somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারতের কি ঠেকা পড়ছে বাংলাদেশ দখল করার!

১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ ভোর ৫:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একজন রাষ্ট্রনায়ক সাধারণত চায়া থাকে কিভাবে আরেকটা রাষ্ট্ররে নিজের কব্জায় আনা যায়, এইটা তো ঐতিহাসিক সত্য বিষয়। নয়ত মানুষ যুদ্ধ করে কেন? এক দেশ আরেক দেশের ওপর হামলা করে কেন? সহজ কইরা কইতে গেলে, মূলত অর্থনৈতিক লোভবৃত্তিই মানুষরে অন্য একটা রাষ্ট্ররে জয় করতে উদ্বুদ্ধ করে। ভাবে—ওই দেশটা জয় করলে প্রচুর তেল পাওয়া যাইব, পাওয়া যাইব ইউরেনিয়াম বা মূল্যবান খনিজ গ্যাস—এই ধরনের আরো লাভজনক উপকরণ সাম্রাজ্যবাদকে লোলুপ কইরা তোলে। বিষয়টা অস্বীকার করার জো নাই কারোর।
বিগত শতাব্দিতেও রাজ্যজয়ের প্রধান পদ্ধতি ছিল, গায়েগতরে যুদ্ধের মাধ্যমে জোরদখল ও সরাসরি শোষণ। যেমন ধরেন, বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে উইড়া আইসা জুইড়া বসল, ভারতরে নারীর মতো শাসন করা শুরু করল। এই সব যুদ্ধে দেশ দখলের সময় কিছু না কিছু সমস্যা কিছু থাইকায় যায়। দুই দিন পরপর দেখা যায় স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ শুরু করে দেয় দখলকৃত দেশের স্বাধীনতাকামীরা। এতে কইরা লাভের খাতায় তেমন কিছু একটা রাখা যায় না, তার উপর জীবন যায় উভয়পক্ষেরই বহু লোকের।

তাই নতুন কোনো তরিকা দরকার, যাতে সাপ মইরাও লাঠি ঠিক থাকে, এমন একটা সাম্রাজ্যবাদি আগ্রাসন বাইর করতে হবে। এই চিন্তার হাত ধইরা পুঁজিবাদের মোড়ক পেঁচায়া উন্মোচন হইল নতুন এক অস্ত্র। এই তরিকায় জীবন মারমুখিতা নাই। লাভের খাতায় ভরপুর মুনাফা আর লোকসানের হিসাব ক্লোজ। এইখানে বন্ধু হয়া পেটে ছুরি মারলেও সবাই বাহবা দেয়। এই পদ্ধতিতে মানুষের পকেট থেকে অর্থ আনতে বন্ধুক ঠেকাইতে হয় না, ব্যক্তি নিজের থিকাই হাইসা হাইসা টাকাপয়সা সাম্রাজ্যবাদের পায়ে অর্ঘ্য দিয়া যায়। এইটারে আদর কইরা ‘মাল্টিন্যাশনাল বিজনেস ওয়ার্ল্ড’ নামে স্মরণ করে পুঁজিবাদিরা। দিলচোস্ত ইংরেজিতে আমরা যারে বলি—‘কর্পোরেট বিজনেস’। বাংলায় কইতে গেলে ‘পণ্যসন্ত্রাস’ নামটাই যুৎসই। মার্কেটিং বা বাজারজাতকরণ এইটার মূল হাতিয়ার।

এই মার্কেটিংটা আসলে কী? উদারভঙ্গিতে কইতে হইব, মার্কেটিংটা হইল, যা আপনেরে কিনতে বাধ্য করব এমন একটা পণ্য, যেইটা আপনের কোনোকালেই দরকার ছিল না, আর দামটাও সবিনয়ে দিতে হইব উৎপাদনের দশগুণ বেশি। এই ধরনের মার্কেটিংয়ের সবচে’ কার্যকরী পন্থা হইল মিডিয়া বা প্রচারমাধ্যম। পত্রিকা, ম্যগাজিন, টিভি, রেডিও, ইন্টারনেট, পোস্টার, লিফলেট—এই ধরনের যত প্রচারণা উপকরণ আছে, এগুলো মিডিয়ার অন্তর্পরিবার। এইসব দিয়া মানুষের সামনে নাচায়া দেখানো হয় কর্পোরেট বিজনেসের ‘হালাল’ নট-নটীদের। মিডিয়ার ভাষায় যা অতি আদরের নাম—মডেল। হাইসা-কাঁইদা, নাইচা-গায়া তারা আপনেরে জানায়, এই পণ্যের মাঝে আছে আপনের জীবনের সাফল্যের মূলমন্ত্র।

