somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০৯ (চুড়ান্ত খসড়া) বনাম আমার দুশ্চিন্তা

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ বিকাল ৫:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০৯ ( চুড়ান্ত খসড়া ) সম্পর্কে আমার মতামত প্রকাশ করছি

জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০৯ ( চুড়ান্ত খসড়া ) সম্পর্কে মতামত প্রদানের সুযোগ করে দেওয়ায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। বাংলাদেশের একজন সচেতন সাধারণ নাগরিক, একজন শিক্ষানুরাগী অভিভাবক এবং মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে আমি জাতীয় শিক্ষানীতি ২০০৯ ( চুড়ান্ত খসড়া ) সম্পর্কে নিম্নরূপ পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশমালা প্রেরণ করছি -

১. প্রাথমিক স্তরের ৩য়-৮ম শ্রেণী পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষা এবং মাদ্রাসা শিক্ষার সর্বমোট ৬৫টি বিষয়ের, ৯ম-১০ম শ্রেণী পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষা, ভোকেশনাল শিক্ষা এবং মাদ্রাসা শিক্ষার মোট ২৩টি আবশ্যিক/ নৈর্ব্যচনিক বিষয়সহ অন্যান্য ঐচ্ছিক/বৃত্তিমূলক বিষয়ের এবং একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর সাধারণ শিক্ষা শাখার ( বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা) আবশ্যিক/ নৈর্ব্যচনিক / ঐচ্ছিক)মোট ৪০টি বিষয়ের এবং ভোকেশনাল শিক্ষা ও মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য আদর্শ পাঠটীকা সম্বলিত শিক্ষক নির্দেশিকা প্রস্তুত করে সরবরাহ করতে পারলে সমগ্র বাংলাদেশের মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ শিক্ষাদান কার্যক্রম পরিচালনা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে বলে মনে করি।
আদর্শ পাঠটীকা সম্বলিত শিক্ষক নির্দেশিকা প্রস্তুতের সময় যে সব বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন -
ক) পাঠ্যপুস্তকসমূহের বাৎসরিক পাঠ পরিকল্পনা প্রনয়ণ।
খ) প্রতিটি অধ্যায়কে কতটি ও কী কী অংশে বিভক্ত করে পাঠদান করতে হবে তার বিস্তারিত বিবরণ।
গ) কোন অংশ পাঠদানকালে শিক্ষক আধুনিক অংশগ্রহণমূলক শিক্ষণ-শিখন পদ্ধতির কোন কৌশলটি কখন প্রয়োগ করবেন এবং তখন প্রাসঙ্গিক শিক্ষা উপকরণসমূহ কীভাবে ব্যবহার করতে হবে তার বিস্তারিত বিবরণ (সম্ভাব্য সকল বিকল্প উপকরণ ব্যবহারের বিস্তারিত বিবরণসহ)।
ঘ) সংশ্লিষ্ট পাঠের আচরণিক উদ্দেশ্য/ শিখনফল ও সময় বিভাজন উল্লেখ করন।


২. এরূপ শিক্ষক নির্দেশিকাসমূহ প্রস্তুতের কাজে আধুনিক শিক্ষাদান পদ্ধতি নিয়ে দেশের গবেষণাকারী মহল, দেশের সকল শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজসমূহের বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকবৃন্দ এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সরাসরি শিক্ষাদান কাজের সাথে জড়িত বিভিন্ন বিষয়ে অভিজ্ঞ শিক্ষকবৃন্দকে নিয়ে একটি কেন্দ্রীয় সমন্বয় সেল গঠন করা অত্যন্ত জরুরী বলে আমি মনে করি। এই কেন্দ্রীয় সমন্বয় সেলের অধীনে এনে প্রতিটি পাঠ্যপুস্তকের ১টি/২টি অধ্যায়ভিত্তিক ছোট ছোট গ্র“পে বিভক্ত করে যদি দায়িত্ব বন্টন করে দেওয়া যায় তাহলে অনেক কম সময়েই অনেক দূর এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়। দেশ গঠনে শিক্ষক সমাজের এই সমন্বিত অংশগ্রহণ সমগ্র দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় এবং শিক্ষার মানে অনেক দ্রুত একটি Uniformity নিয়ে আসতে পারে।

৩. খসড়া শিক্ষানীতির পৃষ্ঠা ৮৩ সংযোজনী ২-এ প্রাথমিক স্তরের জন্য প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রম কাঠামোতে ৩য়-৫ম শ্রেণীর ’জলবায়ু পরিবর্তনসহ পরিবেশ’ নামীয় বিষয়টিকে ’পরিবেশ, সাধারণ বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি’ নামকরণ এবং তদানুযায়ী শিক্ষার্থীদের বয়স ও মেধাকে বিশেষ বিবেচনায় রেখে পারিপার্শ্বিক প্রকৃতি ও পরিবেশ এবং যুগোপযোগী বৈজ্ঞানিক পরিমন্ডলের সাথে পরিচয়মূলক পাঠ্যসূচী প্রণয়নের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি ।

