somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জয়বাংলা মানে কী

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


A

জয়বাংলা
মানে কী?
মো. রহমত উল্লাহ্
উৎসর্গ
বাঙালি জাতির পরিচয়, একতা, স্বাধীনতা, মুক্তি ও অগ্রগতির জন্য নিবেদিত প্রাণ মানুষদের প্রতি।


মো. রহমত উল্লাহ্‌


নরসিংদী জেলা ও শিবপুর উপজেলাধীন সবুজ পাহাড় এলাকার জয়নগর ইউনিয়নের ভেড়মারা গ্রামের এক আদর্শ মুসলিম পরিবারে তাঁর জন্ম। পিতার নাম- মোহাম্মদ আলী এবং মাতার নাম- মোসাম্মৎ রাবেয়া খাতুন।

আজকিতলা পুরাতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জয়নগর আলহাজ আফছার উদ্দীন উচ্চ বিদ্যালয়, শিবপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কাটে তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা জীবন। ছাত্রাবস্থায় লেখালেখির পাশাপাশি তিনি ছিলেন সংগঠক, উপস্থাপক, আবৃত্তিকার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনের বিতার্কিক ও বাংলাদেশ বেতারের খবর পাঠক।

শিক্ষাসনদ অনুসারে তাঁর জন্ম তারিখ ০৪ অক্টোবর ১৯৬৫ এবং নাম 'মো. রহমত উল্লাহ্‌' হলেও 'রানা ইশতিয়াক' নামেই তিনি সমধিক পরিচিত। কেননা এই উভয় নামেই তিনি বিভিন্ন স্থানীয় ও জাতীয় দৈনিক এবং সাপ্তাহিক পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লেখেন। ইতোমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে তাঁর বেশ কয়েকটি বই। তিনি বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশন এর একজন তালিকাভুক্ত গীতিকার। পেশায় শিক্ষক, নেশায় ছাত্র। প্রায়শই অংশ নেন বিভিন্ন টিভি টক-শো এবং সভা-সেমিনারে। অর্থাৎ একাধারে তিনি গল্পকার, ছড়াকার, গীতিকার, প্রাবন্ধিক, আলোচক এবং অধ্যক্ষ ও শিক্ষাবিদ।
তাঁর বাবা ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক ও স্বরচিত গজল গায়ক। মা ধর্মপ্রাণ গৃহিনী। আট ভাইবোনের মধ্যে তিনি চতুর্থ। এক পুত্র ও এক কণ্যা সন্তানের জনক। //


প্রকাশকের কথা
'জয়বাংলা' আমাদের জাতীয় চেতনার একটি অবিনশ্বর উৎস। জয়বাংলা ১৯৭১ এ আমাদের শত্রু হননে অকুতোভয় করেছে। অথচ স্বাধীনতার পর নানান কুচক্রীমহল জয়বাংলাকে বিতর্কিত ও বিকৃতভাবে উপস্থাপনের অপচেষ্টা করেছে। কিন্তু অমিত শক্তির এই উৎসকে কি দমিত করা যায়?
আমাদের নতুন প্রজন্মকে জয়বাংলার অর্থ ও তাৎপর্য তুলে ধরার প্রয়াসে জনাব মো. রহমত উল্লাহ্ লিখেছেন এই অনবদ্য গদ্যটি, যা গত ১৮ মার্চ ২০১১ তারিখে 'সাপ্তাহিক প্রতিচিত্র' এর ১৩ বর্ষ, ১৩ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছে। জয়বাংলায় নিহিত বার্তাটি পুস্তিকা আকারে প্রকাশ করার প্রয়োজন বোধ করছি; যখন বাংলা বিরোধীরা আবার নারকীয় হত্যাযজ্ঞে উন্মত্ত। তরুণ প্রজন্মের কাছে জয়বাংলার বিস্তারিত তাৎপর্য তুলে ধরার জন্য এই প্রচেষ্টা। জয় হোক তারুণ্যের। জয়বাংলা। (লেখকের পূর্বানুমতি ব্যতীত এই লেখা মুদ্রন, পুনঃমুদ্রন, প্রকাশ, পুনঃপ্রকাশ, বিক্রয় ও বিলি-বন্টন সম্পূর্ণ বেআইনি এবং নিষিদ্ধ।)