আপনে হয়ত ভাবতে পারেন, আপনের উপরে মিডিয়ার কোনো প্রভাব নেই। মিডিয়ার কথা বা বিজ্ঞাপনে আপনে নন ইস্টারেস্টেড। তাইলে আপনেরে ‘ডাক্তারের’ কাছে নিতে হইব। তার আগে আপনে বলেন—আপনের হাতের মোবাইল ফোনটির দাম কত? এরাউন্ড দশ হাজার টাকা। কথা বলা ছাড়া আর অতিরিক্ত সুবিধা কী কী? এই ধরেন, ক্যামেরা, ভিডিও, এমপিথ্রি, গেইমস, ইন্টারনেট এইসব। এখন বলেন, এগুলো কি আপনের বেঁচে থাকার জন্য খুব প্রয়োজন? নিশ্চয় আপনের উত্তর— ঠিক তা না, জাস্ট বিনোদন। এই বাড়তি সুবিধা না থাকলে আপনের ফোনটার দাম হইত বড়জোর দুই হাজার টাকা। আপনে বাকি আট হাজার টাকা বাড়তি দিয়া শুধু হালকা বিনোদন কিনতে পারছেন। বিনোদনের এই সহজ মাধ্যমের সবক আপনে কোইত্থিকা নিছেন? নিশ্চয় টিভি-পত্রিকায় দামি ফোনের বিজ্ঞাপন দেইখা। তাইলে এইবার আপনেই কন, যেই জিনিসটা আপনের অদরকারি সেইটারে রঙচঙ মাখায়া আপনেরে দেখানোর কারণ একটাই—যেনো জিনিসটা কিইনা আপনে ধন্য হন।

আজ পর্যন্ত এমন কোনো মেয়ের সন্ধান কি পাইছেন, যে মেয়ে বিজ্ঞাপনের স্নো-ক্রিম-লোশন মাইখা পর্দার নায়িকার মতো হওয়া দূরে থাক, কালো থেকে শ্যামবর্ণ হইছে! বিজ্ঞাপনের তেল-শ্যাম্পু মাইখা বিয়া পাকা কইরা ফেলছে! নিউজিল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়ান গরুর দুধ খায়া কে হইছে আইনস্টাইন? এই দুধ খায়া এত কিছু হইলে বাংলাদেশে এত দুর্নীতি হয় কি করে? ডানো তো প্রজন্মের পর প্রজন্ম গড়ে তুলছে, কই বাংলাদেশে তো আইনস্টাইন হইল না কেউ? নিদেনপক্ষে একটা রবিঠাকুর বা একটা নজরুলও তো পাইলাম না! এই সব অসত্য বিজ্ঞাপনের দুধ খায়া বড়জোর একজন দুর্নীতিবাজ হইবেন বৈকি! মিথ্যা দিয়াই যেই দুধ গরুর উলান থেকে প্যাকেটজাত হয়, সেই দুধ খায়া একটা বাচ্চা মিথ্যা ছাড়া আর কী শিখবো? তবুও বিদেশি দুধে বাইড়া উঠতেছে আমাদের সন্তান। কারণ, ওটা সাম্রাজ্যবাদি দুধ। না খায়া উপায় আছে?

