somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্যাগ লুকোনোর দিনগুলোয় শেখা

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পাঠশালায় দিনকাল মজায় কেটে যাচ্ছিল। রেজাল্টও ভালো করছিলাম। নিয়মিত মেধাতালিকায় স্থান পেতাম ইত্যাদি ইত্যাদি। গোল বাঁধল যখন জিলা স্কুলে ভর্তি হলাম। এত বড় স্কুল, এত ছাত্র আর এত বড় মাঠ দেখে আমার ভিমরী খাবার দশা। সাহস করে চলতে লাগলাম, দিনগুলোও কেটে যাচ্ছিল। ভালোভাবেই যাচ্ছিল। সমস্যা হলো অন্য জায়গায়, পড়াশোনার ব্যপারে আমার আগ্রহ বাড়লেও লেখার ব্যপারে আমাকে মনে হয় ভূতে পেয়ে বসল। আমি হাজার বার পড়তে রাজি আছি কিন্তু একবার লিখতে রাজি না!! এর প্রভাব পড়ল ধীরে ধীরে। আমার হাতের লেখার গতি কমে যেতে লাগল। পরীক্ষার হলে কখনই সবগুলো উত্তর লিখে দিয়ে আসতে পারতাম না সময়ের অভাবে। কোন জানা প্রশ্নের উত্তর পরীক্ষার খাতায় লিখতে না পারার কষ্ট ভূক্তভোগী মাত্রই জানেন। এর ছাপ রেজাল্টেও পড়া শুরু করল। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের মত সম্মানজনক ফলাফল নিয়ে আমাকে চলতে হচ্ছিল, মেধাতালিকায় স্থান পাওয়া তো দূরের কথা। এই অবস্থায় বাসায় মুখ দেখানো দায় !! তখন থেকেই শুরু করলাম স্কুল ব্যাগ লুকিয়ে রাখা, সবসময় না শুধু যে সময় রেজাল্ট দিতো সেই সময়টা। লুকোনোর জন্য চমৎকার একটা জায়গাও খুঁজে বের করেছিলাম। টেলিভিশনের টেবিলের নীচে একটা বড় ট্রাভেল ব্যাগ থাকত কাপড়ের কভার দিয়ে ঢাকা, আমি সেই কভারের নীচে স্কুল ব্যাগটা রেখে দিতাম। ন’মাসে ছ’মাসে সেই ট্রাভেল ব্যাগটা খোলা হত, তাই আমার স্কুল ব্যাগ থাকত সবার চোখের সামনে আবার সবার চোখের আড়ালে। আর লুকিয়ে রাখার পর চলত বিভীষিকা!! চোরের মন পুলিশ পুলিশ হলে যা হয় আর কি!! সর্বদা তটস্থ হয়ে থাকতাম!! এই বুঝি বাসার সবাই আমার ব্যাগ খুঁজতে শুরু করল বা আমার ব্যাগ লুকোনোর ব্যপারটা মনে হয় ধরা পড়ে গেলো। বাসায় কেউ যদি জিজ্ঞেস করতো রেজাল্টের কথা, তো সাত সতেরো কিছু একটা বলে রাখতাম। অন্য সবসময় সত্য কথা বলতাম তাই আমার এই ব্যপারটা নিয়ে কারো মনে সন্দেহ আসতো না তেমন। কিন্তু লুকিয়ে আর কতদিন?? ঐদিকে ক্লাস টিচার ঝামেলা করতো অভিভাবকের স্বাক্ষর সমেত রেজাল্ট কার্ড জমা দেবার জন্য!! মাঝে মাঝে পিটুনিও দিতো!! শেষ মেশ পিটুনি খেয়ে বিরস বদনে আরো একদফা মিথ্যা বলে বাসায় রেজাল্ট দেখাতেই হতো। বকুনি, গাল মন্দ খেয়ে বাবার স্বাক্ষর নিয়ে রেজাল্ট কার্ড আবার জমা দিতাম। এভাবেই কয়েক বছর চলল!! একসময় হঠাৎ মনে হলো, ধুর! এভাবে আর না!! রেজাল্ট তো সেই বাসায় দেখাতেই হচ্ছে, গাল মন্দও খেতে হচ্ছে, বাবাকে দিয়ে স্বাক্ষরও করিয়ে নিতে হচ্ছে!! তাহলে শুধু শুধু এত লুকোচুরি কেন?? এর চেয়ে যা হয় একবারেই বলে দেব। এই লুকোচুরি আর মিথ্যার প্রতি ঘেন্না ধরে গেছে। সত্যই সুন্দর!!


এই ব্যাগ লুকোনোর দিনগুলো থেকে আমি খুব চমৎকার দুটো ব্যপার শিখেছিলাম যেটা আমার পরবর্তী জীবনে এমনকি এখন পর্যন্ত কাজে দিচ্ছে।

এক. কোন সমস্যা/ঝামেলা থেকে রেহাই/মুক্তি পাবার উপায় হচ্ছে সেটার মুখোমুখি হওয়া।
দুই. সত্য আসলে সবসময়ই সবচেয়ে সহজ, সবচেয়ে সুন্দর, শ্রেয় এবং কাঙ্ক্ষিত।

***************************************

২০১২ সালের পর আর টিউশনি করাইনি। টিনেজারদের সাথে আমার যোগাযোগও কমে গেছে। কিন্তু ইদানিং কালে তাদের কিছু কীর্তিকলাপ কানে আসছে যা শুনে আমি একটু হতাশ। তাই আমার জীবন থেকে পাওয়া কিছু শিক্ষা শেয়ার করলাম। যদি কারো বোধোদয় হতে একটু সাহায্য করে.........

অস্বীকার করি না মিথ্যার মাঝে কিছু সৃজনশীল ব্যপার আছে। মাঝে মাঝে মিথ্যা বলতে একটা হুলুস্থুল রকমের মজা পাই। গত বছর থিসিস জমা দিয়ে যখন মাস্টার্সের টেস্টিমনিয়াল তুলছিলাম তখন আমাদের দীর্ঘ দিনের ক্লাস মনিটর আমাকে হঠাৎ জিজ্ঞেস করে বসলো, “..............., এখন কি করবি ??” আমার উত্তরঃ “রেজাল্ট হলে সার্টিফিকেট আর ট্রান্সক্রিপ্ট তুলে, সব কিছু নিয়ে বাড়িতে চলে যাব। তারপর হাজার কয়েক টাকা নিয়ে বরিশাল, সুন্দরবন আর বান্দরবানের রুমা, বগা লেক আর তাজিওডং ঘুরতে যাব। এই জায়গাগুলো দেখা হয়নি”। শুনে বেচারার চেহারা হয়েছিলো দেখার মত ;)


আমি কি আসলেই মিথ্যে বলেছিলাম তাকে?? আমি তো আমার স্বপ্নের কথা বলেছিলাম। আজ যদি রূঢ় বাস্তবতা আমায় তাড়া না করত তবে সত্যিই চলে যেতাম..................
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:২৯
৪৪টি মন্তব্য ৪৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×