somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কংক্রিটের কনডম

০১ লা মে, ২০২২ বিকাল ৫:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভুতের বিজ্ঞান বা মেশিনের আধ্যাত্মিকতা নিয়ে সমাজ যখন ব্যস্ত, তখন বুলবুলের বিজ্ঞান মন উড়ে যেতে যায় ইউরোপে। মাতৃ প্রেম বা হোম সিকনেসের কারণে তা হয়ে উঠে নাই। আজকাল শিক্ষিত বাঙালীদের আবার বাংলা শব্দের ইংরেজি করে বলতে হয়, না হলে তারা বুঝতে বা কানেক্ট করতে পারে না।
হাওরে উড়াল সেতু নিয়ে বুলবুল সাত সকালে এসে উপস্থিত। হাওরে রাস্তা বাতিল করে সরকার নতুন প্রজেক্ট করার চিন্তা করছে। বিভিন্ন কোম্পনী এবং গবেষকরা তা নিয়ে ভাবছে। বুলবুল সাধারণ বিজ্ঞান চিন্তার মানুষ। দেশের বাহিরে গেলে বিজ্ঞানী হওয়ার সম্ভবনা শতভাগ।
‘ভাস্কো ডা গামার রানী, যদি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হতো, তবে মহাসাগর মাঝামাঝি সেতু তোলার জন্য জনগণের কর এর টাকা ভাসিয়ে দিতো।’ বুলবুল বেশ কিছু সংবাদপত্র এবং কয়েক শত পাতার একটি ফাইল এগিয়ে দেয়।
‘ আমি পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছি। কীট পতঙ্গের সমাজ কেমন হবে, তা প্রাণী ভেবে কি করবে?’ বয়সের সাথে সাথে দৃশ্যভঙ্গি বদলায়। আমারও বদলেছে। বাঙালী তরুন যৌবনে প্রেম নিয়ে যা কিছু করবে, বয়স বাড়ার সাথে সাথে সেই বিষয়ে তার বিরক্তি এবং বিতৃষ্ণাও বাড়ে। প্রেম কিংবা পেশা যাই হোক। শেষ কয়েক মাসে শরীরে ক্যান্সার সেল এর উপস্থিতি, আমার দৃষ্টি থেকে ভঙ্গিকে আলাদা করে দিয়েছে। এখন আমি প্রকৃতির মতো নিয়তির চোখে দেখি।
‘তা তুমি ভালই করেছো। এমনিতেই অথর্ব মানুষ, তুমি। দেখা এবং শোনা বন্ধ করে, কোমা‘য় বেঁচে থাকাকে, তোমাকে দোষ দেয়া যাবে না কিন্তু আমি কি করি, বলো তো? লড়াই করবো। নাকি পালাবো দেশ থেকে?’
‘ চা খাবে? যদি খাও আমার চা থেকে অর্ধেক তোমাকে দিতে পারি।’ আমি উঠে এক কাপ রঙ চা অর্ধেক করে দুই কাপে নিয়ে আসি।
চায়ে চুমুক দিয়ে নাক কুচড়ায় বুলবুল, ‘বিশ্রি চা। পূর্ণ কাপ চা দিয়ে, বিপদে না ফেলার জন্য ধন্যবাদ।’
‘মানুষ তার জ্বীবে, মনের স্বাদ নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।’ আমি আয়েশ করে স্বাদহীন চা খেতে থাকি। বুলবুল নিজের নিয়ে আসা প্রজেক্ট এর কাগজে হারিয়ে যায়।
‘ শোনো, হাওরে রাস্তা তৈরি হবে প্লাস্টিক এর সাথে মিশানো কাঠের গুড়া বা নারিকেলের খোসা মিশানো ব্লক দিয়ে। তাতে পরিবেশের বিশাল প্লাস্টিকের আবর্জনাকে কাজে লাগানো যাবে।’ বুুলবুল সরাসরি আমার দিকে তাকিয়ে বলে। যেন আমি রাজি হলে সব হয়ে যাবে। আমি হয়তো তাই ভেবে রাজি হই না, প্রশ্ন করি।
‘ ভারী গাড়ি মালামাল নিয়ে যেতে পারবে তো এর উপর দিয়ে?’
‘ অবশ্যই পারবে। সেখানে পরিমিত চুন এবং সিমেন্ট মাটি মেশানো লাগবে। কৃষি পণ্য এবং সাধারণ ভারীযান সহজেই চলাচল করতে পারবে ’ বুলবুল বিদেশী কিছু ছবি দেখায় তার ফাইল থেকে।
‘ আমি নতুন কিছু বলছি না। বিশ্বে এসব চর্চা শুরু হয়েছে।’