অবস্থা যখন এই তখন ভারতের কী ঠেকা পড়ছে বাংলাদেশের দিকে বন্দুক-কামান তাক কইরা রাখার? তাদের শাহরুখ খান আছে। আমির খান, ক্যাটরিনা কাইফ, ঐশ্বরিয়া রাই, কারিনা কাপুর, বিদ্যা বালান, সিদ্ধার্থ মালহোত্রা, আলিয়া ভাট আছে। আছে স্টার জলসা, স্টার প্লাস, জি-বাংলা, সনি, কালার্সসহ অসংখ্য টিভি চ্যানেল। এই সবের মাধ্যমে প্রতিদিন বাংলাদেশের ঘরে ঘরে ঝাঁপিয়ে পড়ছে কিরণমালা, পাখি, বউ কথা কও, রাখী, দিদি নম্বর ওয়ানসহ অদ্ভুতুড়ে নামের এবং কিম্ভূত অভিনয়ের নাটক-সিরিয়াল। ক্ষেপণাস্ত্রের বদলে ইন্ডিয়া বাংলাদেশের দিকে ভারত এসব নট-নটীদের তাক কইরা রাখছে। এই সব সুপারস্টাররা থাকলে ট্যাঙ্ক-কামান আর যুদ্ধবিমানের প্রয়োজন হয় না। প্রতিদিন শত শত ইন্ডিয়ান টিভি চ্যানেল হাজার হাজার ‘রাউন্ড’ বিজ্ঞাপনে এদের দিয়া বাংলাদেশের ভূখণ্ডে ‘ফায়ার’ করতেছে। তাতেই বাঙালি কুপোকাত। শুধু কাত হলেও কথা ছিলো, বাঙালি একেবারে ‘কুপোশোয়া’ হয়া গেছে। এইটাও মাইনা নেয়া যায় যে, বাঙালিরে কুপোকাত করতে ইন্ডিয়ান স্টারগো কাজে লাগাইতেছে মিডিয়া। কিন্তু এই পদ্ধতিতে লাভের হার দেইখা ভারত নতুন আমদানি শুরু করছে। বাংলাদেশ থিকা এখন স্টার ধার কইরা আমাদের স্টার আমাদের দিকেই তাক কইরা রাখছে। মীরাক্কেলে বাংলাদেশি ছেলে গ্রান্ডফিনালে পৌঁছায়া গেছে। আরেক অর্থে পৌঁছানো হইছে যাতে বাঙালি দর্শক হুমড়ি খায়া তাদের চ্যানেল দেখে। দুইদিন আগেও সারেগামায় এক গানঅলা নোবেলরে ভাইরাল করছে। তার থিকা খেলা শুরু। খেলা হবে...

তাই বলাই যায়, বাংলাদেশরে দখল করার জন্য, বাংলাদেশের ১৭ কোটি ভোক্তাকে ভারতীয় উপনিবেশ বানাতে তাদের সৈন্যসামন্ত কাজে লাগাইতে হয় নাই। চ্যানেলে চ্যানেলে ছাইড়া দিছে নায়ক-নায়িকা আর মডেলদের জেল্লাদার দেহবল্লরী। তারা হরদম সাবান-সোডা, তেল-স্নো, মোবাইল-টিভি, ঔষধ-গাড়িসহ রকমফের ভারতীয় পণ্যের পসরা নিয়া নগ্ন উঁকিঝুঁকি দেয় আমাদের টিভিপর্দায়। আমজনতার মগজের ধার নিতান্ত গোবেচারা ধরনের। তাই ম্যাঙ্গো জুসের বিজ্ঞাপনে যদি ক্যাটরিনা কাইফের নধর দেহ দেখা যায়, আমরা সেটিকে পাকা আমের সাথে কাসুন্দি হিসেবে হজম কইরা লই। দুনিয়া মাতানো জন আব্রাহাম যেই মোটরবাইকের বিজ্ঞাপন দেয় সেই বাইক কিনতে, সেই বাইক চালাতে আমাদের কখনো মনে হয় নাই—এটি পণ্যসাম্রাজ্যবাদের অংশবিশেষ।

ভারতের এক রাজনীতিবিদ কইছিল যদ্দুর মনে পড়ে—‘কামান-বন্দুকের বদলে টিভি চ্যানেল, সিনেমা স্টুডিও দিয়ে ভারত বিশ্বজয়ে নামছে।’ সেই হিসেবে ভারতের জয়রথ বেশ ভালো গতিতেই আগায়া যাইতেছে। টিভি-সিনেমা তো আছেই, ভারতের বিজ্ঞাপন বাণিজ্যের আরেক সংযোজন হইতেছে ‘আইপিএল’। ধুম-ধারাক্কা ক্রিকেট দিয়া দর্শক মাতায়া তারা কাবু কইরা রাখতেছে বাংলাদেশের বিশাল বাজার। খেলার ফাঁকে ফাঁকে চলতেছে বিজ্ঞাপন। চার-ছক্কার মাঝে মাঝে চলে চিয়ারলিডারদের উদ্দাম নৃত্য। বাঙালিমন সেইগুলো দেইখা আনচান-আনজান বোধ করে।

ভারতীয় নাটক-সিরিয়াল, সিনেমার মূলবক্তব্য হলো প্রেম। তাও যেনতেন প্রেম না, পরকীয়া প্রেম। সঙ্গে থাকে লিভ টুগেদার, নাইট ক্লাব, ডিজে পার্টি, ঠুনকো কারণে স্বামী-স্ত্রীর সেপারেশন, বউ-শ্বাশুড়ির দ্বন্দ্ব। এমন সব কুরুচিপূর্ণ বিষয়গুলো প্রতিদিন শত শত চ্যানেলে দেখায়া যাইতেছে। কাহিনির গাঁথুনি এইগুলোর মধ্যে এতোটাই অটুট থাকে যে, দর্শক পরবর্তী পর্ব না দেখে থাকতেই পারে না। নেশাখোরের মতো নেশাগ্রস্ত কইরা ফেলে দর্শকরে। আর এই সবের মাঝ দিয়ে চলে বিজ্ঞাপন। নেশাখোর দর্শকের কাবু না হয়া আর উপায় কি? অতএব, খেলা হবে...

