এরপর ডাকা হয় হৃদয়ে ক্ষত বয়ে বেড়ানো মানুষদের। মধ্যরাতে চলে স্মৃতি বিস্মৃতির বিড়বিড় কথোপকথন। রাতে অবাধ্য আবেগে পরাজিত মানুষ গুলো খুব বেশি মুখিয়ে থাকে একটু খানি সুখের আশায়।
,
তারপর চলে বৈঠক, সভাসদে উত্থাপিত হয় হৃদয়ের ক্ষত থেকে মুক্তির চিরন্তন আকুলতা। পরিশেষে আসে সমাধান উর্বর মস্তিষ্কে। সারি করে দাঁড়িয়ে রাখা হয় ক্ষত বয়ে বেড়ানো মানুষদের। উন্মুক্ত বুকে চালিয়ে দেয়া হয় সাড়াশির মত অস্ত্র। মুহুর্তেই শরীর ভেদ করে ঢুকে যায় ঠিক বুকের বাম পাশে। ফিনকি দিয়ে বেরিয়ে আসে কিছু অবাধ্য কালো রক্ত। প্রচন্ড যন্ত্রনায় শরীর কাপিয়ে চিৎকার দেয় মানুষ গুলো। টেনে ছিড়ে বের করে নেয়া হয় হৃদয়। বহুদিনের জমানো কষ্ট গুলো চিৎকার হয়ে বেরিয়ে আসে একবারে। খুব খুব খুব কষ্ট হয় মানুষ গুলোর।
,
বুকের ভেতর টায় একটা বিশাল গর্ত। স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে পাজরের হাড়। কালো কালো রক্ত গুলো ক্ষরণ হতে হতে থেমে গেছে। মানুষ গুলো মুক্তি পেয়ে গেছে। আজকাল আর তাদের কষ্ট হয় না, মধ্যরাতে বেহায়া আবেগ গুলো জল হয়ে ঝরে পড়ে না। ভুলে গেছে সেই কবে ছিল কিছু প্রিয় মুহুর্ত। কিছু মানুষ মরে যায়, হৃদয় ছেড়ার কষ্ট সবাই সহ্য করতে পারে কি না?
পরের পর্বে আবার ডাকা হয় হৃদয়ে ক্ষত বয়ে বেড়ানো আরো একদল মানুষ কে। তাদের কাছে জানতে চাওয়া হয় কি চায় তারা? প্রশ্ন শুনে হতবিহ্ববল হয়ে যায় মানুষ গুলো, তারা আদৌ জানে কি? কি চায় তারা? অবশেষে বৈঠকে উপবিষ্ট মাননীয় গণ একটা সমাধান খুঁজে দেন সকলের জন্য, "মৃত্যুদণ্ড দেয়া হোক সঙ্গীনীর"।
সমাধান শুনে প্রচন্ড ক্ষোভে ফেটে পড়ে অনুভূতিহীন হৃদয়ের মানুষ গুলো। কেন এমন হবে? তারা চায় নি, কখনো চায় না। জনতার প্রচন্ড উত্তাপে কেঁপে উঠে সভাসদ গণ। আরো একদফা অনিশ্চয়তা ভর করে তাদের মনে, তাহলে কি হবে উপায়?
মানুষ গুলো সমগোত্রীয়, তাদের যন্ত্রনা গুলো সমানে সমান। দম আটকে আসার কষ্ট, একফোটা সুখের জন্য দিগ্বিদিক পাগলের মত ছুটে চলার ব্যাথা তারা বুঝতে পারে। সভাসদ গণ শুধু ই পারে বিচার করতে। তারা বিচার চায় না বিচার দেয় না। তারা নিরবে ক্ষয়ে যেতে পারে, পারে কোন রকম প্রাপ্তির আশা ত্যাগ করে সর্বশ্ব দান করে দিতে। মনের কষ্টের কি ওজন করা যায়? মনের পাপের কি সাজা হয়? তাহলে কিভাবে হবে শাস্তি যারা প্রতিনিয়ত ক্ষত বিক্ষত করে দিচ্ছে ভেতর তাদের?
কিছু ই হবে না তাদের। একদল মানুষের বুক থেকে ছিড়ে নেওয়া হয়েছে হৃদয়, তাদের ছিল প্রচন্ড বাঁচার আকুতি, আরেক দল মানুষ কিছু ই চায় না, তারা সমাধান চায় না, তারা উষ্ণতা চায় না, তারা শুধু ই ক্ষয়ে যেতে চায়। তারা স্বেচ্ছায় নিঃশব্দে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে চায় কালের গহ্ববরে। তাদের অভিযোগ থাকে না, তারা শুধু ই একফোঁটা ভুলে থাকতে চায়।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই মে, ২০১৮ রাত ১১:২২