somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুখের মতো কান্না-১২

০২ রা জুন, ২০১১ বিকাল ৩:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


খন্দকার আমিনুর রেজা সাহেবের বাড়িতে স্বপ্নের মত দিন কাটতে লাগলো রুহানের। উনার স্ত্রী মিসেস জলি আমিন অত্যন্ত আগ্রহের সাথেই রুহানকে গ্রহণ করলেন। তিন বছর হল উনার বিয়ে হয়েছে। এখনো সন্তানের মুখ দেখেন নি। তেমন কোনো সম্ভাবনাও তৈরি হচ্ছে না। ডাক্তার-কবিরাজ কম করেন নি। ফলাফল শূন্য।

একবার একজন তাকে বুদ্ধি দিল হুজুর কায়দাবাদীর শরণাপন্ন হতে। উনার ‘ডিমপড়া’ নাকি মারাত্মক! তথ্য-প্রযুক্তির এই উৎকর্ষের যুগে ‘ডিমপড়া’ তথ্যে বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। তবুও মিসেস জলি এক শনিবারে হুজুরের দরবার শরীফে গিয়ে হাজির হলেন। সেখানে গিয়ে তো চক্ষু চড়কগাছ! শেয়ার মার্কেটের ভিড়ের’চে কয়েকগুণ বেশি ভিড়। তিনি শনিবারে এসেছেন কারণ, ডিমপড়ার অ্যাকশনের জন্য শনি-মঙ্গলবারে আসতে হয়। এই শনি-মঙ্গলের বাড়তি কদর কেন- কে জানে।

কোনো রকমে একটি মুরগীর ডিমপড়া নিয়ে ফিরে আসলেন জলি। কাজতো কিছু হলোই না, উপরন্তু লাভের লাভ বলতে তিনদিন তাকে লম্বা হয়ে বিছানায় শুয়ে থেকে অন্তত দুই ডজন ওরস্যালাইন খেতে হল। দেখাগেল ডিমটি ছিল সামান্য নষ্ট। গ্রাম্য ভাষায় যাকে বলে, ‘ভুলা আন্ডা’। অন্য সময় হলে লাখ টাকা সাধলেও তিনি এমন ডিম স্পর্শও করতেন না। সন্তানের আশায় নাকে আঙুল দিয়ে তাকে ডিমটি খেতে হয়। কিন্তু স্বাভাবিক কারণেই সেটি হজম হয়নি। ডায়রিয়া হলে গেল।

এদেশে পীর-ফকিরের মূল্যহ্রাস শুরু হয়েছে। যেখানে সেখানে দেখা যায় কোনো না কোনো পীর খানকা খুলে বসে আছেন। যাদের অধিকাংশই আবার ধান্ধাবাজ। প্রকৃত পীর যারা আছেন, তাঁরা খানকা খোলে বসেন না। ঢাক-ঢুল পিঠিয়ে নিজেকে প্রকাশ করেন না। মানুষ যখন ঘুমিয়ে যায়, তখন শেষ রাতে এরা চুপি-চুপি উঠে পড়েন। নিরবে-নির্জনে বাতি নিভিয়ে অন্ধকার ঘরে চোখের পানি ফেলেন। শুধুই আল্লাহর ভয়ে কেঁদে বুক ভাসান।

ডাক্তারদের পেছনেও কম ঘুরেন নি জলি। এই তো গত মাসে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেত হাসপাতালের গাইনী বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডাঃ ম্যাথু জিয়াং তিনদিনের সফরে বাংলাদেশ এসেছিলেন। পিজিতে ‘‘মেডিকেল সাইন্স এন্ড টেকনোলজি” শীর্ষক একটি আন্ত:দেশীয় সেমিনারে সিঙ্গাপুরের প্রতিনিধিত্ব করতেই এসেছিলেন ডাঃ জিয়াং।

আমিন সাহেব উচ্চপদস্থ আমলা, পাশাপাশি স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী উনার প্রাইমারী লেবেলের ক্লাসমেট হওয়ার সুবাদে মিসেস জলির জন্য ডাঃ জিয়াং এর ৩০ মিনিটের একটা অ্যাপয়েনমেন্ট এর ব্যবস্থা করে ফেললেন। পূর্বেকার বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট পর্যালোচনা করে ডাঃ ম্যাথু জিয়াং কপালে ভাজ করে বললেন,

‘মিসেস জলি, আমি তো আপনার কোনো শারীরিক ক্রুটি দেখতে পাচ্ছি না। সবকিছু তো ঠিকই আছে। আপনি ঠিক আছেন তো?’

মিসেস জলি কী জবাব দেবেন ভেবে পেলেন না। সবকিছু যদি ঠিকই থেকে থাকে, তাহলে আবার ঠিক আছেন কি-না, জিজ্ঞেস করার মানে কি? তিনি বললেন-

‘ডক্টর, আমি আপনার কথা বুঝতে পারিনি! আরেকটু এক্সপ্লেইন করুন প্লিজ!’

ভাবগম্ভীর ভাষায় ডাঃ ম্যাথু বললেন, ‘আমি আসলে জিজ্ঞেস করতে চাচ্ছি পারিবারিক জীবনে আপনি ঠিক আছেন কি’না?’

মিসেস জলির কাছে তবুও ব্যাপারটি পরিষ্কার হল না। ডাঃ জিয়াংও সেটা লক্ষ্য করলেন। তারপর বললেন,
‘আসলে হয়েছে কি? আপনার সাথে বাংলায় কথা বলতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলছি। সম্ভবত এ জন্যই প্রশ্নটি ক্লিয়ার করতে পারছি না। আসলে স্পেসিফিকলি আমি জানতে চাচ্ছি দাম্পত্য জীবনে আপতি তৃপ্ত কি না। আপনার স্বামী আপনাকে...’ মিসেস জলি! আমি কি আমার জিজ্ঞাসাটা আপনার কাছে ক্লিয়ার করতে পারলাম?’

