somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঈদের আগের দিন চুল কাটানোর বিড়ম্বনা আর পুলাপাইনগো সৌন্দর্য চেতনার বিকাশ B-) :D :| /:) :((

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঈদের সাত দিন আগ থিকা বাসায় ডেইলি কথা শুনি মাথার লম্বা লম্বা চুল নিয়া। মা বউ থিকা শুরু কইরা শাশুড়ীও চান্স পাইলেই ইনডাইরেক্টলি বুঝায়া দেয় বিয়ার আগে এইরাম চুল রাখলে তুমার হাতে মাইয়াই গছাইতাম না ;) এর লগে নতুন যন্ত্রনা হিসাবে যুক্ত হইলো আমার দশ মাস বয়সী বিচ্ছু পিচ্চি যার জীবনের বর্তমান লক্ষ ও উদ্দেশ্যই হইলো বাপের চশমা টান দিয়া ফালায় দিয়া ঘাড়ে উইঠা লম্বা চুল টানাটানি করা। এতো বলি আরে বেটা তোর মা - দাদীর মাথায় এতো চুল তাদের চুল টাইনা যন্ত্রনা দে, না ছেলের টার্গেট হইলো বাপের কান্ধে উইঠা মাথার চুল টানা /:) অবশেষে ঠিক করলাম লম্বা চুল আর না,পোলায় টাইনা সব তুইলা ফেলনের আগেই এই ঈদেই চুল বিসর্জন দিতে হইবে :((

আইলসামি কর্তে কর্তে আইসা গেলো ঈদের আগের দিন। বাসার সবাই জুতিষি হইয়া কইলো আইজকা কনফার্ম চান্দ উঠবো তুই চুল কাটায় আয়। তাই সাত সকাল মানে এগারোটার দিকে বাইর হইয়া পর্লাম চুল কাটাইতে :) বাসার সামনে চিপা দুকান, দুকানের সামনে লাইন, দুকানদের কয় আরো আটজনের সিরিয়াল... গেলাম নুরজাহান রোডে সেইখানেও নাপিতগো দুকানের সামনে বেন্চি আর বেন্চি ভর্তি লুকজন /:) রিকসা নিয়া গেলাম সোবহানবাগ, টুকটাক কাম আছিলো শেষ কইরা ভাবলাম হেরোবিক্সে ঢুঁ মারি। হেরোবিক্সের সামনে অনেক পোলাপাইন, ভাবলাম ঈদের আগে আড্ডা মারতাছে... ভিতরে ঢুইকা দেখি বেবাকতে মাথার উপ্রে ইয়া বড় পাতিল উল্টায়া বইসা আছে :-* অবাকিত হইতে হইতে জিগাইলাম ভাই দেরী হইবো? দুকানদারে আমার দিকে এমনে তাকাইলো যানি এলিয়েন দেখতাছে, কয় ইফতারের আগে আগে আইসেন :| কি আর করা বাইর হইয়া বুঝতে পারলাম পোলাপাইন আড্ডা মারে না, চুল কাটানির লিগা বইসা আছে... নিচে নাইমা দেখি আরো দুই গ্রুপ আড্ডা মার্তাছে যার বিষয় বস্তু হইলো আইজকার সারা দিনটাই যাইবো চুল কাটানি থিকা ফেসিয়াল করতে :|

ঘুইরা হাঁটা দিলাম নন্দনের দিকে... চুল যেদিন লম্বা রাখা শুরু করি সেই দিন থিকা লাইফে হালকা বিলাসীতা আনতে পারসোনা জেন্টস এ যাওয়া হয় মাঝে মাঝে, ভাবলাম বিসর্জনটাও বিলাসী হোক... গেলাম লিফটের সামনে, দেখি এইখানেও লিফটের সামনে জটলা, সবাই বউ বাচ্চা নিয়া সৌন্দর্য বাড়াইতে আইছে... তবু চেনা যায়গা সাহস কইরা পাঁচতালায় ঢুইকা গেলাম। ঢুইকাই আবার টাসকি, বেবাক লোকে টুলে পা তুইলা ঘুমাইতাছে আর একদল ইয়া বড় বড় পাথর নিয়া পা ডলাডলি কর্তাছে :D ইহারে নাকি কয় পেডিকিউর, বেপক গা ঘিনঘিন মূলক একটা রূপচর্চা। যেই বেটারে দিয়া চুল কাটাই সে আমারে দেইখা কয় বস ঘন্টা দুই পরে আসেন। দোকানের সামনে একগাদা আরএফএল এর চেয়ার বসানো লিফ্ট পর্যন্ত, মাইনসে কেউ দাঁড়ায় কেউ বইসা :( বেফক নিরানন্দ নিয়া নামতে নামতে ভাবলাম যাক চান্স না পাইয়া ভালোই হইছে কিছু টেকা পয়সা সেইভ হইলো....

