুরু করেছিলেন?
- সে তো বাপ ম্যালা দিন আগের কথা।ঠিক ঠাওরাইতে পারিনা।তবে হইবো ২৫-৩০ বৎসর।তুমি যেদিন জন্মাইসো সেইদিন তুমার দাদাজান ব্যাপক খুশি হইসিলেন খবর পাইয়া।বংশের পরথম নাতী বইলা কথা।তাঁর আনন্দ আসিল দেখার মতো।পুরা গেরামবাসীরে মেজ্জ্বান খাওয়ানো হৈসিলো।
আব্বাকে প্রায়ই বলতে শুনি, দাদাজান নাকি খুব আমুদে ছিলেন।
- উনার আসিল ফরফইরা মিজাজ বুঝলা ভাতিজা।এই গরম, এই আবার ঠান্ডা।তবে লোক খুব মহৎ আসিলো, সবাইরে সাহাইয্য করতো।

আমি ইতস্তত করে মতলব চাচাকে প্রশ্নটা করেই ফেলি-
চাচা, আম্মা বলেছিলেন দাদার মৃত্যু নাকি স্বাভাবিকভাবে হয়নি? আব্বাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম কিন্তু তিনি তা উড়িয়ে দিয়েছিলেন।আপনি জানেন এ ব্যাপারে কিছু?
মতলব মিঞাঁ সম্ভবত একটা দীর্ঘঃশ্বাস লুকোলেন।
- রাইত হইতেসে ভাতিজা, আসো আমরা খাওয়া-দাওয়া সাইরা ফেলি।তুমি যে সময়ে ঘুমায়ে আসিলা তখনি পাক-শাক কইরা রাখসিলাম।ঠান্ডা হইয়া যাইবো আর দেরী কইরলে।অ্যাম্নে শীতকাল, হের মইদ্ধ্যে বৃষ্টি পড়ার কোন মানে আসে কও দেহি?আমি খাওন লাগাইতেসি, তুমি আসো।
কথার ফাঁকে কখন যে বৃষ্টি শুরু হয়েছিল খেয়ালই করিনি।জানালা বন্ধ করে পর্দা টেনে আমি খাওয়ার টেবিলে গেলাম।
সাদা ভাত, গরু ভূনা, ঘন ডাল আর আলু ভাজি।খেতে মন্দ হবেনা বোধহয়।তবে খিচুড়ী, গরু ভুনা, ডিম ভাজা হলে আজ জমতো ভাল- আফসোস হলো কিছুটা।
আপনিও বসেন চাচা, একসাথে খেয়ে নেই।
উনি বসলেন।খেতে বসে কথা বলা আমার অপছন্দের, নিঃশব্দেই খাওয়া শেষ করলাম।উনি রাঁধেন চমৎকার স্বীকার করতেই হলো।
- ভাতিজা রুমে যাও, আমি আদা-লেবু চা বানায়ে আনতেসি।এমন রাইতে এই চা বড়োই উপাদেয়।
মিনিট পাঁচেক পর রুমে এসে উনি আমার হাতে কাপ ধরিয়ে দিলেন।চমৎকার সুঘ্রান আসছে সেখান থেকে।
- তোমার বাপে আগে ভাগেই শহরে চইলা আইসা বেবাক বুদ্ধিমানের কাজ কইরসে।তোমার চাচারা এখনো হ্যাগো বাপের সম্পত্তি লইয়া পিডাপিডি করে।তবে ভাতিজা এই জায়গায় ভিটা গইড়া তোমার বাপে ভুল কইরা ফালাইসে।জায়গাডা দোষী।
আমি হাসলাম।
কি যে বলেন চাচা! এত্ত বছর পার করে ফেললাম, কোনকিছুই তো প্রত্যক্ষ করলাম না আজ অব্দি।লোকে নানা কথা বলবেই।
- তোমাগো উত্তর পাশে যে খালি জমিটা পইড়া আসে হেইটার কাহিণী জানো?
না তো, কি হয়েছে বলেন শুনি!