প্রকাশ কাল
এপ্রিল
স্বত্ত্ব:
লেখক কর্তৃক সংরক্ষিত।

প্রকাশক

শুভেচ্ছা মূল্য- . . . . টাকা মাত্র।

ISBN: ৯৭৮-৯৮৪-৩৩-৭৩৩১-১


বাংলা একাডেমীর অভিধান অনুসারে 'জয়' শব্দের অর্থ হচ্ছে- 'সাফল্য, বিজয়, যুদ্ধাদি' দ্বারা অধীকার, পরাভূত করা, দমন, শত্রু দমন, . . . (victory, win, conquer, success, defeat of an enemy, victory or triumph over the opponent...) । Joy- আনন্দ, ফুর্তি, খুশি। বিজয় অর্থ- জয়, জিত, প্রতিপক্ষকে দমিত বা পরাজিত করা (victory, triumph, conquest, success, ...) । জয় এর বিপরীতার্থক শব্দ পরাজয়, পরাভব, হার,... (defeat)। গুণ বাচক বিশেষ্য হিসেবে জয় শব্দটি অন্যান্য দু’একটি শব্দের সাথে যুক্ত হয়ে খুবই সুন্দর অর্থ প্রকাশ করে। যেমন: জয়কেতু জয়পতাকা / বিজয়ের নিশান, জয়ধ্বনি- জয়জয়কার / বিজয়ের আওয়াজ (shouts of victory), জয়তু- জয় হোক, জয়তি- জয়যুক্ত হয়, জয়পত্র- জয় লাভের সনদ, জয়মাল্য- বিজয়ের মালা, জয়বাংলা- বাংলার জয় (victory of Bangla)। সংসদ বাঙ্গালা অভিধান এবং জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউট এর ব্যবহারিক বাংলা উচ্চারণ অভিধান অনুসারে বাঙলা (বাংলা) শব্দটির অর্থ বঙ্গদেশ ও বঙ্গদেশের অধিবাসীদের ভাষা এবং বাঙালি অর্থ- বঙ্গদেশের বাংলাভাষী মানুষ। তাহলে জয়+বাংলা= জয়বাংলা'র অর্থ দাঁড়ায় বাংলাভাষা, বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতির জয়। আমাদের অস্তিত্বে এই জয়বাংলা শব্দের / শ্লোগানের ব্যবহার ও কার্যকরিতা আরো অনেক ব্যাপক ভাবে বিস্তৃত।
১৬ এপ্রিল ১৯৪২ তারিখের নবযুগ পত্রিকায় প্রকাশিত 'বাংলা বাঙালির হোক, বাংলার জয় হোক, বাঙালির জয় হোক।' -বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের এই অবিনাশী পংক্তিমালা; ১৯৪৭ সালের ২৭ এপ্রিল 'স্বাধীন সার্বভৌম বাংলা' গঠনে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর আহবান; ১৯৪৮ সালের ২১শে মার্চ মি.জিন্নাহ্'র ঘোষণা- 'উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা' এর প্রতিবাদে উচ্চারিত 'না'; ১৯৪৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পূর্বপাকিস্তান সাহিত্য সম্মেলনে ড.মুহম্মদ শহীদুল্লাহ'র ঘোষণা- 'আমরা বাঙালি' ; এই সব কিছুরই মূল ধ্বণি ছিল জয়বাংলা / বাংলার জয়। বাংলার জয়ের জন্য লড়াই করতে করতে ঐক্যবদ্ধ হতে থাকে এ বাংলার মানুষ। আন্দোলন- সংগ্রামের মাধ্যমে প্রকাশ করতে শুরু করে নিজেদের আত্ম পরিচয়। প্রয়োজনীয়তা দেখাদেয় স্বতন্ত্র সাংগঠনিক কাঠামোর। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতিবাদী চেতনা ও সাম্যবাদী আদর্শের সুযোগ্য অনুসারি মহাবিদ্রোহী নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৪৭ সালের ০৪ জানুয়ারি গঠন করা হয় পূর্ব পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ এবং ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়- আওয়ামী মুসলিম লীগ। আরো চাঙ্গা হতে থাকে বাঙালির বাঙালিত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত করার আন্দোলন। এই আন্দোলন ঠেকানোর জন্য পাকিস্তান সরকার শুরু করে গ্রেপ্তার অভিযান। ১৯৪৯ সালের ১৪ অক্টোবর গ্রেপ্তার করা হয় মাওলানা ভাসানীকে এবং ১৯৫০ সালের ০১ জানুয়ারি গ্রেপ্তার করা হয় শেখ মুজিবুর রহমানকে। সেইসাথে গ্রেপ্তার করা হয় আরো অনেককেই। এসব গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে আপামর জনতা। 'রাজবন্দিদের মুক্তি চাই, রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই। তোমার নেতা আমার নেতা, শেখ মুজিব শেখ মুজিব। জেলের তালা ভাঙ্গবো, শেখ মুজিবকে আনবো।' ... স্লোগানে প্রকম্পিত হতে থাকে রাজপথ।

[১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনের মিছিলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন শেখ মুজিবুর রহমান।
যার মূল কথা ছিলো বাংলা ভাষার জয়। অর্থাৎ জয়বাংলা।]




[২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২: বাংলা ভাষার দাবিতে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মিছিল।
যার মূল কথা ছিলো বাংলা ভাষার জয়। অর্থাৎ জয়বাংলা।]
বাঙালির বাংলাভাষায় কথা বলার জন্মগত অধীকার অস্বীকা করার ব্যর্থ প্রয়াসে পাকবাহিনী ব্যবহার করে মারণাস্ত্রের ভাষা। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি শহিদ হন রফিক, সালাম, জব্বার, বরকত, অহিউল্লাহ্ এবং ২২শে ফেব্রুয়ারি শহিদ হন শফিকুর রহমান। ১৯৫২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ প্রাঙ্গনে প্রতিষ্ঠা করা হয় প্রথম শহিদমিনার। রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় আমাদের মাতৃভাষায় কথা বলার অধীকার! সূচিত হয় বাংলা ও বাঙালির প্রাথমিক জয়। এই বিজয়ের সিঁড়ি বেয়ে এগিয়ে চলে স্বাধীকার তথা স্বাধীনতা লাভের আন্দোলন। সেইসাথে যুক্ত হয় শিক্ষাকমিটির রিপোর্ট বাতিলের দাবি। বিষেশ করে 'দেশ ও কৃষ্টি' শীর্ষক পাঠ্য বইয়ে বাঙালি জাতিসত্তাবিরোধী তথ্য অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে রাজপথে নেমে আসে বিক্ষোদ্ধ জনতা। ১৯৬২ সালের ০৭ ফেব্রুয়ারি আবার গ্রেপ্তার করা হয় শেখ মুজিবকে। 'জেলের তালা ভাঙ্গবো, শেখ মুজিবকে আনবো। সৈরাচারের পতন চাই, শেখ মুজিবের মুক্তি চাই। তোমার নেতা আমার নেতা, শেখ মুজিব শেখ মুজিব।' ... স্লোগানে স্লোগানে আবারও প্রকম্পিত হয় রাজপথ। আবারো বিদ্রোহী কবির সেই 'ভাঙার গান'।

(১৯৬২ এর শিক্ষা আন্দোলনে পথসভায় ভাষণ দিচ্ছেন শেখ মুজিবুর রহমান।
যে আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিলো বাঙালি জাতিসত্তার / বাঙালির জয়। অর্থাৎ জয়বাংলা।

১৯৬৬ সালের ০৫ ও ০৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী রাজনৈতিক দল গুলোর এক সম্মেলনে আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান উত্থাপন করেন বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ 'ছয় দফা' দাবি। সেই দাবিসমূহের অন্যতম ছিলো- এই বাংলাকে পূর্ণ স্বায়ত্ব শাসন দিতে হবে। মূল চেতনা ছিলো বাংলাদেশের স্বাধীনতা / জয়। শেখ মুজিবুর রহমানের বজ্র কন্ঠে সরাসরি উচ্চারিত হয় 'জয়বাংলা' ধ্বণি। যা ছিলো ১৯২৪ সালে রচিত বিদ্রোহী কবির 'পূর্ণ অভিনন্দন' কবিতায়:
"ওগো অতীতের আজো-ধূমায়িত আগ্নেয়গিরি ধূম্রশিখ!
না-আসা-দিনের অতিথি তরুণ তব পানে চেয়ে নির্নিমিখ।
'জয় বাঙলা'র পূর্ণচন্দ্র, জয় জয় আদি-অন্তরীণ,
জয় যুগে-যুগে-আসা সেনাপতি, জয় প্রাণ আদি-অন্তহীন!"


