সেদিন এক মেয়ে জিজ্ঞেস করলো “আপু!! বিসিএস এর জন্য কি 'পরতে' হবে?” শুনে আমি অবাক ও বিরক্ত “তোমার যে পোশাক ভালো লাগে সেটাই 'পরতে' পারো।“ সে কি পোশাক পরবে সেটাও কি আমাকে বলে দিতে হবে? আজব দুনিয়া!
“আপু...এইসব কি বলছেন? জানতে চাচ্ছিলাম কি বই 'পরতে' হবে?” ওহ! এতক্ষনে বুঝলাম যে সে আসলে জানতে চেয়েছে কি বই 'পড়তে' হবে। 'পরা' আর 'পড়া' দুটো এক নয়। 'পরা' মানে পরিধান করা। আর 'পড়া' মানে পড়াশুনা করা।
আগে চোররা চুরি করত এবং কখনোবা ধরা পড়ত। আজকাল চোররা স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ...চুড়ি করে (পরে), ধড়া (চূড়ো) পরে।

একবার এক ভদ্রমহিলার গলার সোনার চেন ছিনতাই হয়ে গেছে। উনি হন্তদন্ত হয়ে থানায় ফোন করে বলছেন “হ্যালো পুলিশ...হ্যালো পুলিশ...” দারোগা জিজ্ঞাসা করলেন “জী বলুন.....কি সমস্যা?” ওপাশ থেকে কাতর স্বরে উত্তর এলো “আমার গলার হাড় চুড়ি হয়ে গেছে।“ জাঁদরেল দারোগাবাবু রেগে গিয়ে বললেন “গলার হাড় চুরি গেছে তো থানায় ফোন করেছেন কেন? ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।"

র-ড় বিভ্রাট প্রায়শই ঘটে। কথা বলার সময় হয়তো আঞ্চলিকতার দোষে বা আলস্যবশে 'র-কে 'ড়' বা 'ড়'-কে 'র' উচ্চারণ করা হয়। জিভের দোষ মেনে নেওয়া যায়, কিন্তু লেখাতেও?
ইদানীং দেখি র-ড় অদলবদল করে লেখার হিড়িক উঠেছে। বানান ভুল এমনিতেই খুব চোখে পীড়া দেয়। তার ওপরে র-ড় অদলবদল হলে অর্থই যে বদলে যায় কখনো সখনো। দেখে কখনোবা চক্ষুস্থির আর কখনোবা হেসে গড়াগড়ি। কয়েকটা উদাহরণ দেই।
* "সামনে পরীক্ষা। লাইব্রেরীতে কাল পরতে যেতে হবে।" [লজ্জায় পড়ে গেলাম। বাসায় পোশাক না পরে লাইব্রেরীতে কেন?

* “অনেকদিন পরে আজ শারি পড়লাম।“ [এক ঝলক দেখে ভাবছিলাম শায়েরি অধ্যয়ন করেছে মেয়েটি। পরে ভাবলাম শাড়িতে বর্ণমালা বা কবিতার লাইন লেখা ছিল হয়তো।

* “পরার বই পরতে একদম ভালো লাগে না।“ [বই দিয়ে তৈরী পোশাক হলে আসলে পরতে ভালো না লাগারই কথা।

* “বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বাড়ি/ শুষ্ক হৃদয় লয়ে আছে দাঁড়াইয়ে/ ঊর্ধ্বমুখে নরনারী।“ [বৃষ্টিবাদলে বাড়িতে না থাকলে কি আর হৃদয় বা শরীর কোনটাই শুকনো রাখা যায়?

* "চুড়ি করতে গিয়ে গ্রেপ্তার দুই যুবক।" [আশ্চর্য! বেচারারা গয়না বানাচ্ছিল, তাতেই গ্রেপ্তার।

* "নাড়ী উন্নয়ন না হলে দেশের উন্নয়ন হবে না।" [অবশ্যই!! কিন্তু কিভাবে দেশের স্বাস্থ্য ভালো করা যায় সে বিষয়ে চিকিৎসকদের মতামত নেয়া হোক।

* "ট্রেন স্টেশনে ছুড়ি হামলায় দুই ব্যক্তি আহত হয়েছে।" [দেশে ‘নাড়ী’ উন্নয়ন অবশ্যই হয়েছে। নতুবা মেয়েরা এমন দুর্ধর্ষ হামলা করতে পারে!

আজকাল শুধু জেতা নয় হারটাও কিন্তু রীতিমতো শক্ত হয়ে উঠেছে! 'হার' যে এখন 'হাড়' হয়ে গেছে। আর হাড় যে বেশ শক্ত পদার্থ সেটা অনস্বীকার্য!
রামকৃষ্ণ নাকি বলেছিলেন আমরা মানে এই মানুষরা নাকি আমড়া। আমাদের কেবল আঁটি আর চামড়া আছে; কোন শাঁস নেই। ইদানিং আমরা সবাই আসলেই ‘আমড়া’ হয়ে গেছি; কিছুটা শাঁসের অভাবে, আর কিছুটা 'র' এবং 'ড়' বিভ্রাটে।


ভুল বানানের কাঁকরমুক্ত হোক লেখালেখি। আনন্দময় হোক, মসৃণ হোক শব্দের হাত ধরে কল্পলোকে যাত্রা!!
© শিখা
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০১৮ বিকাল ৪:০৩