জীবে দয়া করে যে জন সে জন সেবিছে ঈশ্বর।
রিয়াদুল হক
আজ সারাদিন বৃষ্টি হচ্ছে, বাতাসের তোরজোড় এতো বেশী যে নারিকেল গাছগুলো সোজা হয়ে দাড়িয়ে থাকার সাহস পাচ্ছেনা ।ধনুকের মতো বাঁকা হয়ে যাচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে ।গ্রামের চারিদিকে পানিতে থই থই। এই সময়েই বুম্বার বিভিন্ন ফন্দি মাথায় আসে দুষ্টুমির । গ্রামের মাস্টার মশাই একজন,ক্ষেতের আইল(ক্ষেতের পাশ দিয়ে হাঁটাচলার রাস্তা) দিয়ে সাইকেল চালিয়ে স্কুলে আসেন প্রত্যহ সকালে । সারাদিন দুষ্টু ছেলেদের দল মাস্টার সাহেবের চলাফেরার দিকে কড়া নজরদারি।যেদিক দিয়ে মাস্টার সাহেব যাবেন কারফিউ পড়ার মতো রাস্তা একেবারে খালি হয়ে যায়। বৃষ্টির তোড়ে বাঁধ মাড়িয়ে ধানক্ষেতে হাটু পানি চলে এসেছে ।আইল দিয়ে সাইকেল চালানোর অবস্থা না থাকলেও নিজের মনের খোঁড়াক যোগাতে মাস্টার সাহেব স্কুলে এসে বসে থাকেন, বাড়িতে মন বসে না। বৃষ্টি হলেই বুম্বার মাথায় মাছ ধরার ফন্দি আসে। খুব সকালে উঠে ধান ক্ষেতে চলে যায়। গত কইদিন আগে ফাঁদ পেতে রেখেছিল বৃষ্টি আসবে বলে। ধান ক্ষেতের একপাশে বেশ খানিকটা গর্ত করে রাখা ছিল , এখন পানিয়ে গড়িয়ে এসে সেই গর্তে জমা হবে, সাথে আসবে ছোট বাইলা, ট্যাংরা ও মলা। ব্যস! এগুলো ঝুড়িতে জমিয়ে বাড়িতে দৌড়।
পুকুরের পানি উপচে যেন সিঁড়িগুলোকেও ডুবিয়ে দেয়, তখন ঘাঁট বাঁধানো পুকুর পাড়ের সিঁড়িগুলো স্বচ্ছ পানিতে দৃশ্যমান এবং সেই সুযোগ নিতে হয়তো সারা পুকুর মাড়িয়ে খানিকটা বিশ্রামে নিমজ্জিত মাছ গুলোর অভয় আশ্রম হতো সেটা, পুকুরের পানি ছিল কাঁচের মতো স্বচ্ছ হউয়ায় এপার ওপার দেখা যায়। এই সুযোগ হাত ছাড়া করে না বুম্বা ঝাপটে ধরে মাছ গুলো। কখনও বা পাটের খড়িতে সূতা বেঁধে ,কেঁচো বা চিংড়িকে দিয়ে মাছদের আকর্ষণ করার চেষ্টা বা পুকুরে ডুব দিয়ে একেবারে তলে গিয়ে ,কাদামাটির গর্তে হাত দিয়ে দেয় শিং মাছের আশায়, সাপও যে থাকতে পারে তা বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই বুম্বার।
গ্রামের পাশ দিয়ে একটা খাল ছোট সরুপথে সাপের মতো আঁকাবাঁকা হয়ে গিয়ে মিশেছে উত্তাল পদ্মার সাথে।ওপাশে ঘনজঙ্গল দিনের আলোতেই কেউ ওদিকটায় পদচিহ্ন দেয় না। বুম্বার দলের আগ্রহ সেই জংলা জায়গা ঘিরে। মায়ের কাছে গুপ্তধনের গল্প শুনে শুনে, অবচেতন মনে নিজেকে বুঝিয়ে নিয়েছে যে ওখানে গুপ্তধন আছে। খালপাড়ে একটা বিশাল বট গাছের শাখা নুইয়ে অলস দুপুরে যেন বিশ্রাম করছে বহুবছর।সারাবছর গাছটার কোন বিশেষত্ব না থাকলেও বিভিন্ন মেলা,পার্বণে এই গাছের কদর বেড়ে যায় অনেক গুন। ওই গাছটাকে তখন লালা নীল সূতা বেঁধে দর্শনীয় একটা বস্তুতে পরিনত করে সবাই।
