somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবি ফরহাদ মজহার-এর সিরিজ পোস্ট (৩য় পর্ব) : সরকারের তথ্য নিয়ন্ত্রণ করবার চেষ্টা এবং বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার নির্ভার মনোভাব

০৩ রা মে, ২০২০ রাত ২:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
দ্বিতীয় কিস্তি পড়ে আসুন এখান থেকে



বাংলাদেশ মারাত্মক করোনা ভাইরাস ঝুঁকিতে পড়ে গিয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কি এই বিপর্যয় মোকাবিলা করতে পারব? বাংলাদেশের জনগণের ওপর আমাদের আস্থা থাকা উচিত। মোকাবিলা দুঃসাধ্য বটে, কিন্তু মোটেও অসম্ভব নয়। কিন্তু সেটা সম্ভব যদি আমরা আতংকিত না হই। দ্বিতীয়ত সরকারকে বুঝতে হবে আইন করে, মিলিটারি-পুলিশ দিয়ে মহামারী দমন করা করা যায় না। চিনের উহানে অসম্ভব সম্ভব করেছে প্রধানত স্বাস্থ্যকর্মী এবং স্থানীয় জনগণ। অর্থাৎ জনগণকেই সম্পৃক্ত করতে হবে। আইন, লাঠি বা বন্দুক দিয়ে পিটিয়ে মহামারি দমন করা যায় না। এতে হিতে বিপরীত হবে। নিপীড়নের মুখে মানুষ তথ্য লুকাবে। ভয়ংকর পরিস্থিতি ঘটবে। ঠাণ্ডা মাথায় আমাদের বিভিন্ন দিক ভাবা দরকার।

প্রথমত কোভিড-১৯ সম্পর্কে আমাদের যারপরনাই অজ্ঞতা রয়েছে। ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো উপসর্গ থাকলেও আমাদের বোঝানো হয় নি যে এটা সাধারন কোন অসুখ বা ইনফেকশান নয়। এমন নয় যে আপনি বেশী অসুস্থ বোধ করলে ডাক্তারের কাছে যাবেন এবং ডাক্তার আপনাকে এন্টিবায়োটিক, সর্দি জ্বরের জন্য পারাসিটামল বা ইবপ্রুফেন দেবে আর আপনি বাড়ী চলে এসে বিশ্রাম নিয়ে সুস্থ হয়ে যাবেন। আপনার এজমা বা শ্বাসকষ্ট থাকলে কোভিড-১৯ মারাত্মক হতে পারে, বয়স বেশী হলে শ্বাসকষ্টে মরতে পারেন। এটি একটি সংক্রামক মহামারী। আজ নিউ ইয়র্ক টাইমসের একটি প্রতিবেদনে দেখলাম, একজনের সংক্রমণ যদি ধরা পড়ে তার মানে আরও দশজন ভাইরাস বহন করে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং অন্যদের সংক্রমিত করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তাই বারবার বলছে যেটা দরকার সেটা হোল পরীক্ষা, পরীক্ষা এবং পরীক্ষা। Test, Test, Test । অর্থাৎ পরীক্ষা করা এবং সংক্রমিত ব্যাক্তিকে আলাদা করা, কোরান্টাইনে রাখা-- অর্থাৎ সংক্রমণ যেন ছড়াতে না পারে তার জন্য কঠোর ব্যবস্থাই হচ্ছে এই মহামারী মোকাবিলার একমাত্র উপায়। এটা স্বেচ্ছায় হতে হবে। মিলিটারি-পুলিশ কিম্বা আমলাদের হুমকি-ধামকি দিয়ে হবে না।

কিন্তু আমাদের দেশে কি ঘটছে? শুরু হয়েছে পরিকল্পিত ভাবে তথ্য গোপন করে। করোনাভাইরাস আছে সরকার তা স্বীকারই করতে চাইলো না। ইতোমধ্যে দুই মাসের অধিক সময় পেরিয়ে গিয়েছে, যা ছিল বিপর্যয় প্রস্তুতির জন্য মহা মূল্যবান সময়। এখন আসলে বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। আজকের পত্রিকায় দেখছি আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ জন। আরেকটি খবর হচ্ছে 'ঝুঁকিপূর্ণ শিবচর অবরুদ্ধ'। অসমর্থিত সূত্রে চট্টগাম সম্পর্কে যেসব খবর সত্য কিম্বা গুজব হয়ে ছড়াচ্ছে তার প্রধান কারন সরকারের প্রতি জনগণের চরম অনাস্থা। জনগণকে সচেতন করা সরকারের দায়িত্ব ছিল, কিন্তু রাজনৈতিক প্রচার প্রপাগান্ডার প্রতি অতি মনোযোগের কারণে সরকার এই বিপর্যয় মোকাবিলার দায়িত্ব উপেক্ষা করেছে। একজন উচ্চ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তাকে টেলিভিশনে স্বীকার করতে দেখলাম যে বাইরে থেকে যারা দেশে ফিরেছেন তারা যদি সংক্রমণ বহন করে আনেন তবে সেটা ঠেকাতে বাংলাদেশ ব্যর্থ হয়েছে। এটা মারাত্মক।

