সৃষ্ট জিনিসের তুলনা ঈশ্বরের সাথে কখনো দেয়া যাবে না, জগতের নিয়ম হল কোন কিছু পেতে হলে ১টা না ১টা মধ্যম লাগবেই অর্থাৎ মধ্যম শুধু সৃষ্ট বস্তুর ক্ষেত্রেই লাগে স্রষ্টার নয় এর উদাহরনও নিচে দেয়া হবে। অনেকে আবার এজন্য উচিলা প্রযোজ্য মনে করে যে, সরাসরি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করা তাঁর জন্য মর্জাদাহানীকর তাই অন্যকিছুর মাধ্যমে তাঁর পুজো করে তাঁকে আরো উচ্চাসনে বসানো হচ্ছে। বস্তুত এটা অহংকারী মানুষের মন মানষিকতা যে তার কাছে পৌছাতে অনেকগুলো মাধ্যমের পারি দেয়া উচিত সরাসরি তার কাছে আসা উচিত না। কিন্তু এটা ঈশ্বরের ক্ষেত্রে নয় কারন তিনিই সবকিছু সৃষ্টি করেছেন এবং সবাইকে ভালবাসেন। একটু ভালভাবে চিন্তা করলে দেখা যায় যে ঈশ্বর সবসময়ই তাঁর সমস্ত সৃষ্টিকে একই সংগে দেখছেন ও শুনছেন এবং সর্বসময়ই লক্ষ্য রেখে চলেছেন কে তাঁর কাছে কি চাইছে এখন কেউ যদি কোন মুহুর্তে সরাসরি ঈশ্বরের পুজো না করে অন্য কোন সৃষ্ট মাধ্যমের দ্বারা তাঁর কাছে প্রার্থনা করে তবে কিন্তু ঐ মুহুর্তেও ঈশ্বর তার প্রার্থনা শুনছিলেন কিন্তু সরাসরিই। অথচ ঐ ব্যাক্তিটি ঈশ্বরেরই আরেক সৃষ্টের কাছে তার প্রার্থনা করছিল, ঈশ্বরের কাছে নয় কিন্তু। আবার তারমানে এও দ্বারায় যে ঐ মাধ্যম ছারা বোধ হয় ঈশ্বর তার ডাক শুনতে ব্যার্থ বা অপারগ অর্থাৎ হিন্দুরা মুর্তিপুজার দ্বারা ঈশ্বরকে সীমাবদ্ধ অপারগের কাতারেও ফেলে দিচ্ছে। হিন্দু ও মুসলমানদের প্রার্থনার উদাহরন এভাবে দেয়া যায় যে, ধরা যাক ১টি অফিসের মালিক ও চেয়ারম্যান ১জন এবং সেই অফিসের চেয়ারম্যান অফিসের যাবতীয় কাজ করার জন্য বিভিন্ন কর্মচারী নিয়োগ করল আর এসব কর্মচারীর কাজ হল চেয়ারম্যানের আদেশানুযায়ি একেক জনের এক এক ধরনের কর্ম সম্পাদন করা, কারও কাজ অর্থ বিষয়ক কারও কাজ খাদ্য বিষয়ক আবার কারও কাজ বস্ত্র বিষয়ক এখন হিন্দুরা যা করবে তা হল চেয়ারম্যানের কাছে অনুমতি না নিয়েই অর্থের প্রয়োজন হলে ম্যানেজারের কাছে চাইবে আর খাদ্যের প্রয়োজন হলে খাদ্যের উপর যার দায়িত্ব তার কাছে চাইবে কিন্তু চেয়ারম্যানের অনুমতি না থাকায় তারা তাকে দিতে পারবে না আর মুসলমানরা সরাসরি চেয়ারম্যানের কাছে চাইবে এবং কর্মচারীরা তাদের দিতে বাধ্য থাকবে এমনকি কর্মচারীদের যদি তোসামদ নাও করা হয় তবু কর্মচারীরা তাদের দিতে বাধ্য। এখানে শুধু উদাহরনের প্রয়োজনে এটি উল্লেখ করা হল কিন্তু বাস্তবে চেয়ারম্যান কিন্তু সবার প্রার্থনা একইসাথে শুনতে অপারগ কিন্তু ঈশ্বরের সে ক্ষমতা আছে আবার কেউ যদি ঈশ্বরের কাছে না চেয়ে অন্যের কাছেও চায় তবু ঈশ্বর তাকে দেবার ব্যাবস্থা করেন এমনকি রাগ করে বেশিও দেন কিন্তু মৃত্যুর পর তাকে নরকের সাজাও বেশি দেন।