আমরাও কেমন ভোদনচোদন পাবলিক। শাহরুখ খান কইছে এই পণ্য ভালো, প্রিয়াঙ্কা কইছে এই সাবান সৌন্দর্যের প্রতীক। তাই যে দর্শক শাহরুখ খানের অন্ধভক্ত সে নির্দ্বিধায় বিজ্ঞাপিত পণ্যটিকে উত্তমজ্ঞানই করবে। শাহরুখ খানই তো ব্র্যান্ড। শাহরুখ যে টুথপেস্টকে ভালো বলবে সেটি দিয়ে দাঁত ‘ঝিলিকমারা’ সাদা না হওয়ার কোনো কারণ নাই। কিনতে হবে ওই পেস্ট কিংবা সাবান। অথচ তাদের ঘরে গিয়া দেখেন তারা এই সব ব্যবহার করে কিনা, তা নিয়া ঝগড়া করা যাবে দীর্ঘদিন। তাইলে এইটারে আপনে পণ্যসন্ত্রাস কইবেন না তো কী কইবেন?

খেয়াল করছেন কখনো, দুনিয়ার সব বড় বড় কোম্পানি তাদের এশিয়ার আঞ্চলিক অফিস খুলছে ভারতে। ভারতের আছে বিশাল ভোক্তা বাজার এবং পার্শ্ববর্তী দেশের বাজারও তাদের অধীনস্থ। তাই তাদের পণ্যের বিপণন করতে পুরো এশিয়া ঘুরতে হয় না। ভারতে বইসাই পণ্যোপনিবেশ কায়েম কইরা ফেলা যায় গোটা এশিয়ায়। ভারতের অগণিত টিভি চ্যানেলে তারা ছাইড়া দিছে যুদ্ধংদেহী মারদাঙ্গা মডেলদের। তারাই হামেশা আপনের মস্তিষ্কের বারান্দায় আইসা বলতেছে, ‘অ্যান আইডিয়া ক্যান চেইঞ্জ ইউর লাইফ’। জীবন না বদলে উপায় আছে!

অথচ আমাদের উদারতা দেখুন। আমাদের আপামর বাংলাদেশি কোনো টিভি চ্যানেল ভারতে প্রচারের অনুমতি নাই। ইন্ডিয়ায় বাংলাদেশের কোনো টিভি চ্যানেল দেখা যায় না। এমনকি বাঙালি অধ্যুষিত কলকাতাতেও না। তারা প্রতিদিন আমাদের দেশে টনকে টন পণ্য ‘ফায়ার’ করছে। অথচ আমরা একটা গুলি তো দূরে থাক বাংলা চ্যানেল দিয়ে একটা গালিও ছুঁড়তে পারছি না। বলতেও পারছি না, ‘মেরে ইয়ার, ইয়ে সব কিয়া হো রাহা হ্যায়?’

কেউ একজন কইছিল—‘অন্য রাষ্ট্রের পণ্যের ভোক্তা বাড়লে অর্থনীতি, শিল্প স্বাভাবিক নিয়মেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভারতীয় চ্যানেল বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে এদেশে ভোক্তা তৈরি করতেছে। বাংলাদেশের চ্যানেল ভারতের কোথাও দেখা যায় না। ফলে এক্ষেত্রে ভারসাম্য থাকতেছে না। এদেশের চ্যানেল ভারতে দেখানো হলে বা আমাদের পণ্যের বিজ্ঞাপন সেইখানে প্রচারের পর ভোক্তাগোষ্ঠী তৈরি হলে সামান্য একটা ভারসাম্য থাকত। তা না হওয়ায় ভারত এখন একতরফা বাজার দখল করতেছে।’

