somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

রঙ্গীন ঘুড়ি
উড়তে ভালো লাগে,মেঘের সাথে লুকোচুরি ভাল লাগে। ভাল লাগে এক আকাশ তারা কে সাক্ষী রেখে নাবিকের মত পথ খুঁজে নিতে। চোখ বন্ধ করে একটা নীল সমুদ্র আকঁতে ভাল লাগে। আর ভাল লাগে "তুমি" তে হারিয়ে যেতে ।

"তোর জন্য ভালবাসা"

০৯ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



(১)

"অনিন্দ্যের সবচেয়ে কাছের বন্ধু অংকিতা । পুরো ভার্সিটি লাইফ এই পাগলির সাথেই কেটেছে। কখনো টিএসসির মাঠে,কখনো চারুকলা বিল্ডিং এ । এদিক থেকে ওদিক সব খানে । একদিন কোথাও না ঘুরলে মনে হত কি জানি করা হয় নি তাদের আজ।

টুকটাক লেখালেখির অভ্যাস আছে অনিন্দ্যের। কয়েকটা পত্রিকা অফিসে যাতায়াত ভাল। খাতির যত্ন ও পায় ভাল। অংকিতা ছিল তার প্রুফ রিডার পার্টনার। এই মেয়েকে সন্তুষ্ট করা অনেকটা শীতের দিন বরফ ঠান্ডা পানিতে গোসল করার মত। একশো একটা ভুল খুঁজে বের করে। অনিন্দ্যের যে ভাল্লাগে না ব্যাপারটা তা কিন্তু না । মুখে পার্ট মারলেও মনে মনে পছন্দ করে সে।

গল্পের এটুকু শুনে মনে হতেই পারে সেই একই নতুন কৌটায় পুরনো কাসুন্দি। ব্যাপারটা আসলে তেমন না। দু'জনই একটা পয়েন্টে এসে মিলে যায়। সেটা হলো মধ্যবিত্ত পরিবারের টানাপোড়েন।

অনিন্দ্যের বাবা সামান্য ছা-পোষা চাকরিজীবি আর অংকিতার বাবা ছোট খাট ব্যবসায়ী । কোন বাবাই কিন্তু দারিদ্যতা কি তা বুঝতে দেয় নি।

ভার্সিটির ফাইনাল সেমিস্টার এর ফি জমা দিতে যখন দু'জনের ই জান যায় যায় অবস্থা তখন গল্পে কিছুটা নতুন মোড় আসে।
অনিন্দ্যের লেখা কোন এক কবিতা অনেক বড় এক লেখকের নজরে আসে। বই মেলায় ওই স্বনামধন্য লেখকের সাথে লেখার অফারও আসে। বিনিময়ে অনেক টাকা। বাট শুরুতে পাবলিশারদের কিছু টাকা দিতে হবে । শুরু হয় অনিন্দ্যের দিন বদলের দিন।

বাসায় বলে নি কিছুই। এই মূহুর্তে ২৫ হাজার টাকা ম্যানেজ করা চাট্টি খানি কথা না । বিশেষ করে তার মত বেকার বাবার ঘাড়ের বোঝার মত মানুষের। ব্যাপারটা অংকিতা জানে। বন্ধুর দিশেহারা অবস্থা তার সহ্য হয় না। মেয়েটা নিতান্তই শখ করে নিজের বিয়ের জন্য কিছু টাকা জমিয়ে ছিল আর সাথে কিছু টিউশনির টাকা। অনিন্দ্যের হাতে দিতে চাইলে প্রথমে অনিন্দ্য নেয় নি।

কিন্তু একটা শর্তে রাজি হয়ে যায় তারা। শর্ত হলো অনিন্দ্যের বই বের হলে তাকে ফিরিয়ে দিবে সব টাকা সুদে আসলে।
কোনভাবে ম্যানেজ হয় টাকা। সেবারের মত সেমিস্টার ড্রপ পড়ে অনিন্দ্যের।

বইমেলার আর মাস খানেক বাকি। পান্ডুলিপি জমা দিতে হবে খুব তাড়াতাড়ি। অনিন্দ্য আজকাল বের হয় না বাসা থেকে। সারাদিন বসে থাকে রুমে। লেখাটা শেষ করতে হবে। বাবার উপর আর কত?? পড়াশুনা শেষ না। তাই চাকরিও সে পাবে না। এই বইটা ছাপা হলে বাবার উপর চাপ হয়ত একটু হলেও কমবে।

অংকিতার সাথে খুব একটা দেখা হয় না। সপ্তাহে এক,দুইবার ফোনে কথা হয়। কেমন জানি বিরক্ত লাগে তার। একার জগতটা সে উপভোগ করছে খুব। অংকিতা দু'চারদিন বলেছে। কাজ হচ্ছে না দেখে আর বলে নি কিছুই।

এর মধ্যে ভার্সিটির রেজাল্ট পাবলিশ হলো। অংকিতা পাস করে গেল। অনিন্দ্যের সাথের প্রায় সবাই পাস করে বের হয়ে গেল। অংকিতাও বিজি হয়ে গেল বিসিএস এর জন্য। হাতে বেশিদিন সময় নেই।

