রেলস্টেশন এ দাড়িয়ে আছে গত দুই ঘন্টা। এইদিকে ট্রেন আসার কোন আশা দেখা যাচ্ছে না। মে মাসের গুমোট গরম। কোন বাতাস নেই। রাত ১২ টায় ও গরম কমার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা ধরে গেছে। বসার ও কোন জায়গা নেই। সব বেঞ্চি গুলতে মানুষ ঘুমাচ্ছে। মফস্বল শহরের স্টেশন এ আর কোন যাত্রী ও নেই। অথবা সবাই জানেই যে গাড়ি লেট এ আসে তাই এখন কেউ আসেনি। স্টেশনের দোকান গুলোও একে একে বন্ধ হয়ে গেছে। এখন একটা সিগারেট হাতে নিয়ে বসে আছে সে। দিয়াশলাই নেই। আসে পাশে কাউকে বলবে সেটাও ইচ্ছে করছে না। স্টেশন মাষ্টারের রুমও খালি, কেউ নেই। ওয়েটিং রুম এর এক সাইডে বসার জায়গা পেয়ে বসে পরলো আবির।
না জ্বালানো সিগারেটই মুখে দিয়ে আনমনে টানতে থাকে। নিস্তব্ধ চারদিক। আসেপাশে এত মানুশ তবু মনে হয় আবীর একা। তার শহরের কোলাহল থেকে কত দূরে। মাথার ভিতরে বাজছে সেই বিখ্যাত কান্ট্রিসং,
If you miss the train I'm on
You will know that I am gone
You can hear the whistle blow a hundred miles
Lord I'm one, Lord I'm two, Lord I'm three, Lord I'm four
I'm 500 miles away from home...
আসলে জিবনের স্টেশনে আমরা কারো জন্য অপেক্ষা করি না, If you miss the train I'm on,You will know that I am gone... অনেক দিন পর একাকীত্ব থেকেই হোক বা অন্যকিছু আবিরের শুধার কথা মনে পরে। স্কুলের সেই সুন্দরী হিন্দু মেয়েটা, খুব ভালো বন্ধুত্ব ছিলো ওদের। প্রতিদিন স্কুলের পরে একসাথে বাসায় ফেরা, টিফিনে মারামারি,ডাইরী চুরি করে পড়া, শুধার চুলের বেণী খুলে দেয়া, কতো স্মৃতি।
কিন্তু ওকে কখন একটা কথা বলা হয়নি, হয়ত এই জিবনে কখনো বলা হয়েউঠবে না আর। কারন ট্রেন চলে গেছে আবির কে প্লাটফর্মএ রেখেই, সেই ট্রেন এ চলে গেছে শুধা। আজকে শুধা কি করছে খুব জানতে ইচ্ছা করে আবিরের। সে কি এখন ঘুমাচ্ছে? সে কি জানে কোন এক নির্জন স্টেশন এ কেউ একজন তার কথা ভাবছে। শুধার স্বামী কি তাকে খুব ভালোবাসে? সেই মানুষ টা কি শুধার বন্ধু? শুধার কি আবিরের কথা মনে পরে কখনো? তখন কি শুধা আগের মতই হাসে?
আর ভাবতে পারে না আবির, মাথা ঝিমঝিম করে। আবিরে এক বন্ধু ছিলো রিসাত,ও একটা কথা বলতো যে জিবনের প্লাটফর্মে শেষ ট্রেন বলে কিছুনেই, একটা যাবে আরেকটা আসবে। আবিরের খুব ইচ্ছা করছে রিসাত কে গিয়ে বলে দেখ আমার জিবনের প্লাটফর্মে ওইটাই ছিলো প্রথম ও শেষ ট্রেন। আমি উঠতে পারিনি। আমি আগের জায়গায় দারিয়ে আছি।
রিসাতের মতো হতে পারলে ভালো হতো। ছেলেটা খুব দুরন্ত ,তাকে দেখলে মনে হতো রিসাত পৃথিবীর সবচে সুখী মানুষ। নিজের কস্টগুলো ও খুব ভালোভাবে লুকিয়ে রাখতে পারতো। তার উপরে আশীর্বাদ এর মতো ওর একটা অসুখ হলো, সব কিছু ভুলে যাওয়ার অসুখ। রিসাত সব ভুলে যেত। এক সময় সে কাউকে চিনতেও পারত না। তখন রিসাতকে খুব ক্লান্ত লাগত, ওকে অই কয়েকটা দিন খুব হতাস মনে হতো। এর পর একদিন রিসাত ও ট্রেন ধরে চলে গেলো।
তোমার কথা ভুল ছিল বন্ধু, জিবনে শেষ ট্রেন আছে, সেই ট্রেন এর অপেক্ষা করতে করতেই আমাদের জীবন। সেই জিবনে আমাদের আরও হাজারবার শেষ ট্রেন ধরতে হয়। যারা ট্রেন ধরতে পারে তারা সুখি হয় হয়ত,যারা ধরতে পারে না তারা অবশ্যই অসুখী।
এমন সময় ট্রেনের হুইসেল এর শব্দ শুনতে পায় আবির। ট্রেন প্লাটফর্মে ঢুকছে, আবির প্লাটফর্মে একা যাত্রী । এটাই আবিরের গন্তব্যে শেষ ট্রেন। আবিরের হঠাত শীত শীত লাগে, ট্রেন দ্রুত গতিতে প্লাটফর্মে যায়গা করে নিচ্ছে, আবিরের মনে হচ্ছে অনন্তকাল ধরে ট্রেন আসছে আসছে আসছে, আর ওর ভয় বাড়ছে, শরীরে কাঁপুনি দেয়া শীত লাগছে। সে কি ট্রেন এ উঠতে পারবে নাকি জিবনের অন্যান্য শেষ ট্রেনের মতো এটাও হারিয়ে যাবে...

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