হিন্দু ধর্মে আরেকটি ভ্রান্ত মতবাদ হল জন্মান্তরবাদ আর এই মতবাদের সৃষ্টি হয়েছে শ্রী কৃষ্ণের পরবর্তী সময়ে এবং ব্যাপক আকার ধারন করে গৌতম বুদ্ধের মৃত্যুর পর বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে। এই মতবাদ চালু করে কিছু ধার্মিক সাধুরা যদিও হিন্দু ধর্মগ্রন্থগুলোতে জন্মান্তরবাদের কোনই উল্লেখ নেই, কিছু ধার্মিক সাধুরা এই মতবাদ চালু করার কারণ তাদের কাছে অনেকেই প্রশ্ন করত কেন আমাদের অনেককেই ঈশ্বর এই পৃথিবীতে গরীব, শারীরিক প্রতিবন্ধী, অসুন্দর করে পাঠালেন সবাইকে কেন ধনী, সুস্থ ও সুন্দর করে পাঠালেন না। এসব প্রশ্নের জবাব মিলাতে গিয়ে তারা এই ভ্রান্ত জন্মান্তরবাদের অবতারনা করে কিন্তু সত্যিকার্থে ঈশ্বর মানুষকে ধরনীতে পাঠান কিছু দায়িত্ব দিয়ে সেই দায়িত্ব কে কতটুকু পালন করল তার উপর বিচার বিবেচনা করেই তিনি পরপারের স্বর্গ নরকের ব্যাবস্থা করে রেখেছেন এখন ঈশ্বর কাউকে যদি গরীব,শারীরিক প্রতিবন্ধী, অসুন্দর করে পাঠান তবে তার প্রতি ১টুও অবিচার করেননি কারন এই অপরিপূর্নতার দরুন তার ধরনীতে তার দায়িত্বও কমে যাবে ফলে তার পরীক্ষাটা হবে সহজ আর ধনী, সুস্থ ও সুন্দরদের অতিরিক্ত দায়িত্বের জন্য তাকে জিজ্ঞাসাও করা হবে না যেমন- গরীবরা যদি অতিরকিক্ত দান না করে ও তার আত্মীয়দের অতিরিক্ত না দেয় তবে ঈশ্বর তাকে পাপ দিবেন না কিন্তু ধনীদের দিবেন আবার যার চোখ নেই তার সামনে কোন অন্যায় কাজ হলে সে যদি বাধা না দেয় তবে তাকে অপরাধী করবেন না কিন্তু চোখ ওয়ালা সুস্থ সবলদের বেলায় সেটি অপরাধ হিসাবে গন্য করবেন। এটাই হল ১ম কারণ আর ২য়কারণ হল- ঈশ্বর পৃথিবীতে কাউকে ধনী কাউকে গরীব কাউকে সুস্থ আবার কাউকে অসুস্থ করে ধরনীর বুকে ১ধরনের ভারসাম্য বজায় রেখেছেন যার সঠিক ব্যাখ্যা আমাদের স্বল্প জ্ঞানে বুঝা কঠিন যেমন সবাই সুন্দর হলে সুন্দরের কোন মর্জাদাই থাকত না অসুন্দর আছে বলেই সুন্দরের মর্জাদা আছে ঠিক একইভাবে ধনী ও সুস্থদের বেলাতেও তাই। অনেকটা এরকম " আলো কয় অন্ধকাররে- তুমি বেজায় কালো, অন্ধকার কয় আলোরে- তাইতো