বৃষ্টিস্নাত শীতের রাতে আধিভৌতিক গল্প শুনতে আমি বেশ উৎফুল্ল হয়ে উঠি।
- তোমার বাপে শহরে চইলা আসবো এমন শুইনা তুমার দাদাজান পরথমে একটু বিরাগ হইলেও শ্যাষে খুশিমনেই সম্মতি জানান।শহরের সহায়-সম্পত্তি দেখভাল করার লাইগা নিজের একজন থাকনের দরকার আসে।তোমাগে এই বাড়িটা তখন একতলা সেমিপাকা ঘর আসিলো।তোমার দাদায় ঠিক করসে উত্তরদিকের জমিটায় তোমার বাপেরে একটা ঘর উঠায়ে দিবো, সেইখান থেইকা যেই ভাড়াটা আদায় হইবো তা দিয়া তোমার বাপ-মা’র ভালভাবেই চইলা যাইবো। তোমার বাপে অল্পদিনের মইদ্ধ্যে একখান চাকরীও জুটায়ে ফালাইসিলো।
পরের বৎসর ঘর বানায়ে দেওনের লাইগা তুমার দাদা নিজেই শহরে চইলা আইসিলেন, লগে আমিও আসিলাম।উনি মিস্তিরি-মজুর ঠিক কইরা ঘর বানানোর কাম আরম্ভ করায়ে দিলেন।সুন্দরমতোই সব আগাইতেসিলো।
১ তলার ছাঁদ যেদিন ঢালাই দেওন হইসিলো হেইদিনের রাইতের কথা।আমরা সবাই খাওন-দাওনের পর শুইসি।মাঝরাইতে বিকট শব্দে কিসু একটা ভাইঙ্গা পরার আওয়াজে জাইগা যাই।বাইর হয়া দেখি ছাঁদ ভাইঙ্গা এক্কেরে ঝুরাঝুরা।২নম্বুরি মাল-সামান দিয়া বানাইসে মনে কইরা তোমার দাদা তো সবডিরে বেজায় ঝারসে।তয় কাম তো আর আঁটকায়ে রাখন যায়না।নতুন কইরা জিনিষপত্তর কিইন্না তার ২ দিন পর আবার ছাঁদ ঢালাইয়ের কাম শুরু।হেই রাইতে আবারো একি ঘটনা, ছাঁদ ভাইঙ্গা পরসে! আমরা সবাই বিরাট পেরেশান তুমার দাদাজান এইবার কি করেন তা ভাইবা।দেখলাম উনি খুব শান্ত হয়া ওই ভাঙ্গা ছাঁদের দিকে তাঁকায়া আসেন।পরদিন সকালে উনি আমাকে একটা ঠিকানা দিয়া কন যে, ওই জায়গায় এক আলেম থাকেন ওনারে যেন সাথে কইরা নিয়া আসি।
ওনাকে নিয়ে সেইদিন সইন্ধ্যায় আমি আইসা পৌঁছাই।আলেম সাব রাইতের বেলা এশার নামায সাইরা সেই জায়গাটা দেখতে যান।আমগো সবাইরে মানা কইরা দিসিলো কেউ যাতে রাইতের বেলা বাইর না হই।খায়া-দায়া শুইয়া পড়সি, চাইরপাশ একদম শুনশান।একটু পর আলেম সাবের সুরেলা তেলওয়াত কানে আসতে লাগলো।তখন ভাতিজা জইষ্ঠ মাস, চরম গরমে পরাণ জ্বইলা যায়- এর মধ্যেই হঠাৎ কইরা একদম মাঘের লাহান ঠান্ডা হইয়া গ্যাসে।বাইরে চায়া দেহি পুরা ফকফকা।আর হাজার হাজার কাউয়া চিল্লাইতেসিলো।এর মাঝখান দিয়া আলেম সাবের গলা হুনা যাইতেসিলো, মনে হৈতেসিলো উনি কারো লগে কথা কইতেসেন।খুব ভয় পাইসি হেই রাইতে।
রাতটা কোনমতে কাঁটাইয়া ভোরে বাইর হইসি।দেখলাম তোমার দাদা তোমার বাপেরে সাথে নিয়া খাঁড়ায়ে আসে ভাঙ্গা বাড়ির সামনে।আলেম সাবরে কোথাও দেখলাম না।ওনার কথা জিগাইতে তোমার দাদা কইলো উনি রাইতেই চইলা গ্যাসেন।তবে যাওয়ার আগে সাফ মানা কইরা দিয়া গ্যাসেন যে হেই জায়গায় যাতে বাড়ি বানানোর চিন্তা না করা হয়।নামায পড়ার লাইগা জ্বীনের জায়গাটা পসন্দ করসে, আল্লাহর উসিলায় জায়গাডা খাইল্ল্যা থুইয়্যা রাখা লাগবো।

মতলব চাচার গলা আগের মতো একঘেঁয়ে লাগছে না, সেখানে এসে ভর করেছে ভীতি।আমার কিছুটা ভয় করতে লাগলো।আমি চুপ করে আছি।মতলব চাচার আরো কিছু বলার বাকি আছে।
- তোমাগো বাড়ির থেইকা ৩০ কদম দূরে খিরিষ্টানগো যে গোরস্থান আসেনা?হেইডা আগে এক্কদম মাঠের লাহান খোলা আসিলো। হেইখানে এক ব্যাটারে দফনাইসিলো বাক্সের মইদ্ধ্যে ভইরা।রাইতের বেলা কি দেখা গ্যাসে জানো ভাগিনা?
