somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাত লাইন কবিতা

০৯ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(১)
এ শহর আমাদের অনেক কিছু দিয়েছে। সামান্য সুলভের একান্ত—র হতে শুরু করে আকাশচুম্বী চওড়া বিলাসিতা সব এরই অবদান। বিনিময়টা কি সে চেয়েছে? নাকি অশান্ত— সেই পথভ্রান্ত— পিপীলিকার মত আামরাই নিজেদের বুকের ঝর্ণার উৎস তাকে দিয়ে যাচ্ছি। সেতো থামবে না । না। কখনো না । বিরাট অশ্বথের শেকড়ে শেকড়ে যত পিপাসা তার নাভীমূলেও আছে তাই । তাই আজ সবার মাঝে গড়ে উঠেছে অশরীরী এক বেদনা মাধূর্য । নিজেকে এখন আর নিজেরই অনুভব করা হয় না । স্বপ্ন নামক স্মৃতিকে আজ হাতড়ায় চার বছরের কোন শিশুও। নিত্যকার গতবাঁধা মঞ্চে ঘুরছে সবাই । কোষে কোষে হাতড়ে বেড়ায় একবিন্দু হৃদয়ের খোঁজে । সামান্য কিছু মাংসপিন্ড ছাড়া অবশিষ্ট থাকেনা কিছুই ।
(২)
এমনই এক শহরের চিরায়ত মঞ্চে সকলের মাঝে একা সুনীল । হ্যাঁ , নিজের অস্তিত্ব নিয়ে আর পাঁচ-দশজনের মত সেও সন্ধিহান । পার্থক্য একটাই। অন্যরা নিত্যনতুন উপায়ে তা ঢাকতে পারে । সে ? পারেনা । সে বুঝতে পারে সত্বা বলে যে রাণীকে সে রাণী বলে সে সত্যকার রাণী নয় । সে জানাও আবার অর্ধসত্য । একাকীত্ব কিংবা এই সত্বাহীনতা পরিমাপের বোধহয় কোন যন্র আবিষ্কার করতে পারবে না আমাদের এই মহান বিজ্ঞানীরা । হ্যাঁ , অন্য সবাইর মতই তারও আছে কিছু নীলচে আলো । সে আলো জ্বলে ওঠে মধ্যরাতে কিংবা ভোরে । কারণ সে আলোর ¶মতা নেই পার্থিব আলো পর্যবে¶ন করার । তবুও এই উদার শহরের কোন এক কোণে সুনীল তার একাকীত্ব দূর করার মানুষ পায় । ভালবাসার হীরের ছুরি হাতে নিয়ে সে এগুতে থাকে ...মনিকার দিকে । অন্য সবকিছু তখন পায়ের নিচে । সে বুঝল তার পিছুবার কোন রাস্তা নেই । তখন তার দু’চোখের নিচে দুটো আালো আার খেলা করে না । ভালোবাসার গভীর রহস্যে দু’টি হৃদয় শুধুই খেলে । সাজঘরে অনেক ঝাড়বাতি জ্বলে । সুনীল সেই আলোয় তার চোখ ঝলসায় । সে এমন অন্ধ হতে থাকে যে , তার আনুরাগ ধীরে ধীরে মনিকার সম্পদ হয় ... ...
(৩)
এই ভ্রম আর বেশীদিন থাকেনা । মনিকা পেয়ে যায় অন্য কিছু । আরো তীব্র কোন নীলচে আলো হয়ত । বা অন্য কোন মণিহার । সহস্র বাধা ঠেলে সুনীল নিজেকে আবারও একাকীত্বে ফিরে পায় । হারানো সত্বাকে আবারও হারিয়ে সে নতুন কোন সত্বাহীন মানুষ বা যুবকে পরিনত হয় । তার পুড়ে যাওয়া অনুরাগ তাকে শেখায় যে নকল সাজেই তাকে বাঁচতে হবে । অন্ধকারের ্এ অবগাহনে সে আবারও এগিয়ে যায় । মরূভুমীর বালিতে একফোঁটা জল যেমন নিরুদ্দেশ হয় , তেমন তার ভেতরের ভালবাসাটুকুও নিরুদ্দেশ হয়ে যায় । প্রাণপনে বাঁচার চেষ্টা করে সেই বালির ভেতরই । কিন্তু তাতে কি ? সেতো চাপা পড়েই গেছে । সেই ভালবাসা আজ স্বপ্নের নামে স্মৃতিতে হারায় ।
