ফরহাদ সাহেব খুব মনোযোগ সহকারে তার হাতের ফাইলগুলো দেখছেন। রমিজ আলী বেশ কিছুক্ষন হয়েছে তার সামনে দাড়িয়ে আছে সেটা হয়তো ফরহাদ সাহেব ভুলেই গেছেন। আজ আট দিন হলো রমিজ ফরহাদ সাহেবের কাছে অগ্রিম বেতনের জন্য ঘুরছেন। তার ছোট মেয়েটার বড়ই শরীর খারাপ,বড় ছেলেটার হাত ভাঙ্গার ও যেন আর সময় পেল না। বড়ই দুরন্ত ছেলেটা,বাপের কিছুই পায়নি। মাঝে মাঝে রমিজ আলী নিজেই ভাবে বাচ্চা পোলাপান এত শয়তান হয় কি করে?
ফরহাদ সাহেব যে রমিজ আলীকে ঠিক ই দেখেছেন সেটা রমিজ আলী ও জানে। খামোকাই কাজের ভান করছেন। ডাক দিলে হয়তো বলবেন-ও রমিজ ! দেখতেই তো পাচ্ছ হাতে কি রকম কাজ জমেছে? তুমি এক কাজ কর,তোমার কাজ করতে থাক,আমি সময় পেলেই তোমাকে ডাকবো। তাই রমিজ দাড়িয়ে আছে । আজ আর ফিরে যাবার উপায় নেই। গত তিন বছর ঈদ কবে কোন দিক দিয়ে গিয়েছে রমিজ বলতে পারবেনা । সংসার আর তার ভরণপোষনে সব দিনই যেন এক হয়ে গেছে। পার্থক্য খালি রাতটায় । সন্তান গুলোর মুখ চেয়ে ওদের জন্য ভাবা।
ফরহাদ সাহেব কখন তার দিকে চেয়ে আছেন রমিজ খেয়াল করেননি।
তিনি বলে উঠলেন-ও রমিজ ,তোমার তো মেয়েটা অসুস্থ। তাই না?
রমিজ-স্যার গতকালকে ছেলেটার ও হাত ভেঙ্গেছে। রাতে বাসায় ফিরে বসার সময়টাও হয়নি। হাসপাতালে দৌড়ুতে হয়েছে । টাকার খুবই প্রয়োজন।
খুব মজা পেলেন যেন ফরহাদ সাহেব । কিলকিলিয়ে হাসলেন।ও আচ্ছা ছেলেটাও ইনজুরড। ভালো ক্রিকেটার নিশ্চয়ই?
রমিজ-না স্যার গাছ থেকে পড়ে গিয়েছিল,তখন তেমন সমস্যা হয়নি,কিন্তু বাসায় এসে বিছানা থেকে পড়ে এই অবস্থা । তাও আমারই সামনে।
এর মধ্যেই আলতাফ মিয়া উনার জন্য চা নিয়ে এলেন ,সাথে কিছু বিস্কিট । আলতাফ রমিজকে দেখে তার গুরুদায়িত্ব পালনে তৎপর হয়ে গেলেন-আরে রমিজ মিয়া তুমি কহন ঢুকলা?দেখতাছো না স্যার কত্তো বিজি,যাও যাও ,আর স্যার আবার কারো সামনে খাইতে পারেন না,যাও বাইরে যাও পরে আইসো।
রমিজ চুপ করে থাকলেন। ভাবছেন-তার ছেলের পছন্দের বিস্কিট। আজ হাসপাতালে যাবার সময় নিয়ে যাবেন। কিন্তু টাকা না পেলে...........
ফরহাদ সাহেব বললেন। শোনো রমিজ ,তোমার ছেলেকে হাসপাতালে ভর্তি করেছো,তাই না?
