somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তালাকপ্রাপ্ত ইমামের ফতোয়া

১৪ ই নভেম্বর, ২০১১ সকাল ১১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্বামীকে তালাক দিয়ে অন্যজনকে বিয়ে করেছিলেন এক নারী। এ কারণে ক্ষুব্ধ সাবেক স্বামী মাদ্রাসাশিক্ষক ও ইমাম সালিসের মাধ্যমে ওই নারী ও তাঁর বর্তমান স্বামীর বিয়ে অবৈধ ঘোষণা করে তাঁদের বিরুদ্ধে ফতোয়া দেন। সালিসে ওই ইমামের পক্ষ নিয়ে গ্রামের মাতব্বররা তাঁর সাবেক স্ত্রীর বর্তমান স্বামীকে জুতাপেটা করে জুতার মালা পরিয়ে মাদ্রাসা মাঠে ঘুরায়। মাতব্বরদের নির্দেশে একদল যুবক স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই গণপিটুনি দেয়। পরে তাঁদের গ্রাম ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। বিচারবহির্ভূত অমানবিক এ ঘটনাটি ঘটেছে কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের চমকপুর গ্রামে।
গণপিটুনির শিকার হয়ে ওই নারী ও তাঁর বর্তমান স্বামী জাকির হোসেন (২৮) গুরুতর আহত অবস্থায় কিশোরগঞ্জ জেলা সদর আধুনিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। জাকিরের ভগি্নপতি জাহাঙ্গীর মিয়া গতকাল রবিবার ফতোয়াদানকারী মাদ্রাসাশিক্ষক ও ইমাম তাজুল ইসলামসহ ১৫ জন গ্রাম্য মাতব্বরের বিরুদ্ধে মিঠামইন থানায় একটি মামলা করেছেন। তবে পুলিশ মাতব্বরদের কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
এলাকাবাসী ও আক্রান্ত পরিবার সূত্রে জানা যায়, চমকপুর মাদ্রাসার শিক্ষক ও মাদ্রাসা মসজিদের ইমাম তাজুল ইসলামের প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর ২০০৪ সালে শ্যালিকাকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করেন। কিন্তু নানা বিষয়ে তাঁদের মধ্যে ঝগড়াঝাটির একপর্যায়ে ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে স্ত্রী তাজুল ইসলামকে তালাক দেন। এর প্রায় চার মাস পর চলতি বছরের ২০ মার্চ জাকিরের সঙ্গে ওই নারীর বিয়ে হয়। মাদ্রাসাশিক্ষক তাজুলও আরেকটি বিয়ে করেন।
গ্রামবাসী জানায়, জাকিরের সঙ্গে সাবেক স্ত্রীর বিয়ের পর থেকেই তাজুল ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তাঁদের বিয়ে অবৈধ_এ অভিযোগ এনে গত মঙ্গলবার একটি সালিস ডাকে তাজুল। কিন্তু জাকির ও তাঁর পরিবার ওই সালিসে উপস্থিত হয়নি। সালিসে যোগ না দেওয়ার অপরাধে মাতব্বররা তাঁদের একঘরে করার ঘোষণা দিয়ে শুক্রবার চমকপুর দাখিল মাদ্রাসার মাঠে ফের সালিস বসায়। চমকপুরের হাজি আবদুল হামিদের সভাপতিত্বে সালিসে গ্রামের মাতব্বর বাবুল মিয়া, সবুর খান, সাবেক ইউপি সদস্য বাচ্চু মিয়া, সাবেক ইউপি সদস্য শামসু মিয়া, আবু তাহের, ইকবাল শেখ, ইব্রাহিম মিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সালিসে ইমাম তাজুল ইসলাম নিজেই জাকির হোসেনের সঙ্গে তাঁর সাবেক স্ত্রীর বিয়ে অবৈধ বলে ঘোষণা দেন। উপস্থিত মাতব্বররা একপর্যায়ে রায় দেন।
হাজারখানেক জনতার উপস্থিতিতে জাকিরকে জুতা পেটা করে জুতার মালা পরিয়ে মাদ্রাসা মাঠে ঘোরানো হয়। আর এ জুতার মালা তাঁরই বড় ভাই হাবিবকে দিয়ে পরানো হয়। তা ছাড়া হাবিব ও তাঁর আরেক ভাই রফিককেও গলায় গামছা বেঁধে সালিস দরবারে হাতজোড় করে মাফ চাইতে হয়। পরে জাকির ও তাঁর স্ত্রীকে গণপিটুনি দেয় মাতব্বরদের সহযোগীরা। জাকিরকে তাঁর স্বজনরা উদ্ধার করে প্রথমে মিঠামইন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেঙ্ েএবং পরে কিশোরগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। মামলার এজাহারে বলা হয়, জাকিরকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাসহ গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়।
সালিসে উপস্থিত মাতব্বরদের একজন মুক্তিযোদ্ধা ইব্রাহিম মিয়া বলেন, তাজুল গ্রামবাসীর কাছে বিচার চেয়েছিলেন বলেই এ সালিস হয়েছে। তিনি দাবি করেন, সালিসে জাকির বা তাঁর স্ত্রীকে প্রহার করা হয়নি। তবে সালিসের বাইরে যাওয়ার পর ১০-১৫ জন যুবক জাকিরকে কিল-ঘুসি দেয় বলে তিনি স্বীকার করেন। মাদ্রাসাশিক্ষক তাজুল ইসলাম সালিসের কথা স্বীকার করে দাবি করেন, তাঁর স্ত্রী থাকাকালেই জাকির তাঁকে (ওই নারী) নিয়ে পালিয়ে যায়। দুই দিন পর তাঁরা বিয়ে করেন। এটা শরিয়ত সম্মত হয়নি বলে তিনি সমাজপতিদের কাছে বিচারপ্রার্থী হয়েছিলেন। গণপিটুনি প্রসঙ্গে তিনি কিছু জানেন না বলে দাবি করেন।
ঘাগড়া ইউপি চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন খান চৌধুরী বুলবুল ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, 'এ ঘটনা অমানবিক। আমি অন্য কাজে ব্যস্ত থাকায় ওই দিন সালিসে উপস্থিত থাকতে পারিনি। থাকলে হয়তো এ দুঃখজনক ঘটনাটি ঘটত না।'
মিঠামইন থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম গতকাল রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশ অভিযানে নেমেছে। এ ব্যাপারে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তালাকপ্রাপ্ত ইমামের ফতোয়া
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×