তুমি আলো" তাছারা স্বর্গে কিন্তু সবাই ধনী, সুস্থ ও সুন্দর থাকবে বিভিন্ন মাত্রায়। তাছারা পুনর্জন্ম যে ১টি ভ্রান্ত মতবাদ তা বাস্তব পরিস্থিতি অবলোকন করলেই বুঝা যায়, যেমনঃ- জন্মান্তরবাদের মতবাদ অনুসারে মানুষ পাপকাজ করলে পরবর্তিতে নিচু শ্রেনীর জন্তু জানোয়ারে তাদের পুনর্জন্ম হয়, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে মানুষের পাপ কাজও বেড়েছে আবার একইসাথে মানুষের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে ভীষনভাবে অথচ পুনর্জন্ম এর মতবাদ অনুসারে মানুষের সংখ্যা কমে যাবার কথা ছিল পাপ বেড়ে যাবার কারণে। তাছারা জন্মান্তরবাদের মতবাদ অনুসারে পাপের প্রতিফল ভোগ ও মুক্তির জন্য বার বার পুনর্জন্মের মাধ্যমে সংসারচক্রের যে প্রক্রিয়াটির কথা পরে হিন্দুদের মধ্যে প্রচলিত হয়েছে তা সম্পূর্ন ভুল কারন একজন্মে কেউ পাপ করে পরে যখন আবার সে জন্মাবে তখন তার পূর্বের সমস্ত সৃতি মুছে যায় তাই অতীত অভিজ্ঞতা না থাকায় এবং পূর্বে পঠিত ধর্মশাস্ত্র সম্পূর্ন বিসৃত হওয়ায় সে আবার পাপে লিপ্ত হতে বাধ্য তাই এই সংসারচক্র ও প্রতিফল ভোগ কখনই শেষ হবার কথা নয়। আবার পূর্ব জন্মের পিতামাতা,মাসিপিসি ও ভাইবোনের সাথে পরজন্মে আবার যে বিয়ে হবে না এর কোন ব্যাবস্থা বা মতবাদও দার করাতে ব্যার্থ হয়েছে হিন্দু পন্ডিতগন, আসলে যেটি মিথ্যা মতবাদ তা সবসময়ই অযৌক্তিক এবং অবিবেকগ্রায্য বোধ হবে এটাই স্বাভাবিক এখন কেবাই এমন আশা করতে পারে যে পরজন্মে যে তার স্ত্রী হবে সে হোক তার পূর্বজন্মের আপন গর্ভধারিনী মা। আর এই মতবাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল- যখন একজন বিশ্বাষ করা শুরু করবে যে সে যতবড় পাপই করুক না কেন তার শাস্তি শুধুমাত্র এই যে পরের জন্মে সে নিম্নতর প্রানীতে পরিনত হবে তখন সে ওটাকে তেমন গ্রায্য করবে না, মনে করবে যে প্রানীতেই পরিনিত হোক বা যেভাবেই বাঁচুক তখন সে ওটাতেই অভ্যস্ত হয়ে পরবে যেহেতু এখনকার মানব সৃতি তখন মনে থাকবে না তাই নিম্ন পশুতে রুপান্তরিত হলেও তখন সেটা বিবেকে বাধবে না, অনেকে আবার এই রুপান্তরকে আনন্দ বিনোদনের ১টি ব্যাপার হিসাবে নিয়ে নির্দিধায় পাপে লিপ্ত হবে, যেহেতু সংসার জীবন খুবই মোহময় তাই সামান্য এই নিম্নজীবে রুপান্তরের ভ্রান্ত এই ভীতিকে সে খুব একটা ভয় করবে না। তাই এই পুনর্জন্মের মতবাদটি মানুষের পাপের রাস্তাকে ভীষনভাবে খুলে দেয় আর এর ফলশ্রুতিতেই দেখা যায় যেদিন হতে হিন্দু জাতি এই জন্মান্তর মতবাদে বিশ্বাষী হওয়া শুরু করেছে সেদিন থেকেই হিন্দুজাতির পাপ করার হারও বৃদ্ধি পেয়েছে শুধু তাই নয় শিখসহ বিভিন্ন দল উপদলে বিভক্ত হয়ে পরেছে আর সবচেয়ে মারাত্মক ব্যাপার হল বেশীরভাগই নাস্তিকতার দিকে ঝুকতে বাধ্য হয়েছে।
