ডায়েরীর শেষ পাতায় লেখা অরণ্যের শেষ কথাগুলো...
“স্মৃতির পাতাগুলো আজ কেন জানি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উলটে যাচ্ছে। একের পর এক স্মৃতি আজ তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে আমাকে... মাঝে মাঝে কিছু ঘটনা এমন একটা বই এর পাতা খুলে দেয় যার পাতায় পাতায় শুধু আজ না পাওয়ার বেদনা... স্মৃতি বড়ই কঠিন এক জিনিস, ভোলাও যায় না, আবার তাকে মুছে ফেলা যায় না...
কত দিন হল? জানিনা... হিসাব রাখিনি... কিন্তু আজ কররা...এক বছর পাঁচ মাস সাত দিন... হ্যাঁ... আমি বেচে আছি... বেচে আছি আমি তোমাকে ছাড়া... এতাকে বেচে থাকা বলে কিনা জানিনা... তাও আমি বেচে আছি... প্রতিটা সেকেন্ড, প্রতিটা মুহূর্ত পাই পাই করে হিসাব করে...”
বলে রাখা ভালো এটাই অরণ্যের শেষ লেখা... এরপর অরণ্য বেচে ছিল মাত্র ৪৮ টি ঘণ্টা... জানতে মন চায় এখন কেন লিখেছিল এই কথাগুলো... ও কি জানতো ওর সময় শেষ?... ভেবে পাই না... ডায়েরীর প্রতিটা ভাজে একটা কান্না, একটা হাহাকার... এখন মাঝে মাঝে মনে হয় আমার বন্ধুটি আমার পাশে বসে হয়তো দেখছে আমাকে... আর বলে যাচ্ছে বন্ধু বাচিয়ে রাখতে কেন চাস আমাকে? উত্তর টা আমার কাছে নেই তাও এই চেষ্টা আমি করে যাচ্ছি...
পরের লাইনগুলো মিতাকে লেখা...
“মিতা,
জীবন আমার চলে যাচ্ছে...
চলে যাচ্ছে জীবনের তালে, কোন উচ্ছাস ছাড়া... কিন্তু কেন এমন হল? এমনতো হওয়ার কথা ছিল না... স্বপ্ন আর বাস্তবতা এক নয় তা জানতাম আমি... তাও হল আমার সাথে... তুমি চলে গেলে... বাইরের দুনিয়া জানে আমি অনেক শক্ত আর কঠিন হয়ে গেছি... কিন্তু মনের মাঝে যে রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে তা বন্ধ হবে কিভাবে?
তোমার কাছে দুটি বছরে চাওয়া ছিল শুধু একটাই... সবসময় এই কথাটা বলতাম তোমাকে...
মিতা আর যাই কর কোনোদিন যাতে তোমায় আমার ঘৃণা করতে না হয়... তাহলে যে আমার বেচে থাকা কঠিন হবে...
মিতা আজ আমাকে সেই কঠিন কাজ টা করতে হচ্ছে... কেন এই শাস্তি?... এই প্রতারণা?
মিতা তোমার চোখে চোখ রেখে হয়তো বলতে পারবোনা আমার শেষ কথাগুলো... কিন্তু আমার সময় ফুরিয়ে আসছে... এই পৃথিবীতে আজ বেচে থাকতে খুব ইচ্ছা হয়... এই সুন্দরকে উপভোগ করতে চাই আমি... কিন্তু কিভাবে?...
পারছিনা ঘৃণা করতে... তাই পারছিনা বেচে থাকতে...
হারিয়ে যাব হয়তো দিগন্তের শেষ নিলিমায়...
যেথায় গোধূলি মিলায় তার আপন মহিমায়...
চলে যাওয়ার সময়...
হারিয়ে যাবার সময়...
হারাবো আমি আজ অসীমের সীমানায়...
দুটি বছরের সব স্মৃতি আজ চোখের পাতায়... ঘৃণা আমি পারবোনা করতে তোমায় মিতা, তাই হয়তো শেষ ঠিকানাই আমার শেষ গন্তব্য...”
কি হয়েছিলো এই দু বছর? লেখক তা জানেন এই ডায়েরীর বদৌলতে...
(চলবে)...