somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

এস এম মোমিন
কৃষিবিদ এম আব্দুল মোমিন বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে কৃষি সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত। পেশায় সরকারী কর্মকর্তা হলেও তিনি কৃষি সাংবাদিকতাকে তিনি অন্তরে লালন করেন। কৃষি সাংবাদিকতাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ কওে যাচ্ছেন তিনি। ২০০৩ সালে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ব

গ্রীষ্মের তিন ফুল কৃষ্ণচূড়া, সোনালু ও জারুল

১০ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৪:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কৃষ্ণচূড়া : কৃষ্ণচূড়ার আদিনিবাস মাদাগাস্কার। পরিবার Leguminosae, বৈজ্ঞানিক নাম Delonix regia | তবে এ ফুল বাংলাদেশের প্রকৃতি পরিবেশ ও ঐতিহ্যের সাথে গভীরভাবে মিশে আছে যুগ যুগ ধরে। বসন্তের শেষে গ্রীষ্মের আগমনী বার্তা নিয়ে প্রকৃতিকে নতুন করে সাজিয়ে তোলে কৃষ্ণচূড়া। গাছের ডালে ডালে সবুজ পাতার ফাঁকে উকি দেয়া টকটকে লাল রঙের বাহারী ফুলে ভরে যায় গাছ। ফুল গন্ধহীন, পাপড়ি পাঁচটি, নমনীয় কোমল, মাঝে লম্বা পরাগদ- অবস্থিত। ফুল ফুটন্ত কৃষ্ণচূড়া গাছের মনোরম দৃশ্য দেখে যে কেউ থমকে দাঁড়াবে ও মনে আনন্দের ঢেউ জাগাবে এটা নিশ্চিত। ফুটন্ত ফুল গাছ বহু দূর থেকে দেখেও চেনা যায়। পত্র ঝরা বৃক্ষ, শীতে গাছের সমস্ত পাতা ঝরে যায়, বসন্তের আগমনে গাছে নতুন পাতা গজায়। পাতা ক্ষুদ্র, যৌগিক ও চিরুনির মতো সাজানো থাকে। ফুল শেষে গাছে ফল ধরে। ফলের আকার চ্যাপ্টা লম্বা, দেখতে তলোয়ার শিমের আকৃতির, ফলের রঙ প্রথমে সবুজ ও পরিপক্ক হলে কালচে রঙ ধারন করে। ফলের অভ্যন্তরে বীজ হয়, বীজের রঙ কালো। বীজের মাধ্যমে বংশ বিস্তার হয়। গাছ দ্রত বর্ধনশীল, সাধারণত বীজ/চারা রোপনের ৫ থেকে ৬ বছর বয়সে গাছে ফুল ফুটে। গাছের কাঠ মাঝারি শক্ত মানের, খুব বেশী শক্ত মানের নয় বলে জ্বালানির লাকড়ি হিসেবে ব্যবহার ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ অন্য কাজে তেমন ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়না। উঁচু ভূমি কৃষ্ণচূড়া গাছ উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত স্থান। আমাদের দেশে অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পার্ক, সড়ক-মহাসড়কের ধারে ও অন্যান্য স্থানে বিক্ষিপ্ত ভাবে ছোট-বড় এবং কোন কোন স্থানে সুউচ্চ কৃষ্ণচূড়া চোখে পড়ে।

