মুভিটি শুরু হয়েছে ২০৪৩ সালের কল্পিত প্রেক্ষাপটে। পৃথিবীর জনসংখ্যা যেখানে দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে। এত বিশাল সংখ্যক জনসংখ্যার জন্য খাদ্য ও বাসস্থানের যোগান দেয়া দিনকে দিন কঠিন হচ্ছে। বিজ্ঞানের উন্নতির সাথে সাথে খাদ্যের যোগান কিছুটা দেয়া যাচ্ছে। জেনেটিক্যালি মোডিফায়েড ফুড খাদ্যের চাহিদা তো মেটাচ্ছে, কিন্তু সাথে করে নিয়ে আসে আরেক সমস্যা। বেশিরভাগ নারী যমজ বাচ্চার জন্ম দিচ্ছেন এবং কোন কোন ক্ষেত্রে তা ৫ থেকে ৭ টি পর্যন্ত। জেনেটিক্যালি মোডিফায়েড ফুড দিয়ে খাদ্যের সমস্যা কোনভাবে মেটানো গেলেও, এটিই আবার জনসংখ্যা হু হু বাড়িয়ে দিচ্ছে। শেষপর্যন্ত বাধ্য হয়ে নতুন একটি আইন করা হয় এরকম- জমজ সন্তানদের মধ্যে থেকে মাত্র একজন সন্তান বাবা-মা লালন পালন করতে পারবেন। বাকিদের Child Allocation Beauro-এর অধীনে কৃত্রিমভাবে Cryosleep-এ রাখা হবে (হাইবারনেশনের মত অনেকটা), যতদিন পর্যন্ত পৃথিবী স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে না আসে। একজন সন্তানের বেশি কেউই নিজের কাছে কোনমতেই রাখতে পারবেন না, খুব কড়াকড়ি এ ব্যাপারে, জোর করে নিয়ে যাওয়া হয় সন্তান।
এরকমই এক অবস্থায় ক্যারেন সেটম্যান সন্তান জন্ম দেয়ার সময় মৃত্যুবরণ করেন। জন্ম দিয়ে যান সাতজন যমজ কন্যাসন্তান। এই সন্তানদের নিয়ে কি করবেন, তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান নানা টেরেন্স। মেয়ের সাথে অনেকদিন ভালো সম্পর্ক ছিল না টেরেন্সের। তাই এই সন্তানদের বাবা কে তা নিয়েও কিছু জানেন না তিনি। এতগুলো নাতনীকে কিছুতেই তিনি হারাতে চান না। সাত নাতনীর নাম তিনি রাখেন সপ্তাহের সাত দিনের নামে- Sunday, Monday, Tuesday, Wednesday, Thursday, Friday, Saturday. নাতনীদের নিজের কাছে গোপনে রেখেই বড় করা শুরু করেন। তবে তাদের সবারই একটা কমন কেতাবী নাম ছিল। ক্যারেন সেটম্যান, তাদের মায়ের নামে তাদের কেতাবী নাম। এ নামেই তারা স্কুলে যায়, পরবর্তীতে চাকরিতে যোগ দেয়।
সবাই সপ্তাহে একদিন বাইরে যাওয়ার সুযোগ পেত। নিজ নিজ নাম অনুযায়ী বারেই তারা বাড়ির বাইরে বের হবার সুযোগ পেত। যেমন Sunday বাড়ির বাইরে বের হতো বরিবার, Monday বের হতো সোমবারে এভাবে। যে যেদিন বাইরে যেত, সে বাড়ি ফিরে বাকি সবাইকে সে বাইরে যা যা দেখল তার সব কিছু বিস্তারিত জানাত। একদিন একজন নিজ বারের বাইরে লুকিয়ে বাইরে গিয়ে দুর্ঘটনায় হাতের একটি আঙ্গুল হারায়। নানা টেরেন্সকে এরপর বাধ্য হয়ে বাকি সবারই একটি করে আঙ্গুল কেটে দিতে হয়। বেঁচে থাকার জন্য তারা প্রত্যেকে প্রত্যেকের উপরে খুব বেশী মাত্রায় নির্ভরশীল।
এভাবে সপ্তাহে একদিন করে বাইরে গিয়ে তারা স্কুলে গিয়ে পড়াশোনা শেষ করে চাকরিতে যোগ দেয়। যার যার নির্দিষ্ট দিনে একজনই অফিসে যায়। সবই ঠিকঠাক চলছিল। একদিন Monday অফিসে গিয়ে আর ফিরে আসে না। ডাটাবেজ খুঁজেও তার কোন হদিস বের করতে পারে না বাকি বোনদের কেউ। আশেপাশের সবাই জানে ক্যারেন সেটম্যান একজনই। একজনের আঙ্গুল কেটে যায় দেখে বাকি সবার আঙ্গুল-ও কেটে ফেলতে হয়। সুতরাং, তাদের একজন হারিয়ে গেছে মানে বাকি ছয়জনকেও হারিয়ে যেতে হবে। বেঁচে থাকার তাগিদে বাকি ছয় বোন একে একে হারিয়ে যাওয়া Monday-কে খুঁজতে থাকে।
ক্যারেন সেটম্যান ব্যাংকে চাকরি করত। সেই ব্যাংক থেকেই তারা একে একে খোঁজা শুরু করে। ক্যারেনের এক সহকর্মীকে প্রথমে তাদের সন্দেহ হয়। এরপর আবার Child Allocation Agency-ও টের পেয়ে যায় ক্যারেন সেটম্যান আসলে একজন নয়, একের অধিক। তাদের উপর হামলা হয়, কারণ এত লোকের পৃথিবীতে হেঁটে চলে বেড়ানোর অধিকার তখন নেই। এরপর জীবনের তাগিদে লুকিয়ে লুকিয়ে নানাভাবে তাদের হারানো বোনের হদিস খুঁজতে শুরু করে।
তো শেষ পর্যন্ত Monday-এর কি হল সেটি জানতে হলে আপনাদের দেখে ফেলতে হবে এই চমৎকার মুভিটি। ২০১৭ সালে Netflix এ মুক্তি পায় ছবিটি। প্রায় ২ ঘন্টার এই মুভিটি দেখার সময় আপনি এক সেকেন্ডের জন্যও বোরড হবেন না। টানটান উত্তেজনায় ভরপুর পুরো মুভিটিই। মুভির প্রত্যেকটা সেকেন্ডকে খুব ভালোভাবে কাজে লাগানো হয়েছে। স্ক্রীনের উপর দর্শকের মনোযোগ কুব ভালোভাবে ধরে রাখতে পেরেছে এই মুভিটি।
IMDB তে মুভিটি ১০ এ ৬.৭ পেয়েছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি মুভিটিকে ১০ এ ৮ দেব।
ঘন্টাদুয়েক সময় হাতে নিয়ে দেখে ফেলতে পারেন চমৎকার এই সিনেমাটি। আশা করি ভালো লাগবে আপনাদের।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০২১ রাত ৯:৫৪