সম্প্রতি সংযুক্ত আরব আমিরাতে সমাপ্ত হওয়া সপ্তম টি-টুয়েন্টি ক্রিকেট আসর হতে শুরু করে দেশের মাটিতে অনুষ্ঠিতব্য পাকিস্তানের সাথে চলমান সিরিজ পর্যন্ত বাংলাদেশ ক্রিকেট দল চরম ব্যর্থতার মধ্যদিয়ে যাচ্ছে। নিকট অতীতে বাংলাদেশ ক্রিকেটে এমন ভরাডুবি দেখা যয় নি। বিদেশের মাটিতে বিশ্ব আসরে বাংলাদেশের ব্যর্থতা দেখে সমালোচকেরা বলছিলেন, বাংলাদেশ ক্রিকেট দল দেশে বাঘ বিদেশে বিড়াল।
সমালোচকদের এমন কথা বলার পেছনে যথার্থ যুক্তি ছিল। বিশ্বমঞ্চে যাওয়ার আগে বাংলাদেশ দল দেশের মাটিতে মোটামুটি সফলতার বাতাস গায়ে লাগাতে সক্ষম হয়েছিল। আর একারণেই হয়তো নিন্দুকেরা এমন মন্তব্য করেছিল। কিন্তু এখন নিন্দুকদের নিন্দা নিয়ে নিন্দা করলে মুখে কুলুপ আঁটা ছাড়া তাদের উপায় দেখি না। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এখন দেশের মাটিতেই বিড়াল হয়েছে দেখা যাচ্ছে। মিরপুরে বাঘ রূপে দেখা মিলছে না।
যাহোক। আমি কোনো ক্রিকেট বোদ্ধা নই। পাড়ার মাঠে প্রতিযোগিতা মূলক ক্রিকেটেও খেলার সুযোগ হয়নি খুব একটা। পনের সদস্যের স্কোয়াডে থেকেছি মাগার একাদশে জায়গা হয়নি। কখনও হলেও কারো পরিবর্তে ফিল্ডিং করা এই আরকি। তাই জাতীয় ক্রিকেট নিয়ে কথা বলা ঠিক হবে কিনা বুঝতে পারছি না। যেহেতু ব্যক্তিগত মত প্রকাশের অধিকার সবারই আছে সেই অধিকার নিয়ে কয়েকটি কথা বলি।
বাংলাদেশের খেলা চললে দেখার চেষ্টা করি। কোনো কারণে টিভিতে বা দেখার সুযোগ না হলে ফোনে ক্রিকবাজ অ্যাপে স্কোরটা হলেও দেখি। এককথায় খেলা চলাকালীন খেলার সাথে থাকার চেষ্টা করি। বাংলাদেশ দল ফিল্ডিং করলে একটা সময় খেলোয়ারদের জার্সি নাম্বার দেখলেই বুঝতে পারতাম কে বল কুড়িয়ে ফেরত পাঠালো বা কে ক্যাচ ধরলো কিংবা কে বল করছে। কিন্তু এখন দু একজন ছাড়া অন্য কারো জার্সি নাম্বার দেখে সেটা বলতে পারি না। জার্সি নাম্বার তো দুরের কথা! এখন কে খেলছে এটাই ঠিক মত চিনি না। কেন! বলি।
বিশ্বকাপের আগে অস্ট্রেলিয়া বা নিউজিল্যান্ড সিরিজে বাংলাদেশ দলে যেসব খেলোয়ারকে দেখেছি বিশ্বকাপে তাদের অনেক-কেই দেখি না। দু একজন ছাড়া বাকীদের অভিজ্ঞতার খুঁটি খুবই নড়বড়ে। বাংলাদেশ দলে নিয়মিত তাদের অনেকেই দেখা যায়নি। নিয়মিত দেখা না গেল মনে রাখা মুশকিল। আবার পাকিস্তান সিরিজে যারা দেখছে পরবর্তী সিরিজে দেখা যাবে দু তিনজন ছাড়া আর কেউ নাই। প্রতি সিরিজেই যদি এমন পরিবর্তন হয় বা নতুন নতুন খেলোয়ার খেলে তাহলে মনে রাখবো কি করে!
