somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাবার কোলেই মারা গেল ১৪ মাসের শিশুটি

০৬ ই মে, ২০১২ রাত ১:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিরুপায় সুরুজ আলী কী এক অক্ষমতায় নিঃশব্দে কাঁদতে থাকেন। চোখের পানিতে ভিজে যায় ছেলে সাজুর শরীর। একবার ছেলে চোখ মেলে বাবার দিকে তাকালো। এটাই বাবাকে শেষ দেখা।

টাকার অভাবে চিকিত্সা মিলল না

আগে টাকা জমা দেন তারপর ভর্তি এবং চিকিত্সা। টাকা না থাকলে চিকিত্সা হবে না। গত রবিবার রাতে দিনমজুর সুরুজ আলী মিয়া তার গুরুতর অসুস্থ ১৪ মাস বয়সী ছেলেকে নিয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতালে গেলে জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত চিকিত্সক ডা. আহমেদ রাশেদুল হাসান তাকে এই কথা বলেন। ছেলে খুবই অসুস্থ, পকেটে টাকাও নেই সুরুজ আলী ঐ চিকিত্সককে বলেন, ‘স্যার আমার সঙ্গে টাকা নেই, আমি দিনমজুর, দয়া করে আমার ছেলেটাকে আগে ভর্তি করান। পরে আমি টাকা যোগাড় করে বিল পরিশোধ করবো ’।

অসহায় বাবার এই কাকুতিও ডা. রাশেদুল হাসানের মন গলাতে পারেনি। নির্দয়ের মতো মুখের উপর বলে দেন, টাকা না হলে এখানে চিকিত্সা হবে না। হাসপাতালের উপ-পরিচালক শাহ আলমকে বিষয়টি জানান সুরুজ মিয়া। তিনি বলেন, টেলিফোনের তার চুরি হয়ে যাওয়ায় সাতদিন ধরে হাসপাতালের ফোন নষ্ট। তবে তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বাস দেন সুরুজ আলীকে।

নিরুপায় সুরুজ আলী কী এক অক্ষমতায় নিঃশব্দে কাঁদতে থাকেন। চোখের পানিতে ভিজে যায় ছেলে সাজুর শরীর। একবার ছেলে চোখ মেলে বাবার দিকে তাকালো। এটাই বাবাকে শেষ দেখা।

হাসপাতালে ভর্তি করাতে না পেরে সুরুজ মিয়া ছেলেকে নিয়ে যায় মিরপুর ১০ নম্বর বস্তির বাসায়। এর কিছুক্ষণ পর বাবার কোলে মারা যায় সাজু। অর্থের অভাবে বিনা চিকিত্সায় ছেলের মৃত্যুতে বাবা-মার আহাজারিতে বস্তির বাতাস ভারী হয়ে উঠে। বস্তির লোকজনকেও নীরবে চোখের পানি ফেলতে দেখা গেছে।

সাজুর প্রথম হাম হয়েছিল। পরে সর্দি ও কাশি দেখা দেয়। এরপর হয় নিউমোনিয়া। ধীরে ধীরে শিশুটি দুর্বল ও নিস্তেজ হয়ে পড়ে। খাওয়া বন্ধ। শুধু তাকিয়ে থাকে। টাকার অভাবে সুরুজ আলী ছেলেকে ডাক্তারও দেখাতে পারছিলেন না। ছেলেকে হারিয়ে তীব্র আক্ষেপে সুরুজ আলী বলেন, ‘এ দেশে গরীবের চিকিত্সা নেই ও বিচার নেই। এদেশে টাকা হলে সবই পাওয়া যায়।’

এ প্রসঙ্গে শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মনজুর হোসেন বলেন, হাসপাতালে ভর্তি না করানো এবং বিনা চিকিত্সায় শিশুটির মৃত্যু খুবই দুঃখজনক। অমানবিক ও দায়িত্বজ্ঞানহীন ঐ চিকিত্সকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। একজন সংকটাপন্ন রোগীর আগে চিকিত্সা, পরে টাকা পয়সার বিষয়। হাসপাতালের দুইটি বেড জরুরি রোগীদের জন্য সবসময় আলাদা করা থাকে। ওখানে শিশুটিকে ভর্তি করাতে পারতেন ডা. রাশেদুল হাসান। তিনি বলেন, ডা. রাশেদুলকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিস দেয়া হয়েছে। নোটিসের জবাব পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেয়া হবে। ঢাকা শিশু হাসপাতালে আর্থিক অনুদানসহ নানাভাবে সরকার সহযোগিতা করে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের দুই শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, দরিদ্র ও গরীব রোগীদের বিনামূল্যে চিকিত্সাসেবা দেয়ার জন্য সরকার এ সহযোগিতা দিয়ে থাকে। কোন বেসরকারি হাসপাতালে সংকটাপন্ন রোগী যাওয়া মাত্রই তার চিকিত্সা দেয়া বাধ্যতামূলক। ঐ সময় টাকার চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বড়। রোগীর সংকটময় মুহূর্তে দর কষাকষি করা অন্যায়, যা এই পেশার নীতিবিরোধী।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নামীদামীসহ রাজধানীর প্রায় সব বেসরকারি হাসপাতালে চিকিত্সাসেবার নামে চলছে বাণিজ্য। তাদের নীতিটাই এমন, আগে টাকা তারপর চিকিত্সা। রোগী মারা গেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাশ আটকে রেখে বিল আদায় করার অভিযোগও আছে বহু।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. খন্দকার মো. সিফায়েত উল্লাহ বলেন, শিশুটির অবস্থা ছিল সংকটাপন্ন। তাকে ভর্তি করিয়ে জরুরি চিকিত্সা দেয়াটাই ছিল চিকিত্সকের প্রধান দায়িত্ব। তখন টাকা চাওয়াটাই অমানবিক। তিনি বলেন, শুধু শিশু হাসপাতালেই নয় সব বেসরকারি হাসপাতালের জন্য নিয়মনীতি আছে। এর ব্যত্যয় ঘটলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার বিধান রয়েছে। জড়িত চিকিত্সকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।
বাবার কোলেই মারা গেল ১৪ মাসের শিশুটি
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই মে, ২০১২ সকাল ১০:১৩
১৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৫৩

বাংলাদেশ একদিন মাথা উঁচু করে দাঁড়াবেই

ছবি এআই জেনারেটেড।

ভিনদেশী আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সত্যের বজ্রনিনাদে সোচ্চার হওয়ার কারণেই খুন হতে হয়েছে দেশপ্রেমিক আবরার ফাহাদকে। সেদিন আবরারের রক্তে লাল হয়েছিল বুয়েটের পবিত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকারের বিয়াইন

লিখেছেন প্রামানিক, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:০৪


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

রাজাকারের বিয়াইন তিনি
মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
ওদের সাথে দুস্তি করায়
যায় না রে সম্মান?

কিন্তু যদি মুক্তিযোদ্ধাও
বিপক্ষতে যায়
রাজাকারের ধুয়া তুলে
আচ্ছা পেটন খায়।

রাজাকাররা বিয়াই হলে
নয়তো তখন দুষি
মেয়ের শ্বশুর হওয়ার ফলে
মুক্তিযোদ্ধাও খুশি।

রচনা কালঃ ১৮-০৪-২০১৪ইং... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×