বইমেলার ঠিক ১০দিন আগে পাবলিশার অনিন্দ্যকে জানালো এইবারের মেলায় তার লেখা ছাপানো যাচ্ছে না। খুব চেষ্টা করেও নাকি ম্যানেজ করা যায় নি । সামনের বার শিউর। অনিন্দ্যের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। যেটার জন্য সে নিজেকে সবকিছু থেকে গুটিয়ে নিল সেটাই না কি সম্ভব না। সেদিন শুধু পা ধরা বাকি রেখেছিল অনিন্দ্য।

যাই হোক, অনিন্দ্য খুব বেশি হীনমন্যতায় ভুগছিল। অংকিতার সাথেও দেখা নেই। কন্টাক্ট নম্বরও বন্ধ। পৃথিবীতে তার এই বই এর কাহিনী শুধু ঐ একজনই জানে। ওকে পেলে ভাল লাগতো। বাসার ঠিকানায় যেয়ে পায় নি । বাসা বদলেছে। নতুন ঠিকানা কেউ জানে না।

অনিন্দ্যের পায়ের নিচ থেকে যেন একটু একটু করে মাটি সরে যাচ্ছে। তল খুঁজে পাচ্ছে না সে। একদিকে বাসায় বাবা মা'র হাজার প্রশ্ন, ভার্সিটির সেমিস্টার ফাইনাল মিস আবারো একদিকে অংকিতা নিরুদ্দেশ। সব মিলিয়ে নিজেকে কেমন জানি পরজীবি পরজীবি লাগছিল তার। সারাদিন রুম বন্ধ করে পরে থাকে। বাসায় তেমন কথাবার্তা নেই। নেই কোন বন্ধুর সাথে কন্টাক্ট। বন্ধ রুমে তার সঙ্গী কেবল আয়নায় অবিকল তার মত দেখতেই একজন।

এভাবেই যাচ্ছিল। একটু একটু করে মানসিক বিপর্যয় গেঁথে যাচ্ছিল। এলোমেলো হয়ে গেল সবকিছু। একদম সব। দেয়াল জুড়ে শুধু কবিতা আর কবিতা লেখা। কাটাকুটি করা। নিজের সাথে কবিতার ছলে কথা বলা।

অনেকদিন পরের কথা। অনিন্দ্য এখন আর বাসায় নেই। তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে মানসিক হাসপাতালে । বিশেষ সেলে প্রতিদিন নিয়ম করে ডাক্তার এসে ঘুমের ওষুধ দিয়ে যায়। কবিতার ছলে ঘুমের ঘোরে কিংবা স্বপ্নে কথা হয় অংকিতার সাথে। "

(২)

-কেমন লাগলো রে কাহিনীটা, শোভা??
-সত্যি বলবো?? তুই যখন বলছিল তখন আমার চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল।
-আচ্ছা একটা কথা বলি অতুল??
-এতো ফরমালিটির কি দরকার?? বলে ফেল....
-ওকে মিস্টার । তো,আপনার এই অংকিতার উপযোগিতা কি?? এমনি নাকি কোন কারণে নিয়ে আসলেন গল্পে?
-তুই বুঝবি না।
-আমি তো ভাবলাম তুই আমাকে ইন্ডিকেট করেছিস।
-করলে প্রবলেম?
-না,তা কেন হবে?? ভবিষ্যতের বিখ্যাত লেখক এর পিএস পদ পাওয়া তো আমার সাত জনমের কপাল। হাহাহা
-আচ্ছা,অংকিতা কি অনিন্দ্য কে ভালবাসতো??
-দেখ,মেয়েরা তাদের শখের জিনিস তাদের জন্যই সেক্রিফাইস করে যাদের খুব আপন ভাবে।
-তবে দু'চার দিন যোগাযোগের পর আর যোগাযোগ রাখে নি কেন?
-হতে পারে চেষ্টা করেছে। অনিন্দ্যের জগতে হয়ত বিরক্তের
কারণ হতে চায় নি।
-তুই কি আমাকে ভালবাসিস??
আচমকা এই প্রশ্নে কিছুটা থথমত খেয়ে যায় শোভা। যদিও সে অনেকদিন ধরে এই দিনটার জন্যই অপেক্ষা করছিল।
-হাত টা ধর।
-আমার প্রশ্নের উত্তর??
-ধরতে বলেছি ধর।
-নে,ধরলাম। এইবার বল।
-না বাসি না ভালো। হইসে??
-সত্যি??
-গাধা... তুই মানুষ হবি না??? হাত ধরার মানে বুঝিস না তো ধরছিস কেন??
-সত্যি??
-হ্যা বাবা। সত্যি । এইবার হাত ছাড়। মানুষ দেখছে।
-আমার গল্পটা স্বার্থক।
-মানে??
-তোকে কিভাবে প্রপোজ করবো বুঝছিলাম না। তাই এত আয়োজন।
-সিরিয়াসলি?? সব তোর প্ল্যান ছিল??
-হাহাহা । কেমন লাগলো??
কাঁধে মাথা রেখে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে মুচকি হাসি অতুলের অনেক অনাগত প্রশ্নের উত্তর মুহূর্তেই দিয়ে দেয়।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:৩৪
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×