somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেঘ পাহাড়ের দেশ - দার্জিলিং এ কয়েকদিন (১ম পর্ব)

০২ রা মে, ২০১৬ রাত ৯:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেক দিন থেকেই প্ল্যান করছি ইন্ডিয়া ঘুরতে যাব...... কিন্তু ভিসা নেয়ার এত ঝামেলা সহ্য করতে মন চাইত না...... অবশেষে গত জানুয়ারী তে ঠিক করে ফেললাম যে এবার যাবই......
প্রথম ধাপঃ ভিসা প্রাপ্তি এবং ভোগান্তি......... :(
এই ভ্রমনের শুরুতে দুই জন কনফার্ম... আমি এবং আমার বউ... কিন্তু প্রথমবার দেশের বাইরে যাচ্ছি তাই আরও সঙ্গী খুঁজলাম... দোস্ত সোহাগ ইউএসএ থেকে এসে এনএসইউ তে জয়েন করেছে... রাজি হয়ে গেল... সৌরভ ওরফে ব্লুটো প্রথমে যাব বলেও পরে না করে দিল... পরে খোকন এসে জয়েন করতে ইচ্ছে পোষণ করল... এবার শুরু হল মহান ই-টোকেন এর ঘটনা... সোহাগ, আমি আর আমার বউ ই- টোকেন পেয়ে ভিসাও পেয়ে গেলাম... কিন্তু খোকন আর ই-টোকেন পায়না...... বেচারা শেষ পর্যন্ত এক মাস চেষ্টার পর ই-টোকেন পেতে সফল হলেও আমাদের দাদা রা কোনও এক রহস্যময় কারনে খোকন কে ভিসা দিল না... বেচারার ৪০০০ টাকার বেশি জলে গেল......

এখন যাওয়ার প্ল্যান ঠিক করা...... আমার সময় হলে বউ এর সময় হয় না... আবার বউ এর সময় যখন হয় তখন আবার সোহাগ এর সময় হয় না...... এভাবে প্রায় এক মাস পার হওয়ার পর আমরা ২৫ এপ্রিল রাত এর শ্যামলী বাস এর শিলিগুড়ি পর্যন্ত তিনটা টিকেট কাটলাম... টিকেট শিলিগুড়ি পর্যন্ত জনপ্রতি ১৫০০ টাকা ...... ২৫ তারিখ সকাল বেলা সোনালি ব্যাংক এ গিয়ে তিন জনের ট্রাভেল ট্যাক্স জন প্রতি ৫০০ টাকা করে পরিশোধ করে আসলাম......( অবশ্য সবাই বর্ডার এ শ্যামলী এর মাধ্যমে এই ট্রাভেল ট্যাক্স ৫০০ টাকা পরিশোধ করতে পারবেন। তাই নো চিন্তা। অবশ্য আমি মনে করি সুযোগ থাকলে আগে থেকে দিয়ে যাওয়াই ভালো।)...... তবে শুরুতে যখন ঝামেলা লেগেছে এত তাড়াতাড়ি কি আর ঝামেলা আমাদের ছাড়ে...... সোহাগ সকাল থেকে তার পাসপোর্ট খুজে পাচ্ছিল না...... এক সময় ভাবছিলাম তাহলে টিকেট ক্যানসেল করে দিয়ে আসি...... অনেক খোঁজার পর বিকাল বেলা স্যার এর পাসপোর্ট খুঁজে পাওয়া যায়...... এদিকে আমরা বাসা থেকে বের হয়ে আরামবাগ এ গিয়ে কোস্টার ধরে কল্যাণপুর যাওয়ার কথা......... কিন্তু সেদিন এমন এ জ্যাম পরছে যে দৌড়াইতে দৌড়াইতে কোনও মতে এক মিনিটের জন্য কোস্টার পাইছিলাম...... অবশেষে রাত ৯ টার সময় কল্যাণপুর থেকে আমাদের বাস শিলিগুড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করল......


