বছরদশেক আগেও গেইমে নারী চরিত্রের খুব বেশি উপস্থিতি ছিল বেশ নগণ্য। যা কিছু ছিল, বেশিরভাগই অগুরুত্বপূর্ণ ছোটখাটো পার্শ্ব চরিত্র। কিন্তু নারী চরিত্রকে কেন্দ্র করে ভাল মানের গেইম নির্মাণ শুরু হয় ২০০৪-০৫ সালের দিকে; 'হাফ-লাইফ ২', 'বিয়ন্ড গুড অ্যান্ড এভিল ', 'টম্ব রাইডার' ইত্যাদি গেইমগুলো এক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। অলঙ্কারের পরিবর্তে বন্দুক-পিস্তল নিয়ে বয়ে বেড়ানো এসব নারী চরিত্রের প্রেমে হাবুডুবু খেয়েছেন, এমন গেইমারেরও সংখ্যাও নেহাৎ কম নয়!
লারা ক্রফটঃ গেইমিং বিশ্বের সর্বপ্রথম এবং সবচেয়ে বিখ্যাত নারী চরিত্র সম্ভবত লারা ক্রফট। ১৯৯৬ সালে ‘টম্ব রাইডার’ সিরিজের প্রোটাগনিস্ট হিসেবে তার আগমন ঘটে টবি গার্ডের হাত ধরে। পেশায় ব্রিটিশ প্রত্নতত্ত্ববিদ হলেও লারা অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় ছূটে বেড়ায় পৃথিবীর প্রাচীন, সবচেয়ে রহস্যমণ্ডিত স্থানগুলোতে। আগ্নেয়াস্ত্রে তার দক্ষতা দারুণ। জলে-ডাঙায় সবখানেই সে ছুটে বেড়ায় রহস্যের নেশায়। সর্বশেষ ২০১০ সালের ‘লারা ক্রফট অ্যান্ড দ্য গার্ডিয়ান অফ লাইট’ গেইমটি পর্যন্ত জনপ্রিয়তা বিন্দুমাত্র কমেনি তার। রূপবতী, গুণবতী এবং বুদ্ধিমতী- এ তিনটি বৈশিষ্ট্যই যার মধ্যে আছে, সে স্বাভাবিকভাবেই সবার মন জয় করে নেবে! চলচ্চিত্র, কমিক, ইত্যাদি অন্যান্য ক্ষেত্রেও বিস্তৃত হয়েছে এই চরিত্রটি।
অ্যালিক্স ভ্যান্সঃ প্রোটাগনিস্ট না হয়েও অসংখ্য গেইমারের প্রিয় চরিত্রে পরিণত হওয়া যায়, তার উদাহরণ হাফ-লাইফ ২ সিরিজের নায়িকা অ্যালিক্স ভ্যান্স। অন্যান্য নারী চরিত্রের মতো দুর্র্ধষ নয়, বরং শান্তশিষ্ট ও ধীশক্তিসম্পন্ন। কিন্তু প্রয়োজনের সময় ঠিক শত্রুর খুলি ফুটো করে দিতে পারে। সে একই সাথে একজন দক্ষ হ্যাকার ও ইঞ্জিনিয়ারও বটে! চরিত্রটির মধ্যে তেমন কোন অতিনাটকীয়তা কিংবা অলৌকিক ক্ষমতা নেই, এবং এই বাস্তবধর্মী চিত্রায়নই চরিত্রটিকে অন্যদের তুলনায় ব্যতিক্রম করে তুলেছে। সমস্ত গেইমজুড়ে প্রোটাগনিস্ট গর্ডন ফ্রীম্যানের মূল সহযোগী হিসেবে কাজ করে ভ্যান্স, এবং অ্যালিয়েনদের বিরূদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
জেইডঃ ২০০৩ সালের সাড়াজাগানো গেইম ‘বিয়ন্ড গুড অ্যান্ড এভিল’ এর প্রোটাগনিস্ট জেইড। পেশায় সে একজন ফটো সাংবাদিক। দুষ্ট অ্যালিয়েনদের হাত থেকে শিশুদের বাঁচাতে এবং সব অন্যায়ের বিরূদ্ধে রুখে সে সদা তৎপর। ইউবিসফট ডেভেলপার মাইকেল অ্যানসেল চরিত্রটি তৈরি করেন তাঁর স্ত্রীর আদলে। মাথা থেকে পা পর্যন্ত সবুজ অঙ্গসজ্জা জেইডকে দিয়েছে স্বকীয় ব্যক্তিত্ব। সাহস এবং বুদ্ধির জোরে সে টপকে যায় প্রতিটি বাধা। তার পরনের সবুজ জামা, সবুজ অলঙ্কার রীতিমতো আইকনে পরিণত হয়েছে।
অ্যালমা ওয়েইডঃ প্রোটাগনিস্ট কিংবা নায়িকা হিসেবে বেশিরভাগ গেইমে মূল নারী চরিত্রগুলো স্থান পেলেও অ্যালমা ওয়েইড এদিক দিয়ে বেশ ব্যতিক্রম। ‘ফিয়ার’ সিরিজের কেন্দ্রীয় চরিত্র এবং মূল ভিলেন হিসেবে সে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছে। অন্যান্য গেইমের নারী চরিত্রের মতো সুন্দরী কোন তরুণী নয় সে; বরং অলৌকিক ক্ষমতাধর এক নারী। শিশুকাল থেকেই তাকে নিয়ে চলে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা, তার অস্বাভবিক ক্ষমতাকে কাজে লাগানোর লোভে তাকে আটকে রাখা হয় দিনের পর দিন। কিন্তু একসময় অ্যালমা তার পরিপূর্ণ ক্ষমতা নিয়ে বের হয়ে আসে বন্দীশালা থেকে, শুরু হয় প্রতিশোধের পালা। গেইমজুড়ে চরিত্রটির আধ্যাত্মিক উপস্থিতি ভিন্ন ধরনের স্বাদ দেবে আপনাকে। শুধু ভয়ই নয়, অ্যালমার জন্যে বেশ দুঃখও বোধ করবেন। অনেকেই এ চরিত্রটিকে দেখে থাকেন নারীর প্রতিবাদী সত্ত্বারূপে।
