তারে লাল অন্তর্বাস ঝুলছে । সাইজ দেখে রইসুদ্দিন ধারনা করলো অন্তর্বাসটি জাহানারা আবেদিনের । বেডপ সাইজের অন্তর্বাস । বর্ডারে ফুলের কাজ । ক্লিপ দিয়ে তাঁরে আটকানো অন্তর্বাসটির দুবাহু ঝুলে আছে । অন্তর্বাটি ক্লান্ত । প্রতিমুহূর্তের রক্ষণশীল ভুমিকার পর সে এখন বিশ্রাম নিচ্ছে যেমনটি রইসুদ্দিন নেয় । অন্তর্বাস নতুন কেনা হয়েছে । বনানীর বারো নাম্বার রোডের এই চারতলা বাসাটির সকল ভাড়াটের অন্তর্বাস রইসুদ্দিন চিনে । মাস পনেরো যাবৎ সে এখানে দারোয়ানের কাজ করছে । দুপুরের দিকে গেটে তার স্ত্রী লতিফা ছেলের বই খাতা নিয়ে বসে । মেয়েটা ক্লাশ সেভেন পাশ নাকি দিছিল । মাথা ভালো । যে কোন হিসাব মুখে মুখে করে দিতে পারে । সময়ে অসময়ে দুই চারটা ইংলিশ শব্দও বলে । লতিফা আর ছেলে রুবেল দুপুরে বই খাতা নিয়ে বসে আর রইসুদ্দিনের চট করে চলে আসে ছাদে । বিষণ্ণ রোদে ছাদের ডান কোনায় গাজী পানির টাঙ্কির গায়ে ঠেশ দিয়ে রইসুদ্দিন সময়টা অন্তর্বাস দেখে কাটায় । মূলত দিনের এই সময়টার জন্য তার প্রতিদিনকার অপেক্ষা ।
রইসুদ্দিন উঠে দাড়ায় । ছাদের দরজা ধরে সিঁড়িতে উকি দেয় । কেউ নেই । কান পেতে কিছুক্ষন অপেক্ষা করে । না , কোন সাড়া শব্দ পাওয়া যাচ্ছে না । এই সময়টায় ছাদে তেমন কেউ একটা আসে না । সে দরজা চাপিয়ে আবার ফিরে আসে তারে ঝুলানো অন্তর্বাসের কাছে । খপ করে খুলে নেয় ক্লিপ । শার্টের নীচে লুঙ্গির সাথে গিঁট দিয়ে বাঁধে লাল ফুল তোলা অন্তর্বাস । নেমে যায় নীচে ।
মাঝে মাঝে সে এমনটা করে । বাসা বাড়ির ছাদে শাড়ি , পায়জামা , শার্ট হারালে খোঁজ খোঁজ রব উঠে কিন্তু অন্তর্বাস হারালে কেউ টু শব্দ করে না । গোপন জিনিসে আমাদের যত ভয় । বিষয়টা রইসুদ্দিন বেশ উপভোগ করে । যার অন্তর্বাস সে হাপিশ করে দেয় পরবর্তীতে তার মুখ সে গভীর মনোযোগে লক্ষ্য করে । তাদের চোখের তাঁরায় অজানা বিহ্বলতা , সেখানে লজ্জার চেয়ে কাজ করে ভয় । নিজেকে অন্যের কাছে না বুঝে হারাবার ভয় । রইসুদ্দিন যেন ঠিক ঠিক সেই ভয় পড়তে পারে । তার ছেলে রুবেলের বানান করে এলিফেন্ট পড়বার মতো । ই এল ই পি এইচ এ আন টি । এলিফেন্ট ।
( ২ )
লেজ কাটা কুকুরটা প্রতিরাতের মতো কাঁদছে । ঘেউ উ উ ... ঘেউ উ উ । রইসুদ্দিন টুলে বসে কুকুরটির কান্না শুনে আর টাশ টাশ মশা মারে । অন্যান্য বাসার দরোয়ানরা রাতের এই সময়টা ঘুমিয়েই কাটায় । রইসুদ্দিন ঘুমায় না । তার রাতে ঘুম হয় না সেই ছোটকাল থেকেই । তার দাদী বলতো এই পোলায় ঘুমায় না ক্যারে । কিরে তুই কি চুর হইবি নি । রইসুদ্দিন হয়েছে দারোয়ানের । গেটের পাশেই এক রুমের ঘর । সেখানে তার স্ত্রী ছেলেকে নিয়ে ঘুমায় । গরম বেশী বলে লতিফা আজ মশারী লাগায়নি । ছেলেটাকে নিশ্চিৎ মশা কামড়াচ্ছে । রইসুদ্দিন উঠে দাড়ায় । ঘরের তাকে গতকাল রাতে অর্ধেক কয়েল রেখেছিল । ছেলের পায়ের কাছে কয়েল জ্বালিয়ে দেয় ।
-এই । ফিরে আসতে গিয়ে লতিফার গলা শুনে ঘুরে দাড়ায় রইসুদ্দিন । লতিফার ঘুম গাড় । এতো অল্প শব্দে তার ঘুম ভাঙবার কথা নয় ।
-ঘুমাও নাই ?
-না । মশা কাম্রাইতাছিল ।
-মশারী লাগাও । পাশেই ড্রেন । মশা তো আইবই ।
রইসুদ্দিন চলে আসতে চায় , লতিফা আবার ডাকে । - একটা কথা শুনবা ?
-কানে পট্টি লাগাই নাই । কইয়া ফালাও ।
-আইজ সকালবেলাত ছাদে আমার নিচের কাপড়ডা লাড়ছিলাম , সন্ধ্যায় গিয়া দেখি নাই ।
-অর্ধেক কতা কইবা না । পুরাডা কও । নীচের কাপড় কি ?
ঐ যে মাইয়ারা পড়ে না বেলাউজের নীচে । ওইসব । পরশু জাহানারা আফাদের বাসাত গেছিলাম তাগর কাপড় ধুইয়া দিতে । আফায় আমারে লাল রঙের একটা ওইসব দিয়া কইল এইটা শাড়ির নীচে পড়তে । নীচে কতো শত গাড়ির ড্রাইভার মাইভার আহে । তাগর সামনে নাকি হুদা বেলাউজ পড়া ঠিক না । নজর লাগতে পারে । এত্ত সুন্দর ফুল তোলা একটা জিনিস দিছিল । আইজ সকালে ধুইয়া ছাদে লাড়ছিলাম , সন্ধ্যায় গিয়া দেহি নাই । এই বাড়িরই কেউ কামডা করছে । এতো শিক্ষিত শিক্ষিত মাইনশে মাইয়াগর নীচের কাপড় চুরি করে । আস্ত হারামজাদা ।
লতিফা রাগে গজ গজ করতে থাকে । রইসুদ্দিন তার টুলে ফিরে আসে । বাইরে কুকুর কাঁদছে । ঘেউ উ উ ... ঘেউ উ উ ... বিশ্রি সেই কান্না ।
---------------
অনুগল্প - যৌনাবেগ - সুরভী ম্যাডাম