থরথর করে কাঁপছেন উনি।
- কিভাবে জানি মরার ডান হাতটা বাক্সের বাইরে ঝুলতাসে।
উনি একটু দম নিলেন।
- সেই রাতেও পরচুর কাউয়া চিল্লাইতেসিল।
মতলব চাচার গলার স্বরের সাথে আমার হৃৎপিন্ডও পাল্লা দিয়ে কাঁপছিল।
- এই রকম এলাকায় মরারা ঘুরাফিরা কইরা থাকে বেশি।আমি তুমার বাপেরে ম্যালা বার কইসিলাম এইখান থেইকা চইলা যাইতে- হে শুনেনা আমার কথা।কুনদিন কি বিপদ হইয়া যায় কেউ কইবার পারেনা। উনি মিনমিন করে বললেন।
আমি হাসার অভিনয় করে বললাম, কিছু হওয়ার থাকলে এতদিনে হয়েই যেত চাচা, খামোখা দুশ্চিন্তা করার দরকার নেই।
উনি সম্ভবত আমার কথা শুনতে পাননি।মাটির দিকে তাকিয়ে একমনে কথা বলতে থাকলেন-
- তুমি জানো ভাতিজা তোমার জন্মানোর পর যে মেজ্জ্বানটা দিসিলেন তুমার দাদাজান হেইটায় রান্না আমি করসিলাম?আমার পুলাটা খায়েশ মিটাইতে হেইদিন খাইতে আইসিলো গায়ে জ্বর নিয়া।তখন দুপুর সময়, বাইরে ছ্যাড়াব্যাড়া রোউদ, জ্বর গায়ে পোলাটা ওইখানে বইলে শইলডা আরো খারাপ হয়া যাইবো ভাইবা হেরে তোমার দাদার বাড়ীর ভিতরে নিয়া বসায়া খাওন দিলাম।অসুইখ্যা পুলাটা আমার ২ গেরাস খায়াই এক বাড়ী মেহমানের সামনে বমি কইরা ঘর নোংরা কইরা ফালায়।তুমার দাদা তা দেইখা মাথা ঠান্ডা রাখতে না পাইরা জোরসে দুইঘা থাবড়া লাগায়।আমার বাইচ্চাটা জ্ঞান হারায়া মুখ থুবড়ায়া পইড়া যায়।তোমার দাদাজান তখনি নিজে কোলে উঠায়ে আমার পুলাটারে ডাক্তারের বাড়িতে নিয়া যায়।গভীর রাইতে আমার বাপডা চক্ষু ম্যালে, এক্কেবারে টকটইক্কা লাল হয়া আসিলো।আমার দিকে তাকায়া সে মিষ্টি একটা হাসি দিয়া কইসিলো, খুব বালা পাক করসো বাপজান।এরপর হেই যে চোখ বন্ধ হইসে ভাতিজা, আর খোলে নাই।তুমার দাদা হেইদিন আমার পাও ধইরা মাফ চাইসিলো।আমি উনারে মাফ কইরা দিসি।
মতলব মিঞাঁ ছোট করে একটা ঢোক গিলে আবার বলতে শুরু করলেন।বাইরে তখন তুমুল বৃষ্টি, বিজলী চমকাচ্ছে।
- আমার পুলা মরার কয়দিন পরের ঘটনা।তদ্দিনে তুমার দাদা মনের দিক দিয়া একদম ভাইঙ্গা পড়সেন।সারাক্ষন মনমরা হয়া পইড়া থাকেন।আমি গিয়া কইতাম হায়াত-মউত আমগো হাতে নাই, উপরওয়ালা যেইটা চাইসেন।উনি চুপ কইরা আমার কথা শুনতেন আর মাথা নাড়াইতেন।পুলাডার লাইগা আমার পরাণ হারাডাক্ষনই ধুকফুক করতো ভাতিজা, কিন্তু আমি কখনোই ব্যাপারটা নিয়া কারো সাথে কথা কইতাম না।
হেইদিন তোমার দাদাজান ম্যালা রাত কইরা গঞ্জ থেইকা ফিরলেন।কাযা নামায শ্যাষ কইরা বাড়ির উঠানে পাটি পাইতা বসলেন।আমি উনারে দেইখা কথাবার্তি করার লাইগা গ্যালাম।ক্যামন ঠান্ডা করাইতেসিলো।কিসুটা সময় পর খুট খুট আওয়াজ শুনতে পাইলাম।তোমার দাদাজান ও খেয়াল করসেন।বারান্দায় মনে হইলো কেউ একজন বইসা আসে।আমি চিল্লায়া জিগাইলাম ক্যাডা ওইহানে? একটা হাসির শব্দ আইলো।খুব চমকাইয়া উঠলাম।তুমার দাদা ভয় পাওয়া গলায় জিগাইলো কি হইতেসে মতলব?আমরা পা টিপ্যা টিপ্যা বারান্দার দিকে আগাইলাম।বোঁচকা গন্ধ।