আর সবচেয়ে বড় কথা হল হিন্দুদের মূল ও সর্বোচ্চ ধর্মগ্রন্থ বেদ এ জন্মান্তরবাদ তত্ত্ব অনুপস্থিত।এটি পরবর্তীতে হিন্দুদের নিজেদেরই সৃষ্ট। তাছারা বেদে এমন কিছু উদ্ধৃতি আছে যেগুলোকে ব্রাক্ষ্যনরা ভুল ব্যখ্যা করে জন্মান্তরবাদ তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় ফলে সাধারণ হিন্দুরা বুঝতে পারে না যেমনঃ- অথর্ববেদ ৫.১১.৩ "জীবাত্মার বৈশিষ্ঠ্য ই হল এই যে এটি তার কর্মের ফল ভোগ করে এবং সেই ফল অনুযায়ী ই সে জীর্ন শরীর ত্যগ করে এবং নতুন শরীর ধারন করে।" এখানে বলা হয়েছে মৃত্যুর পর আত্মার জগতের কথা যেখানে মানব আত্মার এই পার্থিব শরীর থাকে না থাকে নতুন জোত্যির্ময় ১ধরনের শরীর এবং তারমানে এই পৃথিবীতে আবার জন্মানোর কথা এখানে বলা হয়নি অর্থাৎ নতুন শরীর ধারন মানে পৃথিবীতে নতুন করে জন্মগ্রহন নয় বরং পরকালে আত্মার জগতে জন্মগ্রহন। আত্মার জগতের পর মানুষকে ঈশ্বর আবার জন্মগ্রহন করাবেন পরিপূর্ন দেহ দ্বারা এবং এই জন্মই শেষ জন্ম এরপরই চুরান্ত বিচার করে স্বর্গ বা নরকে অনন্তকাল রাখবেন। এরকম কথা গীতাতে উল্লেখ আছে-“জাতস্য হি ধ্রবো মৃত্যুর্ধ্রুবং জন্ম মৃতস্য চ।তস্মাদপরিহার্যেহর্থে ন ত্বং শোচিতুমর্হসি।।” (গীতা ২/২৭)অথ্যাৎ, যার জন্ম হয়েছে তার মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী; এবং যার মৃত্যু হয়েছে তার জন্মও অবশ্যম্ভাবী। অতএব তোমার কর্তব্য সম্পাদন করার সময় শোক করা উচিত নয়।এছারা উল্লেখ আছে যজুর্বেদ ১৯.৪৭ "দুই ধরনের পথ আত্মার জন্য বিদ্যমান।একপথ পিতৃয়ান এর পথ যাতে বারবার পিতামাতার মাধ্যমে জন্ম নিতে হয় আর আরেক পথ হল দেবায়ন এর পথ যাতে জন্মমৃত্যুর এ পথ থেকে মুক্ত হওয়া যায়,পাওয়া যায় মোক্ষের অমৃতময় আশীর্বাদ!" এই কথাটাকে হিন্দুরা পুনর্জন্ম চক্রের সাথে তালগোল পাকায় অথচ এখানে বলা হয়েছে শুধু আত্মার কথা মানুষের কথা নয় অর্থাৎ মানুষের আত্মাগুলোকে পিতামাতার মাধ্যমে জন্ম নিতে হয় আর এখানে বারবার বলতে বিভিন্ন আত্মার বার বার পিতামাতার দ্বারা জন্মের