somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কাকনমালা কাঞ্চনমালা........অদ্যই শেষ রজনী

১০ ই আগস্ট, ২০১০ দুপুর ১২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দাসী কাকন মালার ষড়যন্ত্রে দাসী হিসেবে কাঞ্চনমালার দিন গুলো কাটছিল খুব দু:খে কষ্টে। তিনি আঁস্তাকুড়ে বসে মাছ কোটেন আর কাঁদেন, কাদেঁন আর মাছ কোটেন। কাদতে কাদতে বলেন-


"হাতের কাঁকণ দিয়া কিনলাম দাসী,
সেই হল রাণী, আমি হলাম বাঁদী।
কি বা পাপে সোনার রাজার রাজ্য গেল ছার
কি বা পাপে ভাঙ্গলো কপাল কাঞ্চনমালার?"

রাণী কাঁদেন আর চোখের জলে ভাসেন।

রাজার মনেও কষ্টের সীমা নাই। গায়ের উপরে মাছি ভনভন্ করে, সুঁচের জ্বালায় গা-মুখ চিন্‌চিন্ন করে। কিন্তু রানীবেশি কাকনমালা বাতাসও করেনা, ওষুধও দেয়না!

একদিন ময়লা কাপড় চোপড় ধূতে কাঞ্চনমালা নদীর ঘাটে গেছেন। যেয়ে দেখেন, একজন মানুষ একরাশ সুতো নিয়ে গাছতলায় বসে বসে বলছে,-

"যদি পাই এক হাজার সুঁচ,
তবে খাই তরমুজ!
ক্সদি সুঁচ পেতাম পাঁচ হাজার,
তবে যেতাম হাট-বাজার!
যদি পাই লাখ-
তবে দেই রাজ্যপাট!!"

এই কথা শুনে রাণী আস্তে আস্তে তার কাছে গিয়ে বললেন, "কে বাছা তুমি সুঁচ চাও? আমি দিতে কিন্তো তমাকে লাখ লাখ সুচ দিতে পারি! তবে সেগুলো তোমাকে তুলে নিতে হবে, তা সুঁচ কি তুমি তুলতে পারবে?"

সব শুনে, সেই বিচিত্র মানুষটা চুপ-চাপ সুতার পুঁটলি তুলিয়া রাণীর সঙ্গে চললো।
পথে যেতে যেতে কাঞ্চনমালা মানুষটির কাছে নিজের দুঃখের কথা সব খুলে বললেন। শুনে, মানুষ বললো,-"আচ্ছা!"

রাজপুরীতে যেয়ে সেই মানুষটা রাণীকে বললো,-"রাণীমা, রাণীমা, আজ পিঠা-পুলির ব্রত। এই ব্রতে সারা রাজ্যে পিঠা বিলাতে হয়। আমি লাল সুতা, নীল সুতা দিয়ে বাড়িঘর সাজিয়ে দেই, আর আপনি গিয়ে' আঙ্গিনায় আল্পনা একে পিড়ি সাজিয়ে দেন। আর কাঞ্চনমালাকে দেখিয়ে বললেন ঐ দাসী মানুষ যোগাড়-যোগড় দিক?"

রাণী আহলাদে আটখানা হয়ে বললেন,-"শুধু আমি কেন সকল দাসীই আজ পিঠা তৈরি করবে।"
তখন রাণী আর দাসী দুইজনেই পিঠা তৈরি করতে বসলেন।
তাদের তৈরি করা পিঠা দেখে সকলের তো চক্ষুচড়ক গাছ!!
ও মা! রাণী তৈরি করলেন, আস্কে পিটা, চাস্কে পিটা আর ঘাস্কে পিটা!
আর দাসী বানিয়েছেন চন্দ্রপুরী, মোহনবাঁশি, ক্ষীরমুরলী, চন্দনপাতা!!
এই দেখেইতো মানুষ বুঝে ফেললো যে, কে রাণী আর কে দাসী।

যাই হোক পিঠে-সিটে তৈরি করার পরে দুইজনে আঙ্গিনায় আলপনা দিতে গেলেন। রাণী একমন চাল বেটে, সাত কলস জলে গুলো নিয়ে তাতে এক গোছা শনের নুড়ো ডুবিয়ে সারা আঙ্গিনা লেপতে লাগলেন। এখানে এক খাবলা দেন, ওখানে এক খাবলা দেন!!

আর দাসী আঙ্গিনার এক কোণে একটু ঝাড়-ঝুড় দিয়া পরিস্কার করে একটু চালের গুঁড়ায় খানিকটা জল মিশিয়ে, সরু একটু নেকড়া ভিজিয়ে, আস্তে আস্তে পদ্ম-লতা আঁকলেন। পদ্ম-লতার পাশে সোনার সাতটি কলস আঁকলেন; কলসের উপর চুড়া, দুই দিকে ধানের ছড়া একে, ময়ূর, পুতুল, মা লক্ষ্মীর সোনা পায়ের দাগ, এই সব একেঁ দিলেন।

তখন সেই বিচিত্র মানুষ কাঁকণমালাকে ডেকে বললো, "ও বাঁদী! এই মুখে রাণী হয়েছিস?