ফেইথ কনার্সঃ ২০০৮ সালে ইলেকট্রনিক আর্টসের ‘মিরর’স এজ’ এর প্রোটাগনিস্ট রূপে আবির্ভূত হয়ে বেশ সাড়া জাগিয়েছে এ চরিত্রটি। দড়াবাজিতে অসাধারণ দক্ষ ফেইথ হচ্ছে ‘রানার’ নামক নেটওয়ার্কের সদস্য। রানারদের মূল কাজ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পৌঁছে দেয়া যতোদ্রুত সম্ভব। প্রচন্ড গতিতে দৌড়ানো, উঁচু পাঁচিল টপকানো, বাড়িঘরের ছাদ দিয়ে চলাফেরা করা তাই ফেইথের কাছে ছেলেখেলার মতো। কোন অস্ত্র নেই, অতিরিক্ত ক্ষমতা নেই, তার পা দুটোই যেন তার সব অস্ত্র।রাজনীতি করার অপরাধে ছোটবেলাতেই হত্যা করা হয় তার বাবা-মা কে। এরপর থেকেই ফেইথ রীতিমতো বাস্তুহারা, রানারের কাজ করেই তার জীবন কাটে। বুদ্ধিমত্তা, কৌশল ও দড়াবাজির দিক দিয়ে এ চরিত্রটির তুলনা নেই বললেই চলে।
মোনা স্যাক্সঃ ‘ম্যাক্স পেইন’ সিরিজের তুমুল জনপ্রিয় নায়িকা মোনা স্যাক্সের নির্মাতা স্যাম লেক। ২০০১ সালে সিরিজের প্রথম গেইমের মধ্য দিয়ে তার আগমন ঘটে। মূল প্রোটাগনিস্ট না হলেও ‘ম্যাক্স পেইন ২’ গেইমটির কিছু অংশ খেলতে হয় মোনার চরিত্রে। এছাড়া সিরিজের নায়ক ম্যাক্সের প্রেমিকা হিসেবে তার রহস্যময় উপস্থিতি গেইমজুড়ে। মোনা একজন ভাড়াটে খুনী হলেও তার প্রবল ব্যক্তিত্ব আপনাকে নাড়া দিতে বাধ্য। নিষ্ঠুরতা ও ভালোবাসা- দুটি বৈশিষ্ট্যই তার চরিত্রে উজ্জ্বল। রহস্যময় ও আকর্ষণীয় এ চরিত্রটি ম্যাক্স পেইন সিরিজের অন্যতম আকর্ষণ বলে মনে করা হয়।
প্রিন্সেস জেলডাঃ কাল্পনিক হায়রুল রাজ্যের রূপসী রাজকন্যা জেলডাকে সবসময় কিডন্যাপ করে নিয়ে যায় গ্যাননডর্ফ। আর তাকে বাঁচাতে বরাবরই উপস্থিত লিঙ্ক। তত্ত্বটা এমন সাধারণ হলেও ১৯৮৬ সাল থেকে এভাবেই বারবার কিডন্যাপ হচ্ছে এবং ফিরে আসছে প্রিন্সেস জেলডা ‘দ্য লিজেন্ড অফ জেলডা’ গেইম সিরিজটিতে। কিন্তু তবুও তার জনপ্রিয়তা এতোটুকু কমেনি। জেলডার সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য গেইমের কাহিনী জুড়ে তার নিষ্পাপ, সরল উপস্থিতি। কিন্তু তবুও শয়তানকে ফাঁকি মেরে পালিয়ে আসার মতো সরু বুদ্ধিরও তার অভাব নেই। রূপকথার এ রাজন্যার রূপেরও তুলনা নেই, যার ফলে জেলডার প্রেমে মজেছেন এ পর্যন্ত অনেক গেইমারই।
এছাড়াও এযাবৎকালের অন্যান্য বিখ্যাত নারী গেইম চরিত্রের মধ্যে ক্ল্যার রেডফিল্ড(রেসিডেন্ট এভিল), অ্যাডা ওঙ(রেসিডেন্ট এভিল), এলেনা ফিশার(আনচার্টেড), প্রিন্সেস পিচ(মারিও), ভায়োলেট সামার(ভেলভেট অ্যাসাসিন), চুন-লি(স্ট্রিট ফাইটার), গ্ল্যাডস(পোর্টাল ২) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্যএছাড়াও এযাবৎকালের অন্যান্য বিখ্যাত নারী গেইম চরিত্রের মধ্যে ক্ল্যার রেডফিল্ড(রেসিডেন্ট এভিল), অ্যাডা ওঙ(রেসিডেন্ট এভিল), এলেনা ফিশার(আনচার্টেড), প্রিন্সেস পিচ(মারিও), ভায়োলেট সামার(ভেলভেট অ্যাসাসিন), চুন-লি(স্ট্রিট ফাইটার), গ্ল্যাডস(পোর্টাল ২) ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
পূর্বে কালের কণ্ঠে প্রকাশিত