সাতকোটি কন্ঠে বেজে উঠে বাঙালির হৃদয়ে লালিত 'জয়বাংলা' স্লোগান। আওয়ামীলীগের নেতা শেখ মুজিব হয়ে উঠেন স্বাধীকার আন্দোলনের অগ্রপথিক। ১৯৬৬ সালের ০৮ মে আবার গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে। রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় আগরতলা সড়যন্ত্র মামলা। সারা বাংলায় সেই একই স্লোগান জয়বাংলা, জয় শেখ মুজিব। ১৯৬৮ সালের ১৭ জানুয়ারি শেখ মুজিবকে মুক্তি দিয়ে জেল ফটক থেকেই পুনরায় গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়া হয় ক্যান্টনমেন্টে। ৬ দফা দাবিরসাথে যুক্ত হয় শেখ মজিবুর রহমানের মুক্তিসহ আরো ৫ দফা দাবি। ১১ দফা দাবি আদায়ে মরনপন আন্দোলনে নামে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। প্রিয় নেতার মুক্তির দাবিতে 'জয়বাংলা' স্লোগানে ফেটে পড়ে বিক্ষোব্ধ বাংলার মানুষ। জেলের তালা ভাঙবো, শেথ মুজিবকে আনবো। জয়বাংলা, জয় শেখ মুজিব। আইয়ূব খানের পতন চাই, শেখ মুজিবের মুক্তি চাই। এই দাবিতেই ১৯৬৯ সালের ২৪ জানুয়ারি সংগঠিত হয় গণ-অভ্যুত্থান। মুক্তি লাভ করেন এই বাংলার অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবকে 'বঙ্গবন্ধু' উপাধিতে ভূষিত করেন তৎকালীন ছাত্রলীগনেতা তোফায়েল আহম্মেদ। 'জয়বাংলা' স্লোগানের সাথে যুক্ত হয় 'জয় বঙ্গবন্ধু' স্লোগান। রেইসকোর্স ময়দান থেকে 'জয়বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু' প্রতিধ্বণিত হয় সারা বাংলায়। ১৯৬৯ সালের ০৫ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্বপাকিস্তানের নামকরণ করেন 'বাংলাদেশ'! যেনো পিতার কন্ঠে উচ্চারিত হয় অনাগত সন্তানের নাম। যে নাম লেখা ছিলো তাঁর প্রিয় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের একাধিক প্রবন্ধ-কবিতায়। যেমন:

"শুভ্র মুখে মাখিয়ে কালি ভোজপুরীদের হট্ট মেলায়
বাংলাদেশও মাতলো কি রে?"
[ কবিতা- পথের দিশা ]

"নমঃ নমঃ নমঃ বাংলাদেশ মম
চির মনোরম চির মধুর।"
[ কবিতা- বাংলাদেশ বন্দনা ]

"এই পবিত্র বাংলাদেশ বাঙালির-আমাদের।"
[ প্রবন্ধ- বাঙালির বাঙলা ]

সরাসরি এই নামকরণের মাধ্যমে আওয়ামীলীগের গন্ডি অতিক্রম করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর বজ্রকন্ঠে উচ্চারিত 'জয়বাংলা' স্লোগান হয়ে যায় সকল মুক্তিকামি মানুষের। ১৯৭০ সালের ২৮ নভেম্বর এক সাংবাদিক সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বলেন- 'ঘূর্ণিঝড়ে ১০ লাখ মারা গেছে, স্বাধীকার অর্জনের জন্য বাংলার আরো ১০ লাখ প্রাণ দিবে'। ১৯৭০ সালের ০৭ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের মোট ১৬৯ আসনের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে 'জয়বাংলা' ধ্বণিতে আওয়ামীলীগ জয় করে ১৬৭ আসন। প্রমানিত হয় বাঙালি জাতির বজ্রকঠিন ঐক্য। আরো অপরিসীম হয়ে উঠে বঙ্গবন্ধু মুজিবের মৃত্যুঞ্জয়ী মন্ত্র 'জয়বাংলা'র শক্তি! যা ছিল- বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে ধর্ম-বর্ণ-মতভেদ নির্বিশেষে আমাদের একাত্ম হবার মূল মন্ত্র, বাংলার মানুষের বুকের গভীরে বাঙালিত্ব জাগানোর সফল হাতিয়ার, সাধারণ বাঙালিকে বিশ্বসেরা বীরবাঙালিতে পরিনত করার কার্যকর দাওয়াই।

১৯৭১ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক বক্তব্যে বলেন- 'বিশ্বের কোন শক্তিই আর বাঙালিদের দাসত্ব-শৃক্সখলে আটকে রাখতে পারবে না। শহিদদের রক্ত আমরা বৃথা যেতে দিব না। জয়বাংলা'। ১৯৭১ সালের ০১ মার্চ গঠিত হয় 'স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ'। স্লোগানে স্লোগানে আন্দোলিত হয় ঢাকাসহ সারা দেশ। 'জয়বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু', 'তোমার নেতা আমার নেতা, শেখ মুজিব শেখ মুজিব', 'বীরবাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো', 'তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা', 'জাগো জাগো, বাঙালি জাগো'। 'জয়বাংলা, জয়বাংলা, জয়বাংলা...'। স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষে তৎকালিন ছাত্রলীগনেতা আ.স.ম. আব্দুর রব ১৯৭১ সালের ০২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উত্তোলন করেন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা। সেইসাথে বার বার উচ্চারিত হয় 'জয়বাংলা' স্লোগান। ভঙ্গ করা হয় কারফিউ। 'জয়বাংলা, জয়বাংলা' ধ্বণিতে উদ্বেলিত বাঙালি। পাকবাহিনীর হামলায় রাজপথে হতাহত হয় অসংখ্য মুক্তিকামি মানুষ! ১৯৭১ সালের ০৩ মার্চ পল্টন ময়দানে পরিবেশন করা হয় বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসার কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত 'আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি' - 'বাংলাদেশের জাতীয় সংঙ্গীত'। সেইসাথে উত্তোলন করা হয় আমাদের জাতীয় পতাকা। প্রচার করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ঘোষণাপত্র। প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হরতাল পালনের জন্য আহবান জানান বঙ্গবন্ধু। সবার কন্ঠে একই আওয়াজ 'জয়বাংলা, জয়বাংলা, জয়বাংলা...'। ১৯৭১ সালের ০৪ মার্চ বঙ্গবন্ধু মুজিবের কন্ঠে ফুটে উঠে পিতার ভাষা- 'সাফল্যজনকভাবে পূর্ণ হরতাল পালনের জন্য আমি বাংলাদেশের সংগ্রামী জনতাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। যে কোন মূল্যে অধিকার আদায়ের জন্য জনতাকে সংগ্রাম অব্যাহত রাখার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। আমি এই মর্মে নির্দেশ দান করছি যে, হরতাল জনিত পরিস্থির জন্য যেসকল সরকারি ও বেসকারি অফিসে এখনো পর্যন্ত মাসিক বেতন হয়নি, সেসব অফিস শুধুমাত্র বেতন দেওয়ার জন্য আগামী দুইদিনের হরতাল চলাকালে বেলা ২টা ৩০মিনিট থেকে বিকেল ০৪টা ৩০মিনিট পর্যন্ত খোলা থাকবে। সর্বোচ্চ ১,৫০০(একহাজার পঁচশত) টাকা পর্যন্ত চেক ভাঙ্গাবার ও শুধু বাংলাদেশের মধ্যে লেনদেনের জন্য ব্যাংকগুলোর প্রতিও একই নির্দেশ প্রযোজ্য হবে।' অক্ষরে অক্ষরে পালিত হতে থাকে তাঁর আদেশ-নির্দেশ। সাত কোটি প্রাণ এক করে তিনি হয়ে উঠেন বাঙালি জাতির পিতা। তাঁর প্রিয় 'জয়বাংলা' স্লোগান হয়ে উঠে বাঙালি জাতির মটো (MOTTO - A short sentence or phrase used as a guiding principle)| মুক্তি ও বিজয়ের মূলমন্ত্র 'জয়বাংলা' মটোকে বুকের গভীরে ধারণ করে, সমস্বরে উচ্চারণ করে, মরণের ভয়কে জয় করে, মুক্তিযোদ্ধা হয়ে উঠে সমগ্র জাতি। ১৯৭১ সালের ০৬ মার্চ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ভেঙ্গে বেরিয়ে আসেন ৩২৫ জন বাঙালি। বস্তবে রূপ নেয় ১৯২৪ সালে রচিত বিদ্রোহী কবির সেই 'ভাঙার গান' কবিতা-
"কারার ঐ লৌহ-কপাট
ভেঙে ফেল্ কররে লোপাট
রক্ত-জমাট
শিকল-পুজোর পাষাণ-বেদী!
...
লাথি মার ভাঙ রে তালা!
যত সব বন্দিশালায়-
আগুন জ্বালা,
আগুন জ্বালা, ফেল্ উপাড়ি।'
সবাই প্রহর গুনতে থাকে উর্ধ্বে উঠার ইঙ্গিতবহ পিতার তর্জনী নির্দেশের অপেক্ষায়! ০৭ই মার্চ রেইসকোর্স ময়দানে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ আয়োজিত সর্বকালের সর্ববৃহৎ জনসভায় বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রদান করেন ইতিহাসের সর্ব শ্রেষ্ঠ ভাষণ:



