somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মা আমার মা বাবা আমার বাবা

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের নোংরা রাজনীতির ততধিক নোংরা, কদর্য চেহারা দেখে আজ যারা শ্বাসরুদ্ধ, বাকরুদ্ধ, দিশেহারা তারা সবাই আসুন আমাদের বাড়িতে; আমার বাবা-মায়ের সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেই।

ইদানিং গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার আকর্ষণ একটাই, তাহলো বাবা-মায়ের দেখা পাওয়া, তাদের সাধ্যমত সেবা করা, তাদের মধুর সঙ্গ পাওয়া, দোয়া চাওয়া ইত্যাদি। অন্যান্য বারের মত গত ঈদ-উল-আযহাতেও আমরা প্রায় সকল ভাই-বোন বাড়িতে গিয়েছিলাম। আমরা বড় ফ্যামিলি-র মানুষ। এখন আবার সবার সংসার হয়েছে, এদের আবার সন্তানাদিও আছে। বাড়িতে পর্যাপ্ত রুম থাকায় স্বাভাবিক অবস্থায় বাড়ির সকল সদস্য যদি একযোগে বাড়িতে আসে তাহলে শোয়া নিয়ে খুব একটা সমস্যায় পরতে হয় না। তবে কিছুদিন যাবত বাড়ির সংস্কার কাজ চলছে। তাই রাতে শোয়া নিয়ে সমস্যা দেখা দিল। অন্যান্য ভাইয়েরা তাদের ফ্যামিলিসহ এসেছে। সংগত কারণেই ওরা আলাদা রুমে জায়গা পেল। আমাকে এবার বিশেষ কারণবশত একাই বাড়ি যেতে হয়েছিল।

যাইহোক, সন্ধ্যার পর বড় ভাবী ও ছোট বোন এসে আমাকে বলল, “তোমার যে বড় ঘরে শুতে হয়; আব্বা-র সাথে...?” কথাটা বলে ওরা একটু ভয়েই ছিল আমি কি প্রত্যুত্তর করি তা নিয়ে। ভয়ের একটা কারণ হলো আজ অবধি আমাদের কোন ভাইয়ের আব্বার সাথে শোয়ার সৌভাগ্য হয়নি, কিংবা প্রয়োজন পড়েনি। তাই ওদের ভয়টা স্বাভাবিকই ছিল। কিন্তু আমি একটু মুচকি হাসি দিয়ে ওদের যখন বললাম “ঠিক আছে” তখন মনে হলো ওরা যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। কিন্তু আমার এই মুচকি হাসির অর্থ ওরা কেউ জানল না। এর মানে জানি শুধু আমি এবং জানে আমার অন্তর্যামী। এখানে একটা তথ্য যোগ করি। আমার আব্বা-মা আলাদা ঘরে থাকেন। আমাদের এলাকার ভাষায় এটাকে ‘বড় ঘর’ বলে। ওখানে দুইটা রুম আছে। কিছুদিন আগেও বড় রুমে আব্বা-মা একত্রে থাকতেন। বাকীটা আম্মা দিনের বেলায় আরাম করতেন। তবে মায়ের অসুস্থতার কারণে তিনি এখন স্থায়ীভাবে ঐ ছোট রুমেই থাকেন। আব্বা বড় রুমে একাই থাকেন। তাই আমার জন্য আব্বার কাছে ব্যবস্থা করতে কোন সমস্যা হয়নি।

সন্ধ্যার পরে সবাই ড্রয়িং রুমে বসে গেলাম। অনেকদিন পর আমরা প্রায় সকল ভাইবোন একসাথ হয়েছি। কাজেই অল্প সময়ের মধ্যেই আড্ডা জমে গেল। এটা সেটা খাওয়া-দাওয়া হচ্ছে আর মজার আড্ডা চলছে। ভালই চলছিল। মাঝখানে রাতের খাবার খাওয়ার সময়টুকু বাদে একটানা চলল আমার মজার আড্ডা। ঘড়ির কাটা যখন এগারটার ঘরে গিয়ে ঠেকল তখন আমাদের আড্ডার পরিসমাপ্তি ঘটল। একে একে সবাই যার যার শোবার ঘরের দিকে পা বাড়াল। আমিও আস্তে আস্তে বড় ঘড়ের দিকে এগিয়ে গেলাম। আব্বা-আম্মা ইতিমধ্যে শুয়ে পড়েছেন। আমি শোব বলে দরজা খোলাই রেখেছেন। খুব সাবধানে, নিঃশব্দে আব্বার পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লাম।

