somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

রুম নম্বর-৪০৬ (তৃতীয় কিস্তি)

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

টালিগঞ্জ স্টুডিও পাড়ায় অনিমেষ লাহেড়ীকে খুঁজে পেতে খুব একটা বেগ পেতে হলো না। দু'একজনকে জিজ্ঞেস করতেই আঙুল উঁচিয়ে লাহেড়ী স্টুডিও দেখিয়ে দিলো। ভিতরে ঢুঁকতেই জানতে পারলাম অনিমেষ লাহেড়ী অডিশন নিচ্ছেন। অপেক্ষা করতে হবে। কিছু করার নেই। অনেকটা বাধ্য হয়ে ওয়েটিং রুমে অপেক্ষা করতে লাগলাম। লাহেড়ী স্টুডিওটা বেশ বড় বলা যায়। অনেক মানুষের আনাগোনা। তবে এদের ভেতর মেয়েদের সংখ্যা বেশী। কেউ ছবি জমা দিতে এসেছে। কেউ অডিশন দিতে এসেছে।

প্রায় ঘন্টা খানেক অপেক্ষা করার পর অনিমেষ লাহেড়ী আমাকে ডেকে পাঠালেন। আমি তার অফিস কক্ষে ঢুকে পরিচয় দিতেই তিনি খুব একটা খুশী হলেন বলে মনে হলো না। কন্ঠ ভারী করে বললেন,

'যা বলার ঝটপট বলুন। আমার আবার অডিশন নিতে হবে। বেশী সময় দিতে পারবো না।'
'শিয়ালদহর আইকন হোটেলে বাংলাদেশের উঠতি এক নায়িকার মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছে। ধারনা করা হচ্ছে মেয়েটিকে খুন করা হয়েছে। খবরটি জানেন নিশ্চয়ই?'
'জানি একটু আধটু। খবরে পড়েছি।'
'শুধুই খবরে পড়েছেন অনিমেষ বাবু?'
'না মানে,মেয়েটিকে আমি দেখেছি একবার। আমার বাংলাদেশী বন্ধু আদনান ফারুকের সাথে কলকাতা এসেছিলো। এক রুমে থাকবে। আমি ব্যবস্থা করে দিয়েছিলাম। এই আর কি!' আমতা আমতা করে বললেন তিনি।
'শুধু এতোটুকুই?'
'ওর সাথে যৌথ প্রযোজনার এবটি ছবি করার কথা ছিলো। এজন্যই মূলত কলকাতায় আসে। কিন্তু আমার সাথে দেখা না করেই চলে যায়।'
'কেনো চলে যায় বলুন তো?'
'সেটা আমি কি করে বলবো? আপনি আসুন। আর সময় দিতে পারছিনা।'

আমিও আর কথা বাড়ালাম না। বিদায় নেয়ার জন্য হ্যান্ডশেক করতে হাত বাড়িয়ে দিলাম। তিনিও হাত বাড়ালেন। তার মাঝের আঙুলের আংটিটার দিকে আমার চোখ আটকে গেলো,

'আপনার আংটি তো বেশ সুন্দর। দামী প্রচুর,তাইনা?'
'তা তো বটেই। আমি আবার দামী জিনিস ছাড়া পরি না।'

আংটির প্রশংসা করতেই অনিমেষ লাহেড়ী বেশ খুশী হলেন। স্বাভাবিকভাবেই কথা বলতে আরম্ভ করলেন। আমি আরো কৌতুহলী হয়ে প্রশ্ন করলাম,

'ডান পাশের আঙুলটায় মনে হয় আংটি পরতেন। মোটা দাগ দেখা যাচ্ছে।'

এবার একটু ঘাবড়ে গিয়ে বললেন,

'আর বলবেন না,বাথরুমে গোসল করতে গিয়ে হারিয়ে গিয়েছে । খুঁজে পাচ্ছিনা।'
'আপনি নিশ্চিত আংটি আপনার বাড়ির বাথরুমে হারিয়েছে?'
'তার মানে?'
'এমনো তো হতে পারে....বাই দ্য ওয়ে, আসছি তাহলে। শীঘ্রই আবার দেখা হবে।'