"হাতে কাঁকনের নাগন্ দাসী!

সেই হলো রাণী, রাণী হলেন দাসী!

ভাল চাস তো, স্বরূপ কথা বল।"

কাঁকণমালার গায়ে যেন আগুনের হল্কা পড়লো। তিনি গর্জে উঠে বললেন, "কে রে পোড়ারমুখো দূর হ তুই'।"
জল্লাদকে ডেকে বললেন,"দাসীর আর ঐ নির্বংশে'র গর্দান নাও; ওদের রক্ত দিয়া আমি স্নান করবো"
জল্লাদ গিয়ে খপ করে দাসী আর মানুষকে ধরলো। তখন মানুষটা পুঁটলী খুলে বললো-

"সুতা সুতা নট্খটি!
রাজার রাজ্যে ঘট্‌ঘটি
সুতন সুতন নেবোর পো,
জল্লাদকে বেঁধে থো।"

অম্নি এক গোছা সূতা গিয়ে জল্লাদকে আষ্টে-পৃষ্ঠে বেঁধে রাখলো।

মানুষটা আবার বললো,-"সুতা তুমি কার?-

সুতা বললো,-"পুঁটলী যার তার।"

মানুষ আবার বললো,

"যদি সুতা আমার খাও।
কাঁকণমালার নাকে যাও।"

সুতোর দুই গুটি গিয়ে কাঁকণমালার নাকে উপর ঢিবি গেরে বসলো। কাঁকণমালা ব্যাস্ত, সমস্তে ঘরে উঠে বলতে লাগলো,-"দুঁয়ার দাঁও, দুঁয়ার দাঁও, এঁটা পাঁগন, দাসী পাঁগন নিয়ে এঁসেছে।"

পাগল তখন মন্ত্র পড়ছে-

"সুতা সুতা সরুলি, কোন্ দেশে ঘর?
সুঁচ রাজার সুঁচে গিয়ে আপনি পর।"

দেখতে-না-দেখতে হিল্ হিল্ করে লাখ লাখ সুতা রাজার গায়ের লাখ লাখ সুঁচে পরে গেল।

তখন সুঁচেরা বললো,-

"সুতার পরাণ সীলি সীলি, কোন ফুড়ন দি।"

মানুষ বলিল,-

"নাগন্ দাসী কাঁকণমালার চোখ-মুখটি।"

রাজার গায়ের লাখ সুঁচ উঠে গিয়ে, কাঁকণমালার চোখ-মুখ সেলাই করে রইল। কাঁকণমালার যে ছট্ফটিয়ে জান যায় যায় অবস্থা!

রাজা তখন চোখ মেলে দেখেন, মানুষটি আর কেউই নয়, তার সেই পুরানো রাখাল বন্ধু!

রাজা তখন রাখালের সাথে কোলাকুলি করলেন। রাজার চোখের জলে রাখাল ভাসলেন, রাখালের চোখের জলে রাজা ভাসলেন।

রাজা বললেন,-"বন্ধু আমার দোষ দিও না, শত জন্ম তপস্যা করেও তোমার মত বন্ধু পাব না। আজ হতে তুমি আমার মন্ত্রী। তোমাকে ছেড়ে আমি কত কষ্ট পেলাম; আর কখনো তোমায় ছাড়বো না।"

রাখাল বললো, "আচ্ছা! তা তোমার সেই বাঁশিটি যে হারিয়ে ফেলেছি; একটি বাঁশি দিতে হবে!'

রাজা রাখাল-বন্ধুকে সোনার বাঁশি তৈরী করে দিলেন।

ওদিকে সুঁচের জ্বালায় দিন-রাত ছট্ফট্ করে কাঁকনমালা মরে গেল!

কাঞ্চনমালা দুঃখ ঘুচল।

তখন রাখাল সারাদিন মন্ত্রীর কাজ করেন, আর রাত্রে চাঁদের আলোতে আকাশ ভরে গেলে, রাজাকে নিয়ে গিয়ে নদীর সেই গাছের তলায় বসে বাঁশি বাজান। রাজা গলাগলি করে মন্ত্রী-বন্ধুর বাঁশি শোনেন।

রাজা, রাখাল আর কাঞ্চনমালার সুখে দিন কাটতে লাগল।


"আমার গল্পটি ফুরলো

নটে গাছটি মুরলো"
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০১০ দুপুর ১২:২৮
২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×