পাশে শুয়েই বুঝলাম তিনি ঘুমিয়ে গেছেন। রাত এগারটার উপরে বাজে। গ্রামে এখন গভীর রাত। ঘুমের মধ্যেই তার বুকের উঠানাম লক্ষ্য করলাম। গরমকাল বিধায় আব্বা অভ্যাসবশতঃ খালি গায়েই শুয়েছেন। তার শ্বাস-প্রশ্বাসের মৃদু শব্দ কানে আসছিল। বাইরে জ্যোত্স্নালোকিত রাত। বেডের পাশের খোলা জানালা দিয়ে জ্যোত্স্নার আলো এসে আব্বার গায়ে মুখে পড়ছে। ঘরে আলো–আধার মিশ্রিত এক অদ্ভুত সুন্দর ও মায়াময় পরিবেশ বিরাজ করছিল। আমি পরিপূর্ণ দৃষ্টি নিয়ে আব্বাকে দেখতে লাগলাম। আমার আব্বাকে দেখতে কি অদ্ভুত সুন্দর লাগছে!! ঘুমের মধ্যে শশ্রুমন্ডিত আমার ৭৮ বছর বয়স্ক আব্বাকে একেবারে শিশুর মত লাগছে! কার লেখায় যেন পড়েছিলাম “ভালবাসার মুখগুলোকে চন্দ্রালোকিত রাতে দেখতে হয়, যখন তার প্রিয় মানুষকে দেখে অর্ধেক দৃস্টি আর অর্ধেক কল্পনা দিয়ে”। এটা অবশ্য আমার কোন কল্পনা নয়। আমার মনে হলো আমার পাশে এক দেবদূত শুয়ে আছেন। আমি আব্বার দিকে আরো কাত হলাম। আমি আব্বার মাথা, কপাল, চক্ষুদ্বয়, মুখমন্ডল, গন্ডদেশ তথা তার গোটা দেহ খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলাম। আর ভাবতে লাগলাম ‘এই আমার আব্বা, এই আমার কা’বা। আমি তারই সন্তান!!’ মনের কোণে তখন সিনেমার ফ্ল্যাশব্যাকের মত ভেসে উঠছিল বিগত সময়ের মধুর স্মৃতিগুলো। কত মধুর, কত সুন্দর, কত আনন্দের ছিল সেই দিনগুলি!!!

আমার আব্বা জীবনের বেশীরভাগ সময়েই চাকুরীর সুবাদে দেশের বিভিন্ন স্থানে কাটিয়েছেন। আমাদের শৈশব, কৈশোর কেটেছে আব্বার প্রতীক্ষায় থেকে। আমার আম্মাই ছিলেন আমাদের সকল আবদার, স্নেহ, মায়া-মমতা, ভালবাসা ও সব কিছুর খেয়াল করার একমাত্র মানুষ। সাথে ছিল আমার বড় ভাই-বোনেরা। আব্বা মাঝে মাঝে আসতেন। তখন মোবাইল ছিল না। তাই কবে আসবেন সেটা চিঠি দিয়ে আগেই জানাতেন। আসার দিন কত অধীর আগ্রহে আব্বার জন্য অপেক্ষা করতাম!! বাড়ি থেকে সামান্য দূরে আমাদের উপজেলা পরিষদে গিয়ে ছোট ভাইসহ অপেক্ষা করতাম। এক এক করে রিকশা আরোহীরা আসে আর চলে যায়। কিন্তু আমার আব্বা আর আসে না! আমরা অপেক্ষার প্রহর গুণতে থাকি। প্রতিটা মিনিট অনন্তকালের মত মনে হয়। হঠাৎ আলোর ঝলকানি! আমাদের প্রতিক্ষীত দুইজোড়া চোখে ধরা পড়ে অতিপ্রিয় একটি মুখ!! দূর থেকে তার সুন্দর চেহারা দেখামাত্র সীমাহীন আনন্দে মনটা নেচে উঠে। আব্বার হাত থেকে ব্যাগ নিয়ে একসাথে বাড়ির পানে ছুটা। আহা! কি আনন্দ! আমার বাবা কোনদিন আমাদের গায়ে হাত চুলতেন না। কিন্তু এখনও উনার সামনে উচ্চস্বরে কথা বলার চিন্তাও করি না। মনে পড়ে সকালে উঠে আব্বার হাতে বাধ্যতামূলক চিরতার রস খাওয়া, ছুটির দিনে তার পাশে বসে কাপড়-চোপড় ধৌত করা, এমন কি আব্বা ছোটবেলায় আমাদের মাথার চুল কেটে দেওয়া, একসাথে নামাজ পড়া, খেলাধুলা বেশী করতাম বলে আব্বার তুমুল গাল খাওয়া, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আব্বার অসাধারণ হাতের লেখা চিঠি পড়া, বাড়ি থেকে বিদায় নেয়ার সময় আব্বার ছলছল চোখ ইত্যাদি।