THE MAN BEHIND A NATION

[ ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চে ঢাকার রেইসকোর্স ময়দানে 'জয়বাংলা' ধ্বণিতে উত্তাল
কোটি জনতার মাঝে ভাষণ দিচ্ছেন বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
সেদিন চির উন্নত ছিলো তাঁর শির, সিংহসম ছিলো তাঁর বক্ষ, উর্ধ্বমূখী ছিলো তাঁর তর্জনী, ব্যঘ্রসম ছিলো তাঁর সুঠাম দেহের সঞ্চালন, বিদ্যুৎময় ছিলো রক্ত কণার স্পন্দন, আত্মবিশ্বাসে পরিপূর্ণ ছিলো তাঁর বজ্রকন্ঠ, উজ্জীবনী শক্তিতে ভরপুর ছিলো তাঁর অপরাভব শব্দাবলীর তেজদীপ্ত উচ্চারণ; যেনো তিনি হয়ে উঠেছিলেন কবি নজরুলের সেই বিদ্রোহী কবিতায় বর্ণিত মহা বিদ্রোহী বীর! ]

"... দাবায়া রাখবার পারবা না! ...আমি প্রধান মন্ত্রীত্ব চাই না। দেশের মানুষের অধিকার চাই। ...এরপর যদি একটা গুলি চলে, এরপর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয়!... আমি যদি হুকুম দিবার না-ও পারি... প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহলল্লায় আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তুলুন। আমাদের যা-কিছু আছে তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকুন। রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেবো। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ্। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম - এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয়বাংলা।" মূলত এরপর আর অবশিষ্ট থাকে না বাংলাকে জয় করার ঘোষণা ও পরিকল্পনা। সেদিন পিতার বজ্রকন্ঠে উচ্চারিত হয় আরো ১০টি আদেশ:
"০১. সরকারি খাজনা বন্ধ।
০২. সরকারি ও বেসরকারি অফিস এবং কোর্ট-কাচারি বন্ধ।
০৩. রেলওয়ে ও বন্দরের কাজ চালু থাকবে। তবে সামরিক বাহিনী ও যুদ্ধাস্ত্র বহন চলবে না।
০৪. বেতার ও টিভিতে সংবাদ ও বিবৃতি প্রচার হবে।
০৫. বাংলাদেশের অভ্যন্তরে কেবলমাত্র আন্ত:জেলা ট্রাঙ্কল চালু থাকবে।
০৬. সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ।
০৭. স্টেট ব্যাংকের মাধ্যমে কিংবা অন্য কোনভাবে কোন ব্যাংক
থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে টাকা পাঠানো যাবে না।
০৮. প্রতিদিন সমস্ত অট্টালিকায় কালো পতাকা উত্তোলিত হবে।
০৯. হরতাল প্রত্যাহার করা হলেও পরিস্থিতির মোকাবেলায় আংশিক অথবা পূর্ণ হরতাল আহবান করা হবে।
১০. স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে প্রতি মহল্লা, ইউনিয়ন, থানা,
মহকুমা ও জেলা পর্যায়ে সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হবে।"

তখন জাতির পিতা যেন অলিখিত সরকার প্রধান। শুধু সাধারণ মানুষ নয়; তাঁর সফল নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল, শ্রদ্ধাশীল হয়ে আনুগত্য স্বীকার করেন দল মত নির্বিশেষে (জামায়েতে ইসলামীসহ অনুরূপ কয়েকটি ছোট্ট দল ব্যতীত) ছোট-বড় নবীন-প্রবীন সকল নেতা-কর্মী ও সামরিক-বেসামরিক ব্যক্তিবর্গ । ন্যাপ প্রধান মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ১৯৭১ সালের ০৯ মার্চ ঢাকার পল্টন ময়দানে এক জনসভায় বলেন- 'আমার তিনটি ছেলে, তার মধ্যে একটি মুজিব'। তিনি একই ভাবে ১১ মার্চ টাঙ্গাইলের এক জনসভায় বলেন- 'শেখ মুজিবুর রহমান সাতকোটি বাঙালির নেতা। নেতার নির্দেশ পালন করুন।' ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ ইয়াহিয়া-মুজিব আলোচনা চলে নব্বই মিনিট। 'জয়বাংলা' স্লোগানের ব্যাখ্যা জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু বলেন, "শেষনিশ্বাস ত্যাগের সময়েও তিনি কালেমা পাঠের সাথে 'জয়বাংলা' উচ্চারণ করবেন"। তিনি জানতেন, তাঁর প্রিয় 'জয়বাংলা' স্লোগান মুক্তিকামি মানুষের রক্তের স্পন্দন, মুক্তির মন্ত্র। তখন তাঁর সম্পর্কে দি 'নিউজ উইক' পত্রিকার মন্তব্য- "উর্দু, বাংলা ও ইংরেজি এ তিনটি ভাষাতেই সাবলিল মুজিব নিজেকে নিয়ে মৌলিক চিন্তাবিদ হিসেবে ভান করতেন না। তিনি প্রকৌশলী নন, রাজনীতির কবি। বাঙালিদের প্রযুক্তির চেয়ে শিল্পকলার প্রতি প্রবণতা বেশি। আর তাই তাঁর শৈলীই যথার্থ সেই অঞ্চলের সকল শ্রেণি ও মতাদর্শকে একাত্মবদ্ধ করার প্রয়োজনে।" বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন বিশ্বনন্দিত নেতা। তাঁর 'জয়বাংলা' ধ্বণিতেই সর্বত্র পরিচিত আমাদের এই বাংলা।


