somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বজ্জাত দানব ও আগুন দেবতা

২২ শে আগস্ট, ২০১০ দুপুর ১:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক দানব আর এককৃষক, দুজনে পাশা খেলছিল। খোলায় চাষার হার হল।

পাশায় হেরে চাষারতো মাথায় হাত! কারণ খেলবার আগে সে বাজি রেখেছিল যে, সে হারলে দানব তার ছেলেকে নিয়ে যাবে। এখন উপায় কি হবে? ওদিকে দানব কিছুতেই ছাড়বে না। সে বলছে, "কালই এসে আমি তোমার ছেলে নিয়ে যাব। যদি তাকে রাখতে চাও, তবে এমন করে তাকে লুকিয়ে রেখে দাও, যাতে আমি খুঁজে বার করতে না পারি। খুঁজে পেলে কিন্তু আর তাকে ফেলে যাব না।" এই না বলে বিকট হু হু হা হা হা অট্ঠাসি দিয়ে চলে গেলো।
ওদিকে কৃষকের তো চিন্তায় মর মর অবস্থা, ছেলেটিকে কোথায় লুকোবে? যেখানেই রাখুক, দানব নিশ্চয় তাকে খুঁজে বার করবে। সে অনেক ভেবে কিছু বুঝতে না পেরে শেষে দেবতার রাজাকে ডাকতে লাগল।
দেবতার রাজা তাঁর দুঃখ দেখে দয়া করে বললেন, "তোমার কোনোচিন্তা নেই। আমি তোমার ছেলেটিকে এমন করে লুকিয়ে দেব যে দানবের বাবাও তাকে খুঁজে বার করতে পারবে না।"

এই বলে তিনি ছেলেটিকে গমের ক্ষেতে নিয়ে গিয়ে তাকে একটা ছোট্র গমের ভিতরে লুকিয়ে রাখলেন। তার পরদিন দানব এসে কৃষকের ঘরে, বাগানে , পুকুরে, বাক্সে, উনুনে, হাঁড়িতে, হুঁকোর ভিতরে- কতই খুঁজল, কোথাও ছেলেটিকে দেখতে পেল না।
কিন্তু সে এমনি পাজী দানব ছিল- সে তখনি বুঝে নিল যে, তবে নিশ্চয় গমের ক্ষেতে গমের ভিতরে লুকিয়ে রেখেছে!
অমনি সে কাস্তে নিয়ে গিয়ে ঘ্যাঁশ ঘ্যাঁশ করে গম কাটতে লাগল! সব গম কেটে, তারপর তার এক-একটি করে দানা হাতে নিয়ে উলটেপালটে দেখে, সে দুদণ্ডের মধ্যেই ধরে ফেলল যে, এই গমটার ভিতর ছেলেটা বসে আছে।

আর একটু হলেই সে সেই গমটার ভিতর থেকে ছেলেটিকে বার করে নিয়ে যেত এর মধ্যে দেবতার রাজা এসে তার হাত থেকে সেটা কেড়ে নিয়ে ছেলেটিকে তাড়াতাড়ি চাষার হাতে দিয়ে বললে, "আমর যা সাধ্য, আমি তা করেছি। এর বেশি আর পারব না।"
দানব ছেলেটিকে নিতে না পেরে খুব রেগে গিয়ে বলল, "হুম, আমাকে ফাঁকি দিলে? তবে আর ফাকি দিতে পারবে না, আমি কাল আবার আসব।"