কি সুন্দর ছিল সেইসব দিনগুলি! সোনায় মোড়ানো একেকটা দিন যেন!

আরো কত কত মধুর স্মৃতি একে একে মনের কোণে হানা দিতে লাগল। আমার দুই চোখে তখন অশ্রুর বন্যা। চোখের পানিগুলো গড়িয়ে গড়িয়ে বালিশে পরছিল। কিন্তু আমি চোখ মুছলাম না। কান্নার গমকে আমার গলা আটকে আসছে। কিন্তু শব্দ করতে পারছি না, পাছে আব্বা টের পেয়ে যান। আর আমাদের কাছ থেকে মাত্র ১৫-১৬ ফুট দুরত্বে শুয়ে আছেন আমার আরেক কা’বা, আমার মা, আমার আম্মা, আমার জন্মদাত্রী। তিনি অসুস্থ্। তার ঘুমের সমস্য হয় ইদানিং। কিছুক্ষণ পর পর তিনি ‘আল্লাহ, আল্লাহ’ বলে উঠছিলেন। আর মাঝে মাঝে তাঁর পাজরভাঙ্গা দীর্ঘশ্বাস শুনে আমার কলিজা ফালা ফালা হয়ে যাচ্ছিল। আমি একবার আব্বার মুখের দিকে তাকাই, আরেকবার মায়ের নিঃশ্বাসের শব্দ শোনার জন্য কান খাড়া রাখি। মনে হচ্ছিল আমার দুই হাতে চন্দ্র-সূর্য। কোনটা দেখি কোনটা রাখি। ভাললাগায়, ভালবাসায় ও কস্টের সংমিশ্রণে আমার সমস্ত দেহ-মনে এক অচিন্তনীয়, অবর্ণনীয় অনুভূতি কাজ করছিল। আমি সত্যিই বুঝাতে পারব না কি হচ্ছিল আমার মনে। আমি একেবারে দিশেহারা হয়ে গেলাম। একবার মনে হলো আব্বা ও মাকে জড়িয়ে ধরে চিত্কার করে কাঁদি। কিন্তু পারলাম না। নিঃশব্দ কান্নায় আমার আত্বা ছটফট করছিল। মনে হচ্ছিল এক্ষুনি তা ফেটে ভবলীলা সাঙ্গ হবে। আমার তখন চিত্কার করে আরো বলতে ইচ্ছে করছিল, ‘ওহে জগতবাসী একদা কোহিনূর হীরা ময়ুর সিংহাসনের শোভা বর্ধন করত। তোমরা এটাকে নিজেদের গৌরব বলে মনে করতে। তোমরা দেখ আমার কাছে তার চেয়ে মহামূল্যবান দুই দুইটা কোহিনূর হীরা আছে। না না, এগুলো আমি আমার শোভা বর্ধন করার জন্য নয়। আমি আমার মনের মণিকোঠায়, আমার আত্বার গভীরে অতি সযতনে এদের ঠাঁই দিয়েছি। এদের চকমকিতে আমার হৃদয় সব সময় আলোকিত থাকে, এরা আমার অক্সিজেন, এরা আমার আত্বার শান্তি। সর্বভূক মাটি যখন আমার এই নশ্বর দেহ খেয়ে ফেলবে তখনও এগুলো আমার আত্বার সাথে সাথে আকাশ পরিভ্রমন করবে। এদের ধ্বংস নেই। এদের ক্ষয় নেই’। ... কিন্তু আমি কিছুই বলতে পারলাম না। অঝোর ধারায় শুধু কাঁদতেই লাগলাম। কেন যে এত কান্না আসছে!!

