somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তামাশা: দু’জন নারীর দু’ পরিণতি

৩০ শে জুলাই, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

http://www.alkawsar.com/article/331
প্রথমে আমরা একটি খবর পড়ে দেখতে পারি। খবরটি ছাপা হয়েছে ২৮ নভেম্বরের ২০১০ দৈনিক ‘প্রথম আলো’তে। এ খবর অবশ্য দেশের অন্য সব মিডিয়াতেই এসেছে ভিন্ন ভিন্নভাবে। কোথাও নিজস্ব প্রতিনিধির সূত্রে, কোথাও আন্তর্জাতিক মিডিয়ার সূত্রে।

অরুন্ধতী রায়ের বিরুদ্ধে মামলা করার নির্দেশ

ভারতের বুকার বিজয়ী লেখিকা অরুন্ধতী রায় ও কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন হুররিয়াত কনফারেন্সের নেতা সৈয়দ আলী শাহ গিলানীর বিরুদ্ধে অবিলম্বে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে মামলা করার জন্য নয়া দিল্লি পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল শনিবার নয়াদিল্লির মহানগর বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট নভিতা কুমারী রাঘা ওই নির্দেশ দেন।

ম্যজিস্ট্রেট ভারতীয় দণ্ডবিধি আইনের আওতায় অরুন্ধতী রায় ও গিলানিসহ আরও পাঁচজনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের নির্দেশ দেন। এ ছাড়া আগামি ৬ জানুয়ারির মধ্যে মামলা দায়েরসংক্রান্ত প্রতিবেদন আদালতে পেশ করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে সম্যাজিস্ট্রেট নয়াদিল্লি পুলিশের প্রতিবেদনও খারিজ করে দেন। এই প্রতিবেদনে অভিযুক্ত ব্যক্তিরা দোষী নয় বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।

গত ২৮ অক্টোবর জনৈক সুশীল পণ্ডিত অরুন্ধতী রায় ও গিলানিসহ অন্যদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা দায়েরের জন্য আবেদন করেন। এর আগে এক সেমনিারে অরুন্ধতী রায়, গিলানি ও অন্যরা সরাসরি ভারত সরকারের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ করে বক্তব্য দেন।

গত মাসের শেষ দিকে অরুন্ধতী রায় নয়াদিল্লিতে এক সেমিনারে বলেছিলেন, কাশ্মীর কোনো দিনই ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল না। এটা ঐতিহাসিক সত্য। এমনকি ভারত সরকার নিজেও তা মেনে নিয়েছে। অরুন্ধতী রায়ের এই বক্তব্যে ভারতজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিরোধী দলের পক্ষ থেকে সরকারকে অরুন্ধতীর বিরুদ্ধে মামলা করার আহ্বান জানানো হয়।



এবার আমরা আরেকটি নাম মনে করার চেষ্টা করতে পারি। সেটি হচ্ছে, তসলিমা নাসরিন। তার চরম দেশ ও ইসলাম বিদ্বেষী লেখা যখন প্রকাশ হয়, তখন তাকে পদক-পুরস্কার দেয় ভারতের লেখক-বুদ্ধিজীবীরা। বাকস্বাধীনতার জন্য তার কোনো অমর্যাদা করা যাবে না, এমন বহু বড় বড় বাণীও আওড়ানো হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের লেখক-বুদ্ধিজীবীরা এক্ষেত্রে হঠাৎ করে ‘উদারতার পাঠ’ দেওয়া শুরু করেন। নব্বই দশকের প্রায় পুরো সময়টা জুড়ে তসলিমাকে নিয়ে তারা কী মাতামাতি যে করেছেন তা তখনকার চোখ-কান খোলা মানুষেরা লক্ষ্য করেছেন। এখন ইচ্ছা করলে কেউ রেকর্ড ঘেঁটেও দেখতে পারেন। কিন্তু অরুন্ধতীর ক্ষেত্রে দেখুন, ভারতের পণ্ডিত বুদ্ধিজীবীরা নীরব। এখানে ‘বাকস্বাধীনতা’র আদর্শ উঁচুতে তুলে ধরতে কেউ এগিয়ে আসছেন না।