ওই গাছের শাঁখায় বসে বসে যত ফন্দি বুম্বা ওর তার দলের। একবার পড়ন্ত দুপুরে একটা মেছো বাঘকে খালের ওপারে গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিতে দেখে বুম্বার মাথায় দুষ্টবুদ্ধি আসে, এপারে বটগাছের একদম আগায় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসে। বুম্বার দল কোথা থেকে যেন একটা চিকন বাঁশের কঞ্চি যোগাড় করেছে,
ব্যস আর কি!ঘুমে আচ্ছন্ন মেছোবাঘকে যেইনা দিয়েছে গুঁতো ওমনি লাফ দিয়ে উঠে , নিজেকে সামলাতে না পেরে সোজা গিয়ে পড়লো খালের উপর ,খাল থেকে উঠেই একটা ঝাড়া দিয়ে ভোঁ দৌড় একেবারে গহীন জঙ্গলে।
আরেকবার এক ঘুমন্ত কুকুরের লেজে তারাবাতি পেছিয়ে দিয়েছিলো, অপারগ কুকুর সেই তারাবাতিকে লেজে বেঁধে সারা গ্রাম দৌড়ে বেড়িয়েছে, আর পিছন পিছন দৌড়িয়েছে বুম্বার দল ।শেষে যখন তারাবাতিটা নিভে গেলো, কুকুরটা ভেবেছিল যাক বাবা! বাঁচা গেলো, লেজ গুটিয়ে যেই না আরাম করে বসেছে, সাথে সাথে গগনবিদারি চিৎকার দিয়ে উঠলো কুকুরটা।কারন তারাবাতিটার আগায় তখনও আগুনের শিখাটা পুরোপুরি নিভেনি , তাই পশ্চাৎদেশে নরম চামড়া আগুনের শিখার সাথে ঘর্ষণে আসতেই কুকুরটা যেন পাগলপ্রায় হয়ে উঠলো।
মোটামুটি গ্রামের সব পশুপাখির আবাসস্থলের ঠিকানা বুম্বা ও তার দলের চেনা । আমার মনে হয় তারাও বুম্বাদের চিনতো, তো যখনি কোন শিয়াল , বনবিড়াল চোখে পড়েছে , বুম্বাদের দেখে উল্টা দৌড় দিয়েছে। কারন সবাইকে ছোট বড় শিক্ষা দিয়েছে এই দুষ্ট ছেলের দল। গ্রামের লোকজনদের ক্ষেত বাঁচাতে যখন চলতো “হেজা” শিকারের পালা। তখন সেই দলে বুম্বা ও তার দল শরিক হতো। হেজা অর্থ শজারু ।গায়ে শত শত কাঁটা দেয়া খুব ভয়ঙ্কর এক প্রানি।ক্ষেতে দলীয় ভাবে প্রবেশ করে আলু , টমেটো শসা, সব খেয়ে সাবাড় করে দিত ক্ষেতের পর ক্ষেত ।
তখন এই দুর্যোগ সময়ে ডাক পড়তো বুম্বা ওর তার দলের। বুম্বার বাবা মা কখনও চাইতো না বুম্বা এ সমস্ত কাজে যাক , কিন্তু কে শুনে কার কথা। শজারু গুলো গ্রামের একেবারে খুব গহীনে বড় মাটির সুড়ঙ্গে বাস করতো উচু মাটির ঢিবি বানিয়ে। এরা মাটির ভিতরে খোদাই করে ওই ঢিবির ভিতরে অনেক গুলো শাখাপ্রশাখা রাস্তা তৈরি করতো এবং অনেক গুলো গর্ত বানাতো। কখন কোন গর্তে থাকবে এটা শুধু শজারুর দলই জানতো। গ্রামের কৃষকরাও কম যায়না। একটা গর্ত খুঁড়ে সেখানে লাঠি ঢুকিয়ে ভিতরে একটা জোরে নাড়া দিত । তখন মাটির ভিতরে সব গর্তগুলোতে একটা গমগম শব্দের তরঙ্গ তৈরি হলে সেটা শজারুর দল টের পেয়ে যেতো যেকোনো একটা মুখ দিয়ে পালাবার চেষ্টা করতো।শজারু এমনিতে নরম প্রানি কিন্তু এ যদি সম্মুখ বিপদের গন্ধ পায় তখন গায়ের কাঁটাগুলো শক্ত হয়ে যায়, নিজেকে সেই বিপদ থেকে রক্ষা করতে তাই হাত দিয়ে ধরা বিপদজনক।