পদ্ধতির কথা বুঝানো হয়েছে এখানে একই আত্মাকে বারবার এই একই পৃথিবীতে জন্মের কথা বলা হয়নি বরং শুধু পৃথিবীতেই জন্ম ১বার এবং মৃত্যুও ১বারই। আর আরেক ধরনের পথ বা অন্য আত্মাদের পথ হল দেবায়ন এর পথ অর্থাৎ দেবতা বা ফেরেশতারা জন্মমৃত্যুর এ পথ থেকে মুক্ত তারা ঈশ্বরের নিকটেই থাকে তাদের দেহ আলোর তৈরী মানুষ যদি দুনিয়াতে ১ঈশ্বরকে মেনে পূন্যের কাজ করতে থাকে তবে সে মৃত্যুর পর দেবতাদের সঙ্গেই থাকে ঈশ্বরের কাছাকাছি তখনকার জগতকে বলা হয় আত্মার জগত কারন তখন মানুষের আর পার্থিব শরীর থাকে না। এরকম আরো অনেক উদ্ধৃতিকে হিন্দুরা ভুল ব্যাখ্যা করে নিজেদের মতের সাথে মিলিয়ে দিয়েছে যেমন-যজুর্বেদ ৪.১৫-"যখন ই, যতবার ই আমরা জন্ম নিইনা কেন,প্রতিবার ই আমাদের কর্মকান্ড যেন এমন হয় যেন আমাদের মন সবসময় শুদ্ধ,পরোপকারী ও জ্ঞানপিপাসু থাকে।প্রতি জন্মেই আমরা যেন সুস্থ দেহ,পবিত্র অন্তর ও শুদ্ধ বুদ্ধিবৃত্তির অধিকারী হই।" ১মত এখানে কিন্তু ঈশ্বরের নিকট এই কথাগুলি প্রার্থনা করা হচ্ছে।২য়ত সঠিক তথ্য হল মানুষ প্রধানত ৫বার জন্ম মৃত্যুর মাধ্যমে এক এক স্তর অতিক্রম করে যেমন ১মে শুধুই আত্মা হয়ে জন্মায় এরপরে মাতৃগর্ভে জন্মায় এরপরে পৃথিবীতে এরপরে রুহু জগতে এবং সবশেষে বিচারের দিন বা হাশরের দিন। এর মধ্যে শুধু দুনিয়ার জীবন এর উপর বিচার করেই অনন্ত জীবনে স্বর্গ বা নরকে থাকতে হয় আর দুনিয়ার জীবন ১বারই বারবার আশার কোন সুযোগ নাই। এছারাও ঘুমানো এবং ঘুম হতে জাগা এগুলকে ছোটখাট জন্মমৃত্যুর খেলা বলা চলে তাছারা ঘুমে মানুষ স্বপ্ন দেখে এটাকেও আলাদা জগত বলা চলে তাই যজুর্বেদ ৪.১৫- অধ্যায়ে এইভাবে ঈশ্বরের নিকট প্রার্থনা করা হয়েছে যে সর্ববস্থায় সব জগত ও চেতনাতেই যেন মানুষ শুদ্ধ ও পরোপকারী থাকে। তাছারা কেউ কি ঈশ্বরের কাছে স্বপ্নেও খারাপ কিছু হোক বা দেখুক এটা কি চাইতে পারে? আবার কিছু পুনুর্জন্মাবাদীরা কাল্পনিক ও সম্পুর্ন ধর্মীয় ভিত্তিহীন এই জন্মান্তরবাদকে বৈজ্ঞানিক ভাবেও প্রমান করার চেষ্টা করে। এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এর Head of the department, psychiatry Dr. Ian Stevenson এর কথা যিনি সারা পৃথিবী থেকে তিনহাজার এর ও অধিক কেস হিস্ট্রি এর প্রমান করেছিলেন যারা পূর্বকালে ঘটে যাওয়া কিছু কথা সঠিকভাবে বলতে পারে এবং তাদের কথা বাস্তবের সাথে সম্পূর্ন মিলে যায়। কিন্তু