somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ কালপ্রিট

০১ লা অক্টোবর, ২০২২ বিকাল ৫:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


এক ঝুম বর্ষার দুপুরে সোহেলী আপু আমায় ডেকে নিয়েছিল।
ও কিছুটা বুদ্ধি প্রতিবন্ধী  ছিল বলে, তেমন কোন খেলার সঙ্গী ছিল না ওর।দুঃখজনক হলেও সত্যি প্রায় সবার কাছে ও ছিল হাসি ঠাট্টা টিকা টিপ্পনীর উপকরণ মাত্র ।ওর মন খারাপ করে বসে থাকা দেখে  আমার কেন জানি না মন খারাপ হতো,মনে অশান্তি লাগতো।রাগও হতো।এত বোকা কেন মেয়েটি?  আমি প্রায় দেখতাম ও একাকী কাঁদতো।সেই কান্না ছিল কখনও ক্ষুধার কখনও অপমানের আবার কখনও অত্যাচারের।
এক সময় আমার সাথে ওর বেশ ভাব হয়ে গেল। একই বাসায় ভাড়া থাকার ফলে যোগাযোগ চলত অবাধে।
ওর আগ্রহে  মাঝে মাঝে আমি ওর সাথে লুডো খেলায় অংশ নিতাম। খেলার ব্যাপারে ভীষণ একগুয়ে আর হন্নিবাজ ছিল ও।নিজেরটুকু খুব বেশি বুঝতো।আমিও কম নই। ফলাফল, বেশিরভাগ সময় হাতাহাতি হয়ে যেত আমার সাথে। তারপর  আড়ি, কথা বন্ধ অবশ্য  কিছুদিন পর আবার ভাব।
বয়স হয়ে গেছিলো বলে বিয়ে নিয়ে রাত দিন খোটা দিত ওর সৎ মা সহ আরও অনেকে।কানা খোড়া লেংড়া কোন পাত্র তাকে দেখতেও আসতো না।নানাজনে নানা কথা শোনাতো সুযোগ পেলে।সোহেলী আপুর সে সবে কোন হেল দোল ছিল না । আমার ষোল বছর বয়সের ছোট্ট জীবনে  সোহেলী আপু ছিল আমার কাছে এক অপার রহস্যময় চরিত্র।
তো সেই ঝুম বর্ষার দুপুরে গুটি খেলতে খেলতে সোহেলী আপু বলল
- হ্যাঁরে অপূর্ব একটা নতুন খেলা খেলবি? 
- কি খেলা গো।আগে কখনও  খেলেছি?
- না না আগে খেলি নি।
- তাহলে থাক পারবো না বাদ দাও।
এরপর সোহেলী আপু  ফিসফিস করে বলল
- এই খেলায় কোন ঝগড়া,মারামারি  হবে না। আল্লাহ কসম।
- যাহ! সে আবার কি খেলা?
- চল খেলি দুজন হলেই চলবে। রসু ভাই আর তুলি চিলেকোঠার ঘরে খেলছিল কাল।আমি লুকিয়ে দেখে শিখে নিয়েছি।
নিস্তব্ধ দুপুরে সোহেলী আপু আর আমি সম্পূর্ণ নতুন সেই খেলাটি খেলতে শুরু করলাম। ষোলো বছর বয়স তখন আমার।মানব শরীর নিয়ে ধোঁয়াশা অভিজ্ঞতা এবং  আদিম খেলার জ্ঞান সম্পর্কে  তেমন কোন ধারণা  না থাকলেও।আগুন খড়ের সংস্পর্শে আসতেই   বিদ্যুৎ ঝলকের মত রোমাঞ্চ নেশা ধরে গেল অনতিবিলম্বে।
একসময় ঘোর কেটে গেলে কেমন যেন লজ্জা এসে ভীড় করলো আমার মধ্যে ।আমি সরে পড়লাম দ্রুত।ঝুম বৃষ্টি তখনও ঝরছিল । অত শত না বুঝলেও কেমন যেন অপরাধবোধ কাজ করলো আমার মনের মধ্যে ।সোহেলী আপুদের ঘর মুখো হলাম না অনেক দিন।
এর মধ্য কদিন পরে আমার বাবার বদলির সুবাদে আবার নতুন শহরে চলে এসেছি।সময়ের ব্যবধানে ভুলে গেছি সোহেলী আপু , ফেলে আসা শহর।
বেশ অনেক বছর  পরে কি একটা কাজে গেছি আবার সেই শহরে।খুঁজতে খুঁজতে  পুরানো এক বন্ধু মবিনের সাথে দেখা হয়ে গেল ।কথায় কথায়   এক সময়  সোহেলী আপুর খোঁজ খবর  নিলাম। কেমন আছে বেচারা কে জানে! বিয়ে হয়েছে নিশ্চয়!
মবিন  কিছুক্ষণ চুপ থেকে যা জানালো শুনে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে এলো।
সোহেলী আপু না-কি  মরে গেছে।
আমি উত্তেজিত হয়ে বললাম, মরে গেছে মানে কি?
মবিন জানালো সোহেলী আপু  মা হতে চেয়েছিলো। বিয়ের আগে মা হওয়া পাপ।দিন দিন সোহেলী আপুর শরীর ভারি হতে লাগলো, রটনা গুঞ্জন এবং সেই সাথে শারীরিক অত্যাচার বেড়ে গেল ওর প্রতি।বিচার শালিস কত কিছু ওর বাবা মা অনেক অনেক মেরেছে আর জানতে চেয়েছে  পেটে যেটা এসেছে সেটা কিভাবে এসেছে ?  কার সন্তান?
সোহেলী  বারবার বলেছে "আল্লাহ দিয়েছে। আল্লাহ!" কিছুতেই স্বীকার করে নি কে তার সর্বনাশ করেছে। জানা যায়নি কালপ্রিটটার নাম।
তারপর এক কাক ডাকা ভোরে ওর লাশ পাওয়া গেল কপোতাক্ষের জলে।
সব শুনে শরীর ঝনঝন করে উঠলো আমার। নিজেকে প্রচন্ড অপরাধী মনে হলো।কি করে স্বীকার করি যে কালপ্রিটটা আমিই।
সমাপ্ত
© রফিকুল ইসলাম ইসিয়াক

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০২২ বিকাল ৫:৪৮
১১টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×