বাংলাদেশ ক্রিকেটে পঞ্চপাণ্ডব কাদেরকে বলা হয় আশা করি জানেন। তারপরও বলি। মাশরাফি, মুসফিক, সাকিব ও মাহমুদুল্লাহ্ এই পাঁচ ক্রিকেটারকে একত্রে বলা হয় পঞ্চপাণ্ডব। মাশরাফি অবসরের দিকে চলে গেলেও বাকী চারজনের এখনও ক্রিকেটের সকল সংস্করণ থেকে পুরাপুরি অবসর গ্রহণের কোনো কথা জানা যায় নি।
আমরা যদি বিশ্বের শক্তিশালী ক্রিকেট দলগুলোর দিকে তাকাই তাহলে দেখা যাবে সেখানে নতুনের চেয়ে অভিজ্ঞদের প্রাধান্য বেশি। সাম্প্রতি টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ী অস্ট্রেলিয়ার কথাই ধরা যাক। অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার অ্যারেঞ্চ ফ্রিঞ্চকে আইপিএলে তেমন পারফর্ম করতে দেখা যায় নি। বিশ্বকাপ শুরুর আগে বাজে ফর্মে ছিলেন এই অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার। কিন্তু বিশ্বকাপে তার কীর্তি বলতে হবে না আশা করি। অনুরূপভাবে পাক ক্রিকেটার শোয়েব মালিকের ক্ষেত্রেও একই কথা।
অ্যারেঞ্চ ফ্রিঞ্চ ও শোয়েব মালিকের মত আরো কিছু উদাহরণ হয়তো দেওযা যাবে। এখানে উদারহণ দেওয়ার উদ্দেশ্য অভিজ্ঞতার যে একটা আলাদা মূল্য আছে সেটা বোঝানোর জন্য।
বাংলাদেশরে যে অভিজ্ঞ পাঁচ ক্রিকেটার তাদের তিনজনকে বিশ্বকাপে দেখতে দেখা গেছে। পারফর্মও করেছে বেশ! দেশের মাটিতে চলমান পাকিস্তান সিরিজে পঞ্চপাণ্ডবের এক পাণ্ডব মাহমুদুল্লাহকে দেখা যাচ্ছে। পারফমেন্স একাবারেও খারাপ না। বলে ব্যাটে কিবা নেতৃত্বে নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করছে দলের এই দুঃসময় কাটিয়ে তুলতে।
এইযে পঞ্চপাণ্ডবের কথা বলছি। এই পঞ্চপাণ্ডব কিন্তু এক দুদিনে গড়ে ওঠেনি। সময় লেগেছে ঢের। নিকট ভবিষ্যতে পঞ্চপাণ্ডবের শূন্যস্থান পূরণের মত সম্ভাবনা দেখি না।
আমাদের ক্রিকেট বোর্ডের মহাদয় মহাশয়গণ কেন ভুলে গিয়েছেন যে, ঘরোয়া ক্রিকেট আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট দুইটা আলাদা মঞ্চ। এমন অনেক ক্রিকেটার আছে যারা ঘরোয়া ক্রিকেটে খুবই ভালো কিন্তু বিশ্বকাপ বা আন্তর্জাতিক ম্যাচগুলোতে মোটেও ভালো দেখা যায়নি। যেটা ওপেনার লিটন কুমার দাস ও সৌম্য সরকারের ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যায়। বিশ্বকাপ থেকে ফিরে উভয়-ই ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো করছে।
বিশ্বকাপ বা আন্তর্জাতিক ম্যাচগুলোতে নতুনদের চেয়ে অভিজ্ঞদের অবশ্যই প্রাধান্য ও সুযোগ দিতে হবে বেশি। আজকের খেলায় সর্বশেষ ওভারে পাকিস্তানের জেতার জন্য যখন মাত্র ৮ রান প্রয়োজন তখন অধিনায়ক দলে অভিজ্ঞ কেউ না থাকায় নিজেই বল করা সিদ্ধান্ত নেন হয়তো। অলরাউন্ডার হলেও এখন বলের চেয়ে ব্যাট করতেই বেশি দেখা যায় তাকে। আজও সে নিয়মিত বলার ছিলেন না। লাস্ট ওভার বোলিংয়ে এসে তিন উইকেট নিলেও দল জেতাতে পারেন নি। এই যে লাস্ট ওভারে মাত্র ৮ রান ব্যাটাদের কাছে পাহাড়সম করে তিনটা উইকেট নিয়ে নাটকীয়তা তৈরি দর্শকদের মাঝে উৎকণ্ঠা বৃদ্ধি এটা কিন্তু অভিজ্ঞতার ভরেই সম্ভব হয়েছে বলে মনে করি।
বাংলাদেশ ক্রিকেটে আবারও সুদিন আসবে। যেদিন থেকে ক্রিকেট বোর্ড অভিজ্ঞদের প্রাধান্য ও সুযোগ দিবে বেশি।
সোহাগ তানভীর
লেখক
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০২১ রাত ১০:৩৬