বাংলাদেশে বছরের আলোচিত শব্দ বা কথা বাছাইয়ের চল নেই। থাকলে নিঃসন্দেহে তালিকার শীর্ষ স্থান ধরে রাখতো “সিন্ডিকেট ” শব্দটি। একটা জনপ্রিয় বাংলা প্রবাদ আছে , "যত দোষ, নন্দ ঘোষ"। এই সিন্ডিকেট শব্দটা হচ্ছে আমাদের নন্দ ঘোষ। বিগতো কয়েক বছর জাতীয় পত্রিকা ও টিভি চ্যানেল গুলিতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে নিয়মিত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হচ্ছে । প্রতিবেদন গুলোতে সাধারণ মানুষ ও ব্যাবসায়ীদের সাক্ষাৎকার প্রচার করা হয়। সাক্ষাৎকারের শতকরা নব্বই ভাগ মানুষ এর ধারণা দ্রব্য মূল্যের উর্ধগতির পিছনে মূল কারণ সিন্ডিকেট। সাধারণ মানুষের অর্থিনীতি বিষয়ে জ্ঞান সীমিত ফলে অনেক ক্ষেত্রেই বিশ্লেষণ সঠিক হয় না। মজার বিষয় শুধু সাধারণ মানুষ নয় এখন তো দেখি অনেক ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরাও মূল্যবৃদ্ধির জন্য মূল কারণ হিসাবে সিন্ডিকেটকে চিন্নিত করেন। সিন্ডিকেট মূল্য বৃদ্ধির এক মাত্র কারণ নয় আরো অনেক কারণে মূল্য বৃদ্ধি পায় ।মূল্য বৃদ্ধির সঠিক কারণ নির্ণয় না করে খালি সিন্ডিকেট এর পিছে দৌড়াইলে মূল সমস্যা আড়ালেই রয়ে যাবে। অর্থাৎ মূল্য বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।একটা উদাহরণ দেই ডাক্তার রোগীকে চিকিৎসা দেবার পূর্বে বিভিন্ন স্বাস্থ পরীক্ষা করিয়ে সঠিক রোগ নির্ণয়ের চেষ্টা করেন।স্বাস্থ পরীক্ষার ফলাফল দেখে পরবর্তী সময়ে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করেন। আন্দাজে একটা ধারণা করে চিকিৎসা দিলে নিশ্চই রোগী সুস্থ হবে না।ঠিক সেই রকম মূল্য বৃদ্ধির আসল কারণকে কে চিন্নিত না করে খালি সিন্ডিকেট এর পিছে দৌড়াইলে কোনো লাভ হবে না।
সিন্ডিকেট শব্দটা কৌশলে পরিকল্পিত ভাবে আমাদের মাথায় ঢুকায় দেওয়া হইছে। সিন্ডিকেট শব্দটা ম্যাজিকের মতো কাজ করে। মূল্য বৃদ্ধির পিছনে সিন্ডিকেট রয়েছে শুনার সাথে সাথে আমরা সাধারণ মানুষ অবচেতন মনে মূল্য বৃদ্ধির অন্যান্য কারণ খুজা বন্ধ করে দেই । দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধির অন্যান্য কারণ খুঁজতে গেলে দেখবেন অনেক অপ্রিয় বিষয় সামনে চলে আসে । সিন্ডিকেট শব্দটা ব্যবহারের ফলে সেই অপ্রিয় বিষয় গুলোকে খুব সহজেই মাটি চাপা দেওয়া যায়। হয়তো সেই কারণেই কিছু দিন পর পর দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ সিন্ডিকেট এর কাছে নিজেদের অসহাত্বের কথা স্বীকার করেন । এখন পর্যন্ত যতো গুলো পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে বাজারে হইচই হয়েছে তার একটারও মূল কারণ সিন্ডিকেট নয়। নানা কারণে মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে সে সব কারণ বিশ্লেষণ করতে গেলে দেখবেন গর্ত থেকে সাপ বেরিয়ে আসবে।কিছু মানুষ খুব ভালো মতোই জানে মূল্য বৃদ্ধির সাথে সিন্ডিকেট সংশ্লিষ্টতা নেই তারপরও সিন্ডিকেট এর কথা বইলা সাধারণ মানুষকে বেস্থ রাখে।আবার কিছু মানুষ না বুইঝা সিন্ডিকেট এর পিছন পিছন দৌড়ায়। গ্রামে একটি প্রবাদ রয়েছে “কান নিয়েছে চিলে”। অথচ কানে হাত না দিয়েই চিলের পিছনে ছুটে চলছে অতিউৎসাহী কিছু মানুষ। সেই প্রবাদ বাক্যের মতোই অবস্থা আমাদের সবাই ছুটছে সিন্ডিকেট এর পিছনে।