অন্ধকার হৃদয়ের মহল সে আবার আলো করতে চায় । তন্ন তন্ন করে হৃদয় মহলায় হেঁটে বেড়ায় সে । একে একে পায় আলোক উৎস , একটি নয় অনেক । যা তার ঘরকে আলো করে , তার চোখকে নয় । তবুও । সে চায় সেই আলোতেই শান্ত থাকতে । কৃপন হাতে খুঁজে যায় বাঁচার অনেক অর্থ । তবুও কোথা থেকে তিরষ্কার আসে , ব্যার্থ..ব্যার্থ । কৃত্রিমতা নিয়ে সুনীল আর বাঁচতে পারে না । আসীমতার চূড়ান্তে— গিয়ে পৌঁছায় তার খুশীর মৌনতা । নির্বাক হয়ে তার যৌবন রোমন্থন করে তার উপর অঙ্কিত ডোরাগুলোর । ’যন্্রমানব’ শব্দটা সুনীল একবার শুনেছিল । কিন্তু কী, তা বোঝার সুযোগ আজ নিজেকে করে দিল । ধু ধু করা মাঠের মধ্যে একলা গাছের মত ধুলোর এক একটি অনুর ঝাপট ।ভ্রুকুটি না করে সহ্য করতে থাকল । নগ্ন হল তার সকল আদি¶েতা , সকল বাসনা, খুশির খেয়ালে স্মৃতির মৌণতা করল পূর্ণ । তার শেকড়ে শেকড়ে এখন মৃত্যুহীন বাঁচার সাহস । তার রন্ধ্রে রন্ধ্রে এখন দুঃখ অবশ । বাঁচতে চায় সে এখন একলা বাঁচার প্রেম নিয়ে অন্ত—রে । অর্থহীনতার মাঝে একন সে এক অদম্য এক শক্তি পায় । ত।র কাছে এখন জলের রেখা আর নারীর মধ্যকার কোন পার্থক্য নেই । যে শহর তার কাছ থেকে একসময় সব কিছুই কেড়ে নেয়, আজ সে শহরই তাকে দিচ্ছে অনেক কিছু । কারণ , সুনীল আজ তার যোগ্য । তার গতিময়তায় আজ এই শহরে করেছে আরো কিছুটা পরিপুষ্ট । বুকভরে সে আজ বলতে পারে , “আমিই ঢেকেছি তোমার আকাশ, তারাদের দীপাবলী । এমনকি আমি তোমারই দু‘চোখে প্রতিরোধ হয়ে জ¦লি ।”
সুনীল বোঝে পৃথিবী আজ মুক্তি চায় । সে ও হতে চায় কোন এক অমর নায়ক । নি¯ে—জ ফুলের কাকুতি, মুমূর্ষ প্রকৃতির নিঃশ্বাস সে শুনতে পায় । সুনীল লজ্জা পায় । তার বিশ্বাস পৃথিবীর কোন এক গালে সে কষে এক চড় বসিয়ে দিয়েছে । পাঁচটা আঙুলের দাগ সেখানে জ্বল জ্বল করে জ্বলছে । সুনীল মুখ লুকায় । পারেনা । শহরের চোখ ঝলসানো আলোতে সে মুখ লুকোতে পারেনা । ঝাড়বাতি আজ শুধু ওপরে নয় মেঝেতেও লাগানো । এত আলোয় নিজের ছায়াও দেখা যায় না । সুনীল কোথায় মুখ লুকাবে ? অশ­ীল, অকথ্য গালাগাল দেয় নিজেকে । পারলে নিজের হৃৎপিন্ডটাকে টেনে , হিঁচড়ে বের করে কষ্ঠিপাথর দিয়ে সহস্র বার ঘষে নিত । অর্থাৎ , সুনীলের ভেতরের সুনীল , সুনীলকে পা মচকিয়ে পিছিয়ে দেয় এই শহরে । নিস্বঃতা আবারও নিস্বঃতা । নিলীমার মত নীল রং সেই নিস্বঃতার। অতএব, বাঁচার আরেকটা পথ তাকে খুঁজতেই হবে ।
কিন্তু তার পরেই নিজে তাকায় বুকের গভীরে । এত অসুখ ! কেন এত অসুখ? বুকটা ঝাঁঝরা হয়ে গেছে কলুষতায় । নিজের স্বত্বা কোথায় ? অন্য পথ কেন খুঁজতে হয় ? কেন? নিজের সত্বা কি আজ পৃথিবীর হিমযুগে পরিণত? সেও তো প্রতিজ্ঞা করেছিল পৃথিবীকে, যে সে কখনো অশান্ত— হলেই সে তার সাথে উদাসীন উষ্ণ সঙ্গম করবে । কোথায় তার প্রতিজ্ঞা ? কেন সব যৌগিকতার আশ্রয় নিতে হচ্ছে? কেন হৃদয় এখন শূণ্য ? কেন এখন প্রেমহীন?কেন অশ্বথের দানবাকৃতি শেকড়ের মত শুধু শরীরের রস নিতে নেশা জাগে? কেন ছিন্নভিন্ন করতে ইচ্ছে করে কোন নারীর বক্ষ?
