somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কবিরাই পারেন জোৎস্নাজলে স্নান করতে

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সকাল ৭:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কবিরাই পারেন জ্যোৎস্নাজলে স্নান করতে

আকিদুল ইসলাম : সিডনি থেকে

বিপ্লবী কবি মোহন রায়হানকে বহিষ্কার করা হয়েছে জাতীয় কবিতা পরিষদ থেকে। আমাদের সময়ে প্রকাশিত কবির লেখা থেকে জানতে পারি, আমার একটি লেখার সূত্র ধরে মঞ্চায়িত হয়েছে ‘বহিষ্কার’ নামের এই নাটকটি। একজন কবিকে যখন লেখার অপরাধে সংগঠন থেকে বের করে দেয়া হয় তখন নানা প্রশ্নের জন্ম দেয়। নানা আশঙ্কা গুলিবিদ্ধ পাখির মতো ডানা ঝাপটায় মনের উঠোনে শুয়ে। যেহেতু এ ঘটনার উৎসধারা আমার একটি লেখা, স্বাভাবিক কারণেই কিছু বলার তাগিদ এড়িয়ে যেতে পারছি না।

মোহন রায়হানের সঙ্গে আমার পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা ব্যাংককে। আশির দশকে। ব্যাংকক তখন আমার দ্বিতীয় বসতি। প্রিয় জন্মভূমি তখন সামরিক স্বৈরাচারের বুটের শব্দে কাঁপছে। কাঁদছে। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সূচনাপর্বে আমরা ছিলাম একই ক্যাম্পাসের বাসিন্দা। একই মিছিলে দাঁড়িয়ে স্লোগানে কার্পেট ওঠা রাজপথ মুখরিত করলেও তার সঙ্গে আমার পরিচয় ছিল না। টকটকে লাল ক্যাপের বিপ্লবী কবির লেখা প্রতিটি পঙক্তিমালা তখন আমাদের মিছিলের প্রিয় স্লোগান । সচিবালয়ের দেয়াল ভেঙে ‘প্রতিবাদে জ্বলে ওঠা সাহসী মানুষ’ মোহন রায়হান তখন প্রিয় যোদ্ধা।

ব্যাংককে তিনি ছিলেন ‘স্বেচ্ছা নির্বাসিত কবি’। স্বৈরাচার এরশাদের বন্দিশালায় ২১ দিন নির্মম নিষ্ঠুর নির্যাতনের পর ছাড়া পেয়ে পারিবারিক চাপে চলে যান ব্যাংকক। ঢাকায় ডা. মিলন নিহত হলে তাকে আর আটকে রাখতে পারেনি চাওফিয়া নদীবিধৌত বিলাসী নগরী ব্যাংকক। একদিনও দেরি না করে সাহসী কবি উড়ে যান আন্দোলনমুখর জনপদে। আবার মিছিলে দাঁড়ান। কণ্ঠে আবার স্লোগান তোলেন ‘দূর হ দুঃশাসন’।

যখন দেশের অনেক খ্যাতিমান কবি স্বৈরাচারের ডাকে সাড়া দিয়ে গায়ে সুগন্ধি মেখে সারিবেঁধে বঙ্গভবনে যাচ্ছিলেন আধুনিক কবিতার জানাজায় অংশ নিতে তখন রক্তলাল ক্যাপ মাথায় কবি মোহন রায়হান কবিদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংগঠিত করছিলেন। জাতীয় কবিতা পরিষদের ব্যানারে কবিরাও জনতার আন্দোলনের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গিয়েছিলেন। মুহূর্তে তাদের বলপেন হয়ে গিয়েছিল আগ্নেয়াস্ত্র। কবিতা হয়েছিল শহীদের জানাজার শোকগাঁথা। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় এমন একজন কবি যদি তার সহযোদ্ধাকে সেই পতিত স্বৈরাচারের সঙ্গে আলিঙ্গন করতে দেখেন, তার নিকৃষ্ট কবিতার প্রশংসা করতে শোনেন তখন প্রতিবাদে জ্বলে ওঠা কি তার অপরাধ? স্বৈরাচার পতনের পর অন্যদের মতো আদর্শচ্যুত না হওয়াই কি মোহন রায়হানের অন্যায়?

একটি ঘটনা বলি, প্রাসঙ্গিক। এবারের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন মোহন রায়হান। নির্বাচনের আগে কোনো এক গভীর রাতে ঘরের ফোন বেজে উঠলে বুঝতে পারি, দেশের ডাক। প্রবাসে কেউ কারো ঘরে রাত ১০টার পর ফোন করে না। ফোনের অন্য প্রান্তে মোহন রায়হানের কণ্ঠস্বর। উদ্বিগ্ন। বললেন, নির্বাচন করতে চাই। মহাজোট না চারদলীয় জোট? কোনটা আমার জন্য ভালো, বলো তো। তিনি বলেন, দেশের রাজনৈতিক অবস্থা যা তাতে স্বতন্ত্রভাবে দাঁড়ালে জয়ের সম্ভাবনা কম। আমি প্রশান্ত মহাসাগরের পাড় থেকে বঙ্গোপসাগর পাড়ের কবিকে বলি, মহাজোটে আছে স্বৈরাচার এরশাদ আর চারদলীয় জোটে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত। এ দুটির কোনোটিই আমাদের জোট নয়, মোহন ভাই। তিনি বললেন, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করব। শুধু প্রিয়জনদের সঙ্গে আমার ভাবনাটা মিলিয়ে নিচ্ছি। নির্বাচনে পরাজিত হয়েছিলেন কবি, কিন্তু আদর্শে পরাজিত হননি। কোনো জোটের বিজয় সম্ভাবনার মোহই তাকে টানতে পারেনি।

মোহন রায়হান দৈনিক আমাদের সময়ে লিখেছেন, ‘মানুষেরা বদমাশ হলে ইতিহাস বড় কষ্ট পায়’। স্বীকার করি। কিন্তু কবিরা যখন রাজনৈতিক পাণ্ডা হয় তখন ইতিহাস শুধু কষ্টই পায় না, তার বুকে রক্তপাত হয়। সে কাঁদে। আমাদের সাহসী জনপদে একসময় কবিরা পূর্ণিমায় দাঁড়াতে ভয় পেতেন। নিজের ছায়া দেখে কেঁপে উঠতেন আততায়ী ভেবে। মোহন রায়হানের লেখা পড়ে বুঝতে পারি, প্রিয় সেই জনপদে কবিরাই এখন আততায়ী হয়ে উঠছেন।

প্রিয় মোহন ভাই, নদীকে সবাই নদী বলেই জানে। শুধু কবিরাই জানেন, নদী সেও যেন ঠিক নদী নয়, আভাস ইঙ্গিতে কিছু জল। জ্যোৎøায় গিয়ে দাঁড়াতে পারেন সবাই। কিন্তু জ্যোৎস্নাজলে স্নান করতে পারেন শুধু কবিরাই।

ইমেইল: [email protected]
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×