ছবির ছেলেটার নাম Ben Shapiro, আর মেয়েটার Gal Gadot, উভয়েই তাদের নিজ নিজ ফিল্ডে সেরাদের একজন। তারা ইহুদি এবং জায়োনিস্ট, এবং গর্বের সাথে সেটা প্রকাশ করছেন। হামাসের রেজিস্টেন্ট মুভমেন্টের অংশ হিশেবে ইজরায়েলে চালানো অভিযান এবং কিছু যুদ্ধবন্দী গাজায় নিয়ে আসা নিয়ে অন্যান্য অনেকের মতো এই দুজনও অনলাইনে বেশ সরব। গত কয়েকদিন ধরে তাদের সোশ্যাল মিডিয়া টাইমলাইনে করা প্রায় সব পোস্টই ইসলায়েলকে সমর্থন করে এবং হামাসের চৌদ্দপুরুষ উদ্ধার করে ।
তারা ঠিকমতো ধর্মকর্ম করেন না বলেই অনুমেয়, কিন্তু ধর্মীয় বিশ্বাস এবং নিজের আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভোগেন না। ধর্মকে আধুনিকতার পথে বাধা হিশেবে ভাবেন না, নিজের সাম্প্রদায়িক পরিচয় প্রকাশ করতে লজ্জ্বা বা হীনমন্যতায় ভোগেন না । তথাকথিত সেকুলার সাজেন না। দুকলম লেখাপড়া করে আর কয়েক মিলিয়ন ফলোয়ার পেলে নিজেকে অসাম্প্রদায়িকতার মুখোশে ঢাকেন না । অন্তত (এই সেন্সে) তারা মুনাফেক বা হিপোক্রেট না, যা বিশ্বাস করে সেই বিশ্বাসের পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নেন।
তো উদাহরণে শুধু এই দুজনকে আনলাম, আরও অনেক ইহুদি সেলেব্রিটি এবং স্কলার আছেন যারা নিজেদের ধর্মবিশ্বাস প্রকাশ করতে কুন্ঠা বোধ করেন না, এবং প্রয়োজন দেখা দিলে নিজ ধর্মকে ডিফেন্ড করেন, যদিও তারা ধর্ম প্রাকটিস করেন না তবে অস্তিত্বের প্রশ্ন আসলে ঠিকই নিজের ধর্ম বা আইডিয়লজিকে ডিফেন্ড করতে লজ্জ্বা পান না।
শুধু কি ইহুদি! পশ্চিমের অনেক সেলেব্রিটি আছেন যারা নিজেদের খ্রিস্টান পরিচয় (যেমন টন হ্যানকস, মার্ক ওয়ালবার্গ প্রমুখরা) বা মুসলমান পরিচয় (জিজি/বেলা হাদিদ, মাইক থাইসন, ডিজে খালেদ) গর্বের সাথে প্রকাশ করেন। নিজেকে বিশ্বাসী হিশেবে পরিচয় দিতে তারা লজ্জা পান না। তাহলে পায় কারা?
পায় হচ্ছে বাংলাদেশের সেকুলার সেকুলার লুকোচুরি খেলা আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভোগা কিছু গাড়ল, তারা না পারে বাংগালী হতে, না পারে মুসলমান হতে। অথচ একইসাথে এথনিক আর রিজিয়াস আইডেন্টিটি সমান্তরালে ধারণ করা যে যায় তা তারা বুঝে না। তারা মনে করে (ইসলাম) ধর্ম তাদের পুরোপুরি বাংগালী হওয়ার পথে বাধা।
আরেকগোষ্ঠী আছে যারা কিছুটা লেখাপড়া করে,পশ্চিমের অবিশ্বাসী দুয়েকজন স্কলারের বই পড়ে তাদের দর্শনের প্রতি আগ্রহ বোধ করে, তো পরে সেই দর্শনকে উপলব্ধি করতে গিয়ে ধর্মকে বাদ দিয়ে বা একপাশে(দূরে) রাখাকে জরুরি মনে করে। অথচ মার্কসের কাজ বুঝতে হলে তার মতো অবিশ্বাসী হওয়া জরুরি না (উদাহরণ ড. আলী শরিয়াতি) । বিশ্বাসী হয়েও ল্যাকা,দেরিদা পড়া যায়। আবার অবিশ্বাসী বা সংশয়বাদি (যেমন নোয়ান চমস্কি) হয়েও সত্যের পক্ষে বা ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর পক্ষে কথা বলা যায়। (উত্তর)আধুনিকতার পথে ধর্ম বাধা না।
আপনি বিশ্বাসী অবিশ্বাসী বা সংশয়বাদি যাই হোন না কেনো, বিশ্বাসী হলে বেদান্তবাদী, মুসলিম, ইহুদি, খ্রীষ্টান যাই হোন না কেনো নিজের পরিচয় দিতে লজ্জ্বা পাওয়া উচিত না। দেশে অনেক তথাকথিত বুদ্ধিজীবি দেখেছি বেচে থাকতে একদিনও মুখ খোলে বলে নাই যে সে ইসলাম ধর্মের অনুসারী, বরং উল্টো, নিজেকে কোনো সম্প্রদায়ের লোক পরিচয় না দিতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতো, কিন্তু মরলে পরে জানাজা দাফন কাফন ঠিকই ইসলামি নিয়মে হইছে, অসাম্প্রদায়িক নিয়মে না। তো এইসব আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভোগা গাড়লদের সাহস নাই এটা বলার যে মরলে আমার জানাজা যাতে কোনো হুজুর না পড়ায়, বা শেষকৃত্যে যেনো ধর্ম প্রবেশ না করে।
আপনি মুসলিম পরিবারে জন্ম নিছেন, বিশ্বাসিও বটে, তবে ধর্ম প্রাকটিস করতে পারছেন না, (অনেকেই পারে না, এটা অন্য ডিবেট)। তবে কেনো আপনার সাম্প্রদায়িক পরিচয় প্রকাশ করতে লজ্জা পান? আপনি মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়েও অবিশ্বাসী হলে অন্য বিষয়। তখন নাহয় বুঝলাম যে সামাজিক চাপে (ভয়ে) নিজের অবিশ্বাসী পরিচয় প্রকাশ করতে পারছেন না । তখন আপনার নিরবতা কিছুটা জাস্টিফাইড । কিন্তু বিশ্বাসী হলে সেটার প্রকাশ জরুরি । নাহলে সেটা হিপোক্রেসি। হিন্দু,মুসলিম,বৌদ্ধ,খ্রীষ্টান,ইহুদি, অবিশ্বাসী,সংশয়বাদী যাই হোন না কেনো নিজেকে দেখান, মুখোশ খুলুন, অসাম্প্রদায়িকতার মুখোশ ।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে অক্টোবর, ২০২৩ রাত ১:১৭