somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টেলিফোনে হুমকি: আইনের আওতায় আনা হোক অপারেটরদের

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৭:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আইনের আওতায় আনা হোক অপারেটরদের
ভোরের কাগজ> মুক্তচিন্তা
রবিবার, ২৯ নভেম্বর ২০১৫
মো. রহমত উল্লাহ্


বর্তমানে মোবাইল ফোন আমাদের নিত্যসঙ্গী। আপনজনের চেয়েও যেন আপন একটি মোবাইল ফোন। কেননা কাছের ও দূরের সব আপনজনের নিত্য কাছাকাছি থাকার সহজ উপায় হচ্ছে মোবাইল ফোন। শিক্ষা, পত্রপত্রিকা, ব্যবসা-বাণিজ্য, আইনশৃঙ্খলা, অফিস-আদালত, এমন কি রাষ্ট্র পরিচালনা থেকে শুরু করে একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়সহ সব ক্ষেত্রেই মোবাইল ফোনের ব্যবহার অপরিহার্য। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে এই মোবাইল ফোন এখন হয়ে উঠেছে অপরাধীদের শক্তিশালী হাতিয়ার।
অপরাধীদের একটি ফোন কল তছনছ করে দিচ্ছে আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন। ‘হ্যালো, আপনি কি অমুক সাহেব? একটু লাইনে থাকেন আমাদের বড়ভাই কথা বলবেন।
… ‘হ্যালো, আমি কালা / দলা / কানা / ল্যাংড়া / খাটো / লম্বা / ডাকাত / খুনি কানকাটা / গালকাটা / হাতকাটা / চাপাতি … বলছি। আমাদের বস জেলে আছে। ছাড়াইতে অনেক টাকা লাগব। আপনের বেশি দিতে অইব না। মাত্র দশ লাখ। রেডি রাইখেন। শনিবারে দিতে অইব। হুম, না, কোনো কথা না। কথা কইলেই বিশ লাখ। চেলাকি করলে, কাউরে কইলেই ফালাই দিমু কিন্তু পুলিশেরে জানায়া কোনো লাভ নাই। জানাইবি, আর খতম। বউ-পোলাপান, তাও খতম।’ এসএমএসের মাধ্যমেও আসতে পারে এমন সব হুমকি। এরপর আর চলতে পারে না কারো স্বাভাবিক জীবনযাপন। তা সে যত সৎ সাহসী মানুষই হোক। বন্ধ হতে বাধ্য তার ও তার পরিবার পরিজনের নাওয়া-খাওয়া, কাজকর্ম, ঘুম-ইবাদত। নিশ্চয়ই তাদের চোখের সামনে বারবার ভেসে ওঠে খুনিদের অস্পষ্ট মুখ, মারণাস্ত্র আর নিজেদের বীভৎস লাশ। রাস্তার প্রতিটি অচেনা মানুষকেই মনে হয় ঘাতক। লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় ভেতর-বাহির। হয়ে পড়ে চরম অসহায়। লোপ পায় নিজের দেশের প্রতি ভালোবাসা।
এই হচ্ছে বাস্তবতা। এমন হুমকি যে শুধু সাধারণ মানুষই পায় তা নয়। আমলা, জেলার, টিচার, প্রফেসার, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল, ব্যবসায়ী, ঠিকাদার কেউ বাদ যাচ্ছে না এমন হুমকি থেকে। ইদানীং আবার লেখালেখির কারণে সরাসরি হত্যার হুমকি আসছে কবি, লেখক ও সাংবাদিকদের প্রতিও। পুলিশের কাছে আশ্রয় চেয়েও মেনে নিতে হচ্ছে অপঘাতে মৃত্যু। তেমন কিছুই করতে পারছে না পুলিশ। চিহ্নিত করতে পারছে না সেই মোবাইল ফোন নম্বরের মালিক। কিন্তু কেন? কারণ আমাদের দেশের লাখ লাখ সিমের নেই সঠিক রেজিস্ট্রেশন। যদিও মোবাইল ফোন অপারেটরদেরই দায়িত্ব তাদের প্রতিটি গ্রাহকের সঠিক নাম ঠিকানা রেজিস্ট্রেশন নিশ্চিত করা। তাদের অবহেলার কারণে তা হচ্ছে না। বারবার ব্যর্থ হচ্ছে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ। পরস্পরের প্রতি দায় চাপাতে ব্যস্ত সরকার ও অপারেটর।