‘ যারা কষ্ট করে বিশ্বের বিজ্ঞান চর্চা দেখবে না, তাদের বুঝাবে কি করে?’
‘ তাদের বুঝাতে পারবো না। তোমাকে চেষ্টা করতে পারি। মনে করো ইট। দামী ইট। ভিতরে গোল গোল ছিদ্র থাকে যেসব পলিশ ইট। তেমন বিশাল ইটের মতো ব্লক একটার সাথে একটা, শিকলের মতো হাওরে বসানো হবে। বর্ষায় পাহাড়ি ঢলের পানি সেই ইটের ভিতর দিয়ে চলে যাবে। আর বেশি পানি হলে তারা ভেসে উঠে, মানুষের চলার পথ হয়ে ভাসতে থাকবে, ভাসমান সাপের মতো সেতু হয়ে।’ বুলবুল চোখের সামনে কি যেন দেখছে।
আমি আর প্রশ্ন করি না। স্বপ্নের ভিতর প্রশ্ন করতে হয় না। সেখানে সব প্রশ্নে শতাধিক অবাস্তব উত্তর তৈরি থাকে।
‘তা করে ফেলো। সরকারের বিভিন্ন মহল এবং কর্পোরেটের সহযোগিতা নাও।’
‘ এই কথার অর্থ, বাদ দাও। আরে এদেশের শিক্ষিত সমাজ তো কংক্রিটের কনডম পরে আছে সবাই। বিজ্ঞান বুঝবে না, বুঝবে স্বার্থ।’ বুলবুল উঠে চলে যায়।
‘ কংক্রিটের কনডম ভাল বলেছিস।’ আমি বুলবুলের মনকে শান্ত করতে চাই।
‘সঙ্গদোষ।’ বলে বুলবুল বের হয়ে যায়। তার কাগজপত্র অন্ধকার ঘরে রেখে দেই। যেখানে আমার যৌবনের স্বপ্ন এবং আরো এমন কতো কাছের মানুষের স্বপ্ন কাগজের ভিতর ঘুমাচ্ছে। ওরা ঘুমাক।
দিন পনেরো বুলবুল আর আসে না। সংবাদপত্রে কোন এক উড়াল সেতুতে তার লাশ পাওয়া যায়। গুম লেখা যাবে না বা খুন লেখা যাবে না। তাই সংবাদে লেখা হয়, অজ্ঞাত ব্যক্তির দাড়া আত্মহত্যা করিয়েছেন মাদকসিক্ত যুবক। আমি বিশ্রি চা একা বসে খাই।
পরের সপ্তাহে‘ সরকার এবং কর্পোরেটে যৌথ উদ্যোগে, হাওরে বিজ্ঞানে সমাধান’ এই শিরোনামের প্রসংশায় ছড়িয়ে যায়। সচিবগণ তাদের অবৈধ্য বিছানা সঙ্গী নিয়ে, সেই খুশিতে বিদেশে যান সরকারী টাকায়। কিন্তু তারা সুখি হয় না, তৃপ্ত হয় না। আমি বিশ্রি চা নিয়ে বসে থাকি। খেতে পারি না। চা এর চুমুরে সময়, বুলবুলের কথাটায় আটকে যায়। কংক্রিটের কনডম আটকে পরেছে সমাজ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০২২ রাত ১০:৫০
৭টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) পক্ষ নিলে আল্লাহ হেদায়াত প্রদান করেন

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:৪২



সূরা: ৩৯ যুমার, ২৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৩। আল্লাহ নাযিল করেছেন উত্তম হাদিস, যা সুসমঞ্জস্য, পুন: পুন: আবৃত। এতে যারা তাদের রবকে ভয় করে তাদের শরির রোমাঞ্চিত হয়।অত:পর তাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগটা তো ছ্যাড়াব্যাড়া হয়ে গেলো :(

লিখেছেন সাখাওয়াত হোসেন বাবন, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৫৭



আমি আমার ব্লগিং শুরু করি প্রথম আলো ব্লগে লেখালেখির মাধ্যমে। ব্লগটির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। কারণ প্রথম আলো ব্লগ আমায় লেখালেখিতে মনোযোগী হতে শিখিয়েছে । সে এক যুগ আগের কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×