সত্যিকার্থে মানুষ স্বপ্নের মাধ্যমে অনেক কিছুই দেখে যা সে ঘুম থেকে উঠার পর মনে করতে পারে না , কিন্তু পরপবর্তিতে বাস্তব জীবনে কিছু কিছু ক্ষেত্রে একই ঘটনার সম্মুখিন হয় তখন সে ভাবে এই ঘটনা আমি পূর্ব হতেই তো জানতাম? কিন্তু অনেকেই জানতে পারে না যে সে একই রকম ঘটনা সে স্বপ্নের মাধ্যমে জেনেছে । কিন্তু পুনুর্জন্মাবাদীরা ভাবে এটা সম্ভবত আমার পেছনের জীবনের ঘটনা আর এইসব মিলে যাবার ঘটনার উপর জরিপ চালায় আবার কিছু বিশেষজ্ঞও তাদের মধ্যে Dr. Ian Stevenson ও একজন।
এখন প্রশ্ন হল কেন মানুষ স্বপ্নে অতীতের বা ভবিষ্যতের কিছু ঘটনা প্রায় হুবহু দেখে থাকে ?? তার কারন হল- আমাদের সাথে চারপাশে ঘটে যাওয়া বাস্তব জীবন হতে আমরা যে লজিক গ্রহন করি তার প্রতিফলন ঘটে ঘুমের সময় অবেচেতন মনে, আর তাই মস্তিষ্ক নিজেই কখনও কখনও গল্পকার, কখনও ঐতিহাসিক, কখনও জোতিষী হয়ে বিভিন্ন ঘটনা তৈরী করে যার কিছু কিছু অতীতে সত্যিই ঘটেছে বা ভবিষ্যতে ঘটবে। কারন আমাদের চারপাশে বর্তমান পরিস্থিতি হতেই আমাদের মস্তিষ্ক লজিক গ্রহন করে থাকে। আর লজিক গ্রহন করে যেসব বর্তমান ঘটনা হতে, সেসব ঘটনার মত হুবহু অনেক ঘটনাই অতীতে সত্যিই ঘটেছিল বা ভবিষ্যতে ঘটতে পারে কেননা মানুষের নেচার ও পরিস্থিতি সময় এর পরিবর্তনের সাপেক্ষে প্রায় একই থাকে। আর মুসলমানেরা জন্মান্তরে বিশ্বাস করে না তারা বলে তাদের ধর্মে আছে- মানুষ যা স্বপ্ন দেখে তার বেশীর ভাগই মনের তৈরী , কিছু জ্বিন শয়তান মাথায় প্রোগ্রাম ঢুকায় আবার কিছু স্বপ্ন ফেরেশতারা মাথায় ভিশন তৈরি করে । ফেরেশতাদের দেখানো স্বপ্ন অবশ্যই সত্য এবং ভাল হয় আর বাদ বাকী দু প্রকার স্বপ্ন মিথ্যা বেশি হলেও সত্যও যে হতে পারবে না তা বলা নেই । ইহুদি খ্রিষ্টান ধর্মে জন্মান্তরবাদ নেই । কিন্তু অন্য ধর্মের জন্মান্তরবাদীরা স্বপ্নে কখনও যদি পোকামাকর জাতীয় কিছু খেয়ে থাকে এবং হালকা স্বাদও বুঝে , এরপর যদি বাস্তব জীবনে কখনও কোন মোরগকে ঐরকম পোকামাকর জাতীয় কিছু খেতে দেখে আর এসময় যদি তার স্বপ্নে দেখা সেই স্বাদটি একটুও অনুভব করতে পারে, তখন সে ভাবে হয়ত আমি পিছনের জীবনে পাপের কারনে মোরগ জাতীয় কিছু একটা ছিলাম নয়ত আমি আমার সামনে থাকা এই মোরগের পোকা জাতীয় কিছু খাওয়ার স্বাধটাকে অন্তর দিয়ে অনুভব করতে পারছি কেন? অথচ সে কিছুদিন পূর্বেই স্বপ্নে পোকাজাতীয় কিছু একটা খেয়েছিল কিন্তু হয়ত ঘুম থেকে