৪. খসড়া শিক্ষানীতির পৃষ্ঠা ৮৩ সংযোজনী ২-এ প্রাথমিক স্তরের জন্য প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রম কাঠামোতে ৬ষ্ঠ-৮ম শেণীর ’জলবায়ু পরিবর্তনসহ পরিবেশ’ এবং ’সাধারণ বিজ্ঞান তথ্য প্রযুক্তি’ নামীয় দুটি বিষয়কে সমন্বিতকরণের মাধ্যমে ’পরিবেশ, সাধারণ বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি’ নামকরণে ১০০ নম্বরের পাঠ্যসূচী প্রণয়নের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

৫. খসড়া শিক্ষানীতির পৃষ্ঠা ৮৩ সংযোজনী ২-এ প্রাথমিক স্তরের জন্য প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রম কাঠামোতে ৬ষ্ঠ-৮ম শ্রেণীতে কর্মমুখী শিক্ষা নামে বিভিন্নমুখী ট্রেডের শুধুমাত্র তত্ত্বিক জ্ঞান প্রাথমিক শিক্ষা পরবর্তী ছিটকে পড়া শিক্ষার্থীদের সুনির্দিষ্ট কোন উপার্জনমুখী কর্মদক্ষতা অর্জন নিশ্চিত করতে পারবে না। এর পরিবর্তে দর্জিবিঞ্জান , কাঠের কাজ, গবাদি পশুপালন, কৃষিকাজ, উদ্যান পালন, কম্পিউটার পরিচালনা, ইলেকট্রনিক্স, মেকানিক্স, ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা ইত্যদি নির্দিষ্ট কিছু আয়মূলক ক্ষেত্রের তত্ত্বীয় জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি হাতে-কলমে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ সুযোগ সৃষ্টিসহ নৈর্বাচনিক বিষয় হিসেবে সংযোজন করে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য কমপক্ষে ২টি বিষয় নির্বাচনের বাধ্যবাধকতা রাখার বিষয়টি বিবেচনার অনুরোধ করছি।

৬. খসড়া শিক্ষানীতির পৃষ্ঠা ৮৩ সংযোজনী ৩-এ মাধ্যমিক স্তরের জন্য প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রম কাঠামোতে ৯ম-১০ম শ্রেণীতে সাধারণ শিক্ষার আবশ্যিক বিষয় তালিকায় অন্তর্ভুক্ত তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়টি বিজ্ঞান ও মানবিক বিভাগের ক্ষেত্রে সঠিকভাবে উল্লেখ থাকলেও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের জন্য তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়টি আবশ্যিক ও ঐচ্ছিক উভয় তালিকায় অন্তর্ভুক্তি যথাযথ নয় বলে মনে করি। প্রস্তাবিত শিক্ষাক্রম কাঠামোতে বিষয়টির নাম তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি ( ICT ) রাখার প্রস্তাব করছি।

৭. শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা বিকাশের উপযোগী আংশগ্রহণমূলক পদ্ধতিতে ফলপ্রসু শিক্ষণ-শিখন কার্যক্রম পরিচালনা ও যথাযথ মূল্যায়নের জন্য শহর-গ্রাম নির্বিশেষে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণীকক্ষের শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১ঃ৩০ বজায় রাখার ব্যপারে কড়া নির্দেশ প্রদান ও নজরদারির ব্যবস্থা গ্রহণ এবং প্রয়োজনে দুই শিফটে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগের নির্দেশ জারিকরণের মাধ্যমে শিক্ষা খাতে অবকাঠামোগত ব্যয় সংকোচের সুযোগ সৃষ্টি করে কি-না সে বিষয়ে পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করছি।

৮. শিক্ষার্থীদের বিশ্রাম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গমনের পূর্বে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিগ্রহণ এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দৈনিক অর্জিত জ্ঞান বাসায় ব্যক্তিগত অনুশীলনের সুযোগ সৃষ্টির মত মনোপেশীজ বিষয়গুলো বিবেচনায় এনে শিক্ষানীতিতে বাংলাদেশের সকল এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য গ্রীষ্মকালীন, শীতকালীন এবং রমযান মাসের নিম্নরূপ সময়সূচী প্রণয়নের প্রস্তাব করছি -




সুপ্রিয় ও সমঝদার সাম্যুগোত্রীয়বৃন্দ, ফোঁড়ন কাটাকাটি ফেলে আসুন নিজের আজকের ও আগামী প্রজন্ম সম্পর্কে বিশ্বায়নের সঠিক নির্দেশনা হিসেবে Big বাজেটমুখী নয় বরং a bit বাস্তবমুখী কিছু দাঁড় করাই। ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সন্ধ্যা ৬:২৮
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×