কাছে যাইয়া বরফের মতো জইম্যা গেসি।হ্যাজাকের আলোয় দেখলাম পুরা জমিন বমিতে ভরা, এর মাঝে বইসা আমার মরা পুলাডা মেজ্জ্বানী ভাত খাইতেসে।আমরা আরেকটু নিকটে যাইতেই হে মাথা উডায়া আমগো দিকে তাকাইলো, চোউখ দুইডা রক্তের মতো লাল।তুমার দাদা আর সইহ্য করতে না পাইরা জ্ঞান হারায়া পইরা যান।আমি তাঁরে কাঁধে উঠায়া অন্দরমহলে নিতেসিলাম, গা আগুনের মতো গরম।পিছ থেইকা আওয়াজ শুনি, “খুব বালা পাক করসো বাপজান”।

তুমার দাদাজানের জ্ঞান আর ফিরে নাই।শহর থেইকা তুমার বাপ-মা যাওনের পর তাঁর কবর দেয়া হয়।দাফন-কাফন সমাধা কইরা আমি তুমার বাপেরতে অনুমতি লইয়া কাজ ছাইড়া চইলা আইসি।সে আমারে বিস্তারিত কিসু জিগায় নাই।শুধু কইসিলো যেকুন দরকার হইলে তার সাথে যুগাযুগ করবার লাইগা।এরপর থেইকা সে নিয়ম কইরা আমার বাড়িতে টাকা পাঠায়, মাঝে মাঝে খবর ন্যায়।
অনেকক্ষন কথা বলে মতলব মিঞাঁ হাঁপিয়ে উঠেছেন।তিনি লম্বা একটা দম নিলেন।বৃষ্টি থেমে গিয়েছে।বাইরে ফকফকে চাঁদের আলো।আজ পূর্ণিমা নাকি?
- আমার পুলাডার মরণের লাইগা আমি কখনোই তুমার দাদারে দোষ দেইনাই।শুধু মাঝেমইদ্ধ্যে মনে হয় তুমি না জন্মাইলে আমার পুলাডা আইজ বাঁইচা থাকতো।
মতলব চাচার কন্ঠে তীব্র ক্রোধের আঁচ পেলাম।আমি আমার হৃদস্পন্দন শুনতে পাচ্ছি।
- তুমি কি জানো ভাতিজা, তুমার চেহারা একদম তুমার দাদাজানের মতো?
চেয়ার ছেড়ে উঠতে উঠতে বললেন তিনি।
- বাইচা থাকলে কাইল খিচুড়ি, গরু ভূনা আর ডিম ভাজি খাওয়ামু।
আমার মাথা ভনভন করছে।
আজ মনে হয় আর থিসিস নিয়ে বসা হবেনা।ঘুমিয়ে পড়া দরকার।বারান্দার দিক থেকে কিছু একটা আওয়াজ আসছে।বেড়াল-টেড়াল হবে মনে হয়, গ্রীল গলে ঢুকে পড়েছে।ওটাকে তাঁড়ানোর জন্য দরজা খুলতেই বোঁচকা পঁচা গন্ধ আমার নাকে এসে লাগলো। ভালমতো তাকাতে দেখি বাচ্চা একটা ছেলে ফ্লোরে বসে ভাত খাচ্ছে, তার চারপাশ নোংরা বমিতে ভর্তি।
প্রচন্ড ভয় আর দুর্গন্ধে আমার গা গোলাচ্ছে।
সে আমার দিকে মাথা তুলে তাকালো, চোখ দুটো রক্তলাল।আমরা একে অন্যের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছি।
আমাদের বাড়ির উত্তর দিক থেকে সুরেলা কন্ঠে আরবী উচ্চারণ শোনা যাচ্ছে।
কোথা থেকে এক পাল কাক এসে বিকট শব্দে বিচ্ছিরিভাবে ডাকতে শুরু করলো।
আমি সম্মোহিতের মতো ধীরে ধীরে ঢলে পড়ছি।
কাক এর পালের ডাক ছাঁপিয়ে উঁচু লয়ে সূরা পাঠ শোনা যাচ্ছে॥


**সত্য ঘটনার উপর ভিত্তি করে লিখা।সঙ্গত কারণে স্থানের নাম উল্লেখ করা হয়নি।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:২১
৩৩টি মন্তব্য ৩৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৯

তীব্র তাপদাহ চলছে : আমরা কি মানবিক হতে পেরেছি ???



আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকির মুখে আছি,
আমাদেরও যার যার অবস্হান থেকে করণীয় ছিল অনেক ।
বলা হয়ে থাকে গাছ না কেটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×