ঘড়ির কাঁটা টিক টিক করে এগিয়ে চলছে। রাত গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে। চারদিকে সুনসান নিরবতা। পুরো বাড়ি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। আমার পাশে আব্বা ও একটু দূরে মা ঘুমাচ্ছেন। কিন্তু আমার চোখে ঘুম নেই। অবশ্য ঘুমানোর চিন্তাও মাথায় নেই। আসলে আমি তখন আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি এমন একটা সুযোগ করে দেবার জন্য। আমার বহু দিনের ইচ্ছে ছিল আব্বা মায়ের পাশে শোব। কিন্তু সংগত কারণেই এটা সম্ভবপর হয়ে উঠেনি। আজ যখন সুযোগ পেয়েছি এটার সর্বোত্তম সদ্ব্যবহারই হবে আমার মূল উদ্দেশ্য।

আমার মনে নানান চিন্তা এসে ভর করছে। আমাদের বড় করার জন্য আব্বা-মা কত কস্ট যে করেছেন!! কত চাপ, কত বাঁধা, কত সীমাবদ্ধতা, কত হিংসা-বিদ্বেষপূর্ণ ছিল তখনকার পরিবেশ। কোন কিছুই তাদেরকে দায়িত্ব পালনে বিরত রাখতে পারেনি। আমরা কেউই মনে করতে পারব না তারা আমাদের কোন আবদারটি অপূর্ণ রেখেছেন; অথচ খুব বেশী টাকা তাদের ছিল না!!। কত কস্টসহিষ্ণু, কত ধৈর্যশীল, কত পরহেজগার ও দায়িত্ববান তারা ছিলেন!!! আমরা এতগুলো সদস্য কিন্তু তবু কোনদিন কোন ব্যাপারে ভয় পাননি তারা। যখনই কোন সমস্যা দেখা দিত তখনই আমাদের অভয় দিতেন ‘আল্লাহ ভরসা’। কিন্তু আজ নিজের সংসারে প্রবেশ করে বুঝি পারিবারিক ঝামেলা মিটাতে কত ঝক্কি পোহাতে হয়। কিন্তু সব সমস্যা, প্রতিবন্ধকতা তারা নিজের মত করে পার করেছেন। আমাদের গায়ে এতটুকু আচড় লাগতে দেননি। তাদের সবচেয়ে অসাধারণ গুণ ছিল এই যে, তারা খুবই গণতন্ত্রমনা ছিলেন। ছোটখাটো ব্যাপার নিয়েও তারা আমার মতামত শুনতেন। এটা এখনো আমাকে ভীষণ অবাক করে। জীবনযুদ্ধে অসমসাহসী দুই যোদ্ধা আমার আব্বা-মা, The Real Fighter.

আজ তারা বয়োবৃদ্ধ। বয়সের ভারে আজ তারা ন্যুব্জ। এখন দুজনেই নিয়মিত ঔষধ সেবন করেন। আব্বার শরীর তুলনামূলকভাবে একটু ভাল হলেও আম্মা বেশ কঠিন সময় পার করছেন। বেশ কয়েকটা বড় ব্যাধি তার শরীরে বাসা বেঁধেছে। সারাজীবনের কঠিন সংগ্রামের ফল আমার আম্মার দেহে এখন ভর করেছে। এখন তাদের একটু আনন্দে থাকার কথা। মানসিক দিক থেকে হয়ত ভাল আছেন, কিন্তু শরীর আর টানছে না। প্রকৃতির অমোঘ নিয়মে একদিন হয়ত আমাদের চিরদুঃখী করে তারা অনন্তকালের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবেন। বাবা-মা ছাড়া বেঁচে থাক!!! এটা কিভাবে সম্ভব????? এদের স্নেহ, আদর, দোয়া ও আশির্বাদ ছাড়া কিভাবে বাঁচবো। আর কটা দিন পাব তাদের???? এই চিন্তা আসার সাথে সাথে চোখটা আবার ভিজে উঠল। আমি আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানালাম,