মূল্য নির্ধারণে অযথা জটিল সমীকরণের কোনো প্রয়োজন নেই। পণ্যের যোগান ও চাহিদার সমন্বয়ের মাধ্যমে মূল্য নির্ধারিত হয় এটাই মূল মন্ত্র। একটা বিষয় পরিষ্কার করি বাজারে যদি পণ্যের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকে তখন মূল্য বৃদ্ধি আটকানো কারো পক্ষে সম্ভব না। ভোক্তা অধিকার, পুলিশ ,আর্মি ,যোথ বাহিনী যতো কিছুই নামান কোনো কাজ হবে না।এটাকে অনেকটা প্রকৃতির নিয়ম বলতে পারেন। উদাহরণ দিয়ে আরো সহজ করে বিষয়টা উপস্থাপন করছি নদীর পারে বাঁধ তৈরী করে কখনো নদীর পানি প্রবাহ বন্ধ করা সম্ভব না খুব বেশি হইলে নদীর গতিপথ পাল্টানো সম্ভব ।পণ্যের মূল্য নযন্ত্রনে যতো রকমের আর্থিক কৌশল নেন না কেনো এই প্রকৃতিগত দিকটা সব সময় মাথায় রাখতে হবে। প্রতিদিন পণ্যের চাহিদা এবং সরবরাহ যেহেতু এক রকম থাকে না তাই এর সাথে সংগতি রেখে মূল্য উঠা নামা করাটাই স্বাভাবিক। লক্ষ রাখতে হবে চাহিদা ও সরবরাহের মাঝে পার্থক্যটা যেনো আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। চাহিদার তুলনায় যদি সরবরাহ বেশি হয় তখন যারা উৎপাদন করে তারা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। আবার যদি সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেশি হয় তখন দ্রব্য মূল্যের উর্ধগতি হবে। যারা দায়িত্বশীল অথবা নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে রয়েছেন তাদের মূল দায়িত্ব হচ্ছে এই চাহিদা ও সরবরাহের মাঝে ভারসাম্য রক্ষা করা।
সাম্প্রতিক সময়ে দ্রব্য মূল্যের উর্ধগতিতে পেটার্ন লক্ষ করা যায়। যেমন ভোজ্যতেল ,চিনি ,ডিম , ডাব ,পেঁয়াজ ,আলু একটার মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার কয়েক দিন পর আরেকটার মূল্য বৃদ্ধি পায়। বিষয়টা রহস্যজনক এর পিছনে কি কারণ থাকতে পারে সব সেক্টরেই কি সিন্ডিকেটের থাবা নাকি এর পিছনে অন্য কোনো কারণ আছে।কিছু দিন আগে শুনলাম কাওরান বাজারের চার পাঁচ জন পাইকারি ডাব ব্যাবসায়ী সমগ্র বাংলাদেশের ডাবের বাজারের মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে।আবার শুনলাম তেজগাঁও ডিমের আড়তে কিছু পাইকারি ব্যাবসায়ী এস এম এস এর মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশের ডিমের এর মূল্য নিয়ন্ত্রণ করে।আসলেই কি কাওরান বাজার ও তেজগাঁও আড়তের দুই তিন জন ব্যাবসায়ী সিন্ডিকেট করে সমগ্র বাংলাদেশের দ্রব্য মূল্য মূল্য বৃদ্ধি করতে সক্ষম । অনুসন্ধান করে কিছু তথ্য সংগ্রহ করলাম তা আপনাদের কাছে তুলে ধরছি।