শ্যামলী বাস

২৬/০৪/২০১৬
সকাল সাড়ে ৬ টায় আমরা বুড়িমারী এসে পৌঁছাইলাম...... বাস থেকে নামার আগেই বাস এর সুপারভাইজার আমাদের সকলের থেকে পাসপোর্ট , ট্রাভেল ট্যাক্স এর রশিদ এবং বন্দর শুল্ক ৫০ টাকা নিয়ে নেয়...... এরপর আমরা বাস থেকে নেমে প্রথমে কিছুক্ষন বিশ্রাম নেই...... এখানে বর্ডার খুলবে সকাল ৯ টায়... সেই পর্যন্ত বসে থাকা ছাড়া কোনও কাজ নেই...... সকাল ৭ টার দিকে আমরা বুড়ির হোটেল এ সকালের পরোটা সবজি এবং ডিম দিয়ে নাস্তা খেলাম ... তিন জনের মোট বিল আসল ১০৫ টাকা ...... বলে রাখা ভালো বুড়িমারী তে বুড়ির হোটেল এর খাবার এ সব থেকে ভালো.....


বুড়ির হোটেল

এরপর সকাল ৯ টার একটু আগেই আমরা ইমিগ্রেশন এর দিকে রওনা দিলাম...... বলে রাখা ভাল বাস কাঊনটার থেকে ল্যান্ড পোর্ট ২ মিনিটের হাটার রাস্তা...... কিন্তু আপনি রিকশা-ভ্যান এ উঠলেই জন প্রতি ১০ টাকা গুনতে হবে...... ;) ...... আপনার ব্যাগ নিয়ে টেনশন করার কিছু নাই...... শ্যামলীর লোকজন ঠিকঠাক আপনার ব্যাগ বর্ডার এ পৌঁছে দিবে...... বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন এ সিরিয়াল ধরে একজন করে নাম ডাকছে আর নাম, বাবার নাম জিজ্ঞেস করে ছবি তুলে যেতে বলছে...... আমার পালা আসল...... প্রফেশন জিজ্ঞেস করার পর এন ও সি চাইল...... আমি আর আমার বন্ধু আগে থেকেই অফিস থেকে এন ও সি নিয়ে গেছিলাম...... ওইটা দিলাম অরা রেখে দিল...... এজন্য ব্লগ গুলোকে ধন্যবাদ দিতে হয়... কারন আগেই শুনেছিলাম চাকরিজীবী হলে এন ও সি না দিলে ইমিগ্রেশন এ ঝামেলা করে... তাই যারা চাকরি করেন অবশ্যই এন ও সি নিয়ে যাবেন... আর না নিয়ে গেলেও কোনও সমস্যা নাই, সে ক্ষেত্রে আপনাকে ১০০০-১৫০০ টাকা জরিমানা গুনতে হবে...... :P


ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস

ইমিগ্রেশন থেকে এরপর যেতে হল বাংলাদেশ কাস্টমস এ ...... এখানে শ্যামলীর লোকজন আমাদের পাসপোর্ট নিয়ে রেডি ছিল...... যার যার পাসপোর্ট নিয়ে কাস্টমস এ গেলাম...... জিজ্ঞেস করল কেন যাচ্ছি...... সাথে কত ডলার আছে... বাংলা কত টাকা আছে...... সব সত্যি বললাম... আমাদের কাছে ৩৫০ ডলার ছিল আর বাংলা টাকা ছিল ৬০০০ এর মত...... কোনও চেক করল না...... শুধু বলল জনপ্রতি ১০০ টাকা করে দেন...... আমি আর আমার বউ ২০০ টাকা দিয়ে বের হয়ে আসলাম......


বর্ডার এবং নো ম্যানস ল্যান্ড

এইবার ইন্ডিয়ায় প্রবেশ করলাম...... প্রথমে বিএসএফ পাসপোর্ট এ ভিসা চেক করে নিল। এরপর ইন্ডিয়ান কাস্টমস এ সাথের লাগেজ ব্যাগ খুলতে বলল...... খুলে দেখালাম...... তারপর ব্যাগ ওইখানে রেখে চলে গেলাম ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশনে...... এইখানে জিজ্ঞেস করল কোথায় যাচ্ছি...... কোন হোটেল এ উঠবো...... যেহেতু হোটেল বুকিং দিয়ে যাই নাই তাই বললাম...... ওরা যে কোনও হোটেল লিখে দিল...( তবে ফেরার সময় আবার কোন হোটেল এ ছিলাম তার নাম জিজ্ঞেস করে লিখে দিয়েছিল)...