হালকা পাতলা শপিং শেষ করতে আবার গেলাম সোবহান বাগের দিকে, হটাৎ দেখি একখান সেলুনের সাইনবোর্ড, মেনজ এন্টারপ্রাইজ না কি জানি নাম ভাবলাম এইটার সামনে লুকজনের ভীড় নাই, এইটাতেই ঢুইকা পড়ি... ভেতরে দেখি পোলাপাইনে ভরা, ক্যাশবাক্সে এক লোকরে জিগাইলাম ভাই দেরী হইবো, হেয় কয় আমি কি জানি আমি নিজেই এক ঘন্টা ওয়েট কর্তাছি চুল কাটানির লিগা /:) হেড নাপিতরে খুঁইজা পাইলাম হেয় তার এন সিরিজের ফুন নিয়া ব্যস্ত, কাস্টমাররে সিডিউল দিতাছে। আমারে কয় বসেন। আমিও বেন্চের এক চিপা পাইয়া বইসা গেলাম, আর কিছু না হোক গরমে এসিতে বইসা একটু ঠান্ডা তো হওয়া যাইবো.... তো বইসা বইসা মাইনসের কাম কাজ দেখতে লাগলাম :)

হিসাব করলাম চেয়ার আছে পাঁচটা যার একটা প্রি শিডিউলড দের জন্য বুকড তার মানে বাকী আছে চাইরটা। আমার চাইর পাশে পাঁচজন সো আর এক রাউন্ড মানে আধা ঘন্টার মাঝেই মুনে হয় চান্স পামু চুল কাটানির... কিন্তু ঐযে কয় না মাইনসে ভাবে এক আর হয় আরেক... পরথম যে চেয়ার টার্গের করছিলাম হের চুল কাটানি শেষ হইতে দেইখাই আনন্দিত হইতে গিয়া আফসুস খাইলাম। চুল কাটানির পরে হেয় নাকি হেয়ার ট্রিটমেন্ট দিবো। সাদা কি এক চিরুনী দিয়া এক মেশিনে লাইন দিয়া কিছুক্ষন আঁচড়া আঁচড়ি কইরা পরে মাথায় গরম ভাঁপ দেওনের মেশিন বসায় দিলো :( পাশে রাখা ক্যাটালগ উল্টায়া পাইলাম এইডারে কয় ওজন ট্রিটমেনট আর বুঝলাম খালি চুল আঁচড়াইতেই ছয়শ টেকা লাগে :-* বুঝলাম এই চেয়ার টার্গেট কইরা লাভ হইতো না, টার্গেট চেন্জ। এইখানে বইসাই একজনে নাপিতরে কইলো ভাই মাফিয়া লুক আইনা দেন। ইন্ডিয়ান চ্যানেলে এক হেয়ার জেলের অ্যাডে দেখছিলাম মাফিয়া লুক, তো বুঝলাম এইটারও আশা শেষ :( যাউকগা আরো দুইটা চেয়ার বাকি...