মুরগি ও ডিমের মধ্যে কোনটা কার অনুগামী- সে বিতর্ক বহুদিনের হলেও বর্তমানে ডিম-মুরগি এখন একই কাতারে অবস্থান করছে। ১ কেজি ব্রয়লার মুরগি ও ১ ডজন ডিমের দাম এখন সমান। এর পূর্বে মুরগি ও ডিমের দাম সমান হওয়ার নজির কেউ দেখেনি। শুরুতেই অতিউৎসাহী কিছু মানুষ বললো ডিমের বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছে। সিন্ডিকেট সক্রিয় প্রমানে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা অভিযান পরিচালনা করলেন ক্যাশ মেমোতে ক্রয়মূল্য উল্লেখ, বিক্রয়মূল্য রেকর্ড ও মূল্য তালিকা দেখাতে না পারায় ব্যবসায়ীদের জরিমানা করলেন। কিছু দিন স্বাভাবিক থাকার পর পুনরায় ডিমের দাম আগের জায়গায় চলে আসলো ।ডিমের মূল্য বৃদ্ধির পিছনে মূল কারণ ঠিক মতো নির্ণয় না করে সিন্ডিকেট এর অস্তিত্ব প্রমানে দৌড়া দৌড়ি কোনো কাজে দেয় নাই। ডিমের মূল্য বৃদ্ধির মূল কারণ নির্ণয়ের পূর্বে কিছু তথ্য তুলে ধরি
তেজগাঁও পাইকারি বাজারে দৈনিক বিশ লক্ষ থেকে বাইশ লক্ষ ডিমের চাহিদা থাকলেও বর্তমানে সর্বোচ্চ সতেরো লক্ষ থেকে আঠারো লক্ষ ডিম পাওয়া যাচ্ছে। উত্তরবঙ্গে সর্ব বৃহৎ আড়ত বামনডাঙ্গা যেখানে কয়েকমাস আগেও প্রতিদিন সাড়ে তিন লক্ষ ডিম বিক্রি করা হতো বর্তমানে সেই সংখ্যা প্রতিদিন এক লক্ষেতে নেমেছে।চাহিদার তুলনায় ডিমের সরবরাহ যে কম এটা পরিষ্কার। “এক ট্রাক (১ লক্ষ ৪৬ হাজার) ডিমের দাম কিছুদিন আগেও ছিল বারো লক্ষ টাকা সেখানে গত কয়কে দিন থেকে ঐ একই পরিমাণ ডিমের দাম আড়তদাররা চাচ্ছে চোদ্দ লক্ষ থেকে পনেরো লক্ষ টাকা” চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম হলে মূল্য বৃদ্ধি পায় ঠিক তাই হয়েছে। ডিমের মূল্য বৃদ্ধির আরো কিছু কারণ রয়েছে যেমন টানা বৃষ্টি হলে ডিম সংগ্রহের প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হয়।সেই কারণেও ডিমের মূল্য সাময়িক বৃদ্ধি পায় ।
ডিমের সরবরাহ কি হঠাৎ করে কোনো কারণে কমে গেছে নাকি ধীরে ধীরে পর্যায়ক্রমে কমেছে ?এই প্রশ্নটা খুব গুরুত্বপূর্ণ এর উপর নির্ভর করছে সামনের দিন গুলোতে ডিমের মূল্যে কোন দিকে যাবে। সরবরাহ কমার কারণ উৎপাদন কমে যাওয়া তাই অনুসন্ধান শুরু করলাম ডিমের উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণ কি তা নির্ণয়ে।এ বছর অতিরিক্ত গরম আর অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে ডিমের চাহিদা পূরণ ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছে। কয়েকমাস আগে যখন টানা তাপপ্রবাহ চলছিলো, তখন অধিকাংশ খামারে কয়েকদিনের ব্যবধানে হাজার হাজার মুরগি মারা গেছে।গরমে মুরগি মারা যাওয়ার কারণে অনেক খামারিরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন যার কারণে ডিমের উৎপাদন কমে গেছে।এছাড়াও দীর্ঘ মেয়াদে খামারের সংখ্যা দিন দিন কমছে। যেমন করোনা মহামারীর সময় অনেক খামার বন্ধ হয়ে যায়।করোনা পরবর্তী সময়ে আবারো কিছু ক্ষুদ্র খামারি অল্প পুঁজি সংগ্রহ করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় খামার শুরু করে কিন্তু উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে আবারো বিপর্যয়। উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ার পিছনে যে সব কারণ উল্লেখ যোগ্য সেগুল হচ্ছে ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের কারণে পোল্ট্রি ফিডের মূল্য বৃদ্ধি।আবার অন্য দিকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খরচ বৃদ্ধির কারণে খামারের উৎপাদন খরচ আগের তুলনায় অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে।যার কারণে নতুন খামার তৈরিতে উদ্যোক্তাদের মাঝে তেমন একটা আগ্রহ নেই।