সরকারের প্রতি অনাস্থার বড় কারণ হচ্ছে শুরু থেকেই তথ্য নিয়ন্ত্রণ করবার চেষ্টা। Institute of Epidemiology, Disease Control and Research (IEDCR) ছাড়া আর কেউই কি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হোল কিনা তা পরীক্ষা করতে পারবে না? এই দাবির কি আদৌ কোন ভিত্তি আছে যে বাংলাদেশে আর কোন ল্যাবরেটরি নাই যাদের বৈজ্ঞানিক ও কৃৎকৌশলগত মান, কারিগরি জ্ঞান সম্পন্ন স্বাস্থ্য কর্মী ও দক্ষতা করোনা সংক্রমণ নির্ণয়ে অনুপযুক্ত? বায়োসেফটি প্রটকল অনুসরণে তারা অক্ষম? আইইডিসিআরকেই সবকিছুর নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব দিয়ে রাখা হয়েছে মূলত তথ্য গোপনের জন্য, এই অভিযোগ উপেক্ষা করার মতো নয়। বাংলাদেশ মহা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে চিন অনেক আগেই সাবধান করেছে। কিন্তু কোন কাজ হয় নি।

এরপর রয়েছে ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষন এবং সর্বোপরী তাদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অভাব। এই ছোঁয়াচে রোগ থেকে যদি তাদের আমরা রক্ষার ব্যবস্থা নিশ্চিত না করি তাহলে তাঁরা কিভাবে সেবা দেবেন? বাংলাদেশে বিপুল সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবীর দরকার হতে পারে। এতদিন হাতে যে সময় ছিল তাতে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া যেত।

আরেকটি প্রশ্ন উঠেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ছাড়াও বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক উন্নয়ন সংস্থা বা উন্নয়ন পার্টনার রয়েছে, তারা গত কয়েক মাস কি করেছে? করোনার ভয়াবহতা সম্পর্কে কি সরকারকে কি কিছুই বলে নি? কোন চাপই তারা দেয় নি? তারা কি এতোই গর্দভ যে বুঝতে অক্ষম একটি দেশের প্রধান বিরোধী দলকে রাজনৈতিক নিপীড়নের অধীনে রাখা হলে মহামারী মোকাবিলায় কোন 'জাতীয়' কর্মসূচী গ্রহণ ও বাস্তবায়ন অসম্ভব।

আরেকটি ঘটনা দেখুন। গণস্বাস্থ্য এক মাসের মধ্যে কভিড-১৯ নির্ণায়ক গণস্বাস্থ্য র্যাপিড ডট ব্লট (G-Rapid Dot Blot) বাজারজাত করবার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আমদানির অনুমতি পেয়েছে। এই অনুমতি দিতে নানান ছলচাতুরি টালবাহানা করা হয়েছে। দেশের বিজ্ঞানীদের পেছনে দাঁড়ানৈ সরকারের কাজ। গণস্বাস্থ্য চাইছে আগে কিটটি উৎপাদনে জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী তাদের আনতে দেওয়া হোক। কিন্তু এই সামগ্রী ট্যাক্সের কারণে ছাড়তে দেরী হতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। অবিলম্বে উৎপাদন শুরু করা উচিত তার পর তার কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হবে। অসুবিধা নাই। কিন্তু সরকারের অনুমোদন পাওয়া গেলেও পরবর্তী কাজের জন্যে সহযোগিতা পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।

সরকারের এই চরম দায়িত্বহীনতার পরিপ্রেক্ষিতে দেখেছি কেউ কেউ 'জরুরী অবস্থা' ঘোষণার কথা বলছেন। এটা ভুল এবং ভয়ানক গণবিরোধী দাবি। এটা আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নয়। জোর করে জনগণকে ডান্ডা ও বন্দুক হাতে বল প্রয়োগের ভয় দেখিয়ে দুর্যোগ মোকাবিলার চিন্তা কাণ্ডজ্ঞানবিবর্জিত চিন্তা। দরকার এই বিপদ মোকাবিলার জন্য জনগণকে যে কোন ভাবে হোক সম্পৃক্ত করা। এী মুহূর্তে সর্বপ্রথম কাজ হচ্ছে সকল দল, মত পার্থক্য ভুলে গিয়ে ভয়াবহ দুর্যোগ মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্য না হোক নিদেন পক্ষে সমঝোতা গড়ে তোলা। কিম্বা সমঝোতার পরিবেশ গড়ে তোলা।

এই সরকারের পক্ষে কি তা সম্ভব?

চলবে...
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:২৪
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×