রঙেরও কিন্তু মনখারাপ হয়, মনভালো হয়। খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন কোন রঙ বহুদিন নিঃসঙ্গ। আবার কোন রঙ একেকবার একেকরকম সম্পর্কে জড়িয়েছে আর তুমুল আহত হয়েছে। কোন রঙ কখনোই মদ ছুঁয়ে দেখেনি। অথচ কোন রঙ অষ্টপ্রহরই নেশায় চুর হয়ে থাকে। এসব আপনি একটু চেষ্টা করলেই বুঝতে পারবেন।
অত্যন্ত লাজুক রঙগুলো। যতক্ষণ না আপনি তাদের কাছাকাছি যাচ্ছেন, বুঝবেনই না ওরাও কতটা সংবেদনশীল। ওরাও ভিতরে ভিতরে কতটা কবি। তবে একবার আপনার সঙ্গে বন্ধুত্ব হয়ে গেলে, ওরা কিন্তু আপনাকে হতাশ করবে না।
এই যেমন নীল রংটাকেই দেখুন। সে একটু বিষণ্ণ, সারাবছরই তার ঘরদোরে স্মৃতিদের আনাগোনা; বড্ড নস্টালজিক। লাল রঙের প্রতি তার বেশ দুর্বলতা আছে। লাল এলেই বেদনায়, লজ্জায় সে বেগুনী হয়ে যায়। লাল রঙ ঝলমলে, হাসিখুশী, তবে একটু ফাজিলগোছের। তার প্রেমভাব প্রবল; যখন তখনই সে প্রেমে পড়ে।
বরঞ্চ বন্ধু হলুদ এলে নীলের মনটা সতেজ হয়ে যায়। সমস্যা যে হলুদের আবার নেশার অভ্যাস আছে। হলুদ এলেই নীলের নেশার ইচ্ছে হয়। দুজনে বোতল খুলে বসে; নীল হলুদের মাতলামিতে চারপাশ লেবুপাতার সবুজে মাখামাখি।
সবচেয়ে গোলমেলে রঙ কালো। কালোর মতো সুবিধাবাদী রঙ আর একটাও নেই। সবার সাথেই তার ওঠাবসা; সবার সাথেই তার মতের মিল। কাউকেই সে ফিরিয়ে দেয় না। একবার কালোর মাঝে হারালে নিজেকে ফিরে পাওয়া দায়। সর্বভোগী, সর্বব্যাপী রঙ। কালোর একদম উল্টো শাদা। সবার সাথেই তার বিরোধ; সব মতের সাথেই অমিল। সর্ববিরোধী, সদাএকাকী রঙ। সব কিছুরই বিরুদ্ধে সে; সবাইকেই সে ফিরিয়ে দেয়।
বাকী রংগুলো এই শাদা আর কালোর টানাটানিতে খুব ঝামেলায় থাকে জানেন? এসব আপনি একটু চেষ্টা করলে বুঝবেনই। শাদাকালোর রংবাজির চোটে বাকীরা একটু গুটিয়েই থাকে। অন্যরা মিলেমিশে ছবি আঁকতে চাইলেও শাদাকালো রাজী নয়।
শাদাতে-কালোতে না মেলালে, অন্য রঙেরা দাগ না কাটলে কি করে ছবি তৈরী হয় বলুন? যারা রঙ ভালোবাসে কিন্তু দাগকে নয়, আমি কিন্তু তাদের দলে নই। ইচ্ছে মতো রঙ গুলিয়ে, এখানে সেখানে দাগ ফেলে তাই জীবনের ছবি এঁকে চলেছি। শাদাকালোর তোয়াক্কা না করে সপাটে রংবাজি করে চলছি।
রঙদের একটু বোঝার চেষ্টা করুন। চেষ্টা করলে দেখবেন আপনিও আমার মতোই রংবাজি করতে পারছেন।
© শিখা রহমান
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১২:০৭