ডিমের মূল্য বৃদ্ধিতে উৎপাদন পর্যায়ে এবং সরবরাহ পর্যায়ে কয়েক জন ব্যাবসায়ী সিন্ডিকেট করে ফায়দা নিছে।কথা ঠিক কিন্তু সিন্ডিকেট তো এখানে মূল সমস্যা না মূল সমস্যা হচ্ছে ডিমের চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম। খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় লক্ষ করুন সিন্ডিকেট করে কয়েক জন ব্যাবসায়ী তখনি মূল্য বৃদ্ধি করতে পারে যখন বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকে না। পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকলে কিন্তু সিন্ডিকেট এর অস্ত্বিত্ব থাকে না। সাম্প্রতিক সময়ের একটা উদাহরণ দেই হাসপাতল গুলোতে ডেঙ্গু রোগীর স্থান সংকুলান হচ্ছে না প্রচুর স্যালাইন প্রয়োজন কিন্তু সরবরাহ পর্যাপ্ত না থাকায় গায়ে লেখা মূল্য থেকে বেশি মূল্যে স্যালাইন ক্রয় করতে হচ্ছে রোগীদের।কিছু অসৎ ব্যাবসায়ী সিন্ডিকেট করে অথবা মজুদ করে স্যালাইনের মূল্য বৃদ্ধি করছে। আসলেই এটা শাস্তি যোগ্য অপরাধ।এখানেও তো সিন্ডিকেট মূল সমস্যা না। আমরা তো জানতাম ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে পরিসংখ্যান দেখে তো আন্দাজ করা যায় ভবিষ্যতে কি পরিমান স্যালাইনের প্রয়োজন হতে পারে। তখনি তো বুঝা উচিত ছিলো চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ আমরা নিশ্চিত করতে সক্ষম না। এই রকম পরিস্থিতিতে উচিত ছিলো তাৎক্ষণিক অন্য দেশ থেকে ডেঙ্গুর স্যালাইনের আমদানি করা। তে হইলে তো আর স্যালাইন এর সংকট তৈরী হতো না। যেহেতু আমরা সিন্ডিকেট এর অস্তিত্ব প্রমানে ব্যাস্ত তাই অন্যান্য বিষয় চাপা পরে যাবে।
পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করলে সিন্ডিকেট করে মূল্য বৃদ্ধি করা অসম্ভব।অনেক ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কার্যক্রম দেখে মনে হয় আমরা নিজেরাই চাই সিন্ডিকেট থাকুক। কেন এই রকম গুরুতর অভিযোগ দিলাম পরিষ্কার করে বলি। পৃথিবীর অন্যান্য উন্নত দেশেগুলোতে সুলভ মূল্যে পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষে শহর গুলো থেকে একটু দূরে পর্যাপ্ত স্থান নিয়ে বোরো পরিসরে মেগা স্টোর তৈরী করা হয়। সেখানে পাইকারি দরে পণ্য বিক্রি করা হয়। বিভিন্ন অফিস , হাসপাতাল ,হোটেল ,রেস্টুরেন্ট ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান সেখান থেকে বাজার মূল্যের চে কম মূল্যে পণ্য ক্রয় করার সুযোগ পায়। যখন একটা রেস্টুরেন্ট কম মূল্যে কাঁচামাল ক্রয় করতে পারে তখন খুব স্বাভাবিক ভাবেই উৎপাদন খরচ কমে আসে এতে করে তারা কম মূল্যে খাবার বিক্রয় করতে পারে। এই ধরণের মেগা স্টোরের কারণে বাজারে সিন্ডিকেট করা কঠিন আবার মূল্যস্ফীতি থেকে দেশের জনগণকে রাখা করা সম্ভব। আমাদের দেশে উল্টা পরিস্থিতি এখানে আগোরা বা স্বপ্ন ইত্যাদি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে ভোজ্য তেল কিনলে আপনাকে আলাদা ভ্যাট দেওয়া লাগে যা এলাকার খুচরা দোকান গুলো থেকে