রাব্বির হাম-হুমা কামা রাব্বা ইয়ানি ছাগিরা।"
"হে আল্লাহ, আমার পিতা-মাতাকে ভাল রেখ, শান্তিতে আদরে সুখে রেখ, যেভাবে তারা আমাদেরকে রেখেছের আমাদের শৈশবে; কিংবা তারচেও বেশি।"

হে মহান প্রভু, পরমদাতা ও দয়ালু আল্লাহ, আমার বাবা-মায়ের নেক হায়াত দারাজ করো। তাদেরকে সুস্থ, সহি সালামতে, ঈমান-আমলের সাথে বাঁচিয়ে রাখ। করুনাময় ও দয়াময় হে আল্লাহ, আমার আব্বা-মাকে ভাল রাখ। তুমি আমার বাবা-মাকে কোন কস্ট দিও না। তাদের সকল গোনাহখাতা মাফ করে দাও। তাদের সকল শারীরিক ও মানসিক কস্ট দূর করে দাও। তাদেরকে সকল বালা-মুসিবত থেকে হেফাযত রেখো, তাদেরকে ঈমানী মৃত্যু দিও। হে পরম দয়ালু আল্লাহ, আমরা তাদের অধম সন্তান। আমরা তাদের প্রাপ্য সম্মান দিতে পারছি না। আমাদের তুমি মাফ করো। হে আল্লাহ! তুমি আমার মা-বাবার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের তাওফীক দান করো। আমিন।

.. জার্নির ধকল ও মানসিক অবসাদে কখন যে তন্দ্রামত এসেছে টের পাইনি। তন্দ্রা কেটে গেলে শুনতে পেলাম মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে ফযরের আজানের ধ্বনি। আব্বা পাশ থেকে আস্তে করে উঠে গেলেন। আমি জেগে রইলাম। আমার আম্মাও জেগে গেছেন। কিছুক্ষণ পর আব্বা অযু করে এসে আমাকে ডাকলেন। আমি উঠে গেলাম। অযু করে এসে নামাযে দাঁড়িয়ে গেলাম। বাপ-বেটা একসাথে নামায পড়লাম। আব্বার সুমধুর তেলাওয়াত মনকে আচ্ছন্ন করে ফেলল। যদিও বয়সের দরুন উনার গলায় আগের সেই সুর, সেই উচ্চারণ, সেই ঝঙ্কার নেই। নামায শেষে আব্বা জায়নামাযেই বসে থাকলেন। আম্মাও ঘরেই থাকলেন। আমার আর শুতে ইচ্ছে করছিল না।

বাইরে তখন ভাল করে ভোরের আলো ফোটেনি। উঠোনে এসে দেখলাম এখনও পুরো বাড়ি ঘুমিয়ে। বাড়ি থেকে বের হয়ে হাঁটাহাঁটির উদ্দেশ্যে বের হলাম। আমার স্বভাব হলো, রাতে যদি কমপক্ষে ৪-৫ ঘন্টা না ঘুমাই তাহলে মাথা ঝিম মেরে থাকে। আজ ঘন্টাখানেক ঘুমিয়েছি কি না সন্দেহ। কিন্তু আমার একটুও খারাপ লাগছে না। বরং দেহ-মনে এক অজানা আনন্দ ও অনাবিল শান্তি এসে ভর করছিল। এক অবিস্মরণীয় রাতের অবিস্মরণীয় ঘটনা এক অন্তর্যামী ছাড়া আর কেউ টের পেল না। সমস্ত কিছুর জন্য মহান আল্লাহতায়ালার কাছে চিরকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি-আলহামদুলিল্লাহ।

আমি প্রফুল্লচিত্তে সামনের দিকে হাঁটতে লাগলাম...।

(লেখাটা পড়ে নিজেকে খুব ছোট লাগছে। মা বাবার প্রতি মনের সত্যিকারের অনুভূতিগুলোকে পুরোপুরি ফুটিয়ে তোলার মত লেখনি শক্তি মহান আল্লাহতায়ালা আমাকে দেননি। আপনারা বাবা-মায়ের জন্য দোয়া করবেন)
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:০৭
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×