দেবতার রাজা যখন পারলেন না, তখন চাষা আলোর দেবতার কাছে গেল। আলোর দেবতা এসে তার ছেলেটিকে একটি রাজহাঁসের গলায় পালক বানিয়ে রেখে দিলেন। কিন্তু তাতে কি সে দানবকে ঠকাবার জো আছে? সে এসেই হাঁসের গলা ছিঁড়ে সে পালকটি সুদ্ধ তাকে খেয়ে ফেলতে গেলো!ভাগ্যিস পালকটি তখন তার ঠোঁটে লেগে রইল, নইলে আর উপায়ই ছিল না।
পালকাটকে দানবের ঠোঁটে লাগতে দেখেই আলোর দেবতা সেটিকে উড়িয়ে নিয়ে চাষার কাছে পৌঁছে দিলেন, আর বললেন, "আমি আর কিছু করতে পারব না।"
দানব সেদিনও ঠকে গেল, কিন্তু যাবার সময় বলে গেল, "কাল আবার আসব।"

দেবতার রাজা হেরে গেলেন, আলোর দেবতা হেরে গেলেন। তখন কৃষক আগুনের দেবতাকে ডেকে বলল, "ঠাকুর! আপনি আমার ছেলেটিকে বাঁচান!"
আগুনের দেবতা তখন ছেলেটিকে সমুদ্রে নিয়ে একটা মাছের পেটের মধ্যে তার একটি ডিমের ভিতরে লুকিয়ে রাখলেন।

ওকিদকে বজ্জাত দানবটা কিন্তু এর সবই টের পেয়ে গেছে। আর তাই এবারে সে একটা ছিপ নিয়ে সমুদ্রের ধারে বসে মাছ মারতে লাগলো। সমুদ্রে কত কোটি কোটি মাছ, তার ভিতর থেকে সে সেই ডিমটাকে দেখতে দেখতে খুঁজে বার করল।

তখন আগুনের দেবতা সেই ডিমটি তার হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে চুপিচুপি ছেলেটিকে বললেন, "শিগগির ঘরে পালিয়ে যা, ভেতরে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দিস।"
এ কথা তখন দানব শুনতে পায় নি। তারপর ছেলেটি পালিয়ে অনেক অনেক দূরে গেলে সে তাকে দেখতে পেল। অমনি ঘোঁত করে লাফিয়ে উঠে সে তার পিছু পিছু ছুটল। কিন্তু ছেলেটি ততক্ষণে ঘরে ঢুকে গিয়েছে। দানবটা তাকে ধরবার জন্য তাড়াতাড়ি গেল সেই ঘরে ঢুকতে। সে জানত না যে আগুনের দেবতা এর আগেই কখন সেই ঘরের দরজায় তিনহাত লম্বা এক লোহার খোঁচ বসিয়ে রেখেছেন। দানব রাগে ভূত হয়ে ঘরে ঢুকবার সময় সেই খোঁচ আগাগোড়া গেল তার মাথায় ঢুকে। তখন সে ভয়ানক চেঁচিয়ে চিৎপাত হয়ে পড়ে যেতেই আগুনের দেবতা ছুটে এসে তার একটা পা কেটে ফেললেন।

কিন্তু পা কাটলে কি হবে? দুষ্ট দানব তাকে কি জাদুই করে রেখেছে- সেই কাটা পা তখনি এসে আবার জোড়া লেগে গেল!
যা হোক, আগুনের দেবতা সেই দানবের থেকে বড় জাদুকর ছিলেন্‌ তিনি জানতেন যে কাটা জায়গায় লোহা আর পাথর ফেলে দিলে আর তা জোড়া লাগতে পারে না। কাজেই তিনি তাড়াতাড়ি দানবের আর একটা পা কেটেই লোহা আর পাথর দিয়ে কাটা জায়গা চাপা দিয়ে ফেললেন। তখন আর দানবের জাদু খাটল না, দেখতে দেখতে তার প্রাণ বেরিয়ে গেল।

তখন ত কৃষকের খুবই আনন্দ হল। সে আগুনের দেবতাকে কত সালাম যে কারল, তা গুণে শেষ করা যায় না। তারপর থেকে সে সকলকে বলত যে, এই দেবতাটির মত দেবতা নেই।
১৯টি মন্তব্য ১৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×