রমিজ-জ্বী স্যার।
ফরহাদ-তাহলে আর সমস্যা কোথায়,আমি আরো ভাবছিলাম তোমাকে এইবারের স্যালারিটা একটু দেরি করে দিব,আর এখনি কিনা তোমার যতো আপত্তি বাধল। আচ্ছা ঠিক আছে,তুমি তোমার কাজ করতে থাকো,আমি হাতের কাজটা শেষ করেই দেখছি কি করা যায়,বুঝতেই পারছো বস নেই,সব আমাকেই দেখতে হচ্ছে ।আর তোমার মেয়ের নামটা যেন কি?
রমিজ- আল্পনা।
ফরহাদ-বাহ নাম তো সুন্দর ! দেখতেও সুন্দর নিশ্চই?
রমিজ-না স্যার মেয়ে হিসেবে অনেক কালো।
ফরহাদ-আরে ওইটা কোন সমস্যা না,যাই হোক তুমি তাহলে যাও।
রমিজ আলী দরজা ভিরিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলেন। আলতাফ পকেট থেকে একটা পান বের করে চিবুতে লাগলেন। আর বলতে লাগলেন-মিয়া বুঝছো তোমার জন্য কবে আমার দারোয়ানের চাকরিটা যায় কে জানে? তোমার তো বার মাসই সমস্যা থাকে। আমারে দেখনা বউ বাপের বাড়ি পাঠায়া দিছি। ও তুমি তো আবার..........থাউকগা ।
কখন যে কাজের ফাকে আজকেও ফরহাদ সাহেব চলে গেলেন রমিজ বলতেও পারবেন না। বেলা চারটা। বউ বাচ্চা কেমন আছে খোজ নেয়া হয়নি । এখন যাবেন ভাবছেন। কিন্তু টাকার তো বন্দোবস্ত হলো না। এখন?
আত্নীয় স্বজন কেউ তো খোজ খবরও নেয় না। কোন উপায়ই নেই। ভাবলেন ছেলেটাকে একজন আবিস্কারক বানাবেন। ওর যা খুশি তাই বানাবে,হয়তো টাকা বানাবে,হয়তো এমন কোন যন্ত্র বানাবে যা দিয়ে অনায়াসে অন্যের পকেটে কত টাকা আছে তা হাতানো যাবে,টাকায় কিনা হয়। ঢাকা শহরে অনেক টাকা। শুধু তারই বুঝি নেই। কিন্তু ছেলে যে আবিস্কারক হবে হাত একটা তো ভেঙ্গে পড়েই আছে। আগে হাত তো ঠিক হোক। মেয়েটাও সুস্থ হোক।
এখন তারও দরকার টাকা। কিন্তু পাবে কোথায়? বাংলা সিনেমা (ছিঃনেমা) হলে হয়তো কারো জীবন বাচিয়ে কিংবা সম্মান (ইজ্জত) রক্ষা করে একটা ব্যবস্থা করা যেত। যদিও ফাইট এর প্রকারভেদ তার জানা নেই। তবে পারবেন বলে আশাবাদী । কিন্তু জীবনটা তো সিনেমা না। সিনেমায় উপকারের বদলে তিনি হয়তো বলতেন-অন্যান্য নায়ক টায়করা আমার জায়গায় হলে কিছু নিতেন না হয়তো কিংবা একটা চাকরি চাইতেন,আমি তার কিছু চাই না,আমায় কিছু নগদ টাকা দিন।
পৃথিবীতে তিন ধরনের বন্ধুর বিকল্প নেই-এক) স্ত্রী(পুরাতন/নতুন নয় এমন)
দুই)পোষা কুকুর
তিন) নগদ টাকা।
আমার কথা নয়,কোন মনীষীর কথা নাম এই মুহুর্তে মনে পড়ছে না। কি চিন্তাভাবনা তার। কয়জনের সাথে মিলবে তারও সঠিক হিসাব জানিনা। তবে মিলবে তো অবশ্যই,কিছু হলেও
আমি কাহিনীটা শেষ করার জন্য শুরু করিনি,কিংবা ভালো সমাপ্তি টানারো কোন ইচ্ছা নেই ।এমনিতেই লেখা।