তসলিমার পক্ষে সে সময় বাংলাদেশেও কেউ কেউ অনেক কথা বলেছেন। এরা আন্তর্জাতিক প্রসঙ্গ নিয়ে যখন কলম ধরেন তখন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভারত, পাকিস্তানসহ পৃথিবীর নানা দেশের নানা প্রসঙ্গ নিয়ে বুদ্ধিজীবীয় একটি ভাব তৈরি করে সম্প্রদায়, জাতপাত ও বিশ্বাসের গণ্ডি ভাঙ্গার মহত্বের প্রদর্শনী করেন। কিন্তু অরুন্ধতী রায় যখন কাশ্মীরের স্বাধীনতার পক্ষে ক্ষীণ স্বরে কথা বলে রাজনৈতিক হামলা ও আইনী ফেঁকড়ায় নাকাল হতে চলেছেন তখন এরা আর এটা নিয়ে কলাম লিখছেন না, কথাও বলছেন না। এখন ভারত-পাকিস্তানের নানা প্রসঙ্গ নিয়ে লিখলেও অরুন্ধতীর ‘বাকস্বাধীনতা’ বিষয়ে তারা কোনো কথা বলতে চান না।

আসলে ভারত বা বাংলাদেশ নয়, উদার বুদ্ধিজীবীর শাল-চাদর গায়ে চড়িয়ে এরা তখনই বাকস্বাধীনতার জন্য কোঁদাকুদি করেন, যখন কারো কথা বা লেখা ইসলাম বা মুসলমানকে আঘাত করে। আর এতে আহত মুসলিম হৃদয়গুলো ফুঁসে ওঠে। ইসলাম-মুসলিম বাদ দিয়ে তাদের স্বার্থ বা আরাধ্য কোনো কিছুকে আঘাত করে কেউ কোনো বক্তব্য দিলে বা লেখা ছাপালে হয় তারা তার টুটি চেপে ধরার চেষ্টা করেন, নয়তো শাসক শক্তিকে পেছন থেকে লেলিয়ে দিয়ে নীরব হয়ে বসে থাকেন। মিটি মিটি হাসি নিয়ে উপভোগ করেন। আমাদের চেনাজানা জগতের বাকস্বাধীনতাবাদী পণ্ডিতদের এই তামাশা দেখতে দেখতে এখন এটি বেদনাবহ কৌতুকের পর্যায়ে চলে গেছে।

অরুন্ধতী বা তসলিমা আমাদের কেউ নন। দু’জনের বিশ্বাস, চেতনা ও জীবনযাত্রায় কতোটা পার্থক্য তাও আমাদের জানা নেই। তবে একজন একটি মুসলিম দেশের মুসলিম পরিবার থেকে উঠে এসে তার সমাজ, ধর্ম ও দেশকে গালি দিয়েছেন। আরেকজন হিন্দুপ্রধান দেশের একটি হিন্দু পরিবার থেকে উঠে এসে তার দেশের একটি অন্যায়কে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন। কেউ বলতে পারেন, অরুন্ধতী তার দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে ভূমিকা রেখেছেন। প্রথমজনকে যে সমাজ ও সমাজ মনীষা (!) আস্কারা দিল, দ্বিতীয়জনকে তারাই উপেক্ষা করছে। অথচ তাদের এই পক্ষ-বিপক্ষের ক্ষেত্র দুটিতে যুক্তি ও ইস্যু কিন্তু একটিই। সেটি হচ্ছে, বাকস্বাধীনতা। তারপরও আচরণ ভিন্ন। কারণ কী? কারণ হচ্ছে যুক্তির মৌখিক ভাষাটা (বাকস্বাধীনতা) খুব উদার উদার শোনা গেলেও ভেতরে আছে সাম্প্রদায়িকতা, সংকীর্ণতা ও হীনম্মন্যতার নর্দমা। এজন্যই একই ইস্যুতে দু’ নারীর পরিণতি দু’ রকম দেখতে পাচ্ছি আমরা। তর্কের জন্য কেউ বলতেই পারেন, তসলিমাকেও যেহেতু নিজ দেশে কোনঠাসা হতে হয়েছে, অরুন্ধতীরও তার দেশে এমন হতেই পারে। সমান সমানই তো হল। তাতে আপত্তির কী আছে!’ আসলে বিষয়টা সমান সমান হয়নি। দেশের আইন কানুনে ঘটনা যাই ঘটুক, তসলিমার পক্ষে যে মানবাধিকারের ঝাঁঝালো উত্তাপ আমরা দু’ দেশের ‘পণ্ডিত’ শ্রেণীর মাঝে দেখেছি, অরুন্ধতীর সময় তার বিপরীতটা দেখছি। আঁতে ঘা লেগেছে তো, মুখোশপরা ‘পণ্ডিতি’ ও ‘মানবাধিকার’ ছুটে গেছে।
এমনই হয়। ভড়ং দেখাতেই কেবল এরা বাক স্বাধীনতা, মানবাধিকার, সুশাসন, নারী অধিকার-এর শ্লোগান তুলেন। খোঁচা লাগলেই ভড়ং ছুটে যায়। অথচ ইসলাম আর মুসলমান বিদ্বেষের ক্ষেত্রে ‘সক্রিয় বীরে’ পরিণত হতে এরাই খুব মজা পান।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×