সোনালু : স্বর্ণালী রঙের সৌন্দর্য-শোভায় প্রকৃতিকে আরো নয়নাভিরাম রূপে সাজাতে বিন্দু মাত্র কার্পণ্য করেনা সোনালু ফুল। প্রকৃতি ও পরিবেশের শোভা বর্ধনে সোনালু ফুলের ভূমিকা অনেক। সোনালী রঙের ফুলের বাহার থেকেই সোনালু নামে নামকরন। যার উদ্ভিদতাত্বিক নাম Cassia Fistula পরিবার Caesalpinaceae |এ ফুলের আদিনিবাস হিমালয় অঞ্চল হলেও বাংলাদেশ, ভারত,পাকিস্তান ও মায়ানমার অঞ্চল জুড়ে রয়েছে এর বিস্তৃতি। গাছ সাধারণত ১৫ থেকে ২০মিটার উঁচু হয়ে থাকে। উঁচু থেকে মাঝারি উঁচু ভূমি সোনালু ফুল উৎপাদনের জন্য উপযোগী। স্বভাবে এরা পত্র ঝরা বৃক্ষ, শীতে গাছের সমস্ত পাতা ঝরে যায়। পত্রশুন্য শীত পেরিয়ে বসন্তের শেষে ফুল কলি ধরার পূর্বে গাছে নতুন পাতা গজায়। গ্রীষ্মে গাছের শাখা-প্রশাখা জুড়ে ঝুলন্ত মঞ্জুরিতে সোনালী হলুদ রঙের ফুল ফোটে এবং এর ব্যাপ্তি থাকে পুরো গ্রীষ্মকাল জুড়ে। ফুলের পাঁপড়ি পাঁচটি, মাঝে পরাগদ- অবস্থিত। পাতা হাল্কা সবুজাভ,মধ্য শিরা স্পষ্ট। গাছের শাখা-প্রশাখা কম, কা- সোজা ভাবে উপরের দিকে বাড়তে থাকে, বাকল সবুজাভ থেকে ধুসর রঙের, কাঠ মাঝারি শক্ত মানের হয়। ফুল থেকে গাছে ফল হয়, ফলের আকার দেখতে সজিনা সবজির আকৃতির, তবে সজিনার গায়ের চামড়াতে ঢেউ তোলা, সোনালু ফলে তা নেই। চামড়া মসৃণ। ফল লম্বায় প্রায় এক ফুট হয়, রঙ প্রথমে সবুজ ও ফল পরিপক্ক হলে কালচে খয়েরি রঙ ধারণ করে। ফলে বীজ হয়, ফলের বীজ হতে বংশ বিস্তার ঘটে। কোন কোন অঞ্চলে সোনালু এর ফলকে বানর লাঠি হিসেবে চিনে বলে সোনালু গাছকেও তারা বানর লাঠি গাছ বলে ডাকতে শুনা যায়। সোনালু গাছের বাকল পাতায় ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে। আমাদের রাজধানি শহর ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ও সড়ক-মহাসড়কের পাশে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আঙিনায় ও বন জঙ্গলে ছোট বড় সোনালু গাছ দেখতে পাওয়া যায়। তবে আগের চেয়ে বর্তমানে অজ্ঞতা অবহেলায় সোনালু গাছ ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে এবং প্রকৃতি হারাচ্ছে গ্রীষ্মের দিনগুলিতে স্বর্ণালী রঙের সৌন্দর্য শোভায় চিরচেনা বাংলার রূপ।

জারুল:
যেখানে সবুজ ডাঙ্গা ভ’রে আছে মধুকূপী ঘাসে অবিরল;
সেখানে গাছের নাম : কাঁঠাল, অশ্বত্থ, বট, জারুল, হিজল;
জীবনানন্দ দাশ
পাপড়ির নমনীয় কোমলতায়, দৃষ্টিনন্দন বর্ণচ্ছটা নিয়ে প্রকৃতিকে আরো সুন্দর করে সাজিয়ে তোলে জারুল ফুল। ফুলটির ইংরেজি নাম : Giant Crape-myrtle পরিবার : Lythraceae, বৈজ্ঞানিক নাম : Lagerstroemia Speciosa । বৃক্ষজাতীয় জারুল ফুলের আদি নিবাস শ্রীলংকা। নীলাভ ও গোলাপি দুই রঙের জারুল ফুল বাংলাদেশের সর্বত্র চোখে পড়ে। এই পাতাঝরা বৃক্ষ শীতকালে পত্রশূন্য থাকে। বসন্তে গাঢ় নতুন সবুজ পাতা গজায়। জারুলের দৃষ্টিনন্দন রং ও রূপ নয়নাভিরাম, ফুলে পাপড়ি ছয়টি, ফুলের মাঝখানে হলুদ রঙের পরাগ রয়েছে। গাছ সাধারণত ১০ থেকে ১৫ মিটার উঁচু হয়। গাছের পাতা সবুজ, পুরু ও বেশ বড়। গাছের শাখা-প্রশাখা ও কা- শক্তমানের, শাখা-প্রশাখার অগ্রভাগে দ- বোঁটায় অসংখ্য ফুল ফোটে। বোঁটার নিচ থেকে প্রথম ফুল ফোটা শুরু হয়ে বোঁটার সামনের দিকে ধীরে ধীরে ফুল ফোটে।

গ্রীষ্মের শুরুতেই এর ফুল ফোটে এবং শরৎ পর্যন্ত দেখা যায়। ফুল শেষে গাছে বীজ হয়, বীজ দেখতে গোলাকার ও বীজের মাধ্যমে বংশ বিস্তার হয়। জারুল ভারতীয় উপমহাদেশের নিজস্ব বৃক্ষ। বাংলাদেশ, ভারত ছাড়াও চীন, মালয়েশিয়া প্রভৃতি অঞ্চলে জারুল গাছের দেখা মেলে। নিম্নাঞ্চলের জলাভূমিতেও এটি ভালোভাবে বেড়ে উঠতে পারে, তবে শুকনো এলাকাতেও এদের মানিয়ে নিতে সমস্যা হয় না। জারুল কাঠ লালচে রঙের, অত্যন্ত শক্ত ও মূল্যবান। ঘরের কড়ি-বগড়া, লাঙ্গল, আসবাবপত্র ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। জারুল গাছের ভেষজ গুণাগুণ রয়েছে। এর বীজ, ছাল ও পাতা ডায়াবেটিস রোগের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া জ¦র, অনিদ্রা, কাশি ও অজীর্ণতায় জারুল উপকারী।

সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০১৬ সকাল ১১:২৬
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×