ন্যাশনাল মিডিয়া সার্ভের সাম্প্রতিক জরিপমতে, দেশে টিভি দর্শকের সংখ্যা প্রায় ৯ কোটি ১২ লাখ। যাদের বয়স ১৫ বছরের উপরে। এই সব দর্শক প্রতি ১০০ মিনিটের মাত্র ৩০ মিনিট দেখেন বাংলাদেশি টিভি চ্যানেল। বাকি ৭০ মিনিট দেখেন বিদেশি চ্যানেল। এর মধ্যে বেশিরভাগ সময় দেখেন ভারতীয় চ্যানেল। তারা বেছে নিতেছে ভারতীয় চ্যানেলের সিরিয়াল, সিনেমা, গান আর রিয়েলিটি শোগুলো। তারা অনুষ্ঠানের বিষয়বস্তুর চেয়ে বাহ্যিক চাকচিক্যে মুগ্ধ। তথ্যমতে, ডিশ কেবল সংযোগে বাংলাদেশে দেখা যায় ২৭২টির মতো টিভি চ্যানেল। এর মধ্যে বাংলাদেশি চ্যানেল ১৩ থেকে ১৫টি। বাংলাদেশি চ্যানেলগুলোর অনুষ্ঠান বাংলাদেশের দর্শকরা প্রতি ১০০ মিনিটের মাত্র ২৯.২০ শতাংশ সময় দেখেন। বাকি সময়ের সিংহভাগটা ব্যয় করে ভারতীয় হিন্দি চ্যানেল দেইখা।

গ্লোবাইজেশনের এই যুগে এই সব ফালতু দেশাত্মবোধক অনুভূতি নিয়ে বাৎচিত করলে বিশ্বায়নে আমাদের অগ্রগতিকে ম্লান করে দিতে পারে—এ আশঙ্কা নেশাখোররা করতেই পারেন। কিন্তু কথা কিন্তু থেকে যায়, কপালে যে লেখা আছে বাঙালি নামের রাজটীকা, সেইটারে বিশ্বায়নের নধর দেহের মাঝে এমন করে বিলিয়ে দেয়াটাকে কী কইবেন?
ক্যাটরিনা কাইফকে পর্দায় দেখায়া কইতেছে, সে এই পণ্য ব্যবহার করে এমন রূপের জৌলুস পেয়েছে। তুমিও ব্যবহার করে দেখো, জাস্ট তার মতো বদলে যাবে। ব্যাস, ক্যাটরিনার মতো সুন্দরি হওয়ার দৌঁড় প্রতিযোগিতা শুরু। নায়িকাই হয়ে যায় জীবনের আদর্শ। বঙ্গবন্ধু-শহীদ জিয়া বাদ।

আমাদের বাংলাদেশের দুই হাজার বছরের সংস্কৃতি, প্রাচ্যের দর্শন, জীবনবোধ কী বলে? আমরা কি সাফল্যের এই সংজ্ঞায় অভ্যস্ত? আমাদের হাজার বছরের জীবনভাবনা আমাদের এতোদিন শেখাইছে সরল জীবনযাপনই প্রকৃত সুখ। মাত্র দুইটা কাপড়েই জীবন ভালোভাবে চইলা যাইতে পারে। অল্প খাও কিন্তু খাঁটি খাও। কিছুদিন আগে পর্যন্ত বেশি স্লিম মেয়েদের বিয়ের সমস্যা হত। কারণ, বাঙালিরা একটু স্বাস্থ্যবতী বউ পছন্দ করে। সৌন্দর্যের মাপকাঠি ছিল সাদামাটা টানাটানা কাজল কালোচোখ আর খোঁপায় বেলীফুলের মালা। টিভি মিডিয়ার বদৌলতে আমরা ইদানীং স্লিম ভালোবাসতে শিখছি। জিরো ফিগারতত্ত্ব এখন আমাদের তরুণীদের স্বপ্নের অবয়ব। এখন ক্যাটরিনা কাইফই হল আদর্শের মাপকাঠি। এভাবেই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাইতেছে। আমরা চাই আর না চাই, আমাদের আদর্শ বদলে যাইতেছে। শুধু বাংলাদেশ না, সারাবিশ্বের মানুষের মাথায় হাতুড়পেটা করে শেখানো হইতেছে, ক্যাটরিনা মানেই সাফল্য, ক্যাটরিনা মানেই আদর্শ। অথচ ক্যাটরিনা মানে, যার পুরাটাই অসত্য আর ভয়াবহ রকমের পাশবিক শোষণ। ক্যাটরিনা এইখানে শোষণের হাতিয়ার মাত্র।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৯ ভোর ৫:৫০
১৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×