ইন্ডিয়ান ইমিগ্রেশন

এরপর ছবি তুলে ইমিগ্রেশন শেষ করে শ্যামলীর কাঊনটার এ গিয়ে সকল ডলার রুপি তে করে নিলাম...... সাথের বাংলাদেশী টাকা থেকে ৪০০০ টাকা ও রুপিতে করে নিলাম...... আর ঐখান থেকে একটা এয়ারটেল এর সিম কিনলাম...... এখানে শ্যামলীর কাঊনটার এই আপনি সব থেকে ভালো রেট পাবেন...... আমরা প্রতি ডলার এ ৬৬ রুপি করে পেয়েছিলাম...... সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে শ্যামলীর কানেকটিং বাস আসল......এই বাসটার অবস্থা বেশি ভালো না......


শ্যামলীর কানেকটিং বাস

আমরা সবাই বাস এ যার যার সিট এ বসে পরলাম......আর মনে করে ঘড়ির সময় আধা ঘণ্টা পিছিয়ে নিলাম...... চ্যাংরাবান্ধা থেকে শিলিগুড়ি পর্যন্ত রাস্তা আমাদের দেশের রাস্তার মতই...... তবে মাঝে তিস্তা ব্রিজ পার হতে হয়...... এরা তিস্তার পানি যে কি করছে আল্লাহ ই জানে...... ঐখানেও পানি নাই...... সব থেকে ভালো হয় এই সময় টায় ঘুমিয়ে নিলে......

দুপুর সাড়ে ১২ টায় আমরা শিলিগুড়ি পৌঁছে গেলাম...... নেমে রিটার্ন টিকেট কেটে নিলাম জন প্রতি ১২০০ রুপি করে...... তারপর কাঊনটার এর দোতলায় একটা রেস্টুরেন্ট এ দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম...... তিন জনের মোট খরচ হল ৩৬০ রুপি... (তবে খাবার খুব জঘন্য ছিল... ফেরত আসার দিন শ্যামলী বাস কাঊনটার এর রাস্তার উল্টোদিক এ ঢাকা হোটেল নামক একটা রেস্টুরেন্ট এ খাবার খেয়েছিলাম...... খাবার খুব ই ভালো ছিল এবং সস্তাও ছিল......খেয়ে দেখতে পারেন......)


ঢাকা হোটেল

বুড়িমারী বাস থেকে নেমেই পরিচয় হয়েছিল মামুন ভাই আর মুক্তা ভাবির সাথে...... তারাও দার্জিলিং যাচ্ছিল...... এর মধ্যে আবার মামুন ভাই বাস এর আরও চার জন শুভ, রাফি, ইকবাল ভাই আর সজিব ভাই এর সাথেও ভাব করে ফেলেছিল...... ফলে আমরা সব মিলিয়ে ৯ জনের গ্রুপ এ পরিনত হলাম......এবং এর মধ্যে শুভ আর রাফি শেষ পর্যন্ত আমাদের সাথেই ঘুরে একসাথে ঢাকা এসেছিলাম...... (সবাই ঘুরতে যায়, তাই আপনাদের গ্রুপ ছোট হলেও বাস এর অন্যদের সাথে মিশে গ্রুপ করে ফেলার চেষ্টা করবেন, এতে খরচ ও বাঁচে, আবার নতুন মানুষের সাথে মেশাও যায়......)

শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং শেয়ারড জীপ এর ভাড়া ১৩০ রুপি জন প্রতি এবং এক জীপ এ ১০ জন করে নেয়...... সামনে দুইজন , মাঝে চার জন, পিছনে চার জন। আমরা ছিলাম ৯ জন তাই আমরা তিনজন মাঝের চার সিট নিয়ে নিলাম আরাম করে বসার জন্য...... মামুন ভাই আবার কোথা থেকে যেন ১২০০ রুপি তে একটা জীপ ঠিক করে নিয়ে আসল...... এবং আল্লাহ এর অশেষ রহমতে আমরা দুপুর ২ টার দিকে দার্জিলিং এর পথে যাত্রা শুরু করলাম...... (চলবে)।
এখনকার ছবিগুলো নেট থেকে সংগৃহীত...... আমাদের তোলা ছবিগুলো পরের পর্ব থেকে সংযোজন করা হবে.....

মেঘ পাহাড়ের দেশ - দার্জিলিং এ কয়েকদিন (২য় পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১১:৩২
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×