মিসেস জলি কিছুটা লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে ফেললেন। ডাক্তার জিয়াং একই প্রশ্ন দ্বিতীয়বার করলেন। মিসেস জলি চোখ না তুলে উপর নিচে মাথা নাড়লেন। এর অর্থ তিনি তৃপ্ত।

ডাক্তার বললেন, ‘আপনারা তো এক সাথেই আছেন?’
‘জ্বি’।
‘এক সাথে বলতে আমি একই বিছানা মিন করছি।’
‘জ্বি, আমি বুঝতে পেরেছি।’
‘আপনার স্বামী কখনো ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েছেন?’
‘জ্বি।’
‘কাগজপত্র সাথে আছে?’
মিসেস জলি আমিন সাহেবের বিভিন্ন শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্ট বাড়িয়ে দিলেন। সবগুলোই পজেটিভ। কোনো সমস্যা নেই। ডাক্তার বললেন-

‘আচ্ছা মিসেস জলি, আপনার কি কখনো মনে হয়েছে আপনি কনসীভ করছেন। তিন-চার সপ্তাহ পর আবার নিজেকে হালকা মনে হয়েছে। অর্থাৎ সম্ভাবনা নষ্ট হয়ে গেছে? এমন হয়েছে কখনো?’

Conceive শব্দটি শুনতেই লজ্জায় কুঁকড়ে গেলেন জলি। ব্যাপারটি ডাক্তার জিয়াংও খেয়াল করলেন। তাই তিনি পরিবেশটাকে হালকা করার জন্য বললেন,

‘মিসেস জলি, Conceive শব্দটি কিন্তু শুধুই গর্ভধারণ অর্থ বহন করে না। আরো অনেক অর্থে ব্যবহৃত হয়। Conceive-এর এক অর্থ চিন্তা করা। এ ব্যাপারে একটি মজার চুটকী আছে। শুনবেন?’ বলেই মিসেস জলির উত্তরের অপেক্ষা না করেই ডাক্তার জিয়াং বলতে শুরু করলেন,

‘এক মন্ত্রী বক্তৃতা দিতে ডায়াসে দাঁড়িয়েছেন। এবং বক্তৃতার মাঝে-মাঝে কিছু ইংরেজি বাক্য ব্যবহারের চেষ্টা করছেন। মন্ত্রীরা একটু আধটু ইংরেজি না বললে কেমন করে হবে। বক্তৃতার এক পর্যায়ে তিনি বললেন,

I Conceive.... I Conceive... শব্দটা পরপর তিনি চারবার উচ্চারণ করলেন। কিন্তু পরের অংশটি আর ইংরেজিতে মিলিয়ে বলতে পারছিলেন না।

ব্যাপারটি দেখে দর্শক সারির এক মহিলার মেজাজ বিগড়ে গেলো। জানা না থাকলে ইংরেজি বলার দরকার কী? তিনি দাঁড়িয়ে গিয়ে হালকা রসিকতার ছলে বললেন,

Sir, I Conceive twice and could deliver two sons,
you conceive four times but could deliver nothing!
Why sir?

অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলে বাক্য দু’টি বুঝতে না পারায় কৌতূহল নিয়ে তাকালেন মহিলার দিকে। মহিলাও সেটা বুঝতে পারলেন। তার ক্ষীণ সন্দেহ হলো, মন্ত্রী মহোদয়ও কিছু বুঝতে পেরেছেন কি না! অবস্থা কিন্তু সেটাই প্রমাণ করছে। মন্ত্রী মহোদয়ও ভ্যাবলা মতন তাকিয়ে আছেন।

মহিলা বললেন, স্যার আমি বলছিলাম, আমি দু’বার কনসীভ করেছি এবং দু’বারই দুটো ফুটফুটে পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছি। কিন্তু আপনি চার চারবার কনসীভ করেও কিছুই জন্ম দিতে পারছেন না কেন!

পুরো হলে হাসির রোল পড়ে গেলো। মন্ত্রী মহোদয় বিব্রত ভঙ্গিতে তাকাতে লাগলেন।

মিসেস জলি আঁচল মুখে দিয়ে হাসতে লাগলেন। ডাক্তার জিয়াং আবারও প্রশ্নটা করলেন। বললেন,
‘কখনো কনসীভ করেছেন?’
মিসেস জলি বললেন, ‘জ্বি-না।’
ডাক্তার বললেন, ‘আমার শেষ প্রশ্ন। এত পরে আর আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করবো না। আর আপনি এত লজ্জা পাচ্ছেন কেন? ডাক্তারের সাথে লজ্জা পেলে তো হবে না। যা হোক, আপনারা কেউ কি কখনো জন্ম নিয়ন্ত্রণের কোনো পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন?’

মাথা নিচু করে মিসেস জলি বললেন, ‘না।’

কিছুক্ষণ চিন্তা করলেন ডাক্তার জিয়াং। তারপর বললেন, ‘মিসেস জলি, আমার চুঁয়াল্লিশ বছরের অভিজ্ঞতা বলছে মেডিকেল সাইন্সের কাছে আপনার সমস্যার সমাধান নেই। সমস্যাই যেখানে নেই সেখানে সমাধান আসবে কোত্থেকে? আমার মতে পুরো ব্যাপারটিকে প্রকৃতির হাতে ছেড়ে দেয়া ছাড়া কোনো পথ নেই।’

এরপর থেকে মিসেস জলি সত্যিই ব্যাপারটিকে প্রকৃতির হাতে ছেড়ে দিয়েই বসে আছেন।

চলবে






১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×