অথচ মোবাইল অপারেটরদের কি কোনো দায়বদ্ধতা থাকবে না এরকম মোবাইল ফোন রিলেটেড হাজার হাজার অপরধীদের চিহ্নিত করতে না পারার জন্য? তারা অপরাধীদের নাম ঠিকানা না জেনে, না লিখে, না জানিয়ে লাখ লাখ সিম বিক্রি করে অপব্যবসা করে যাবে বছরের পর বছর; আর আমরা থ্রেড খাব, চাঁদা দেব, অশান্তি নেব, মরে যাব, আমাদের মেয়েরা আত্মহত্যা করবে, আমাদের সন্তানদের স্কুল-কলেজে যাওয়া বন্ধ থাকবে, আমাদের নাওয়া-খাওয়া ঘুম হারাম হবে, তা তো হতে পারে না কোনোভাবেই। আমার অস্ত্র দিয়ে যদি কাউকে মারা হয়, আমার গাড়ি নিয়ে যদি কাউকে ছিনতাই করা হয়, আমার জামা পরে যদি কেউ চুরি ডাকাতি করে, আমার মাইকে যদি কেউ অপপ্রচার চালায়, আমার পত্রিকায় কেউ যদি খারাপ কিছু লেখে, আমার টিভিতে যদি কেউ খারাপ বক্তব্য দেয়, আমার বাড়ি ভাড়া নিয়ে কেউ যদি অপকর্ম করে, আমার জমি ভাড়া নিয়ে কেউ যদি আফিম চাষ কর, তো পুলিশ কি ছেড়ে দেবে আমাকে? যারা আমার জিনিস নিয়ে খারাপ কাজ করেছে, করছে বারবার তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া কি আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না? যদি আমি তা করতে অনাগ্রহী হই তো আমি কি সমঅপরাধে অপরাধী নই? যদি আমি তা প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হই তো আইন প্রয়োগকারীদের সেই অপরাধীদের নাম-পরিচয় জানানো কি আমার নৈতিক ও আইনগত দায়িত্ব নয়? যদি তাই হয়, তো মোবাইল ফোন অপারেটররা কীসের বিনিময়ে এতকাল ধরে পাড় পেয়ে যাচ্ছে এই দায়িত্ব পাশ কাটানোর দায় থেকে? যাদের কোম্পানির সিম ব্যবহার করে চোরাচালানি হচ্ছে, চাঁদাবাজি হচ্ছে, কিডন্যাপ করা হচ্ছে, হুমকি দেয়া হচ্ছে, মৃত্যু পরোয়ানা দেয়া হচ্ছে, হামলার পরিকল্পনা করা হচ্ছে, হামলা সফল করা হচ্ছে, খুন নিশ্চিত করা হচ্ছে বারবার তাদের বিরুদ্ধে তো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানা যায়নি!
মোবাইল ফোনের সিম রেজিস্ট্রেশনের জন্য সরকারি উদ্যোগের কথা শোনা যায় কিছুদিন পরপর। কিন্তু কী জানি কী কারণে তা সফল হয় না পুরোপুরি! রেজিস্ট্রেশন না করার কৌশল হিসেবে প্রকাশ পায় মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর নানান অজুহাত আর বাহানা। কেবল নিশ্চিত হয় কমবেশি সরকারি অর্থের অপচয়। অথচ এমন একটি আইন ও আইনের সঠিক প্রয়োগ থাকলেই যথেষ্ট যে, মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো তাদের গ্রাহকদের সব তথ্য না হোক; নাম-ঠিকানা পরিচয় প্রকাশ করতে বাধ্য থাকবে। বিশেষ করে এসব অপকর্মে যে কোম্পানির সিম নম্বর ব্যবহৃত হবে, সে কোম্পানি তার সেই গ্রাহককে চিনিয়ে দিতে বাধ্য থাকবে। যদি তা না পারে তো কোম্পানির বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কার্যকর করা হবে। তাহলেই সম্ভব হবে শতভাগ সিম রেজিস্ট্রেশন ও ফোন রিলেটেড অপরাধ দমন।
মো. রহমত উল্লাহ্ : শিক্ষক ও লেখক।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭



ছবি সৌজন্য-https://www.tbsnews.net/bangla




ছবি- মঞ্চে তখন গান চলছে, মধু হই হই আরে বিষ খাওয়াইলা.......... চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী গান।

প্রতি বছরের মত এবার অনুষ্ঠিত হল জব্বারের বলীখেলা ও বৈশাখী মেলা-২০২৪। গত ২৪/০৪/২৪... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

×