(১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে অবস্থিত নিজের বাড়িতে স্বাধীন বাংলার পতাকা তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেইসাথে চলে উৎফুল্ল জনতার 'জয়বাংলা' স্লোগান।)

২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানী সৈন্যবাহিনী শুরু করে গণহত্যা । রাত ১২টার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করেন- বাংলাদেশ এখন থেকে স্বাধীন। শুরু হয় সরাসরি সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। রণাঙ্গনে পরিনত হয় এই বাংলার প্রতি ইঞ্চি মাটি। জনককে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয় পশ্চিম পাকিস্তানে। থেকে যায় জনকের আদেশ।



[ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাত ১২টার পরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করার করণে ঐ রাতেই প্রায় ১.৩০ মিনিটে তাঁকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পাকিস্তানি সেনারা। ]

[The independence of Bangladesh was declared by Sheikh Mujibur Rahman through a message on 26 March 1971 just before he was arrested at about 1:30 a.m. (as per Radio Pakistan’s news on 29 March 1971). This declaration of independence marks the beginning of the Bangladesh Liberation War.
Declaration of Independence signed by Sheikh Mujibur Rahman was:
"Today Bangladesh is a sovereign and independent country. On Thursday night, West Pakistani armed forces suddenly attacked the police barracks at Razarbagh and the EPR headquarters at Pilkhana in Dhaka. Many innocent and unarmed have been killed in Dhaka city and other places of Bangladesh. Violent clashes between E.P.R. and Police on the one hand and the armed forces of Pakistan on the other, are going on. The Bengalis are fighting the enemy with great courage for an independent Bangladesh. May Allah aid us in our fight for freedom. Joy Bangla! "]
(Sources: Wikipedia and Bangladesh Genocide Archive)

Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman also read out a wireless message, moments after the crackdown began, declaring the independence of Bangladesh as 25 March gave way to 26 March. His declaration was transmitted over wireless to the country:

"THIS MAY BE MY LAST MESSAGE, FROM TO-DAY BANGLADESH IS INDEPENDENT. I CALL PON THE PEOPLE OF BANGLADESH WHEREVER YOU MIGHT BE AND WITH WHATEVER YOU HAVE, TO RESIST THE ARMY OF OCCUPATION TO THE LAST. YOUR RIGHT MUST GO ON UNTIL THELAST SOLDIER OF THE PAKISTAN OCCUPATION ARMY IS EXPELLED FROM THE SOIL OF BANGLADESH. FINAL VICTORY IS OURS. "


৭ই মার্চে দেয়া জনকের দিকনির্দেশনা অনুসারে যার যা-কিছু আছে তাই নিয়ে দেশের সকল মানুষ এই বাংলাকে জয় করার জন্য, শত্রুমুক্ত করার জন্য, 'জয়বাংলা' বলে ঝাঁপিয়ে পড়েন মরণপণ যুদ্ধে। সবার বুকে স্পন্দিত ও মুখে উচ্চারিত আকাশে-বাতাসে প্রতিধ্বণিত 'জয়বাংলা' স্লোগান ছিল এই যুদ্ধেরও প্রধান হাতিয়ার। ২৬শে মার্চ রাত ৮টায় এক বেতার ভাষণে ইয়াহিয়া বলেন- 'শেখ মুজিব পাকিস্তানের শত্রু'। বাংলার সর্বাধিনায়ক বিশ্বর অবিসংবাদিত নেতা বাংলাদেশের একমাত্র নিয়ন্ত্রক বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে ২৭ মার্চ স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্র কালুরঘাট থেকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান-



[ ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র
কালুরঘাট থেকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করছেন তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান।
সেদিন তাঁর কন্ঠেও ছিলো জয়বাংলা স্লোগান। ]
"On behalf of our great leader, the supreme commander of Bangladesh Sheikh Mujibur Rahman; I hereby proclaim the independence of Bangladesh. ...May Allah help us, JoyBangla."

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মারতে মারতে এবং মরতে মরতে মুক্তিকামি মানুষ বার বার উচ্চারণ করেন 'জয়বাংলা' স্লোগান। 'জয়বাংলা' নামে রণাঙ্গন থেকে তখন প্রকাশিত হতো একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা। সঠিকভাবে যুদ্ধ পরিচালনা ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি এবং তিনি কারাগারে থাকায় তাঁর একান্ত সহযোগী সৈয়দ নরুল ইসলামকে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও তাজ উদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে ১৭ এপ্রিল ১৯৭১ সালে গঠন করা হয় মুজিব নগর সরকার। কর্নেল এম.এ.জি. ওসমানী ছিলেন সেই সরকারের সসস্ত্র বাহিনীর প্রধান। সবার বুকে ও মুখে ছিলো জয়বাংলা স্লোগান।


[ ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে এমন নারী-শিশুর হাতে ছিলো অস্ত্র,
বুকে ও মুখে ছিলো একই রণ স্লোগান- 'জয়বাংলা' 'জয় বঙ্গবন্ধু' 'জয়বাংলা'... ]






[ ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে সকল মুক্তিযোদ্ধার হৃদয়ে ও কন্ঠে
ছিলো একই রণ স্লোগান- 'জয়বাংলা' 'জয় বঙ্গবন্ধু' 'জয়বাংলা'... ]











[ ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে সকল মুক্তিযোদ্ধার হৃদয়ে ও কন্ঠে
ছিলো একই রণ স্লোগান- 'জয়বাংলা' 'জয় বঙ্গবন্ধু' 'জয়বাংলা'... ]