হয়ত এটাই পাওনা ছিল তার । নাকি আরও বিভৎস কিছু অপেক্ষা করছিল তার জন্য? এর চেয়ে বিভৎস কিছু আর কি হতে পারে ? শব্দ তাকে অপমান করে । বুক থেকে ধূসর কান্না ভেসে আসে আর তা বেরিয়ে যায় ছেঁড়া আকাশের ছিদ্রের মধ্য দিয়ে।
(৪)
নীলা সে কান্না দ্যাখে ।কারণ, নীলার কান্নাও যে একই ছিদ্র দিয়ে বেরোয় । সে কান্নাও যে অলিন্দ ভেঙে আসে । চোখে চোখে যদি বিদ্যুৎ জ্বলে তবে কে বাঁচাবে নীলাকে ? চারপাশ যে গিরগিটির দল । শেয়াল কুকুর ঢোকে নীলাভ ঘরে । থুতু আর পেচ্ছাব সেরে অপরিষ্কার করে সেই ঘর । বুদ্ধের মূর্তির মত নীলার চোখ শান্ত— থাকেনা, স্থির থাকে । ক্রমশ গম্ভির হয় রাস্তাঘাট । ফের শুরু হয় খেলা । নীল নীল খেলা। নীলার অস্তিত্ব এখন ভাঙ্া আয়না । সহস্র-কোটি টুকরো হওয়া কোন আয়না । তাতে সহস্র-কোটি অন্ধকার প্রতিফলিত হয়। সহস্র-কোটি অন্ধকার তার জরায়ুতে খেলা করে। কেউ যদি সেই ঘরের ভেতর শরীর ছাড়া ঢুকত; তবে দেখত সেই আঁধারেও অন্ধকারময় অন্যকিছু। বিষ মাখানো তার সেই ওষ্ঠ বা উরু কিছুই কী খুঁজে
হাজার কোটি প্রতিধ্বনি যেন বলে ওঠে , “না”, “না”। এ কথা শুনে নীলচে আলোয় বসে থাকা এক গোয়েন্দা বাজপাখি ডানা ঝাপটে শুর মেলালো ধূসর কান্নার সাথে। এক ছিদ্রেও আলোয় মিলল দুজনের র্সু। নতুন ছন্দ, নতুন কবিতা। রমনী দমনকারী দানব পুরুষও কবিতার কাছে অসহায়। পড়ে থাকা ভালবাসাটুকুও অমূল্য হয় নীলার কাছে। আঁধরে লুকানো এই আলোর প্রতীক্ষাই তো ছিল নীলার,আছে, থাকবেও। সত্য প্রতীজ্ঞা, সত্য আশা। তাইতো আজ সেই নীলকান্তের দেখা । সুনীল। হ্যাঁ,সুনীলের মনও আজ বিশাল দু বাহু মেলে আঁকড়ে ধরে নীলার অনন্তকাল। নীল সবুজের মেশানো অনন্তকাল ।
(৫)
সাঁইত্রিশ বছর পার হয়ে গেল । সুনীল –নীলার রচিত হল সাত লাইন কবিতা । বিশ্বসংসারের একশ আটটা নীল পদ্মের চেয়ে তা অনেক দামী। এমন সাত লাইন কবিতাই তো জীবনকে সার্থক করে, কালের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসকে পূর্ণতা দেয়। ইতিহাস হাঁটুগেড়ে বসে শর্টহ্যান্ডে নোট নেয় যুগযুগ ধরে এই সাত লাইন কবিতার আর এ শহর , এ পৃথিবী হয় ঋণী ।

***************

সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:৩৮
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণতন্ত্র আর বাক-স্বাধীনতার আলাপসালাপ

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:২৩


একাত্তর সালে আওয়ামী লীগের লোকজন আর হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ছিল পাকবাহিনীর প্রধান টার্গেট। যদিও সর্বস্তরের মানুষের ওপর নিপীড়ন অব্যাহত ছিল। গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধা আর তাদের পরিবারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:১৩

ফেসবুকে বাঙালিদের মধ্যে ইদানিং নতুন এক ফতোয়া চালু হয়েছে, এবং তা হচ্ছে "দাওয়াতের নিয়্যত ছাড়া কাফের কুফফারদের দেশে বাস করা হারাম।"
সমস্যা হচ্ছে বাঙালি ফতোয়া শুনেই লাফাতে শুরু করে, এবং কোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×