স্টুডিওর বাইরে বের হয়ে নিখিলেশকে ফোন করলাম। দু'বার রিং বাজার পর ধরে ফেললো।

'নিখিলেশ,একটা সাহায্য করতে পারবে?'
'পারবো স্যার। বলুন।'
'যে ডাক্তার তিনার ময়না তদন্ত করেছেন তার সাথে একবার দেখা করতে চাই।'
'চিন্তা করবেন না। আমি ব্যবস্থা করছি। কখন দেখা করতে চান?'
'সম্ভব হলে এখনই।’
'আপনি পিজি হাসপাতালের দিকে এগোন। আমি আসছি।'

কেসটা কোনদিকে যাচ্ছে এখনো নিজেই বুঝতে পারছিনা। অনিমেষ লাহেড়ীর কথাগুলো রহস্যজনক মনে হলো। তাছাড়া তার হাতের যে আংটি তার সাথে হোটেলের বাথরুমে পাওয়া আংটির সাথে প্রায় মিলে যায়। রুবির রংটা আলাদা শুধু। লাহেড়ী সাহেব কি তাহলে খুন করেছেন? সন্দেহটা আরো তীব্র হতে আরম্ভ করলো। তার উপর নজরদারি বাড়াতে হবে। কোনভাবেই যেনো দেশ ছেড়ে যেতে না পারে। এমনটি শুটিংয়ের কাজেও না।

পিজি হাসপাতালে পৌছাতেই দেখি ফরেনসিক ল্যাবের সামনে নিখিলেশ দাঁড়িয়ে।

'কথা হলো?'
'ভদ্রমহিলা ফরেনসিকে আছেন। আমাদের এখানে অপেক্ষা করতে বললেন।'
'ঠিক আছে। একটা বাড়তি কাজ করতে হবে তোমাকে। প্রযোজক অনিমেষ লাহেড়ীকে নজরদারিতে রাখা প্রয়োজন।'
'উনি কি কোনভাবে এই কেসটার সাথে জড়িত?'
'জড়িত। তবে কতোটা জড়িত সেটা বের করতে হবে।'
'তাহলে ওয়ারেন্ট বের করে অ্যারেস্ট করে ফেলি?'
'আপাতত এখন তার দরকার হবেনা। আমি কথা বলেছি তার সাথে। পরবর্তীতে আরো কথা বলতে হতে পারে।'

কথা বলতে বলতে বেশকিছু সময় অতিবাহিত হয়ে গেলো। ফরেনসিক থেকে ডাক্তার ভদ্রমহিলা এখনো বের হননি। মেজাজ কিছুটা গরম হচ্ছে। মেজাজ খারাপ হওয়ার দু'টো প্রধান কারন রয়েছে। প্রথম কারন,দু'টো দিন অতিবাহিত হতে চললো এখনো ময়না তদন্তের সঠিক রিপোর্ট হাতে পেলাম না। থানা থেকে যা জানতে পেরেছি তাতে গড়মিল মনে হয়েছে। দ্বিতীয় কারন, ঘন্টা খানেক পার হওয়ার পর ফরেনসিক থেকে ভদ্রমহিলা বের হচ্ছেন না।

মেজাজ ঠান্ডা করতে একটা সিগারেট ধরালাম। নিখিলেশকে প্যাকেট বাড়িয়ে দিলাম।

'না স্যার।'
'সিগারেট খান না?'
'খাই স্যার,তবে....।'
'আরে নিন,সমস্যা নেই।'

নিখিলেশ বাবু সিগারেট নিয়ে ধরালেন। আমরা দু'জনেই এখন ডাক্তারের বের হওয়ার জন্য অপেক্ষা করছি।


...... চলবে

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ১০:১২
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×