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে 'জয়বাংলার লোক' অভিহিত করেই আমাদের স্বাধীনতার পক্ষের লাখ লাখ নিরিহ মানুষকে নির্যাতন ও হত্যা করেছে পাকিস্তানের সমর্থক বাহিনী। অবশেষে বীরবাঙালির ৯ মাসের মরণপণ যুদ্ধে পরাস্ত হয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ঢাকার রেইসকোর্স ময়দানে বিকেল ৫ টায় বাংলাদেশ ও ভারতের মিত্রবাহিনীর কাছে পাকিস্তানি সৈন্যরা করে শর্তহীন আত্মসমর্পণ। বিশ্বের দরবারে প্রতিষ্ঠা লাভ করে সাহিত্যের কবি নজরুল ও রাজনীতির কবি মুজিবের চির কাঙিখত স্বাধীন বাংলাদেশ। প্রমানিত হয় বিদ্রোহী কবির সেই কথা: "বাঙালি যেদিন ঐক্যবদ্ধ হয়ে বলতে পারবে- 'বাঙালির বাঙলা' সেদিন তারা অসাধ্য সাধন করবে।"


১৯৭২ সালের ০৬ জানুয়ারি পাকিস্তানের করাগার থেকে মুক্ত হয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত বৈঠক শেষে ১০ জানুয়ারি তারিখে যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশের রক্তাক্ত মাটিতে পা রাখেন বিশ্বনন্দিত বিজয়ী বীর বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সবার কন্ঠে সেদিন 'জয়বাংলা'ই ছিলো প্রিয় নেতাকে বরণ করার স্বাগত স্লোগান।

[ সদ্য স্বাধীন প্রিয় মাতৃভূমিতে পা রেখে আবেগে আপ্লুত জয়বাংলার নেতা
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ]







[ প্রিয় নেতাকে বরণ করার স্বাগত স্লোগান ছিলো 'জয়বাংলা'। ]
ত্রিশ লক্ষ শহিদের প্রাণ, হাজার হজার মা-বোনের সতীত্ব আর এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা জয় করি 'বাংলা', অর্জন করি 'জয়বাংলা' মটো। 'জয়বাংলা' আমাদের সবচেয়ে শক্তিশালী ও সফল হাতিয়ার! মূলত এই হাতিয়ারের বলেই আমরা পরাভূত করেছি পাহাড় সমান প্রতিপক্ষ। জয় করেছি আমাদের আসল পরিচয় বাঙালি জাতীয়তাবাদ, মায়ের মুখের বাংলাভাষা ও মাতৃভূমি বাংলাদেশ। কিন্তু তা সঠিক ভাবে জানে না আমাদের নবীন প্রজন্ম!
বন্ধু তুমি জানো কি
জয়বাংলা মানে কী ?
কোন্ চেতনায় কথা দু'টি বুকে ধরে রেখেছি!
হৃদয় জুড়ে বাংলাদেশের মানচিত্র এঁকেছি ।।

জয়বাংলা মানে বাংলা ভাষার জয়
জয়বাংলা মানে বাংলাদেশের জয়।
জয়বাংলা মন্ত্র দিয়ে সাতকোটি এক হয়েছি ।।

জয়বাংলা মানে বাঙালিদের জয়
জয়বাংলা মানে কুচক্রীদের ভয়।
জয়বাংলা ধ্বণি দিয়ে বীর বাঙালি হয়েছি ।।

জয়বাংলা মানে মুক্তিসেনার জয়।
জয়বাংলা মানে তাদের পরাজয়।
জয়বাংলা অস্ত্র দিয়ে জয় পতাকা এনেছি ।।

জয়বাংলা শুধু 'জিন্দা' থাকা নয়
জয়বাংলা হলো অগ্রগতিময়।
জয়বাংলা বলে সবই জয়ের শপথ নিয়েছি ।।
(যেহেতু আমি একজন তালিকাভুক্ত গীতিকার; সেহেতু আমার লেখা এই গানটি যে কোন ভালো গায়ক ভালো সুর দিয়ে গাইতে পারেন বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ সর্বত্র।)
--------
নবীন প্রজন্মকে এমনি করে গানে গল্পে কথায় কবিতায় জানিয়ে দিতে হবে 'জয়বাংলা'র পরিপূর্ণ অর্থ। জয়বাংলা মানে- সেই সকল মানুষের জয়, যাঁরা এই বাংলার মাটি ও মানুষকে শোষণ-নির্যাতন মুক্ত করার প্রত্যয়ে যুগে যুগে লড়াই করে হটিয়ে দিয়েছে ...আর্য, সুলতান, মুঘল, পাঠান, মারাঠা, বর্গি, ইংরেজ, নীলকর, কাবুলিওয়ালা, জমিদার,... পাকবাহিনীসহ নানান অপশক্তিকে। বুঝিয়ে দিতে হবে কেন 'জয়বাংলা' আমাদের জাতীয় মটো (motto)। বলতে হবে, আমাদের আন্দোলনে- সংগ্রামে- যুদ্ধে কোথাও কোনদিন বাঙালিরা বলেন নি 'বাংলাদেশ জিন্দাবাদ'(?) / 'বাংলাদেশ চিরজীবি হোক'(?)। এহেন কথা কোনদিন উচ্চারণ করেননি বাংলাদেশের স্বপ্ন শ্রষ্টা আমাদের জাতীয় কবি (রাষ্টপতি শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক স্বীকৃত) কাজী নজরুল ইসলাম এবং বাংলাদেশের স্থপতি বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তেলাপোকার মত, কচ্ছপের মত বেঁচে থাকতে চাননি তাঁরা। আমাদেরকে দেননি কেবল জিন্দা থাকার মতবাদ। দিয়েছেন সার্বিক জয় ও মুক্তির মন্ত্র- 'জয়বাংলা'। শিখিয়েছেন সব ভালোতে জয়ী হওয়ার কৌশল। শুধু আমাদেরকেই নয়, সারা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন- একটি ব্যাপক অর্থবোধক শক্তিশালী মটোকে বুকে ধারণ ও মুখে উচ্চারণ করে: কীভাবে জাগ্রত করা যায় বিবেক, শানিত করা যায় চেতনা, বৃদ্ধি করাযায়- রক্তের গতি, হৃদয়ের স্পন্দন, মনের সৎসাহস; জয় করা যায় না পারার ভয়, থাকা যায় ঐক্যবদ্ধ, পরাস্ত করা যায় শত্রু, অতিক্রম করা যায় প্রতিকূলতা, সুনিশ্চিত করা যায় অগ্রগতি, সুপ্রতিষ্ঠিত করা যায় সত্য, সম্পাদন করা যায় সকল ভালো। (A motto is a must to win.) এজন্যই একাত্তরে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পরেও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বার বার তর্জনী ঊর্ধ্বমূখী করে বজ্রকন্ঠে উচ্চারণ করতেন 'জয়বাংলা'। শুধু এই দেশে নয় বিদেশে গিয়েও প্রকাশ করতেন আমাদের 'জয়বাংলা' মটো। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে ১৯৭২ সালের ০৬ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গ সফর কালে কোলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে এক বিশাল জনসভায় ভাষণ দান করেন বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেখানেও তিনি উচ্চারণ করেছিলেন 'জয়বাংলা'। তাঁর বজ্রকন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে বার বার 'জয়বাংলা' উচ্চারণ করেছিলো সেদেশের উপস্থিত জনতা! কে জানতো, বঙ্গবন্ধুর চোখে সেদিন ভেসে উঠে ছিলো কি না রবী ঠাকুরের কল্পিত সোনার বাংলা; তথা কবি নজরুলের কাঙ্খিত পূর্ব ও পশ্চিম বঙ্গ মিলিত স্বাধীন বাংলাদেশের বিশাল মানচিত্র!
স্বাধীনতার চেতনা ছাড়াও 'জয়বাংলা' এবং 'বাংলাদেশ' এই দু'টি শব্দের জন্য কবি নজরুলের কাছে ঋণি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। তাই কবি নজরুলকে ভারত থেকে নিয়ে এসে স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ও জাতীয় কবির মর্যাদা দিয়েছিলেন তিনি।