এর মাঝে এক আট দশ বছর বয়সের এক পিচ্চি রে নিয়া দুই তরুনীর আগমন উদ্দেশ্য পিচ্চির হেয়ার কাট। হেড নাপিতে আইসা কয় আরো দুই ঘন্টা লাগবো, হেরা কয় বলেন কি দেড় ঘন্টা হেরোবিক্সে অপেক্ষা করে এইখানে এলাম, আচ্ছা ওকে আপনাদের ক্যাটালগ দেন... ইয়া বড় একটা ছবিওলা বই বাইর হইলো, পিচ্চি মারাত্মক এক ইসটাইল সিলেক্ট কর্লো দেইখা নাপিতে কয় এইটা কাট দিতে টেকা বেশী লাগবো। হেরা কয় এইটা সমস্যা না আর দুই ঘন্টা পরের বুকিং দিয়া গেলো... এর মাঝে পাশে বসা মুরব্বী এক লোক হটাৎ উইঠা আমার তিন নাম্বার টার্গেট চেয়ারের সামনে গেলো। আমি ভাবলাম মুরব্বি আর আমার টার্গেট কি কমন পর্লো নাকি :( দেখি না চেয়ারে বসা আমার সমান পুলাডা বাপ হইলো এই মুরব্বী :) আহারে সেই কবে ছুডুবেলায় আব্বার লগে চুল কাটাইতে যাইতাম সেই স্মৃতি মনে পইড়া গেলো.... বাপে নাপিতরে কয় এইভাবে কাটেন ঐভাবে কাটেন... এই পরথম দেখলাম বাপে পোলার চুলে ইয়ো কাট কাটাইয়া বিশাল আনন্দ পাইতাছে ( আমগো বাপে ছুডু কালে একখান কাট কাটাইয়াই খুশী হইতো সেইটা হইলো বাটি ছাঁট :( ) মনে মনে খুশী হইলাম মুরব্বী ক্যান্ডিডেট লিস্টে নাই দেইখা :) কিন্তু আফসোস বাপে কয় -- বাবু তুমি কিন্তু শেভ করায় নিবে, এইরকম গুন্ডা লুক ভালো না :D পোলায় পাল্টা বাপরে কয় -- শেভ তো করাবোই তবে আব্বু তুমি চলে যাও, আমি ভাবছি একটু স্যান্ডাল মেখে ফেসিয়ালটাও করিয়ে ফেলবো, মুন দেখা গেলে তো য়্যার টাইম পাওয়া যাবে না :| :| :|

হায় হায় কয় কি এই পোলায় অহন শেভ আর ফেসিয়াল করাইবো, এর মানে এই টার্গেটও বাদ :( এর মাঝে হটাৎ দেখি মাফিয়া লুক শেষ, নেক্সট মাইনসের ডাক পর্ছে... উইঠা গেলাম শেষ ভরসা চেয়ারের কাছে, নাপিতে একটা আশ্বাস মূলক হাসি দিলো। ভাবলাম এইটার কাটিং শেষের পথে... হটাৎ ফোন ---- হ্যালো আম্মু ... নাহ আমার তো দেরী হবে... আরে মাত্র হেয়ার কাট শেষ করলাম, শেভ আর ফেসিয়াল বাকী আছে না... নাহ তুমি গাড়ি নিয়ে যাও আমি পরে চলে আসবো.... /:) হতাশ চেহারায় ফেরত আসলাম নিজের জায়গায়.... তারপর আরও আধা ঘন্টার অপেক্ষা, মাফিয়া ওলার পরের জনের চেয়ার খালি হইলো, আমি গিয়া বইসা পর্লাম, কইলাম যা খুশি কাটেন তয় মাথার চুল কমায়া দেন... নাপিতে কইলো শেভ কইরা দিমু, আমি কইলাম আমার গালে বেলেড আমি নিজেই চালাইতে জানি, তুমারে চুল কাটাইতে কইছি হেইডা করো... অবশেষে মিনিট বিশেক পরে চুল কাটা শেষ, সব মিলায় একশো টেকা গচ্চা আর আমার প্রত্যাবর্তন....

চুলে ভাঁপ দেওন তখন মাত্র শেষ আর ফেসিয়াল ওলাদের ফেসিয়াল কার্য তখনও চলছে, পিচ্চি পুলায় আবার আইছে চুল কাটাইতে শিডিউল মতো আর আমার পরে আরও চার জনের লাইন লাইগা গেছে......

সব মিলাইয়া বুঝা গেলো রূপচর্চার দৌড়ে আমরা পুলারাও পিছাইয়া নাই ;)

সবাইকে বাসী ঈদ মোবারক.......................................................
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:৫৯
৭১টি মন্তব্য ৬৮টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×