সাম্য,দ্রোহ,প্রেমের,মানবতার ও গণমানুষের কবি কাজী নজরুল ইসলামের জীবনের শেষ দিনগুলি কেমন গিয়েছিলো তা কম বেশি সকলেই জানি । কিন্তু কবি নজরুলের সাথে এমন কিছু হয়েছে তা আমাদের কল্পনাতীত ।হৃদয়ের রক্তক্ষরণ হওয়ার দিনগুলোতে ঠিক কেমন ছিল নজরুলের চারপাশ । অসুস্থ কবির প্রতি বরেণ্য সাহিত্যকদের ভূমিকাই বা কেমন ছিল । এসব বিষয়বস্তু নিয়েই আজকের পোস্ট।
কাজী নজরুল ইসলামের চিকিৎসার সাহায্য কমিটি হয়েছিলো দুটি । প্রথম কমিটিতে সদস্য ছিল আট জন । এই আট জন হলেন-
শ্যামাপ্রসাধ মুখোপাধ্যায়,কবি তারাশংকর,সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার,চপলাকান্তভট্টচার্য,তুষার কান্তি ঘোষ,গোপাল হালদার,কবিরাজ বিমলানন্দ (তিনি রবীন্দ্রনাথের চিকিৎসা করেছিলেন ,শেষ দিকে বিনামূল্যে নজরুলের চিকিৎসা করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন) এবং সূফি জুলফিকার । বলে রাখা ভালো যে ,কমিটি আরও বড় করার ইচ্ছা ছিল কিন্তু হায়দার সাহেব যাদের মাঝে গিয়েছিলেন তারা কোনো ইতিবাচকভাবে সাড়া দেয় নি । নিরাশ হয়েই আটজনের সংক্ষিপ্ত কমিটি করা হয়েছিল । যেখানে একমাত্র মুসলমান সদস্য ছিলেন লেখক নিজে । সাহায্য সংগ্রহের কাজ শুরু হবার পর নতুন সমস্যা দেখা দিল । মুসলিম সদস্য না থাকায় বাঙালি মুসলমান সমাজের আগ্রহ হারায় নজরুল সাহায্য কমিটি । অবশেষে কমিটির প্রাণ ফিরে পেতে আর তিন জন মুসলিম সদস্য যোগ করা হলো । এই তিনজন হলেন স্যার এ ,এফ রহমান,হুমায়ূন কবির ও সৈয়দ বদরুদ্দোজা সাহেব। অর্থ্যাৎ আগের নয় জনের সাথে আরও তিনজন নিয়ে দ্বিতীয় কমিটি রুপ নেয় ১২ জন সদস্যের । যেখানে আট জন হিন্দু,৪ জন মাত্র মুসলমান ছিলেন । বাঙালি মুসলমানদের এতই অভাব ছিল তখন ।
এই সাহায্য কমিটি থেকে নজরুলের পরিবার কে মাসে ২শ টাকা পাঠাতো । যা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় খুব অপ্রতুল । নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র কিনতেই হিমশীম খেতে হতো ।
মানবতার কবির প্রতি অমানবিক ষড়যন্ত্র
উক্ত টাকা, কবি পরিবার পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার জন্য নিঃসার্থ পরিশ্রম করে গেছেন কবি বন্ধু জুলফিকার ।কবির বাড়ি থেকে চিঠি মারফত জানতে পারছিলেন যে সাহায্য আসছে না ।
সুফি জুলফিকার যুগ্ম সম্পাদক সজনী দা’র কাছে গিয়ে জানালেন-
‘এ মাসের টাকাটা এখনও পাঠানো হয় নি ‘’
সজনী দা রেগে গিয়ে বললেন-
‘যে কয়েক মাস দেওয়া হয়েছে সেটাই উচিত হয় নি ।আমি মুখার্জি(শ্যামাপ্রসাধ) কে ফোনে বলে দিয়েছি,নজরুলের ব্যাপারে তিনি যেন কারো কাছ থেকে টাকা চেয়ে নিয়ে পাঠাবার চেষ্টা না করেন,’’
শ্রদ্ধেয় জুলফিকারের চোখ তখন জলে টলমল । তিনি জানতেন ,প্রাণের কবি নজরুলের অর্থনৈতিক অবস্থা । উনুনে পাতিল উঠার অবস্থাও ছিল না । এছাড়া অসুস্থ কবি । উনার চিকিৎসা হবে দূরের কথা,ঠিকমতো আহারেই অবস্থা ছিল না।
তিনি বারবার জানতে চাইলেন ,কেন বা কি কারণে এমন অস্বাভাবিক আচরণ । কিছুটা রেগে গিয়ে বলেন-
‘ সজনী দা আপনাকে বলতেই হবে কী হয়েছে ?এমন কি হয়েছে যাতে করে আমার প্রতি আপনি বিরুক্তির সাথে কথা বলছেন ?