[ ১৯৭২ সালের ২৪ মে তারিখে বিশেষ বিমানে করে ভারত থেকে জয়বাংলার বিদ্রেুাহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে চূড়ান্তভাবে স্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন জয়বাংলার বিদ্রেুাহী নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু তখন তিনি আর নেই সুস্থ। চিরতরে তাঁর বাকরুদ্ধ। থেমে গেছে কলমযুদ্ধ।]

[ সাহিত্যের সফল বিদ্রেুাহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম এবং রাজনীতির সফল বিদ্রেুাহী কবি শেখ মুজিবুর রহমান। জয়বাংলা ছাড়া আর কী হতে পারে আজীন স্নবাধীন বাংলার স্বপ্ন দেখা এই দুই মহা বিদ্রেুাহী বীরের অপলক চোখের ভাষা? ]


কী উচ্চারণ করেছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট ঘাতকের বুলেটবিদ্ধ পিতার অসীম সাহসী বুক থেকে ফিন্কি দিয়ে বেরিয়ে আসা অপরাভব রক্তের প্রতিটি বিন্দু? যিনি বলেছিলেন, "শেষনিশ্বাস ত্যাগের সময়েও তিনি কালেমা পাঠের সাথে 'জয়বাংলা' উচ্চারণ করবেন"!

[ ১৫ই আগস্ট ১৯৭৫: ঘাতকের বুলেটে নিষ্প্রাণ হয়ে নিজ বাড়ির সিঁড়িতে পড়ে আছে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর দীর্ঘ দেহ! ]


খুনিরা জানতো না 'কাজী নজরুল' আর 'শেখ মুজিব' যেমন অমর পুরুষ, 'জয়বাংলা' তেমনি তাঁদের অমর বাণী। কিন্তু আমরা কি তেমন করে বুকে ধরে রাখতে পেরেছি, মুখে উচ্চারণ করতে পেরেছি, কাজে পরিনত করতে পেরেছি অমর পুরুষের সেই অমর বাণী? পারিনি বলেই- আজ আমরা হারাতে বসেছি আমাদের জাতীয় ঐক্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অগ্রগতির পন্থা। তাইতো প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার মনে নিত্য ঘুরপাক খায় নানান কথা, নানান প্রশ্ন:
(১)
মরন নামক অস্ত্র দিয়ে
মনের বলে পাক হটালাম
বিশ্ব অবাক করে দিয়ে
জয় পতাকা ছিনিয়ে নিলাম।
(২)
পাকসেনারা হটলে পরে
স্বসেনাদের শাসন পেলাম
স্বৈরাচারির যাঁতাকলে
বারে বারে পিষ্ট হলাম!
এজন্য কি যুদ্ধে গেলাম?

যাঁর ডাকে দেশ স্বাধীন হলো
তাঁর বুকেতে বুলেট খেলাম
খুনের বিচার চাইতে মানা
এমন আজব আদেশ পেলাম!
এজন্য কি যুদ্ধে গেলাম?

যুগে যুগে লড়াই করে
'বীরবাঙালি' খেতাব পেলাম
সেই খেতাবের পাতায় আবার
কালো কালির লেপন পেলাম!
এজন্য কি যুদ্ধে গেলাম?

'জয় কথাটা পরের কথা'(?)
এমন বুলি শুনতে পেলাম
'জিন্দা...' নামক থুথুটাকে
মুখে নিতে বাধ্য হলাম!
এজন্য কি যুদ্ধে গেলাম?

ঐক্যটা যেই ভেঙ্গে গেলো
নিজেই নিজের শত্রু হলাম
লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে
নৈরাজ্য ভর রাজ্য পেলাম!
এজন্য কি যুদ্ধে গেলাম?

সেই রাজাকার রাজার আকার
আমরা কেবল মরেই গেলাম!
এজন্য কি যুদ্ধে গেলাম?
এজন্য কি যুদ্ধে গেলাম?... //
'জয়' কি আমাদের কথা নয়? ... রাজ্য জয় করেন। ... বাংলা জয় করেন। ... এভারেস্ট শৃঙ্গ জয় করেন। বদরের যুদ্ধে মুসলমানরা জয় লাভ করেন। ... কে কাস্তে / নৌকা / দাঁড়িপাল্লা / ধানের শীষ / লাঙ্গল / বটগাছ মার্কায় ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন। যুগ যুগ ধরে এমন হাজারো ক্ষেত্রে আমরা গর্বসহকারে ব্যবহার করছি 'জয়' শব্দটি। জয় শব্দে ভরপুর আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্য ভান্ডার। শুধু 'জয়ধ্বণি' কবিতায় তিনি ২৪ বার লিখেছেন জয়। এছাড়াও বিভিন্ন কবিতায় তিনি লিখেছেন:
"ফাঁসির মঞ্চে গেয়ে গেল যাঁরা জীবনের জয়গান!"

"জয় নিপীড়িত জনগণ জয়!
জয় নব উত্থান! ...
জয় নিপীড়িত প্রাণ!
জয় নব অভিযান!
জয় নব উত্থান!"

"জয় মানুষের জয়!"

"ক্ষয়েরে করেছ তুমি জয়
জয় নব উত্থান!"

"ক্ষুধার জোরেই করব এবার সুধার জগৎ জয়!"

