somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঝড়া পাতা............।

২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শুকনো পাতা মাড়িয়ে গুটি গুটি পায়ে কেউ একজন হেটে আসছে।সময়টা অগ্রায়ন মাসের শেষের দিকে। মানে শীত একটু একটু করে আসি আসি করছে।হালকা বাতাসে তাই পাওয়া যাচ্ছে শীতলতার স্পর্শ।এই সময় মফস্বল শহরে ঝুপ করে যেন সন্ধ্যা নামে। সারাদিনের ক্লান্ত পাখিগুলো ব্যাকুল হয়ে ডানা মেলে ঘরে ফেরার আসায়।
দিনের শেষের সূর্যটার সব আলোটুকু শুষে নেয় গাঢ় অন্ধকার।মেঠো পথের দুপাশে থাকা গাছগুলো ও যেন একটা ভূতুরে আকার নিয়ে থমকে দাঁড়িয়ে থাকে।এই পরিবেশকে আরো একটু অন্য রকম মনে হয় যখন জোনাকিরা জ্বলে ওঠে।এই অদ্ভুদ রকম একটি পরিবেশের মধ্যে আবারও শোনা যায় সেই হেটে চলার শব্দ।অন্ধকারটা চোখে একটু সয়ে গেলেই বোঝা যায়-গাঢ় অন্ধকার আর কালো চাদর দুটোই একসাথে বেঁধে নিয়ে একটি মেয়ে সামনের পথে এগিয়ে যেতে থাকে। কোনদিন মনে হয় একা অন্ধকারের পথে পা বাড়ায়নি, তাই রাতের কীট পতঙ্গের আওয়াজও তার কাছে ভীষন তীব্র মনে হতে থাকে।
বেশ দূর থেকেই মেয়েটি দেখতে পেল ট্রেনের প্ল্যাটফর্মটা।কালো চাদরটা দিয়ে আরো ভালো করে জড়িয়ে নেয় সে নিজেকে, হাতের ছোট্ট ব্যাগটাকে আরো শক্ত করে ধরে সে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে। আজ খুববেশি একটা লোকজন নেই, সবাই যার যার মনে গল্প করছে অথবা চায়ের কাপে ঝড় তুলছে। মেয়েটি সবাইকে কোনরকম পাশ কাটিয়ে এক কোনার এক অন্ধকার একটা বেঞ্চিতে বসে পড়ল।হ্যাঁ- তার তো এখানেই থাকার কথা ছিল।
সে তার কথা রেখেছে- বাবা-মা, আত্নীয়-স্বজন, সবার ভালবাসা আর আদর কে উপেক্ষা করে সে তার ভালবাসার জন্য সবকিছু ছেড়ে একা চলে এসেছে এই অনিশ্চতার পথে। চোখে তার রঙ্গিন স্বপ্ন।তার প্রিয় মানুষটি আজ যে তাকে নিতে আসবে। আনন্দ আর অপেক্ষা দুটোই বাড়তে থাকে। একটা সময় তার মনে হয় সময়ও বুঝি থমকে গেছে। এত নীরবতা কেন চারিপাশে?
হঠাৎ কারো একজনের হাতের স্পর্শে সে চমকে ওঠে। মুহুর্তেই তার পৃথিবীটা যেন আরো রঙ্গিন হয়ে ওঠে। লোকজনের কোলাহল, চায়ের কাপের ঢুং ঠাং শব্দ, রাতের ঝিঝি পোকার ডাক সব তার কাছে অনেক আনন্দের মনে হয়।এত কিছুর মধ্যেও সে শুনতে পায় তার প্রিয় মানুষের কন্ঠ।
উফ্, যা ভয় পাইছিলাম, ভাবছিলামতো তুমি বুঝি আইতেই পারবানা। যাক-বাঁচাইলা আমারে। এহন আমারা সারাজীবন একলগেই থাকুম।চল চল- ট্রেন মনে হয় আইতেছে-ঐ যে শুনছো,হুইসেলের শব্দ শোনা যাইতেছে। কি হইল-চল।
মেয়েটি যেন কেঁপে ওঠে আনন্দ আর উত্তেজনায়। আজ তার জীবন আবার নতুন করে শুরু হবে। ওরা এগিয়ে যায় ট্রেনের দিকে- জীবনের একটা অংশকে পিছনে ফেলে নতুন স্বপ্নকে সাথে নিয়ে অন্ধকারের বুক চিরে একটা সময় কু ঝিক ঝিক করে ট্রেন চলতে থাকে।
সময় কেটে য়ায়-একটা সময় ভোর হয়, পাখি ডাকে আবারও নতুন সূর্য ওঠে, একটা সময় সূর্য ডুবেও যা্য়।নেমে আসে গাঢ় অন্ধকার, মেয়েটি তখনও অচেতন হয়ে ঘুমিয়ে থাকে।ট্রেন তখনও ছুটে চলছে তার নিজের পথে
সময় গড়িয়ে যায়-ট্রেনও একসময় থেমে যায়। যান্ত্রিক শব্দ আর কোলাহলের কারণে এক সময় মেয়েটি ঘুম ভরা চোখে খুঁজতে থাকে তার প্রিয় মানুষটির।না-কোথাও তো তাকে দেখা যাচ্ছে না, সহসাই মনে হয় তার মাথায় বাজ ভেঙে পড়লো। এ কি দেখছে সে? এই লোকটি কে? এত লোলুপ চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে? ভয়ে মেয়েটি নিজেকে গুটিয়ে নেয়-ভয়ার্ত চোখে, উদ্বিগ্ন কন্ঠে প্রশ্ন করে, আপনি কে? লোকটি যেন মজার কোন কথা শোনে-বিকট অট্ট হাসি দিয়ে বলে-
এখন আমিই তো তোমার সবকিছু। তোমার পেয়ারের মানুষতো তোমারে বেইচ্যা দিছে। নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকা গুইন্যা লইয়া বিদায় হইছে। তুমি কি মনে করছো-তুমি ছাড়া হের কেউ নাই? আরে বোকা মাইয়া, তোমার মত কত ময়না পাখিরে সে ভুলাইয়া আনছে আর টাকা গুনছে সেই খবর তো আর জাননা।চল-চল তোমার জন্য ভাল খাতিরের ব্যবস্থা আছে।

সর্বশেষ এডিট : ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৩৫
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষায় বসতে না পারার কষ্টটা সমালোচনার কোন বিষয়বস্তু নয়

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬

গতকালের একটি ভাইরাল খবর হচ্ছে কয়েক মিনিটের জন্য বিসিএস পরীক্ষা দেয়া হলো না ২০ প্রার্থীর !! অনেক প্রার্থীর কান্নাকাটির ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।এ বিষয়ে পিএসসি চেয়ারম্যান এর নিয়ামানুবর্তিতার জ্ঞান বিতরনের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×