সজনীকান্ত:থাম হায়দার,ও সব শুনে তোমার কিছুমাত্র কাজ নেই । বলেই দিলুম ‘নজরুলের ব্যাপারে ডক্টর মুর্খাজির কিংবা আমার কাছে আর এসো না
-আসবো না ,এ অত্যন্ত সত্য কথা । কিন্তু এসেছি যখন আজ,কেন আসবো না তা না শুনে কিছুতেই আমি আপনার অফিস ছেড়ে উঠছি না । আপনাকে বলতেই হবে ।
সজনীকান্ত দাস
-তোমাদেরই একজন খ্যাতনামা কবি এখানে এসে বলে গেলো ‘নজরুলের বাড়িতে আগের মতোই এখনো সেই আশ্রিতে ও আশ্রিতাদের সকাল বিকাল মিঠাই মণ্ডা,চা সন্দেশ চলে । অথচ আমরা পরের কাছ থেকে হাত পেতে, টাকা তুলে নিয়ে সাহায্য করছি । নজরুলের বাড়ীতে তাঁর আশ্রিত-আশ্রিতারা আগের মতো রাজসিক অবস্থায় খানা পিনা চালিয়ে যাচ্ছে ,আর আমরা মানুষের দুয়ারে ধর্না দিয়ে টাকা এনে তাদেরে সাহায্য করবো ,এ আমার দ্বারা কিছুতেই সম্ভব নয় । আমি নিজে যেতে পারিনি ,আমার অফিস থেকে ফোনে মূর্খাজি কে জানিয়ে দিয়েছি । নজরুল কে অর্থ সংগ্রহ করে সাহায্য করার ব্যাপারে আমার বিন্দুমাত্র আগ্রহ কিংবা সহানুভূতি নেই ।অতঃপর ইচ্ছে করলে তুমি নিজে গিয়ে ডক্টর মূখার্জিকে জিজ্ঞেস করতে পারো ।
দারুণ তো তালি হবে ,তালি দিন ।
লেখক জুলফিকার অনেক কষ্টে কে সেই মুসলিম খ্যাতনামা কবি এসব ঘৃণ্য কাজ করেছিলো ,সেই নামটি জেনেছিলেন । কিন্তু তিনি প্রকাশ করেন নি ‘নজরুল সাহায্য প্রসঙ্গে বইয়ে ।
১৯৬৪ সালে বইটি প্রকাশ হওয়ার পর ,ব্যাপক আলোচিত হয় পাঠক মহলে । আমার কাছে ১৯৮৩ সালের সংস্করণটা আছে । আগের সংস্করণে হয়তো তিনি নামটি প্রকাশ করেছিলেন,চাপে নামটি গোপন রাখতেও বাধ্য হতে পারেন । কে সেই কবি ,নজরুলের মতো কবির সাহায্যের জন্য গঠিত কমিটিতে এইসব কথা বলার ক্ষমতা রাখে ? এর পেছনে উদ্দেশ্যই বা কি !একমাত্র এমন মন্তব্যের জন্যই নজরুল সাহায্য কমিটির সাহায্য করা বন্ধ হয়ে যায় । ভীষণ অর্থ কষ্টে চাঁদা প্রদান কিছুটা হলেও প্রলেপ দিত। এই ঘটনার পর সেই আশায় গুরে বালি হয়ে যায় ।সকল প্রকার সাহায্য প্রদান বন্ধ হয়ে যায় ।
চল্লিশের দশকে হাতেগণা কয়েকজন খ্যাতনামা মুসলিম ছিল। আমার শুধু একজন জনের দিকেই ঘুরে ফিরে আঙ্গুল যাচ্ছে । কিন্তু উপযুক্ত তথ্য প্রমাণ ছাড়া কিছু বলার ও ক্ষমতা আমার নেই । দেখি কোনো দিন পাই কিনা । অবশ্যই জানতে চাই কে সেই মুসলিম কবি ।কিভাবে একজন কবি হয়ে ,সাহিত্যর ধ্রুবতারার এহেন সংকট কালে এমন কাজ করতে পারে । তিনি কি ক্ষমা করতে পেরে ছিলেন কোনো দিন !
হৃদয়ে রক্তক্ষরণ
আপনি যতো বড় মাপের কবিই হোন না কেন ,এই নজরুল ভক্ত আজীবন ভর্ৎসনা দিয়েই যাবে । এ বিষয়ে শেষ সিদ্ধান্ত নিতে আরও অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে । আপনার কাছে এ ব্যাপারে তথ্য জানা থাকলে অবশ্যই দয়া করে জানাতে ভুলবেন না ।
তথ্যসূত্র:নজরুল জীবনের শেষ অধ্যায়
বিশেষ কৃতজ্ঞতা অত্যন্ত গুণী ,শ্রদ্ধাভাজন জোবাইর ভাইয়ার প্রতি। যিনি মূল্যবান মন্তব্যে আমাকে গঠনশৈলীর দিকটা বললেন। কৃতজ্ঞতা ভাই
লেখাটি উৎসর্গ করলাম ব্লগের শ্রদ্ধাভাজন ‘ল’ ভাইয়া কে ।। অনেক পছন্দের একজন মানুষ আমার । শুভকামনা ও শ্রদ্ধা আপনার প্রতি।
আগের পর্ব-[link|https://www.somewhereinblog.net/blog/Rako12/30262719|কথা দিলাম এই লেখাটি আপনার মন খারাপ করে দিবেই !!নজরুল সাহায্য প্রসঙ্গ-১
চাঙ্কু জেডার নির্বাহী আদেশে প্রিয় নজরুল সংগীতগুলোর লিংক যুক্ত করে দিলাম ।
বেস্ট অব ফিরোজা বেগম
আমায় নহে গো - ফেরদৌস আরা
কনক চাঁপার জনপ্রিয় নজরুল গীতি
মোহাম্মদ রাফি - সেরা নজরুল গীতি
জনপ্রিয় নজরুলগীতি-Anuradha Pardowal
মোহাম্মদ রাফির সেরা ৫টি নজরুল গীতি
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মার্চ, ২০১৯ বিকাল ৩:১৯