জাগার পরও সে তার সেই স্বপ্নকে মনে করতে পারেনি তাই স্বপ্নে দেখার অভিজ্ঞতার দোষ না দিয়ে পেছনের জীবনের পাপের দোষ দেয়। কারন আমরা স্বপ্নে যা যা দেখি তার বেশিরভাগই মনে করতে পারি না, কিন্তু মস্তিস্কে সেই ডাটাটি ঠিকই নিউরনের মধ্যে থেকে যায়। আর কখনও যদি উক্ত ব্যাক্তির সামনে ঐ ধরনেরই কোন ঘটনা ঘটে থাকে বা সমযৌক্তিক কোন কারনেও এসব অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ন সম্বলিত স্বপ্নগুলির সৃতি জাগরিত হতে পারে। যদিও বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এইধরনের ছোট ছোট স্বপ্নের সৃতি একজন ব্যাক্তির সারাজীবনেও মনে পুনঃ জাগরন নাও হতে পারে যদি না উক্ত ব্যাক্তির সামনে ঐ ধরনেরই কোন ঘটনা আর কখনই না ঘটে থাকে। এমনকি কোন পশুপাখি তাদের পোষ মানলে বা কোন উপকার বা অতিরিক্ত দয়া দেখালে তারা ভাবে এ সম্ভবত আমার পেছনের জীবনের কোনআত্মীয়। তাদের ধর্মগ্রন্থে পরিস্কারভাবে জমান্তরের কথা উল্লেখ না থাকলেও মানুষকে ঈশ্বর কেন বিভিন্ন বৈষম্যের সাথে দুনিয়াতে পাঠায় তার সঠিক কোন যুক্তি না দিতে পারায়, ২য়ত এক মানুষের সাথে অন্য মানুষের নেচার এবং চেহারার অনেক মিল দেখে এমনকি পশুপাখিদের মাঝেও মানুষের মত কিছু গুন লক্ষ্য করে এই জমান্তরবাদ থিউরিটির ব্যাপক ভাবে জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করে গৌতাম বুদ্ধ ও যিশু খ্রিষ্টের জন্মের পর হতে। যাইহোক আরেকটি সত্য তথ্য হল- সৃষ্টি জগত যখন অতিরিক্ত সীমা অতিক্রম করবে তখন ঈশ্বর মহা প্রলয় ঘটিয়ে সবই শেষ করে ফেলবেন এমনকি তখন সমস্ত আত্মারও বিনাশ করে ফেলবেন এরপর তিনি আবারও পুর্বের মত শুধু একাই থাকবেন (এটাকেই ভুলবশত বর্তমান হিন্দুরা মোক্ষলাভ ভাবে)এভাবে কতকাল থাকবেন তা তিনিই ভাল জানেন, তারপর তিনি আবার সবাইকে জীবিত করে প্রতিফল দেয়ার জন্য বিচার করবেন যে কে তাঁকে ছেরে তার সৃষ্টির পুজো করেছে এবং কে কত অত্যাচারী পাপীষ্ঠ তার উপর ভিত্তি করে স্বর্গ ও নরকের দ্বারা প্রতিফল দিবেন, সেখানে সবাইকে অনন্তকাল রাখবেন। স্বর্গ বাসিরা ঈশ্বরের চেহারাও দেখার সৌভাগ্য লাভ করবে(সতিকারের মোক্ষ লাভ) কিন্তু নরক বাসিরা আগুনে জ্বলতে থাকবে। ইহলোকের মত ভাল-মন্দ দুটোই একসাথে থাকবে না বরং ভাল যা কিছু তার সবই স্বর্গে আর মন্দের কষ্টের যা কিছু তার সবই নরকে ঘটতে থাকবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ৯:২২