"মোরা অসি বুকে বরি' হাসি মুখে মরি, 'জয় স্বাধীনতা গাই!"
(অসমাপ্ত)

এই জয় শব্দ যোগে রয়েছে আমাদের অনেক নাম। যেমন: আলহাজ্ব মো. জয়নুল আবেদিন, জয়নগর, জয়পুরহাট, জয়ন্তিকা, ...। এতে কোন সমালোচনা নেই, বিতর্ক নেই। অথচ বিতর্কিত করার ব্যর্থ প্রয়াস চলে, 'জয়' শব্দের সাথে 'বাংলা' শব্দটি যুক্ত করে জয়বাংলা বলতে গেলেই! বলা হয়, জয় হিন্দু শব্দ! জয়বাংলা ডেড স্লোগান! মূলত জয়বাংলার ঐক্যের কাছে যে পরাজিত, জয়বাংলা স্লোগানকে এখনো যে ভয় পায়, বাংলা ভাষাকে যে নিজের ভাষা মনে করে না, বাংলাদেশকে যে স্বাধীন ভাবতে কষ্ট পায়, যে মানতে পারে না বাঙালি জাতির অস্তিত্ব; সর্বোপরি 'বাংলা'র মাটি ও মানুষের জয় যার কাছে প্রত্যাশিত নয় এবং 'বাংলা'র মাটি ও মানুষের জয়ের আনন্দ যার কাছে বেদনাময়; কেবল তার কাছেই বিতর্কিত 'জয়বাংলা'! তার জন্য আমরা কি ত্যাগ করবো আমাদের 'জয়বাংলা' মটো? যে স্লোগানের শক্তিতে আমরা সবাই মিলে অর্জন করেছি বাংলার স্বাধীনতা; কোন একক দলকে দিয়ে দিবো কেনো সেই 'জয়বাংলা' স্লোগানের সকল কৃতীত্ব? অপ্রিয় লোকে মধু খায় বলে আমরা কি খাবো না মধু? দিনাজপুর জেলা ভারতেও আছে বলে আমরা কি ভারত বলবো আমাদের দিনাজপুরকে? বাঙালিরা ভারত, ইংল্যান্ড, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, ইতালিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিক হয়ে আছে বলে আমরা কি হীনমন্যতায় অস্বীকার করবো আমাদের স্বাধীন বাঙালি জাতিস্বত্ত্বা? না কি বিজয়ী বীরের মত কৃতিত্বে-সফলতায় বার বার বাঙালিত্ব প্রকাশ করে ছাপিয়ে দিবো অন্যদের অস্তিত্ব? আমার নামে আরো হাজারো ভালো / মন্দ মানুষ ছিল বলে, আছে বলে, আমি কি বাদ দিয়ে দিব নিজের নাম? ভারতে কাশমিরি আছে বলে নিজেদের জাতীয় পরিচয় কি অস্বীকার করছে পাকিস্তানের কাশমিরিরা? তাহলে আমরা সমস্বরে বলবো না কেন- আমরা বাঙালি, বাংলা আমাদের ভাষা, বাংলা আমাদের দেশ, জয়বাংলা আমাদের মটো। জয়বাংলা আমাদের ঐক্যের বন্ধন, অগ্রগতির পাথেয়, জয়ের শক্তি। খেলাধুলাসহ বিভিন্ন শুভ প্রতিযোগিতায় অন্যান্য দেশকে হারিয়ে দিয়ে, সুশিক্ষা অর্জন করে, পরীক্ষায় এ+ পেয়ে, সকল শুভ কামনা করে, অমঙ্গল পরাজিত করে, নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কার করে, দেশ ও জাতিকে সমৃদ্ধ করে, সুখ-শান্তি সুপ্রতিষ্ঠিত করে, নোবেল পুরস্কার জয় করে, বার বার 'জয়বাংলা' বলে একসঙ্গে নেচে উঠবো আমরা! মহান শহিদদিবস, স্বাধীনতাদিবস, বিজয়দিবস ও শোকদিবসসহ সকল জাতীয় দিবসে 'জয়বাংলা' ধ্বণিতেই প্রকাশ করবো আমাদের আনন্দ / শোক / প্রতিবাদ! মনে রাখতে হবে- সেই পরাজিত ইংরেজ শোষকদের 'ভি' V বাঙালিদের জয়ের সংকেত নয়। বাঙালিদের জয়ের সংকেত উর্ধ্বে উঠার ইঙ্গিতবহ 'উর্ধ্বমূখী তর্জনী'। বাঙালিদের সার্বিক জয়ের বজ্র ধ্বণি 'জয়বাংলা'। বাঙালি জাতির আদি-অন্ত ঐক্যের একমাত্র সফল জাতীয় মটো 'জয়বাংলা'। অপরিসীম অর্থবহ এই জয়বাংলা মটোর ভিত্তিতে যতবার ঐক্যবদ্ধ হবে ততবারই অসাধ্য সাধন করবে বিশ্ব সেরা এই বীর বাঙালি জাতি। //





তথ্যসূত্র:
(ক) মুহম্মদ নূরুল হুদা কর্তৃক সম্পাদিত ও নজরুল ইনসটিটিউট কর্তৃক প্রকাশিত সংকলন গ্রন্থ 'বিদ্রেুাহী কবি ও বঙ্গবন্ধু' ।
(খ) মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান রচিত ও মাওলা ব্রাদার্স কর্তৃক প্রকাশিত বই 'বাংলাদেশের তারিখ'।
(গ) বাংলা একাডেমী কর্তৃক প্রকাশিত 'নজরুল-রচনাবলী'।
(ঘ) মাহবুব আলম রচিত ও সহিত্য প্রকাশ কর্তৃক প্রকাশিত বই 'গেরিলা থেকে সম্মুখ যুদ্ধে' (প্রথম খন্ড)।
(ঙ) বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা।
(চ) বিভিন্ন ওয়েব সাইট।







জাতীয় স্মৃতিসৌধ
[ আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামে আত্মদানকারিগণের স্মরণে। ]

"শেষ হইয়াও হইলো না শেষ"
--------------------
(বিদ্র- বইটির প্রকাশক চাচ্ছি। আগ্রহীরা যোগাযোগ করুন [email protected])



আমাদের মুক্তির সংগ্রামের আরো কয়েকটি তথ্য চিত্র:

















ছয় দফা দাবির মূল উদ্দেশ্য- পাকিস্তান হবে একটি Federal বা যুক্তরাষ্ট্র এবং ছয় দফা কর্মসূচীর ভিত্তিতে এই Federation বা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যকে পূর্ন স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে।




সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:০৮
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস-পরীক্ষার হলে দেরিঃ পক্ষ বনাম বিপক্ষ

লিখেছেন BM Khalid Hasan, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



বর্তমানের হট টপিক হলো, “১ মিনিট দেরি করে বিসিএস পরীক্ষার হলে ঢুকতে না পেরে পরীক্ষার্থীর স্বপ্ন ভঙ্গ।” প্রচন্ড কান্নারত অবস্থায় তাদের ছবি ও ভিডিও দেখা যাচ্ছে। কারণ সারাজীবন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

×