গর্তের একমুখে এক দল দাঁড়াত আরেক দল দাঁড়াত আরেক মুখে। হাতে থাকতো বিশাল একটা ডাণ্ডা, যা দিয়ে শজারুর মাথায় সজোরে আঘাত করা হতো , এতে করে শজারু অক্কা পেতো। তখন গ্রামবাসীরা খুশিতে আত্মহারা থাকতো কারন কিছুদিন এই শজারু থেকে নিস্তার পাওয়া যেত। বয়সে ছোট হলেও বুম্বার দল সেই শজারু শিকারিদের মধ্যে অনেক সুনাম অর্জন করলো।বুম্বার বাবা মা বুম্বার দুষ্টুমি কোন ভাবেই বন্ধ করতে পারছিলনা ।
এতো দুরন্ত ছেলে যে কোন বিপদে পড়লে মায়ের বুক খালি হউয়ার ভয় মাকে সব সবসময় তাড়িত করতো। সারাদিন বুম্বা তার দল গ্রামে ঘুরে ফিরে বেড়াতো বর্ষায় ব্যাঙগুলো ডাকতো, আর ব্যাঙের পিছনে লাগতো বুম্বা, একবার কি করলো ছোট একটা ব্যাঙ পানিতে এপাশ ওপাশ করছে , ব্যাঙটাকে ধরে গায়ে একটা মোটা সূতা দিয়ে পাথর বেঁধে দিল। ব্যাস ব্যাঙ তো লাফিয়ে ডাঙ্গায় উঠতে চায় , কিন্তু পাথরের ভারে ব্যাঙ উঠতে পারেনা।
কিন্তু ব্যাঙের চেষ্টার অন্ত নেই। সবাই মিলে হাসতে হাসতে চলে গেলো।বুম্বার মাস্টার সাহেব সেই পথ দিয়েই যাচ্ছিলো , বুম্বার এই কাণ্ড কারখানা দেখে সাংঘাতিক বিরক্ত হলেন উনি বুম্বার বাড়ির পথে হাঁটা ধরলেন। বুম্বার বাবা ওই গ্রামে বহুবছর মুদির দোকানদারি করে, আগে বিদেশে ছিল, কিছু পয়সা কামিয়ে গ্রামে এসে একটা ভিটেতে একটা ঘর তুলেছে।মাস্টার সাহেবের আগমন দেখে তো খুব অবাক বুম্বার বাবা ।
‘ওই রতন কেমন আসো’, ?মাস্টার সাহেব জিজ্ঞেস করে।
‘এইত মাস্টার সাব ভাল’ , আপনার শরীর টা ভাল নি?
‘এইতো যাইতেসে, কইদিন ঠিক যায় জানিনা’,।
‘এই বৃষ্টির দিনে ঘরে থাকলেই তো পারতেন। আমারে ডাকলে তো আমি চইলা আইতাম’।
‘ঘরেই তো থাকতে চাই, কিন্তু আশেপাশের অবস্থা দেখলে উদগ্রীব হয়ে যাই’। আক্ষেপের সুর বাজে মাস্টারের গলায়।
‘তোমার ছাওলটারে স্কুলে পাঠাও না ঠিক মতো’?
‘না, যাই তো, ঠিক মতই যাই’ ! বুম্বার বাবা খুব আত্মবিশ্বাস নিয়ে বলে।
‘স্কুলে গেলেও পড়ায় তো মন নাই।সারাদিন দুষ্ট পোলাপানটির লগে ফাতরামি কইরা বেড়ায়। আর আজকে যা করলো তা দেইখা তো আমার অনেক কষ্ট হইল’।মাস্টার সাহেব মাথা নিচু হয়ে যায়।কারন তিনি টার কোন ছাত্রের ব্যর্থতাকে নিজের ব্যর্থতা মনে করেন।
‘কি করসে মাস্টার সাব’?বুম্বার বাবা জিজ্ঞেস করে,
‘কি আর একটা ব্যাঙরে পাথর বাইন্ধা পানিতে ফালাইয়া দিসে’। ব্যাঙটা কষ্ট পাইল না,’ মাস্টার সাহেব রাগত স্বরে বলে উঠে,
‘ও আচ্ছা আপনি ব্যাঙের কথা কন , আমি তো ভাবছিলাম কার না কার মাথা ফাটাইসে’ ?