ক্রয় করলে দেওয়া লাগে না। আইন টা সংঘর্ষিক এবং অনৈতিক। সুপার স্টোরের বাড়তি ভ্যাট তো শেষ পর্যন্ত ভোক্তার কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে। ভোক্তার সুরক্ষা দেওয়া তো দূরের কথা উল্টা মূল্যস্ফীতি এবং সিন্ডিকেটকে সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। এটা কি এরা বুঝে না অবশ্যই বুঝে বাড়তি ভ্যাট আদায় করে সরকারের কাছ থেকে বাহবা নেওয়ার জন্য এই ধরণের কার্যক্রম। দিন শেষে সাধারণ মানুষ এর জীবন যাত্রার ব্যায় আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। আরো একটা উদাহরণ দেই গুলশান, বনানীসহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট ঘুরে দেখা যায়, এসি বা নন-এসি প্রায় সব রেস্টুরেন্টেই ৫ শতাংশ ভ্যাট নেওয়া হচ্ছে কিন্তু ফাস্টফুড পরিবেশন করে এমন কয়েকটি রেস্টুরেন্ট এখনো ১৫ শতাংশ ভ্যাট নিচ্ছে। এর কারণ আইনে ৫ শতাংশ এবং ১৫ শতাংশ দুইভাবেই ভ্যাট নেওয়ার নিয়ম রাখা আছে। তাই তারা আইন মেনেই ১৫ শতাংশ ভ্যাট নিচ্ছে। তিন তারকা বা তদূর্ধ্ব মানের হোটেল ও মদের বারে আগের মতোই খাবারের সাথে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বহাল থাকুক আপত্তি নাই কিন্তু ফাস্টফুডের দোকানে কি মধ্যবিত্তরা খাবার খায় না তাদের কাছ থেকে কেনো বাড়তি ভ্যাট আদায় করা হচ্ছে।
ভোক্তা অধিকার এর কর্মকর্তারা অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন অস্বীকার করবো না। রাত হোক আর দিন হোক উনারা বাজার থেকে বাজার ঘুরছেন। উনাদের সততা নিয়ে প্রশ্ন করবো না। কিন্তু উনাদের কাজের মাধ্যম আসলে সঠিক হচ্ছে না। উনারা রেগুলেটরি বডি উনারা আইন কানুন বা বাজার পদ্ধতি নিয়ে কাজ করবেন। উনারা যদি রাতের বেলা পাইকারি ডাব ব্যাবসায়ীদের পিছনে দৌড়ান তে হইলে কেমনে হবে। যেমন উদাহরণ দেই আপনাদের অনুরোধ করবো এই যে ডিপার্টমেন্টাল স্টোর গুলা ভোজ্য তেল এর বডি রেইট এর উপর আবার মূসক সংগ্রহ করছেন রাজস্ব বোর্ড এর নির্দেশে এর পিছনে রহস্য কি তা উদঘাটন করুন। এই ভাবে যেই জায়গা গুলোতে সাধারণ মানুষ কথা বলতে পারে সেই সব দিক গুলাতে নজর দিন । দুই একটা মাছওয়ালা ডিম ওয়ালা কে ফাইন কইরা কোনো পরিবর্তন হবে বইলা মনে হয় না । দেখেন এই যে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ কইরা দিলো আলুর কেজি সর্বোচ্চ ৩৬ টাকা, ডিম প্রতি পিস ১২ টাকা, পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৬৫ টাকা এবং প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ও খোলা সয়াবিন তেলের দাম ৫ টাকা কমিয়ে যথাক্রমে ১৬৯ টাকা ও ১৫৯ টাকা এটা কি কাজ হবে বইলা মনে হয় আপনাদের। আপনাদের মনে আছে নিশ্চই সি এন জি ভাড়া মিটার অনুযায়ী নেওয়ার জন্য আইন হইছিলো তারপর কি হইলো সি এন জি কি এখন মিটারে চলে আমি দুই বছরে একটা সি এন জি পাইলাম না যে মিটারে যাইতে চায়। এই রকম আইন বানায়া কোনো লাভ নাই। ওই রকম ডিম আলু শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি হইলে তো সবার জন্যই ভালো।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ১০:৪৯