‘শুন বুম্বার বাপ এই কিন্তু শুরু ছোট ছোট অপরাধ থেকেই কিন্তু সাহস তৈরি হয় বড় অপরাধের, তোমাদের সন্তান যদিও আমার কিছু বলার নাই’।
‘এইডা আপনে ঠিক কইসেন ,আমিই তো ওরে পাই না , যখন ঘরে ফিরি তখনও ঘুমায়, যখন বাইর হই, তহনও ঘুমায়, হের মারে কন’। ‘এই হুনছো তোমার পোলার কাম কারবার’। বুম্বার মা চুপ করে শুনে কি আর বলবে,মা বাবার কপালে চিন্তার বলি রেখা দেখা দেয়।
‘কি করন যায় মাস্টার সাব একটা বুদ্ধি দেন’!বুম্বার মা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।
‘তোমরা যদি চাও আমি একটা চেষ্টা চালাইতে পারি। কান ডা আগাও ,ফিসফিসিয়ে কি জানি বলে মাস্টার সাব’। ‘ ও যখন ঘুমায় রাতে আমারে একটু খবর দিও, আমি আমুনে’ এই বলে মাস্টার চলে যায়। রাতের বেলা বুম্বা ঘুমালে মাস্টার সাহেব রে খবর দেয় বুম্বার বাবা মা ।মাস্টার চুপিচুপি আসে,বুম্বা তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।পরের দিন সকালে বুম্বার ঘুম ভাঙে খুব ভোরে । ঘুম থেকে উঠতেই খেয়াল করে ওর কোমর বাধা একটা শক্ত দড়ি দিয়ে, সাথে একটা পাথর । বুম্বা তো উঠতেও পারেনা । কোন মতে উঠে কিন্তু হাটতে বেগ পেতে হয় । সেদিন সকালে আর কোথাও যেতে পারেনা। চিৎকার করে ওর মা কে ঘুম থেকে উঠায়। নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বুম্বার মা বুম্বার দিকে তাকিয়ে থাকে । বুম্বা জিজ্ঞেস করে।
‘মা আমার কোমরে কে পাথর বাধলো’ ?
‘জানিনা বাবা রাতে তো আমরাও ঘুমিয়ে আসিলাম’।
‘আমি তো হাটতে গেলে কষ্ট পাইতাসি, একটু খুইলা দিবা’।।মা এগিয়ে যায়, চেষ্টা করে দড়ি খুলে দেয়ার
‘পারিনা রে বাবা ,খাড়া তোর বাজান আইলে খুইলা দিবনে’বুম্বার মা কোনোভাবে বুঝ দেয়ার চেষ্টা করে ।
‘বাজান আইব হেই রাতে আমি এতক্ষন এই পাথর লইয়া ঘুরুম’?বুম্বা কষ্টে এপাশ ওপাশ করছে।
‘কিন্তু আমি তো খুলতে পারতাসিনা বাবা’। বুম্বা কিছুই বুঝতে পারেনা । সে দড়িতে বাধা সেই পাথর নিয়ে ঘরে হাটা চলা শুরু করে, বাথরুমে যায়, কোনোমতে প্রকৃতির ডাক সেরে বাইরে আসে। বুম্বার মা ছেলের কষ্ট দেখে খানিকটা নরম হয়ে মাস্টার সাহেবকে খবর দেয়।মাস্টার সাহেব আসলে বুম্বা গোঙ্গানি দিয়ে কেঁদে উঠে বলে,‘স্যার আমারে বাঁচান, এইডা খুলে দেন, আমি এই পাথর নিয়া চলতে পারতাসিনা’
মাস্টার মশাই বুম্বা কে হাতে ধরে হাঁটা দেয় সেই পুকুর পাড়ে , যেখানে বুম্বা সেই ব্যাঙটাকে ছেড়ে এসেছিল পাথর বেঁধে। পাথর ভারি হওয়ায় খানিকটা পথ হেঁটে যেতেও বুম্বার কষ্ট হয়। গ্রামের এবড়ো থেবড়ো পথ পেড়িয়ে পুকুর পাড়ে এসে হাজির হয়।মাস্টার সাহেব এই ব্যাঙটার দিকে ইশারা দিয়ে দেখায়, ব্যাঙটাকে দেখে ঢুকড়ে কেঁদে উঠে বুম্বা। ব্যাঙটা ঘাঁটে উঠার চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে প্রানবায়ু ছেড়ে দিয়েছে, মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়ে জল খানিকটা লাল হয়ে গেছে।
‘দেখ তোমার একটা সাধারন দুষ্টামি তে ব্যাঙটা প্রান হারাল। যখন সে জীবন নিয়ে কষ্ট করছিলো , তখন তোমরা মজা করছিলে। এখন তোমার অবস্থা আর ওর অবস্থা একই , কেমন লাগছে তোমার’?মাস্টার বলে
বুম্বার চোখের বাঁধ উপেক্ষা করে জল উপচে পড়তে চায় , কিছুই বলার শক্তি নেই। দুই হাত জোড় করে মাস্টার সাহেবের পায়ের কাছে নুইয়ে পড়ে, ‘আমাকে মাফ কইরা দেন স্যার। আমি কোনোদিন কাউকে এমনে কষ্ট দিমুনা’।
“জিবে দয়া করে যেইজন সেজন সেবিছে ঈশ্বর”
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:১১